মেঘদিঘির পাড়ে – ১১
মালিহা খান
-“আপনি হাসছেন?”
ইভা আশ্চর্যান্বিত। বিস্ময়ে কান্না অবধি থেমে গেছে মেয়েটার। টুকটুকে ফোলা চোখদুটি মেলে ঠোঁটের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে সায়নের মুখপানে। সায়ন হাসি নিরব করলো। ইভার এলোমেলো ভাগ হয়ে থাকা সিঁথির উপর হাত বুলিয়ে নরম গলায় বললো,”মেরেই ফেলবে?”
ইভা মাথা নাড়ায়। নাক টেনে বলে,”আপনি আর আসবেননা। দয়া করে আসবেননা।”
সায়ন চুল নিয়ে আকুলিবিকুলি করে কিছুক্ষণ। এপাশের চুল ওপাশে দেয়, ওপাশের চুল এপাশে আনে। আঁকাবাঁকা সিঁথি সোজা করার চেষ্টা করে। এরপর বলে,”অতো দয়া আমার নেই। তার চেয়ে বরং মারুক। আপনার জন্য নাহয় মরেই গেলাম এবার।”
ইভা নিশ্চুপ হয়ে ক্ষততে গজ পেচাচ্ছিলো। সায়নের কথায় আবারো হতবাক হয়ে তাকালো। বিমূঢ় হয়ে বললো,”আপনি মজা করছেন? আমি সত্যি সত্যি বলছি।”
সায়ন ভাবলেশহীন উওর দেয়,”আমিও সত্যি সত্যি বলছি। দেখি, বেঁধে দিন জলদি। বের হবো।” তার কথা শেষ হয়না। ইভা প্রায় চিৎকার করে উঠে,
-“পাগল হয়েছেন? আপনি এখানেই থাকবেন।”
সায়ন হতভম্বের মতোন তাড়াহুড়ো করে ইভার গাল চেপে ধরে ঠোঁটে আঙুল রাখে। হুড়মুড় করে বলে,”এই মেয়ে আস্তে! কি হয়েছে? চিৎকার করছো কেনো? চুপ!”
ইভা থতমত খেয়ে যায়। সায়নের আকস্মিক ‘তুমি’ সম্মোধনে, তুমুল অধিকারী শাসনে। চোখে চোখ রাখা যায়না। একটু সময় গেলে ঠোঁটের আঙুল সরিয়ে নেয় সায়ন। গাল চেপে ধরায় ইভাকে ছোট বাচ্চাদের মতো দেখাচ্ছে। ঠোঁটদুটো গোল হয়ে আছে। বাঁকা হাসে সে। আঙ্গুলে আরো জোরে চাপ দেয়। ইভার তুলতুলে গাল নরম মাখনের মতো জড়োসড়ো হয়ে আসে। সায়নের চোখদুটো সপ্রতিভ হয়ে উঠে,
-“তোমাকে তো খুব সুন্দর দেখাচ্ছে ইভা। বাহ্!’
গালদুটো টনটন করে উঠে ইভার। সায়ন ছেড়ে দেয়। বিরবির করে বলে,”পানি দাও, পানি খাবো। পিপাসা পেয়েছে।”
গজ বাঁধা শেষ ততক্ষণে। ইভা পানি এনে দেয়। সায়ন চুমুক দিয়ে বলে,
-“চিৎকার করলে কেনো?”
ইভা ওষুধের বাক্স গোছাতে গোছাতে ফিসফিস করে,
-“আপনি এখন যেতে পারবেননা। ভাইজান ফজর পর্যন্ত বাইরে হাঁটাহাঁটি করবে, এরপর ঘরে যাবে। আপনি তখন যাবেন। ততক্ষণ বসে থাকুন। বসতে না চাইলে শুয়ে থাকুন। আপনার না হাতে ব্যাথা?”
