মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব -১২

#মেঘফুল_ফুটলো_মনে
#পর্ব – ১২
#লেখনীতে – আবরার আহমেদ শুভ্র

স্নিগ্ধ বাতাস, হালকা রোদ্দুর, সাথে মনমাতানো পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে সকালের পরিবেশটা একেবারে মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠেছে। এই পরিবেশে মনটা একেবারে সতেজতা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে যে কারোরই। সকালের মিষ্টি রোদ্দুর এসে পড়েছে তানজিমের মুখশ্রীতে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো সকাল হয়েছে। তাই সে দ্রুত ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমের চলে গেলো।

ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই দেখতে পেলো সকাল হতেই ঘরে গুছানো নিয়ে ব্যস্ত তার পরিবারের সকলে শুধুমাত্র তানভিন ছাড়া। সে যে উঠেছে তা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যাস্ত। সে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

— আম্মু সকাল সকাল এগুলো কি করছো? বাড়ীতে কি কেউ আসবে?

— ওমা সকাল হতেই ভুলে গেলি নাকি? কাল না বলেছিলাম মৃন্ময় বাবার বাড়ী থেকে লোকজন আসবে তোকে দেখতে। যা যা তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।

— কিন্তু মা, আমি এই বিষয়ে এখনও প্রস্তুত নয়। আমাকে অন্তত কয়েকটি দিন সময় দাও ভাবতে! আমারও তো একটা মতামত আছে তাই না? তোমাদের যেমন পছন্দ অপছন্দ আছে ঠিক আমারও পছন্দ অপছন্দ আছে। বিয়েটা আমার হবে আর সংসারটাও তো আমি করবো।তাই নাহ্? তাহলে আমার অগোচরে কেন তোমরা সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করলে না?

মাথা নিচু করে রাখলো শায়লা বেগম। মেয়ে তার সঠিক কথাই বলেছে। কিন্তু আদৌও কি তার স্বামীর সামনে সে এই বিষয়ে কথা বলতে পারবে? পারবে তার সামনে মেয়ের হয়ে কথা বলতে? যেই রাগি মানুষ না জানি কি না কি করে ফেলে। তানজিম তো তারও মেয়ে। তার তো অবশ্যই পছন্দ থাকতে পারে। সেটাই স্বাভাবিক ব্যাপার । মেয়ের সামনে গিয়ে দাড়ালেন তিনি। আলতো করে তানজিমের থুতনিতে হাত দিয়ে তিনি মেয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,

— দেখ মা, দেখতে আসছে মানে যে বিয়ে হয়ে যাবে এমন তো না। দেখতে আসবে তো দেখুক। তাদের পছন্দ হলে না বিয়ে ঠিক হবে। তুই এতো ভাবিস না। নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা তোর জন্য ভালো কিছু রেখেছেন।

— কিন্তু আম্মু আমার কথা তো শুনো।

— আর কোনো কথা আমি শুনতে চাই না তানজু। টেবিলে নাস্তা আছে খেয়ে নে নাহয় ঠান্ডা হয়ে যাবে । আর ওরা আসার আগে রেডি হয়ে নিচে আয়৷ আমার যাতে আর বলতে না হয়।

বলে শায়লা বেগম আবারও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। তার মনেও অস্থিরতা শুরু হয়েছে। সে চাই না মেয়ের মতের বিরুদ্ধে যেতে। এই যুগের মেয়ে বলে কথা। কতটা আপডেট এখনকার ছেলেমেয়েরা। যুগের সাথে সাথে এখন এদের কথারও মর্যাদা দেয়া উচিত। নাহয় হিতে বিপরীত হতে পারে। চাপা শ্বাস ফেললেন তিনি।

তার কথার বিপরীতে তানজিম হনহনিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। প্রচন্ড রাগ আর ঘৃণা লাগছে নিজের প্রতি। কেন সে তার পছন্দ অপছন্দের কথা সাহস করে তার বাবাকে বলতে পারছে না। হয়তো এই বলতে না পারাটা তাকে তিলেতিলে শেষ করবে।
______

— মাশা-আল্লাহ মেয়ে আমাদের যথেষ্ট পছন্দ হয়েছে। সবদিক থেকেই পার্ফেক্ট সে। আমরা আজই ফাইনাল কথা বলতে চাই। কি বলেন ভাই সাহেব?

বলে হাসিমুখে তানজিমের বাবা নাবিল আরমানের দিকে তাকালো ভদ্রমহিলা। কিছুক্ষণ আগেই এসেছে তারা রওশন প্যালেসে। তাদের সাথে মৃন্ময়ও এসেছে। সে ঠিক তানজিমের সামনের সোফায় বসেছে।

তানজিম মাথানিচু করে বসে আছে তাদের সামনে। ভদ্রমহিলার কথা শুনে বুক ফেটে কান্না আসছে তার। সে যেটা চায়নি এখন সেটাই হয়েছে তার সাথে। একবার তার মায়ের দিকে তাকালো সে। তার মাও অসহায় চাহনিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে । কিন্তু অবিশ্বাসের ব্যাপার হলো তানজিমের মা থমথমে কণ্ঠে বলে উঠলেন,

