মেঘদিঘির পাড়ে পর্ব -২৪+২৫

মেঘদিঘির পাড়ে – ২৪
মালিহা খান

দোকানী ছেলেটার সাথে টুকটাক কথা বলছে ইউসুফ। বিভা নির্বাক শ্রোতার ভূমিকায়। সে চুপচাপ মাটির দিকে চেয়ে চা খাচ্ছে। চোখজোড়া চিন্তিত, ভ্রান্তিতে ভরপুর। তার কিছুতেই ভালো লাগছেনা। অধৈর্য, ছটফটে লাগছে। মন স্হির করতে পারছেনা। কি হচ্ছে এসব? কেনো হচ্ছে? কেনো প্রত্যাশিত পুরুষের নিবিড় সঙ্গ তাকে স্বস্তি দিতে পারছেনা?
বিভা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মুখ তুলে বললো,”দোকান বন্ধ হবে কখন?”

দোকানী ছেলেটা একবার ইউসুফের দিকে তাকালো। তারপর একফালি হেসে উওর দিলো,”এইতো এহনই বন্ধ হইয়া যাইবো ভাবি। আপনাগো হইলেই বাত্তি নিভাইয়া দিমু। আবার খুলুম ভোরের দিকে। মাইনষে মসজিদে যায় তো। ওইকালে আবার ভালো কাস্টমার পাওন যায়।”

বিভা মাথা দোলালো। গলার স্বর নামিয়ে ইউসুফকে বললো,

-“যাবেন না? রাত হয়েছে।”

ইউসুফ উওর দিলোনা। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করতে করতে ইশারায় দোকানী ছেলেটাকে কাছে ডাকলো। সে আসলে নির্ধারিত মূল্যর খানিক বেশি এগিয়ে দিতেই বেচারা স্বলজ্জ হাসলো। নিতে চাইলোনা। ইউসুফ নম্রকন্ঠে বললো,
-“তোমার রাখতেই হবে। এই দু’কাপ চা আমার জন্য খুব বিশেষ।”

বিভার কানদুটো ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। সে কোনোভাবেই হজম করতে পারছেনা। ইউসুফ কেনো এমন ব্যবহার করছে? কেনো তার নির্লিপ্ততায় আজ রাজ্যসম ভঙ্গুর ধরলো? বিভা উওর খুঁজে পেলোনা। প্রশ্ন করতে মন টানলোনা।
ইউসুফ আস্তে করে হাত ধরতেই সম্ভিৎ ফিরলো। একপলক চোখে চোখ পড়লো। চোখ নামিয়ে ধীরগতিতে সেই আদেশে পা মেলালো বিভা।

ইউসুফের হাতটা অসম্ভব ঠান্ডা। নরম চাঁদের মোহনিয়া আলোয় তার সুন্দর মুখখানার দিকেই বুঁদ হয়ে চেয়েছিলো বিভা। তার চোখে অদ্ভুত অপারগতা। বেহায়া চোখ কিছুতেই নামছেনা। আচমকা সে হোঁচট খেলো। মুখ থুবড়ে পড়ে যাবার আগেই হাত টেনে সামলিয়ে দিলো ইউসুফ। ফিচেল গলায় বললো,”রাস্তা দেখে হাঁটো বিভা। অন্যকিছু পড়েও দেখা যাবে।”

ঝুমঝুমে মেয়েলি মনে হয়তো তীব্র ঠান্ডাও ততোটা কাবু করতে পারেনি যতটা কাবু করলো এই অতিসামান্য ছোট্ট বাক্যযুগল। বিভা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো। মিনমিন করে বললো,

-“আমি রাস্তা দেখেই হাঁটছি। অন্যকিছু না।”

-“তাই নাকি? ভালোতো!”তার কন্ঠে স্পষ্ট বিদ্রুপ।

বিভা উশখুশ করলো কিছুক্ষণ। তারপর না পেরে ডেকে উঠলো,

-“শোনেন?”

অসহ্য অধৈর্য কন্ঠটা রাস্তার নিস্তব্ধতা ফুঁড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলো। প্রতিধ্বনির মতোন বেজে উঠলো। ইউসুফ নরম গলায় উওর দিলো,”বলো?”

-“আপনি ঠিক আছেন তো?”

ইউসুফ হাসলো, উওর দিলো,”তোমার কি মনে হয়?”

