মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব -১১

#মেঘফুল_ফুটলো_মনে
#পর্ব- ১১
#লেখনীতে- আবরার আহমেদ শুভ্র

— আমি এই বিয়ে কিছুতেই করতে পারবো না ধ্রুব, তুই বুঝতে পারছিস না মা কি বলছেন। কিভাবে আমি আমার কেশবতীকে হারাবো বল? কিভাবে? সে তো আমার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। কি করে ভুলবো তারে?

ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে একনাগাড়ে কথাগুলো বলল ফুয়াদ। চোখে স্পষ্ট ক্রদ্ধতা তার! সাথে নোনাজল! জলে টলমল করছে তার চক্ষু জোড়া। সাথে প্রচন্ডরকম ভয় তার কেশবতীকে হারানোর। একটা অজানা ভয় তাকে খুবলে খাচ্ছে।

— তাহলে কি করবি বল? আর আমি বুঝতে পারছি ভাই তোর এই অস্থিরতা! কিন্তু এইছাড়া আর কোনো উপায় নেই তো!

— তুইও কি আমায় এই বিয়ে করতে বলছিস? ড্যাম ইট! তোদের সাথে পরামর্শ করাই আমার ভুল হয়েছে। থাক তুই। তোরা সবাই গাধার দল! তোদের সাথে এসব নিয়ে কথা বলাটা আসলেই বোকামি।

— এতো রাগছিস কেন? আর তোকে কি আমি বলছি এই বিয়ে করতে? আগে আমার কথাটাই তো শোন তারপরেই নাহয় বলবি! আর এটার তোর লাইফের ব্যাপার। তাছাড়া এই সংসার করবি তুই, তোর মা নয়। না মানে আন্টি তো আর তোর বউয়ের সাথে সংসার করবে না। তাহলে তুই এই বিষয়ে এতো রাগারাগি করলি কেন? তুই রেগে না গিয়ে উনাকে ঠান্ডা মাথায় বুঝাতেই তো পারতিস। হয়তো তিনি বুঝতে পারতেন। আর তা না করে করলিটা কি তুই?

ফুয়াদ বুঝতে পারলো সে কতোবড় ভুল করেছে। দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রাখলো সে। অতঃপর মাথা তুলে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলে৷ আর ধ্রুব বসে ফুয়াদের কান্ডকারখানা লক্ষ্য করলেও এর কোনো কিছুই বুঝতে পারছে না সে। অথচ যে ছেলে কয়েক মূহুর্ত আগেও পাগলামি করছে সে এখন কতো সুন্দর করে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। সে বোকার মতো বলে উঠলো,

— এই ভাই তুই কি তোর কেশবতীর শোকে পাগল হয়ে গেছোস নাকি?

ধ্রুবের এমন কথায় চোখ ছোট করে তাকালো তার দিকে ফুয়াদ। ধ্রুব শুকানো ঢুক গিলে মাথা চুলকিয়ে বলে উঠলো,

— না মানে হঠাৎ এমন করে হাসছিস তো তাই বললাম আরকি, হিহি হিহি।.. বলে বোকার মতো হাসি দিলো সে।

— তুই আর মানুষ হলি না ভাই। আমি বুঝতে পারছি না সারাহ তোর কি দেখে পছন্দ করছে। এই আবুইল্লা মার্কা কথাগুলো শুনে?

— সে যায় দেখে করুক তাতে তোর কি? চল বাসায় যাবো।

— আচ্ছা দাঁড়া তুই আমি আসছি।… বলে ফুয়াদ কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো।
______

বিকেলের দিকে তানজিম নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে যেতেই সোফায় তার বাবার সাথে মৃন্ময়কে বসে কথা বলতে দেখে থমকে গেলো। চোখে তার আতংকের ছাপ! এই লোকটা এখানে কেমনে এলো? এখানে কেনো সে? এই লোকটা কোনোমতেই তার পিছু ছাড়ছে না। শেষপর্যন্ত তার বাড়ী পর্যন্ত এসে গেছে সে। মনে মনে দোয়া পড়ছে যাতে এই ছেলে কোনোমতেই তার বাবার সাথে অতিভক্তি দেখাতে না যায়। তাহলে তার বাবা এমনিতেই গলে যাবে। স্বভাতই সে দেখতে বেশ সুন্দর আর স্মার্ট। কিন্তু একটু বেশিই স্মার্ট! যাকে বলে ওভারস্মার্ট! আর তানজিম তো তাকে ধলা ক্ষেত বলেই ডাকে। এমন ওভার স্মার্ট ছেলে তার মোটেও পছন্দ নয়। আর ভাবলো না কিছু এই ব্যাটার সম্পর্কে! সে আর কোনো দিকে না তাকিয়েই সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো যেখানে তার মা চাচিরা মিলে মৃন্ময়ের জন্য রাতের খাবার রান্না করছে। তানজিম তাদের এমন আদিখ্যেতা দেখে অবাকই হলো। তার চাচির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

— বড়ো আম্মি এসব কি হচ্ছে এখানে?

