মেঘবৃত্ত পর্ব ৩৫

#মেঘবৃত্ত
#পর্ব_৩৫ ( ধামাকা ১)
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

বৃত্ত আর মেঘা সামনাসামনি বসে আছে। বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা কাটিয়ে কথা বললো বৃত্ত। তার কথার শুরুটা ছিল খানিক এমন,
— তুই কি আমায় ভালোবাসিস, মেঘ? আমার মনে হয় তুই আমার প্রতি দূর্বল? আমি কি ঠিক বলছি, মেঘ?

বৃত্তের মুখে এহেন সত্য কথা শুনে মেঘা একদফা চমকালো। বৃত্ত জেনে গেছে? তবে, মেঘা নিজেকে সামলালো। অজান্তেই ভিজে যাওয়া দু নয়ন মুছে নিয়ে ধরা কণ্ঠে বললো,
— হ্যাঁ, ভালোবাসি তোকে আমি। একে যদি তুই আমার দোষ বলে আখ্যায়িত করতে চাস, তবে তাই ঠিক। আমি জানিনা কবে, কখন আমাদের বন্ধুত্বের মাঝখানে এই ভালোবাসাটা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি শুধু জানি, আমি তোকে ভালোবেসেছি। সব সীমা-পরিসীমা অতিক্রম করে নিজের মনকে তোর নামে দলিল করে দিয়েছি। আমি কিছু জানিনা, শুধু জানি আমি তোকে ভালোবেসেছি। শুধু একটুখানি ভালোবেসেছি!

মেঘা কথাটা বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। বৃত্ত তখনো নির্বিকার! তার দৃষ্টি স্থির, মৃত সমুদ্রের ন্যায় শান্ত! যেনো সে জানতো এমন কিছুই হবে! মেঘার উত্তর এমন হবেই! কান্নারত মেঘা দুচোখ মুছলো! চোখের পানিতে তার চিবুক ভিজলো, ভিজলো তার কণ্ঠদেশ! বৃত্ত গম্ভীর সুরে বললো,
— আমি যদি তোকে ভালো না বাসি, তুই কি করবি তখন? আমায় ছেড়ে চলে যাবি?

মেঘা কাঁপলো খানিক। চট করে মাথা তুলে বৃত্তের চোখের পানে তাকালো। বৃত্ত আবারও বললো,
— বল, কি করবি? ছেড়ে যাবি আমাকে?

মেঘা নিজের রাগ আর সংযত করতে পারলো না। রাগে আগুন হয়ে বৃত্তের কলার খামচে ধরে তার চোখের দিকে চেয়ে বললো,
— ডাফার, তোকে ভালোবেসেছি আমি। স্বার্থপর নই আমি। নিজের প্রাণকে একা ছেড়ে যাওয়ার মত মন যেনো আমার কখনো না হয়! আমি সত্যিই মরে যাবো তাহলে! তুই বিহীন আমি অন্ধকার, বৃত্ত। সত্যিই অন্ধকার!

মেঘা কান্না করতে করতে একসময় বৃত্তের কাঁধে মাথা হেলালো। বৃত্তের শার্টের কলার এখনো তার হাতের মুঠোয় মুচড়ে ধরে রাখা। বৃত্ত তখনো নির্বিকার! সে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এমন পরিস্থিতির বৃত্ত জীবনেও একবারও পরে নি। একদিকে একটা বন্ধুত্ব অপরদিকে মেঘার ভালোবাসা। কোনটা গ্রহন করবে সে?
হঠাৎ করে কি মনে করে বৃত্ত বলে উঠলো,
— আর আমি যদি তোকে ভালোবাসি, তখন?