-“নেই। আপনি ঠিক নেই নিশ্চিত।”

-“আছি। আমি ঠিক আছি।”

বিভা থমকালো। শক্ত হাতের বাঁধন কি আরো একটু শক্ত হয়ে উঠলো? যত শক্ত হলে তাতে আর ভাঙন ধরানো যায়না?

৪৭.
তন্দ্রার ঘুম ভেঙে গেছে। সে উঠে বসে আছে। চাতক পাখির মতো আধো অন্ধকার ঘরটায় চোখ বুলাচ্ছে। সরফরাজ গভীর ঘুম। তন্দ্রা উঠে বসেছে সে টের পায়নি। পেলে এতক্ষণে তন্দ্রাকে ঘুমিয়ে পড়তে হতো। যেভাবেই হোক তাকে ঘুম পাড়ানো হতো। তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাতভর পায়চারি করা হতো।
তন্দ্রা হাই তুললো। ঘাড় ফিরিয়ে সরফরাজের কাছে ঝুঁকে গেলো। মুখটায় দুশ্চিন্তায় ছাপ ফুটে উঠেছে। ইভার বিয়ে নিয়ে হাজারখানেক ভাবনায় ডুবে থাকে। প্রকাশ করেনা, কিন্তু সে বুঝতে পারে। এই এখানে যাচ্ছে, ওখানে যাচ্ছে। কোনোকিছুতে একটু ক্রুটি রাখা চলবেনা তার।
তন্দ্রা পেলব হাত দিয়ে আলতো করে সরফরাজের চুল নেড়ে দিলো। সরফরাজ একটু নড়েচড়ে আয়েশ করে ঘুমালো। খুব ক্লান্ত বোঝা যাচ্ছে। তন্দ্রা তাকে আর বিরক্ত করলোনা। আস্তে আস্তে বিছানা ছাড়লো। গুঁটি গুঁটি পায়ে দরজার ছিঁটকিনি নামালো। তারপর বেরিয়ে পড়লো। বারান্দার মৃদু আলো জ্বালানো। কিছুক্ষণ একা একা দাড়িয়ে থেকে ইভার ঘরের কাছে যেয়ে দাড়ালো তন্দ্রা। দরজাটা একটু ফাঁক করলো। ইভা, বাহাদুরকে ঘুমে বিভোর দেখে মুচকি হাসলো। দরজা ভিড়িয়ে দিলো আবার। একটু সামনে এগোতেই বিভার ঘর পড়লো।
বিভা দরজা আটকে ঘুমায়, তবু কি ভেবে যেনো আলতো ধাক্কা দিলো তন্দ্রা। তাকে অবাক করে দিয়ে দরজা খুলে গেলো। চাঁদের আলো আসা খালি বিছানাটার দিকে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো তন্দ্রা। ওরা এখনো ফিরেনি?

৪৮.
খোলা চুলগুলো বাঁধা দরকার। খুব যন্ত্রনা করছে। আস্তে করে ইউসুফের হাত ছাড়িয়ে দু’হাতে আলগোছে চুলগুলো মুঠো বন্দি করলো বিভা। কাঁচের চুড়ি রিনঝিন করে বেজে উঠলো। সাথে সাথেই ইউসুফ ঘাড় ফিরিয়ে প্রায় ধমকে উঠে বললো,

-“চুল বাঁধছো কেনো?”

বিভা হতচকিত হলো। দু’সেকেন্ড ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকে বোকার মতো হাত নামিয়ে ফেললো। বিরবির করে বললো,”না, বাঁধছিনা।”

তারপর আবার সব চুপচাপ।
একলা চাঁদের আলো, কনকনে ঠান্ডা আর ঘন্টা তিনেক ধরে গলায় আটকে থাকা অস্বস্তি উপেক্ষা করে
খুব ধীরগলায় ইউসুফ ডেকে উঠলো,”বিভা?