সায়ন বিরক্ত হয়,
-“তোমার ভাইয়ের এত সমস্যা কেনো? কাল সকালে ঢাকায় ফিরব আমি। যাওয়ার আগে তোমাকে দেখে গেলাম। ধরো, গ্লাসটা রাখো।”
ইভা গ্লাস নিতেই সায়ন উঠে দাড়ায়। বিছানা থেকে শার্ট তুলে গায়ে চড়ায়। বোতামে হাত রাখতেই ইভা খপ করে তার হাত ধরে ফেলে। পরমূহুর্তেই লজ্জা পেয়ে চটপট ছেড়ে দিয়ে বলে,
-“বললাম তো যেতে পারবেন না।”
সায়ন হেসে ফেলে,”যাচ্ছি না তো, শার্ট পরবোনা?”
ঘন তম্রসা কেটে যাচ্ছে। ঘরের নীল আলোর সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে একটা সুন্দর নীলরঙা ভোর নামছে। ইভা দাড়িয়ে ছিলো জানলা ঘেঁষে। এখান থেকে বাড়ির পেছনটা দেখা যায়। ধোঁয়ার মতো আলো ফুটেছে। আবছায়া আলোতে দেয়ালের উপর গাঁথা কাঁচগুলোও দেখা যাচ্ছে। ইভার গা শিঁউরে উঠে। ঘাড় বাকিয়ে একবার পেছনে তাকায়। ইশ! সায়ন কপালে হাত ঠেকিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। বাহাদুর ওদিকে ফিরে বেহুঁশ। ছেলেটা ক্লান্ত থাকলে এমন মরার মতোন ঘুমায়। ঘরে ডাকাত পড়লেও হুঁশ হয়না। দরজার ওপাশে পদচারণের আওয়াজ হচ্ছে অনবরত। সরফরাজ হাঁটছে। ভাবি হয়তো জেগে ছিলো রাত অবধি। এমন হলে ভাইজান ঘুমোয়না। বাকি সারারাত জেগে থাকে। ভাবি ঘুমালে বাইরে হাঁটাহাঁটি করে। ঘরে যায়, দেখে আসে। আবার এসে হাঁটাহাঁটি করে। সায়ন না থাকলে সে নিজে যেয়েও ভাইয়ের সাথে হাঁটাহাঁটি করতো।
দূরের মসজিদে আযান হচ্ছে। এদিকের টা হতেই তাড়াতাড়ি করে দরজায় কান পাতলো ইভা। ওপাশ থেকে দরজা আটকানোর ক্ষীন শব্দ পাওয়া গেলো। ইভা বুকে হাত রেখে স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে। সায়নের কাছে যেয়ে ফিসফিস করে ডাকে,
-“এইযে? ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি? উঠুন।”
সায়ন কপাল থেকে হাত সরাল। নিভু চোখে তাকাতেই ইভা বললো,
-“ভাইজান ঘরে গিয়েছে। এখন যান।”
সায়ন দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে যায়। দাড়াতে দাড়াতে বলে,”অনর্থ করবো বলেছিলাম। মনে আছে?”
-“করেছেন না? এতক্ষণ কি করলেন তাহলে?”
-“এতক্ষণ তো আমার অনর্থ হলো। আমি হাত কাটলাম, আমি কষ্ট করে এলাম, ব্যাথায় মরলাম। তোমার অনর্থ করতে হবে না?”
সায়ন দরজার সামনে যায়। ইভা পিছে দাড়িয়ে। ছিটকিনি তে হাত দেবার আগে হুট করে পেছনে ফিরে। ইভার মুখ বরাবর ঝুঁকে আসে। এক ভ্রু উঁচায়। শান্তসুরে বলে,
-“শুভ অনর্থটা এবার ঘটিয়েই ফেলতে হবে। আসি।”
২৩.
দরজায় টোঁকা দিলোনা বিভা। একহাতে ঠেলে উঁকি দিয়ে বললো,”ডেকেছিলেন?”