মেঘা কান্না চট করে থেমে গেলো। বৃত্তের কাঁধের থেকে মুখ তুলে তাকালো তার ঠিক চোখের দিকে। বৃত্ত তখনো মেঘার দিকে চেয়ে। মেঘা হাসলো একটু। কান্নামাখা মুখশ্রীতে হাসিটা যেন সদ্য ফোঁটা গোলাপের ন্যায় দেখালো। মেঘা বললো,
— আমি সুখে মরেই যাবো সেদিন।
___________________________
গত দুদিন ধরে বৃত্ত একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। সর্বক্ষণ মাথার মধ্যে ঘুরছে, মেঘার একেকটা কথা, একেকটা আচরণ! বৃত্ত নিজেকে সময় দিচ্ছে তার অনুভুতিগুলো গোছানোর! হয়তো, সে একটুখানি সফল হয়েছে বটে। বৃত্তের এমন নীরবতার কারণ মেঘার বেশ বুঝতে পারছে। ভয় হচ্ছে তার, তার এমন অনুভূতি জানার পর বৃত্ত যদি তার সাথে আর কখনো সহজ হতে না পারে? তখন? মেঘা তো মরেই যাব। এই দুনিয়ার সব সহ্য করতে পারবে সে, শুধু বৃত্তের অবহেলা সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই। কিন্তু, মেঘা আগবাড়িয়ে বৃত্তের সাথে একরত্তিও কথা বলেনি। থাকুক না, সে তার মত। মেঘা নাহয় আড়ালে আবডালে তাকে ভালোবেসে যাবে। ‘একপাক্ষিক ভালোবাসার ন্যায় বিশ্রী সুখ এই পৃথিবীতে দুটো নেই’

আজ রবিবার। হুমায়ূন আহমেদের ‘ আজ রবিবার’ বলে এক নাটক আছে। আপাতত টিভিতে সেই নাটকটাই সম্প্রচারিত হচ্ছে। বৃত্তের মা হুমায়ূন আহমেদের বিশাল ভক্ত বলা যায়। হুমায়ূন আহমেদের লেখা সবগুলো বই দিয়ে উনার বুকশেলফ ঠাসা, ঠাসা। হুমায়ূন আহমেদের নাটকও উনি প্রায় শ বার দেখে ফেলেছেন। তবুও যেনো তার তৃষ্ণা মেটে না। আজও বসেছেন টিভির সামনে। ‘ আজ রবিয়ার ‘ নাটকটা দেখার জন্যে। জোরপূর্বক মেঘাকে পাশে বসিয়েছেন। মেঘা টিভির সামনে বসেছে ঠিকই, তবে মনে মনে সে অস্থির, অবিন্যস্ত! আজ প্রায় চারদিন, বৃত্ত মেঘার থেকে দূরে দূরে থাকে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি একটা কথাও বলে না। মেঘার এসব দেখে ভীষণ কান্না পায়। তবুও, মুখ আটকে বসে থাকে সে। আজও এমন হচ্ছে। মনে হচ্ছে, চিৎকার করে কান্না করতে। এই দুনিয়াকে জানিয়ে দিতে, ‘শোনো হে পৃথ্বী, ভালবাসার ন্যায় বিষাক্ত তলোয়ার আমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। আমি মরে যাচ্ছি, ভেঙে যাচ্ছি। ‘সে’ কেনো আমার সাথে কথা বলে না? ‘

হঠাৎ মেঘার ফোন বেজে উঠলো। মেঘা একপ্রকার চমকে উঠলো তাতে। চটজলদি পাশ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে রিসিভ করলো সে। ওপাশ থেকে এক ভরাট কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো,
— মেঘ, একটু আমার কাছে আসবি? একটুখানি দেখতে চাই তোকে। চক্ষের তৃষ্ণা যে মেটে না আমার। তুই মেটাবি, একটুখানি জল হয়ে নামবি আমার চোখে?

সুখে মেঘার চোখে জল নেমে এলো। সত্যিই কি সে দিন এসেছে? যার অপেক্ষায় মেঘা এতটা মাস ধরে জ্বলছে, ভাঙছে, গড়ছে! মেঘা হুট করে কেঁদে ফেললো। ভাঙ্গা গলায় বললো,
— আ-আমি আসছি। এক্ষুনি আসছি আমি।

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here