-“হু?”অন্যমনস্ক উওর।

-“আমি তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি বিভা। ঠিক ততটাই ভালোবাসি যতটা ভালোবাসলে আর ভালোবাসা যায়না।”

বিভা একবার চমকে তাকালো। ইউসুফ সামনের দিকে তাকিয়ে আছে বিধায় দৃষ্টি বিনিময় হবার সুযোগ হলোনা। অনেকক্ষণ পর্যন্ত কোনো প্রত্যুওরও পাওয়া গেলোনা। তবে একটু সময় যেতে না যেতেই একটা ভীষণ সুখী মেয়েলি কন্ঠ হু হু করে ফুঁপিয়ে উঠলো। তপ্ত জল গড়িয়ে পড়লো তার হিমশীতল ঠান্ডা গাল বেয়ে।মেঘদিঘির পাড়ে – ২৫
মালিহা খান

বিভার কান্না ক্রমাগত বাড়ছে। সে রুদ্ধশ্বাসে ফোঁপাচ্ছে। ইউসুফকে পাল্টা কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেনা।
ইউসুফ দিশেহারা হয়ে হাঁটা থামিয়ে দিলো। দ্বিগবিদিক চোখ বুলিয়ে আস্তে করে তাকে কাছে টেনে নিলো।
বুকে মাথা চেপে বললো,

-“এমন করেনা, হুঁশ!”

উষ্মতম, নিরুপদ্রব, ভীষণ কাঙ্খিত জায়গাটার আলিঙ্গন পেতেই প্রচন্ড ঝড়ে হঠাৎ হওয়া বজ্রপাতের মতোন হাউমাউ করে উঠলো বিভা। ইউসুফের নিজের উপর রাগ হলো। মাঝরাস্তায় কথাটা বলা তার জন্মের ভুল হয়েছে। সঙ্গীনী অতিরিক্ত আবেগী। তার এতো সাধের বহি:প্রকাশে সে আকাশভাঙা কান্না জুড়ে দিয়েছে।

বিভার শরীর অস্বাভাবিক ঠান্ডা। সে কাঁপছে।
পেছনের সিটে বিভাকে বসিয়ে গাড়ির সবকটা জানালার কাঁচ তুলে দরজা আটকে দিলো ইউসুফ। হলুদ লাইট নিভিয়ে নিজেও যেয়ে বসলো পেছনে। বিভা সিটে পা তুলে জানলায় পিঠ দিয়ে বসে আছে। তার চোখমুখ ফুলে গেছে। বারবার হাতের পিঠে চোখের পানি মুছে নিচ্ছে। ইউসুফ গলা ঝেড়ে বললো,

-“আমিতো ভালো কথা বললাম, তুমি এভাবে কাঁদলে কেনো?”

বিভা মুখ তুলল। এতক্ষণ নতজানু হয়ে ছিলো। মুখ তুলে সে কোনো কোথা বললোনা। বাকশূন্য হয়ে রইলো। তারপর আবার মাথা নোয়ালো।
ইউসুফ আদুরে গলায় ডাকলো,”বিভা..।”

বিভা জবাব দিলোনা। ইউসুফ হাত বাড়িয়ে বললো,”এদিক এসো, আমার কাছে।”

বিভা চুপ করে এলো। বুকের পাশে মাথা রেখে শামুকের মতো গুঁটিয়ে গেলো। মুখে কিচ্ছুটি বললোনা।
ইউসুফ হাসলো। বিভার হাত টেনে চুড়িগুলো খুলে নিলো। তার শব্দ ভালোলাগছেনা। চুড়িতে শব্দ হচ্ছে। বিভা অবাক হয়ে বললো,”চুড়ি খুলছেন কেনো?”

-“হুঁশ!”

চুড়ি খুলে ইউসুফ পাশে রেখে দিলো। বিভার বরফ হাত নিজের দু’হাতের মাঝে নিয়ে ঘষে দিতে দিতে বললো,”আমি তোমাকে কিছু কথা বলবো বিভা।”

-“খারাপ কিছু তাইনা?”

-“খুব খারাপ, খুব নিষ্ঠুরও বলতে পারো। তুমি প্রচন্ড আবেগী। তবুও আমার বলতেই হবে। কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি কাঁদবেনা। তুমি কাঁদলে আমি গুঁছিয়ে বলতে পারবোনা। তুমি কাঁদবেনা, কথা দাও।”

-“আমি যে কাঁদবো- ই আপনি কিভাবে জানেন?”

ইউসুফ তার কথার প্রেক্ষিতে জবাব দিলোনা। হাত মেলে বললো,”কথা দাও।”

বিভা হাতে হাত রাখলে কিছুসময় চুপ করে রইলো ইউসুফ।
এরপর নিস্তব্দতা চিঁড়ে বললো,

-“তুমি জানো বাহাদুর কে?”