ইউসুফ মনোযোগ দিয়ে বিছানায় কুঁচকানো শার্ট মেলে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে শার্টের উপর গরম ইস্ত্রি চালাচ্ছে। ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় সকাল ন’টা। তার বেরোনোর কথা ছিলো সাড়ে আটটায়। হতে পারেনি। বিভার কন্ঠে একপলক মুখ তুলে তাকায়। অনুমতি দেয়,
-“আসো।”
বিভা এলো। ইস্ত্রি করতে থাকা শার্টের পাশে বসলো। ইউসুফ অনেকক্ষণ কিছু বললোনা। মনোযোগ দিয়ে ইস্ত্রি করলো। মাঝে মাঝে শার্টের উপর চলে আসা বিভার হাতটা সরিয়ে সরিয়ে দিলো। ইস্ত্রি হয়ে গেলে গরম ইস্ত্রিটা নামিয়ে রাখতে রাখতে বললো,
-“আমার নতুন খয়েরী শার্টটা কে পুড়িয়েছে?”
-“আমি।”
-“তোমাকে আয়রন করতে কে দিয়েছিলো?”
-“আমিই নিয়েছিলাম।”
-“ইচ্ছে করে পুড়িয়েছো?”
-“জি।”
-“কেনো?”
-“আমার ইচ্ছে হয়েছে।”
ইউসুফ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
-“আচ্ছা।”
ইউসুফ আয়রন করা পুরনো শার্টটা পরে বেরিয়ে যায়। বিভা উদাসচিত্তে বসে থাকে। লোকটা একটু বকেওনা তাকে। একটু বকলে কি হয়? একটু বকুক, শাসন করুন, ধমক দিক। তাও তো ভালো লাগে। কিছু তো বলুক!
মেঘদিঘির পাড়ে – ১২
মালিহা খান
২৪.
মাসখানেক পরের কথা। আঙিনার নরম দূর্বাঘাসের উপর খালিপায়ে হাঁটছিলো ইভা। অনাসক্ত, বৈরাগী স্হিরনেত্রে চেয়ে ছিলো আকাশের গায়ে। সাদা মেঘে। দৃষ্টি ঘনিয়ে এলো। মাথার উপর যেনো বিশাল টলমলে মেঘদিঘি। চারিদিকে ভাসমান মেঘ। টলমলে ঠান্ডা জল! মেঘের জল!
ইভা চোখ বুজে ফেলে। লোকটার সাথে তার শেষ দেখা হয়েছিলো গুনে গুনে বাইশ দিন আগে। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ ছিলো। বাতাস ছিলো। রাতের আঁধারে এসে সায়ন রাতের আঁধারেই চলে গিয়েছিলো। মাত্র কয়েকমূহুর্তের সাক্ষাৎ। যাবার আগে দরজা খুলেও আবার পেছনে ফিরে চোখে চোখ রেখে বলে গিয়েছে,
-“পরেরবার এলে আর এভাবে আসবোনা দিঘিকন্যা। তোমাকে দেখতেও পারিনা মনমতো। ভালোলাগেনা আমার।”
উওরে সে বলেছিলো,”ইয়া আল্লাহ! আপনি জলদি যান। দরজা খোলা, কেউ দেখবে। এই রাত বিরেতে আমার ঘুম হারাম করে কি মজা পান বলুনতো!”
সায়ন হেসে বলেছিলো,”সেই কবে থেকে আমার রাতদিনের সমস্ত ঘুম হারাম করে রেখে তুমি কি মজা পাচ্ছো বলোতো?”
সেই শেষ কথা। তারপর আর আসেনি সায়ন। ইভা চোখ খুলে। মেঘের উপর চোখ পড়ে। এতো এতো মেঘ। এতো এতো নিরবতার ঢল। তবু প্রশান্তি নেই। প্রণয়ের পীড়ায় মেঘের রাজ্য তছনছ করে দেবার অভিপ্রায়।
আজ রোদ উঠেনি। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে তবু রোদ উঠেনি। দিনটা ভালো লাগছেনা। ইভা পাশে খুলে রাখা জুতোটা পায়ে পরে নেয়। ঘরে এসে মৌন হয়ে বসে থেকে বালিশে মাথা পেতে শুয়ে পড়ে। বিরবির করে বলে,”ভালোলাগেনা আমার।”
একটুপর বিভা আসে। সজাগ ইভা মুখ তুলে তাকায়। বিভা আমতাআমতা করে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে তার দিকে। ইভা উঠে বসে। জিজ্ঞাসু গলায় বলে,”কিছু বলবে আপা?”