— আপা আপনার কথা আর মতামতের যথেষ্ট সম্মান আমরা দিবো কিন্তু এই বিয়ের তারিখ নিয়ে কথাটা আমরা পরে নাহয় আলোচনা করবো। সবই তো আর একদিনে হয় না।

তাদের কথার মাঝেই গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো মৃন্ময়,

— পরে কেন আলোচনা হবে আন্টি? আমি চাই আজই পারিবারিকভাবে বিয়েটা হোক। আমি কোনো দেড়ি করতে চাই না এই ব্যাপারে।

মৃন্ময়ের কথা শুনে অবাক হলো উপস্থিত সকলে। আরও বেশি অবাক হলেন তানজিমের বাবা নাবিল আরমান। কি বলছে ছেলেটা। খানিকক্ষণ মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— তোমার শিক্ষার অভাব আছে মৃন্ময়। কাল এই কথাটা বলা অব্দি আমি ভেবেছি আমি আমার মেয়ের জামাই হিসেবে তোমাকে চয়েজ করে ভুল করিনি। কিন্তু এখন বুঝলাম এই চয়েজটা আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে একটা চয়েজ ছিলো৷ বুঝলে তোমার শিক্ষার বড্ড প্রয়োজন। বিশেষত পারিবারিক শিক্ষাটা! বিষেশত গুরুজন থাকলে সেখানে কিভাবে কথা বলতে হয় আর তাদের কথার সম্মান কিভাবে করতে হয় সেটা শিখা জরুরি। সো, ইউ ক্যান গো নাও। যার তার সাথে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো না।

বলে সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন তানজিমের বাবা নাবিল আরমান। তার নিজের উপর রাগ হচ্ছে কেননা তিনি মেয়ের অমতে মেয়েকে তার নিজের পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। যদি শায়লা বেগম তাকে এব্যাপারে সর্তক করে তাদের কথার জবাব না দিতেন তাহলে হয়তো এমন শিক্ষিত অমানুষের সাথে তানজিমের বিয়ে ঠিক করে ফেলতেন।
______

ফুয়াদের মা ফারহানা খানম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ছেলেকে নিয়ে। যে ছেলে কখনও রাত ১২টা অব্দি বাড়ির বাহিরে থাকেনি আজ এখন ১.১৫ বাজতে চলল অথচ সেই ছেলে এখনও ফিরে নি। মনে মনে অজানা ভয় আঁকড়ে ধরল তাকে। ছেলেটা কিছু করে ফেলেনি তো? তার উচিত ছিল ছেলের কথাটা একটিবার শুনবার। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলে যতোই দেরি করে আসুক আজ তার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে হবে তার। হঠাৎ গাড়ির আওয়াজ শুনতে পেলেন তিনি। বুঝতে পারলেন ফুয়াদ এসেছে। তাই তিনি নিচে এলেন দরজা খুলতে।

ফুয়াদ বেল দেয়া মাত্রই দরজা খুলে দিলো তার মা। একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেই সে। অতঃপর নিজের রুমের দিকে হাটা দেয় সে।

— ফুয়াদ তোর সাথে আমার কথা আছে। একটু রুমে আয় আমার।

রুমে যাবে এমন সময় তার মা ডেকে নিজের রুমে আসতে বলে চলে গেলো। ফুয়াদ বলে উঠলো,

— ফ্রেশ হয়ে আসছি।

বলে দ্রুত তার রুমে চলে গেলো। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে তার মায়ের রুমে এসে নক করলো।

— আসবো?

ফারহানা খানম একবার তার দিকে তাকিয়ে ভেতরে আসার অনুমতি দিয়ে তার পাশে বসতে বললেন। এবার নিজের ছেলের হাত নিজের হাতে রেখে বলে উঠলেন,

— আমার উপর অভিমান করে আছিস তাই না বাবা? হওয়ারই কথা। কারণ, মা হয়ে আমি তোর কথাটা গুরুত্ব দিতে চাই নি।

ফুয়াদ সন্তর্পণে তার মায়ের হাতে চুমু খেলো। তারপর তার মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে উঠলো,

— মা, আমি একদমই অভিমান করি নি। আমি জানতাম আমার মা কখনও আমার কথা ফেলবে নাহ্। এন্ড আই অলওয়েজ ভিলিভ দিজ্ মা।

তার মায়ের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। ফারহানা খানম নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— তানজিম মাকে খুব ভালোবাসিস তাই না বাবা? তা ওকে কি এখন আমার ছেলের বউ করে আনবো নাকি?

ভ্রুযুগল পরপর নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ফুয়াদের মা।ফুয়াদ খানিকটা লজ্জা পেলো। পাওয়ারই কথা, কোনো মাঝে যদি ছেলেকে এমন কথা বলে সে অবশ্যই লজ্জা পাবে্। আর ফুয়াদের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয়। ফুয়াদ মনে মনে বলে উঠলো,

— তাহলে ডোজ কাজে লেগেছে্। মাঝে তুমি চলো ডালে ডালে আর আমি চলি পাতায় পাতায়।

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here