বিভা ভ্রু কুঁচকালো। বললো,

-“কেনো? ছোট চাচা- চাচীর ছেলে।”

-“বাহাদুর আসার আগে কোনোদিন তাদের নামও শুনেছো? এমনকি আজ অবধিও বাড়িতে কখনো উনাদের নিয়ে কথা হয়না। কেনো জানো? উনাদের সাথে আমাদের পরিবার সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলো। কেনো করেছিলো তা জানো? কারণ উনারা সম্পর্ক আপন চাচাতো ভাইবোন ছিলেন। ঠিক আমাদের মতো।”এটুকু বলেই থেমে গেলো ইউসুফ।

বিভা অবুঝ নয়। ইউসুফের কথার মানে সে বুঝতে পারলো। সবটা চকচকে ঝকঝকে হয়ে যাবার পরও কেমন অসহায় আতর্নাদ করে জিজ্ঞেস করলো,

-“কিসব বলছেন?”

ইউসুফ বিভার দিকে তাকালোনা। জানলার কাঁচের ভেতর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলতে থাকলো,
-“আমাদের দাদারা দুইভাই ছিলেন। দাদা বড় ছিলেন। দাদার ঘরে আমাদের বাবারা তিনজন। আর দাদার ছোট ভাইয়ের ঘরে একমেয়ে। সেই একমাত্র মেয়েই হলেন বাহাদুরের মা। অর্থ্যাৎ আমাদের ছোটচাচী। ছোটচাচা আর তিনি একে অপরকে ভালোবাসতেন। দাদা বা তার ভাই কেউই এ সম্পর্ক মেনে নেয়নি। উনারা সাফ অসম্মতি জানিয়ে দেন। শেষমেষ তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। দাদা ছোটচাচাকে তেজ্যপূত্র ঘোষনা করেছিলেন। চাচী একমাত্র সন্তান হবার পরও তার বাবা কোনোদিন আদরের মেয়ের খোঁজ নেননি। গ্রামে জানাজানি হয় সহজেই। তখনও হয়েছিলো। আমাদের রক্ষণশীল বনেদি পরিবার। দাদা তাকে বউ নিয়ে বাড়িতে উঠতে দেননি। ছোটচাচা শহরে চলে যান। বছর তিনেকের মাথায় বাহাদুর জন্ম নেয়। বাহাদুরের একবছর পূর্ণ না হতেই ট্রলার দূর্ঘটনায় চাচা-চাচী মারা যান। একসাথেই মারা যান। বাহাদুর ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলো। দাদারা দুজনই তখন মারা গিয়েছেন। আমাদের বাবারা বাহাদুরকে নিয়ে আসেন। চাচা-চাচীর কবর কোথায় তাও তাদের দেখার ভাগ্য হয়নি।
এত বড় পরিবার, মা-বাবার স্নেহ থেকে চাচা-চাচী বন্চিত হয়েছিলেন কেবল এই ভালোবাসার অপরাধে। জেনেশুনে এমন অপরাধে আমি কিভাবে তোমাকে জড়াবো বিভা? বলো? আমাদের এতো হাসিখুশি পরিবারে এমন নির্মমতার পূনরাবৃত্তি আমি চাইনা বিভা।
আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা যেমন সত্য আমি তোমাকে পাবোনা এটা ঠিক তেমনই একটা সত্য। বিচ্ছেদ দরকার নেই বিভা, ভালোবাসাটাই না হোক?”

বিভা নিষ্প্রান চেয়ে রইলো। চোখ বেয়ে টুপ টুপ ফোঁটা পড়ছে। কথা ভঙ্গ হয়েছে হয়তো। নাকি ইউসুফের কথা শেষ?