বিভা নিচু গলায় বলে,
-“কিছু শুনেছিস তুই?”
ইভা মাথা নাড়ায়,”কি?”
-“না কিছুনা।”
বিভা দু’হাতে মাথা ধরে তার কপালে চুমু খায়। তার বোনটা জমজ হলে কি হবে? স্বভাবে আকাশপাতাল তফাৎ। সে যেমন চন্চল, ইভা ততোই শান্ত, চাপা স্বভাবের।
২৫.
বিকেলের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলো ইভা। ঘুম ভাঙলো শোরগোলে। নিচ থেকে বেশ কথার শব্দ শোনা যাচ্ছে। গায়ে কোনরকমে ওড়নাটা পেঁচিয়ে ঘর থেকে বেরোয় ইভা। বের হয়ে একটু এগিয়ে বসার ঘরের দিকে চোখ পড়তেই মাথা ঘুরে যায়। উনি আর উনার ফুপি বসে আছে। বাবা, মা, চাচা, চাচী, এমনকি সরফরাজ ভাইজানও আছে। ইভার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। সায়ন হঠাৎই এদিক তাকায়। উশকোখুশকো বিনুনি নিয়ে অগোছালো বেশে দাড়িয়ে থাকা ইভাকে দেখে চোখ স্হির হয়ে যায়। টানা বাইশটা দিন সে মেয়েটাকে দেখেনি। একনজর দেখেনি। দৃষ্টি বলছে,”এত অপেক্ষা করানোর জন্য দু:খিত ইভারানী।” চোখ নামিয়ে নেয় সায়ন।
বিভা সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলো। ইভাকে দেখে দ্রুত এগিয়ে এলো সে। হাত ধরে বললো,
-“তুই বেরিয়েছিস কেনো? ঘরে আয়। এরা যাক। তারপর বেরোস। ভাইজান রাগ করবে।”
বিভা তাকে টেনে ঘরে নিয়ে আসে। ইভা অস্হিরতায় কাবু হয়ে বলে,
-“আপা কি হয়েছে?”
বিভা মেকি হাসে। বলে,
-“আরকি! উনারা প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। আর ভাইজান মানা করছে। তোর চিন্তার কারণ নেই। বসে থাক। এরা যাক।”
-“মানা করছে?”
-“সবসময় তো তাই করে। নতুন কি!”
ইভা চুপ করে যায়। এমন পরিস্থিতি নতুন না। এর আগেও বেশ ক’বার এমন হয়েছে। গ্রামের কারা কারা যেনো কদিন পরপরই প্রস্তাব নিয়ে আসে। ওইযে মইদুল, মইদুলের পরিবারও তো এনেছিলো। সেসব ইভার কান পর্যন্তও আসেনা। তার আগেই সরফরাজ সাফ মানা করে দেয়। তার এক কথা, এত ছোট বয়সে সে বোনের বিয়ে দিবেনা। ইভা চিন্তায় কাঁচুমাচু হয়ে পড়ে। লোকটাকে কে বলেছিলো এমন পাগলামি করতে? কে বলেছিলো?
লিথিশা মৃদু হেসে বললেন,
-“দেখুন আপনাদের মেয়ে ছোট আমরা জানি। আমি বলছিনা এখনই বিয়ে হোক। মেয়েকে তুলে দেয়া লাগবেনা। বিয়েটা শুধু পড়িয়ে রাখা হোক। তুলে নেয়া নাহয় পরে হবে। যখন আপনারা ভালো মনে করেন।”
ইভার বাবা নেওয়াজ সাহেব উওর দিতে পারেননা। সরফরাজই বলে,
-“দেখুন চাচী, আপনি বুঝতে পারছেন না। আমার বোন খুবই ছোট। এবছর মাত্র আঠারোতে পড়লো। ওকে আমি কি বিয়ে দিবো? কেমনে বিয়ে দিবো? আপনিই বলুন।”
-“আমি তো বললাম বাবা। ওকে তোমার বিয়ে দেয়া লাগবেনা। শুধু কবুল বলিয়ে রাখো। ও শুধু আমার ভাতিজার হয়ে থাক। পড়াশোনা করছে করুক। আমাদের তো আপত্তি নেই।”
সরফরাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
রাতের বেলা খাবার সময় সরফরাজের সাথে দেখা হলো ইভার। এমনি কথাবার্তা হলেও এই বিষয়ে কোনো কথা বললোনা সরফরাজ। ইভার গলা দিয়ে ভাত নামলোনা। কোনরকমে খেয়েই উঠে গেলো সে।
২৬.