তার বড় চাচি তার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। অতঃপর তার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার থুতনিতে হাত দিয়ে বলে উঠলো,

— বাড়ীতে কুটুম এসেছে তাকে নিশ্চয়ই দেখেছিস এখানে আসার সময়? তার জন্যই এই আয়োজন। অবশ্য কিছুদিন পরে কুটুম আর শুধু কুটুমই থাকবে না, সে তো এই পরিবারেরই একজন সদস্য হয়ে যাবে।

তার চাচির কথা শোনে খানিকটা চমকে উঠলো সে৷ কি বলছে তার চাচি? এই পরিবারের সদস্যদের একজন হবে মানে? নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। সে এবার তার মায়ের দিকে তাকালো। তার মা একমনে রান্না করায় ব্যস্ত। তার মায়ের উদ্দেশ্যে সে বলে উঠলো,

— আম্মু, বড় আম্মু এসব কি বলছে? ও-ই লোকটাই বা কে যে এই হঠাৎ এই পরিবারের সদস্য হবে? ঠিক উড়ে এসে জুড়ে বসার মতোন? তুমি কি আমাকে একটু খোলাসা করে বলবে?

এবার শায়লা বেগম তার মেয়ের দিকে তাকালেন। খুব সন্তর্পণে নিজের কাছে টেনে নিলেন। তানজিমের কাছে তার মায়ের এমন আচরণ ঠিক সুবিধার লাগলো না। তবুও নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে তার মায়ের কি বলবে সেটার শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করলো। শায়লা বেগম নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলেন,

— কিছুদিন পরই তো তুই শ্বশুড়বাড়িতে চলে যাবি!… তার মাকে থামিয়ে তানজিম বলে উঠলো,

— শ্বশুড়বাড়িতে চলে যাবো মানে! কি বলতে চাইছো তুমি আম্মু?

— মানে আমরা তোর জন্য মৃন্ময় বাবাকে পছন্দ করেছি। সেও তোর বাবাকে তার পছন্দের কথা বলেছে। এমনিতেই তাকে তোর জন্য বেশ মানাবে। ছেলে হিসেবেও অনেক ভালো সে। সে তোকে বিয়ে করতে চায়। আর কাল তার বাড়ীর লোকজন আসবে এখানে। আর নয়না আপা তোরে ঠাট্টাছলে এটাই বুঝাতে চেয়েছে পাগলি।

মায়ের কাছে এমন কথা ক্ষনিকের জন্যেও আশা করেনি তানজিম। তারমানে তার ধারণায় সঠিক ছিলো। এই মৃন্ময় তার বাবা মাকে ফুসলিয়ে এসব করেছে্।

— কোনো খবর ছাড়াই? তোমরা কতোটুকুই বা জানো ওনার সম্পর্কে? দেখামাত্রই পছন্দ অতঃপর বিয়ে! এখানে কি গরুর দামাদামি করে বিক্রয় করা হয়?

মেয়ের কথা শুনে কিছু বললেন না। আবারও চুপচাপ নিজেদের কাজে মনে দিলো।

কিন্তু সে তো কখনওই এই বিয়ে হতে দিবে না। তানজিম প্রতিজ্ঞা করলো সে কিছুতেই মৃন্ময়কে বিয়ে করবে না। তানজিম’র কাছে মৃন্ময়ের ক্যারেক্টর নিয়ে বেশ কনফিউজড লাগে। তাই সে বদ্ধ পরিকর সে এই মৃন্ময় নামক ছাড়পোকাকে বিয়ে করবে না। যতো ঝড় বাধা আসুক না কেন। সে তার কথা থেকে একপাও পিছু হটবে না। তানজিম মনে মনে বলে উঠল,

–বেঁচে থাকতে কখনও আপনাকে আমি বিয়ে করবো না মিস্টার মৃন্ময় আহসান। কি ভেবেছেন ফুসলিয়ে এসব করে আমায় বিয়ে করবেন? আপনার আশায় সব গুড়ে বালি হয়ে যাবে! আপনার আসলে রহস্য সেদিনই পাবলিক হবে। রেহাই তো আপনি কোনোমতেই পাবেন না।… বলে আর কারও দিকে না তাকিয়েই নিজের রুমে ছুটলো সে।

কিন্তু মাঝপথেই মৃন্ময়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই তানজিমের কোমরে ধরে ফেলে সে। তবুও তানজিম নিজেকে সামলে সামনের লোকটির দিকে তাকালো না। আবারও নিজে রুমের দিকে চলে গেলো সে। আর মৃন্ময় তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনেমনে বলে উঠলো,

–অবশেষে তোমায় আপন করে নিবো। এখন কোনো শক্তি নেই যে তোমায় আমার থেকে আলাদা করতে পারবে। তুমি শুধুই আমারি হবে।… বলে উল্টোদিকে চলে গেলো।
______

তানভিনের কাছ থেকে তানজিমের বিয়ের কথা শুনলো ফুয়াদ। এটাও শুনলো যে তানজিমের সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে মৃন্ময় আহসান। মনে মনে প্রচন্ড পরিমাণ ক্ষুব্ধ হলো সে। যদিও প্রকাশ করলো না সে। অতঃপর কথা শেষ করে তার মায়ের রুমের দিকে চলে গেলো ফুয়াদ। আর মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলো,

–শেষ পর্যন্ত আমার কথাকে পাত্তা দিলে না বাবু। আমার প্রপার্টির উপর হাত বাড়িয়েছো। যেই প্রপার্টির একছত্র অধিপত্য আমাদের। ভুল করেছো যখন মাসুল তো অবশ্যই দিতে হবে। আপাতত, লেটস ইনজয়।.. বলে অধরের কোণে বাঁকা হাসিটা চওড়া হলো ফুয়াদের।

#চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here