ইউসুফ কেমন যেনো হাসলো। বিভার আঙুল নাড়াচাড়া করতে করতে বললো,

-“জানো? আমি ভালোবাসতাম না। তুমি আমাকে বাধ্য করেছো বিভা। জোর করে ভালোবাসিয়েছো। কবে থেকে তোমার পাগলামো শুরু হয়েছিলো আমার মনে নেই। আমার এতো বছরের জীবনে দ্বিতীয় কোনো নারীর এমন পাগলামো আমি দেখিওনি। আমি খুব অন্তর্মুখী স্বভাবের। তুমি জানো। আমি চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। থাকিও। তুমি খুব চন্চল। বিপরীতে আকর্ষন হয়। তোমারও বোধহয় তাই হয়েছিলো।
ছোট্ট থেকে তুমি আমার চোখের সামনেই বড় হয়েছো। ইভা ইউসুফ ভাই ডাকলেও তুমি আমাকে এজন্মে কোনোদিন ভাই ডাকোনি। এরপর যখন আরএকটু বড় হলে। ষোলো গড়িয়ে সতেরোতে পড়লে। যখন তখন আমার দিকে একধ্যানে চেয়ে থাকা কিশোরী চোখদুটো দেখে আমি সবই বুঝতাম। তোমার পাগলামোতে সাঁয় না দিলেও বাঁধা দিতাম না। তোমাকে কাছে না টানলেও, দূরে ঠেলে দিতাম না। আমার ভুল, অপারগতা। তারপর একটাসময় ওইযে তুমি আমাকে বাধ্য করে ফেললে। শত সংযম ভেঙে গুঁড়িয়ে ঠিক ভালোবাসিয়ে ফেললে।”

বিভা ডুঁকড়ে উঠলো। ইউসুফ বললো,”কেঁদোনা বিভা। আমি কখনো তোমাকে এসব বলতামনা। তুমি, ইভা, তোমরা ছোট মানুষ। তোমাদেরকে এসব কেও কখনো জানায়নি। প্রয়োজনবোধ করেনি। তোমার অনূভুতি ভয়ংকর হয়ে উঠছে বলেই আমি বললাম। ভেবেছিলাম হয়তো কিছুদিন গেলে তুমি এসব ভুলে যাবে। ভোলা তো দূর, বরং দিনকে দিন তুমি আমাকে এমনভাবে মনে করতে শুরু করলে যে আমি জানাতে বাধ্য হলাম।” ইউসুফ থামলো।

বিভার টলমলে চোখে চেয়ে স্মিত হেসে বললো,

-“চাচা তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসেন বিভা। আমি চাইনা তার চোখে তুমি কখনো, কোনোদিন অপ্রিয় হও।”

বিভা হু হু করে উঠলো। হেঁচকি তুলে বললো,”আপনি কিভাবে জানেন কেও মানবেনা?”

-“জানি।”

-“আমি ঠিক মানিয়ে নিবো।”

ইউসুফ শক্ত চোখে চাইলো। কাঠকাঠ গলায় বললো,
-“খবরদার। তুমি কক্ষণো কাউকে কিচ্ছু বলবেনা। আর পাগলামি করবেনা। কক্ষনো না। তুমি ছোট। ভালো খারাপের পার্থক্য করতে পারোনা। আমি যথেষ্ট বুঝি তোমার থেকে। তোমার সম্মান নিয়ে তুমি না ভাবলেও আমি ভাবি।”

বিভা চোখ তুললো। বাস্তববাদী ভীষণ কঠোর মানুষটার দিকে চাইলো। ভালোবাসা কি কখনো বুঝেশুনে করা যায়? এতো নিয়মে বাঁধা থাকে? এতো চিন্তা, এতো ভাবনা সেখানে ঠাঁই পায়?
বিভা আর প্রশ্ন করলোনা। বুকে গাল লেপ্টে দিয়ে চোখ বুজলো। মাথাব্যাথা করছে। খুব।
তার লতানো দেহটাকে নরমহাতে আগলে ধরলো ইউসুফ। বিরবির করে বললো,

-“এ জীবনে সহস্রবার তোমাকে স্পর্শ করার অভিপ্রায় আমি মুখবুজে মাটিচাপা দিয়েছি। তোমার চোখের পানি মুছতে যেয়েও বারেবারে হাত গুটিয়ে নিয়েছি। যেখানে তোমার ভেজা চোখই আমার সহ্য হয়না সেখানে নিজে তোমার চোখের পানির কারণ হয়েছি। সহজ মনে করছো?”

-“উহু। করছিনাতো।”

-“তোমার শরীর খারাপ লাগছে? এত কাঁদলে কেনো?”

বিভার উওর পাওয়া গেলোনা। তার ছোট্ট শরীরটাকে আগলে নিয়ে এক চরম অন্তর্মূখী মানুষ প্রহর গুনলো। কাঁদতে কাঁদতে একসময় ইউসুফের চওড়া বুকটাতেই শিশুর মতো ঘুমিয়ে পড়লো বিভা।

~চলবে~

[রি-চেক করিনি]

~চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here