সেদিন রাতে ইউসুফকে সজাগ পায় বিভা। সে ঢুকতেই হাত থেকে ফোন নামিয়ে তার দিকে তাকায় ইউসুফ।
বিভা মিহি স্বরে জিজ্ঞেস করে,
-“ঘুমাননি?”
-“হুম? না তো।”
বিভা জানলায় যেয়ে দাড়ায়। হঠাৎ পিছনে উষ্ণতার অনুভব হতেই ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়। একহাত দুরত্বে ইউসুফকে দেখে বিমূঢ় হয়ে বলে,
-“কি হয়েছে?”
ইউসুফ জানলার শিকে একহাত রাখে। দুরত্ব ঘুঁচে যায় অনেকটা। বিভার প্রশ্নেভরা বেগতিক চোখ। ইউসুফ ধীরকন্ঠে বলে,
-“আমি চাইলেই তোমাকে এই মূহুর্তে ভীষনভাবে চাইতে পারি, পারিনা?”
-“পারেন।”
-“তুমি বাঁধা দিবেনা, তুমি বাঁধা দিতে পারবেনা। আমার স্পর্শ এড়িয়ে যাবার ক্ষমতা তোমার নেই। আছে?”
-“নেই।”
“তবু তুমি এত নিশ্চিত হয়ে দাড়িয়ে আছ। কেনো জানো? কারণ…”
ইউসুফের মুখের কথা কেড়ে নেয় বিভা। চোখভর্তি টলমলে পানি নিয়ে শক্ত গলায় বলে,
“কারণ আপনি আমাকে চাইবেনইনা।” বিভা আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলো। হাউমাউ কান্নাটা আটকাতে গিয়ে তা আর বলা হলোনা। চুপ করে গেলো সে। চোখের সামনে ইউসুফের চওড়া বুক। সে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারছেনা, একটু মাথা রাখতে পারছেনা। এতো নিষেধ কেনো? এতো বারণে এতো অনুভতি কেনো?
ইউসুফ নিজেও চুপ করে থাকে। বুঁদ হয়ে দেখে বিভার চেষ্টা। টুপটুপ করে গড়িয়ে পড়া পানি, চোখের কার্নিশ গড়ালেই হাতের পিঠে মুছে ফেলা। বিভা ঢোঁক গিলে। নিজেকে সামলায়। মনে মনে দৃঢ় পণ করে আর কোনোদিন এই নির্দয়, পাষাণ, নিকৃষ্ট পুরুষের কাছে সে আসবেনা। কস্মিককালেও না। বলে,
-“সরে দাড়ান, যেতে দিন।”
-“যদি না দেই?”
বিভা চমকে তাকাল। ইউসুফ ইচ্ছে করেই কাছে আসে। বিভা চোখমুখ খিঁচে বলে,
-“দয়া করে আর অপমান করেননা, আমি আর আসবোনা, কসম! সরুন।”
ইউসুফ সরে যায়। বিভা যাবার আগে একবারও তাকায় না তার চোখের দিকে। ক্লান্ত ইউসুফ দরজা আটকে দেয়। সারারাত এখন যুদ্ধ চলবে। নিরবতার যুদ্ধ! নির্বাকতার যুদ্ধ!
বিছানায় শুতেই মাথায় আসে,”বিভা কি সত্যিই আর আসবেনা?” উওরটাও পাওয়া যায়,”না, না আসার ই তো কথা। বিভা কখনোই আসবেনা।”
ইউসুফ চোখ বুজে বিরবির করে,”তুমি জানোনা বিভা। তুমি জানবেনা বিভা। তোমার থেকে বেশি আজ আমি পুঁড়বো। বুকটা চিঁড়ে দেখতে? কেমন রক্তাত্ব হয়ে আছে।”
~চলবে~