মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব -১০

#মেঘফুল_ফুটলো_মনে
#পর্ব – ১০
#লেখনিতে – আবরার আহমেদ শুভ্র

–মৃন্ময় ভাইয়াকে তোকে চিনে কেমনে তানজু? কখন তোরা একে অন্যের পরিচিত হলি? একবারের জন্যও বললি না আমায়?

বিকেলে ছাদের গাছগুলোতে পানি দিচ্ছিলো তানজিম। হঠাৎ সারাহ-র এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল সে। তার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে উঠল,

–ওনাকে আমি ঠিক মতো চিনিও না। সেদিন হঠাৎ করেই বড় ফুফির বাড়ীতেই তার সাথে দেখা। তারপর থেকে সে কয়েকবার আমার সাথে কথা হয়েছে। এছাড়া আর কিছু না।

–মাই গড! রাজশাহীতে দেখা হয়েছে তার সাথে অথচ আমাকে একটিবার বলতে পারলি না তুই? তানজিম তুই কি সত্যিই আমাকে তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবিস?… খানিকটা অভিমানের সুরে বলে উঠল সে।

–উঁহু, এতো অভিমানের কিছু নেই ভাই। তোকে বলবো সেই সময়ও পায়নি। অথচ বলবে ভেবেও ভুলে গেছিলাম। প্লীজ ভাই রাগ করিস না।

–আচ্ছা রাগ করলাম না, তবে আমায় একটা কথা বলতো মৃন্ময় ভাইয়া তোর সাথে কথা বলার সময় একটা জিনিস কি তুই খেয়াল করেছিলি?

ভ্রুকুঁচকে সারাহ-র দিকে প্রশ্ন মূলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

–কি জিনিস! আর কিসের কথাই বা বলছিস ক্লিয়ারলি বল প্লীজ।

–আমি মৃন্ময় ভাইয়ের চোখে অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেছি তোর প্রতি!

–বাজে কথা বলিস না। সেই অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করলেও কোনো লাভ নেই। এসব কিছু আর হবে না। একবার নিজেকে ভেঙে চুরমার করেছি বার বার নয়। এসব আর আমার দ্বারা একদমই পসিবল নয়।

খানিকটা বিস্মিত হয়ে তাকালো সারাহ তানজিমের দিকে। কথাটা বলার সময় কেমন যেন কেঁপে কেঁপে উঠল সে। এবার সারাহ তানজিমের উদ্দেশ্যে যেটা বললো সেটা শুনতে মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে। সারাহ তানজিমের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো। তারপরে আসতে করে জিজ্ঞেস করল ,

–তানজু তুই কি জানিস ফুয়াদ ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে?

অবিশ্বাসের ন্যায় সারাহ-র দিকে তাকালো তানজিম। সারাহ-র বলা কথাটা যেন কাঁটার মতো বিঁধল তার মনে। কোনো কথায় বলতে গিয়েও বলতে পারে না সে। কেমন যেন কথাগুলো গুলিয়ে আসছে তার। কোনো কথায় বেরুচ্ছে না তার মুখ থেকে। মন জুড়ে শুধুই অস্থিরতা শুরু হয়েছে। খানিকটা দুঃস্বপ্নের মতো মনে হলো সারাহ-র বলা কথাটা। তবুও নিজেকে সামলিয়ে জিজ্ঞেস করল,
–তু্ তুই আ্ আমার সাথে মজা করছিস তাই না সারাহ! এটা কি মজা করবার বিষয় হইলো?

তানজিমের কথায় এবার সন্দেহ হলো সারাহ-র। সে বুঝতে পারছে তানজিমের ভাঙা মন আবারও ভালোবাসার রঙে রাঙা হয়েছে। তবে আবারও হয়তো সেই মনটা খুব বিচ্ছিরিভাবে ভেঙে যাবে। তাই সে দ্রুত তার কথার প্রতিত্তোরে বলে উঠে,

–তানজু মজা আমি একদমই করছি না। আর এমন একটা লাইফ ইভেন্ট নিয়ে মজা করাটা অসম্ভব! সত্যিই বলছি আমি। কারণ, আম্মুকে আমি খালামনির সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে শুনেছি। তাই তোকে শেয়ার করলাম বইন।

তানজিমের অস্থিরতা আরও বেড়ে গেলো। ঠিক কি ঘটেছে তার ভেতরটায় না নিজে বুঝতে পারছে না কাউকে বুঝাতে পারছে। এর কি কারণ? এই অনুভূতিগুলোর কি আলাদা কোনো সমাবেশ ঘটতে চলেছে তার জীবনে? ঠিক কোন রঙে রাঙিয়েছে তাকে সে বুঝতে পারছে না। কিন্তু সে মনে মনে ঠিক করে নেয় এই অনুভূতিকে কখনও সে প্রকাশ করবে না। শত কষ্টের মাঝেও। যেটা যেমন আছে ঠিক তেমনই চলতে থাকুক। হোক না কিছু না পাওয়া। কিছুক্ষণ একা থাকতে পারলে খুব বেশি ভালোই হতো। তাই কোনোমতে সে বলে উঠলো,

–আচ্ছা আমি নিচে যায় একটু কাজ আছে। তুইও নিচে চলে আয়। সন্ধ্যা তো হয়ে গেলো।… বলে সে দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলো।

তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সারাহ। মনে মনে বলে উঠলো,

–তোর জীবন এমন কেন তার বুঝার ক্ষমতা আমার নেই, তবে দোয়া করবো তোর জীবনে যেন একজন গোছালো মানুষের আগমন ঘটুক, যেন তোর জীবনটা সুন্দর করে গুছিয়ে দিতে পারে।… বলে সেও ছাদ থেকে নেমে গেল।
______

দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন হয়ে গেলো। অথৈয়ের দেহে এখন মাতৃত্বের ছাপ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়েছে। অষ্টম মাসে পদার্পণ করেছে সে। যে তানিম একসময় তাকে অবহেলা করেছে সেই এখন প্রতিটি মুহূর্তে তার যত্ন নেয়। তা দেখে মনে মনে হাসেন নয়না বেগম। আর ভাবেন যে, যাক ছেলের মনে এতোদিনে সুবুদ্ধি উদয় হলো।

রাতে খাবার খাওয়ার পর রুমে এসে যখন বসবে তখনই অথৈর তাড়া দেয়া শুরু হলো,

–ইয়ে মানে আমার জন্য একটু ফুসকা আনবেন? একদম জ্বাল দিয়ে!

অবাক হলো অথৈয়ের এমন আবদারে। চোখ বড়বড় করে জিজ্ঞেস করল,

–এতো রাতে কেমনে সম্ভব বলবে? তাছাড়া এখন ফুসকার দোকান সব বন্ধ থাকবে।

–না বন্ধ থাকবে না, প্লীজ নিয়ে আসেন না। প্লীজ প্লীজ।

তার এমন বাচ্চাদের মতোন আবদার উপেক্ষা করার সাহস করেনি তানিম। এখন অসম্ভব ভালোবাসে অথৈকে সে। তার পাশে গিয়ে বসলো সে,

–একটা কথা বলবো শুনবে?

–না একদমই না। কারণ, আমি জানি আপনি একটা বাহানা দিয়ে আর আনতে যাবেন না।

হাসলো তানিম তার দিকে তাকিয়ে। অতঃপর নিজ থেকেই বলে উঠলো,
–সেটা নয়, নিশ্চয়ই যাবো। তার আগে প্রমিজ করো এর পর বেবি হওয়ার আগ পর্যন্ত আর এসব নয়। এটাই লাস্ট। ওকে?

তানিমের কথায় চোখ ছোট ছোট করে তাকালো সে। মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলো,
–হুম, ওকে প্রমিজ। এখন গিয়ে নিয়ে আসবেন।

মুচকি হাসি দিয়ে ফুচকা আনতে গেলো সে।
______

–ফুয়াদ তোর বিয়ের জন্য আমরা একটা মেয়ে দেখেছি। মাশা’আল্লাহ্ মেয়ে সবদিক থেকেই পার্ফেক্ট। ইনফেক্ট মেয়ে অনেক গুণী!

চেম্বারে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো ফুয়াদ। হঠাৎ মায়ের কথা শোনে বিরক্তে চোখমুখ কুঁচকে গেলো তার। অসময়ে ফালতু কথা বলায় রাগে কপালের শিরাগুচ্ছ ফুলে উঠল সেটাই স্পষ্ট! সে খানিকটা বিরক্ত নিয়ে তার মায়ের দিকে তাকালো। তার মা ফারহানা খানম এক মনে নিজের কাজ করে চলেছেন। ছেলের রিয়েকশনে তার কোনো নজর নেই। ফুয়াদ শান্ত স্বরে বলে উঠলো,

–মা এখন বিয়ের সময় নয়। তাছাড়া আমার প্রচুর সময় প্রয়োজন।

–কখন হবে তোর সময়? আমি মরে গেলে? বেশ তখনই করিস।

মায়ের কথায় মন খারাপ হয়ে গেলো ফুয়াদের। সে তার মাকে খুব ভালোবাসে তাই সে কখনোই চায় না ফারহানা খানমকে কষ্ট দিতে। সাথে সাথে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তার মাকে। মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে উঠলো,

–মা আমি জানি তুমি আমার বিয়ে নিয়ে আমার চেয়ে অনেক বেশিই এক্সাইটেড! কিন্তু মা এখন যেটা বলবো সেটা হয়তো তোমার খারাপ লাগবে!

–আমি মা! আমি বুঝি তোর মনে কি চলছে! এটাও যানি তোর পছন্দ আছে। তবে এটাই মনে রাখ তুই যেটা ভাবছিস সেটা কখনও হওয়ার নয়। এটা অসম্ভব ফুয়াদ।

–কিন্তু মা…

–আমার কসম, তুই যদি আমার কথা না রাখিস তাহলে..

–বেশ তোমার যখন এতোই ইচ্ছে তাহলে আমি কিছুই বলবো না। তবে মনে রেখো, তুমি তোমার সেই ফুয়াদকে আর কখনও পাবে না। হারিয়ে ফেলবে তোমার সেই ফুয়াদকে যাকে তুমি ছোট্ট থেকে এতো বড় করেছো।… বলে হনহনিয়ে বাড়ির থেকে বেড়িয়ে গেলো।

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here