মেঘের দেশে তারার মেলা পর্ব -০১

“তোর লজ্জা করে না পিহু আমার নাম্বার দিয়ে মেয়েদের থেকে চকলেট, চিপস, আইসক্রিম এগুলো নিতে? লজ্জা করবেই বা কেমনে লজ্জা থাকলে তো।

~ দেখ আহির ভাই একদম বাজে কথা বলবি না। কি প্রমাণ আছে আমি তোর নাম্বার দিয়েছি?

“কয়টা প্রমাণ লাগবে বল? যাদের দিয়েছিস তারাই নিজের মুখে বলেছে। কতোদিন বলেছি আমার নাম্বার কাউকে দিবি না। তবুও তুই দিয়ে দিস। এবার দিয়ে ৭টা সিম পাল্টানো লাগলো তোর জন্য। এরপর থেকে তুইও আর আমার নাম্বার পাবি না।

~ ওরে আমার কোথাকার প্রধানমন্ত্রী আসলেন রে। তার নাম্বার নেওয়ার জন্য মনে হয় আমি ম*রে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী নয় তবে ভবিষ্যৎ পুলিশ বুঝলি। পুলিশ হওয়ার পরে আমার সব চেয়ে বড় শ*ত্রু তোরে আগে জেলে দিবো। খেয়ে দেয়ে কাজ নাই পড়াশোনা নাই। সারাদিন শয়*তানি। এবার আমি ছোট কাকাই কে বলবো তোকে বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করতে। সকাল সকাল আমার ঘুমের ১২টা বাজিয়ে দিয়েছে।

~ আমি কি কাউকে বলেছি নাকি সকাল সকাল তোকে ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙাতে। তুই কি ঘটক যে আমার বিয়ের ঘটকালি করবি। আমিও বড় আম্মু কে বলবো তোকে বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করতে।

গাধা একটা ছেলেদের বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করে না। তোদের মতো আপদ ঘরে টেনে আনে।

~ কিহ এতো বড় অপমান। দেখ এবার আমি কি করি।

তুই যাতো! সকাল সকাল কেনো এসেছিস! ওহ বুঝেছি সকাল সকাল ভিক্ষা করতে এসেছিস। কিন্তু পিহু ফকিরের জন্য আমার বাড়িতে কোনো চাল / ভাত নেই।

~ তোকে আমি পরে দেখে নিবো। আগে বল অর্পা কোথায়?

আমি কি জানি খুঁজে নে। বলেই গান গাইতে গাইতে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় আহির। পিহু প্রচন্ড বিরক্ত হয়। এই ছেলের ভাব তার একদম সহ্য হয় না। অর্পা কে ডাকতে ডাকতে ভেতরে যায় পিহু।

আহিরের মা সকাল সকাল পিহু কে দেখে বলে, কি রে পিহু তুই এতো সকালে সবাই ঠিক আছে তো?

~ হ্যাঁ সবাই ঠিক আছে। বড় আম্মু, অর্পা কোথায় ওর সাথে একটা জরুরি মিটিং ছিল আমার।

আরফান রহমান একটু অন্য শহরে যাবেন। তাই সকাল সকাল খেতে বসে ছিল। পিহুর কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো” তোদেরও আবার জরুরি মিটিং হয়” তা মিটিং না হয় পরে করবি আয় আমার সাথে খেতে বস। তোর বড় আম্মু আজকে ফজরে রান্না করেছে। খেতে খেতে আমিও শুনি তোদের মিটিং এর বিষয় বস্তুটা কি। কথা বলতে বলতে অর্পাও হাজির।

না বড় আব্বু আমরা ছোট বলে কি আমাদের প্রাইভেসি নেই নাকি। এখন খেতে ইচ্ছা করছে না তোমরা খেয়ে নাও। অর্পা তুই চল। আরেকটা কথা তোমাদের বাড়িতে নাকি আজকে পিঠা খাওয়ার দাওয়াত?

হ্যাঁ! কিন্তু তোর দাওয়াত সব সময়। খেয়ে তারপর যাবি দুজন এক সাথে বের হলে কখন ফিরবি ঠিক নেই। না খেলে যেতে দিবো না। আয় তাড়াতাড়ি বস তো আমার অনেক কাজ আছে। কথা গুলো বলে খাবার পরিবেশণ করতে লাগলো পিহুর বড় আম্মু।

বাধ্য হয়ে দুজন খেতে বসলো। তখনই রুমে আসলো আহির। আগেই বুঝে ছিলাম শুক্রবারে সকাল সকাল কোনো ফকির ছাড়া আর কেউ আসবে না। তা কাকিমনি কি তোকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে নাকি।

পিহু ছলছল চোখে আরফান রহমানের দিকে তাকালে। তিনি আহির কে একটা ধমক দিয়ে খেতে বসতে বলেন। আহির বাবা কে উপস্থিত দেখে আর কিছু না বলে খেতে বসে পরে। পিহু মিটমিট করে হাসছে।

বিষয়টা আহির খেয়াল করলেও এখন আর কিছু বলে না। চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলো। বাবার সাথে সম্পর্কটা তার ভালো যাচ্ছে না।

পিহুর বাবারা তিন ভাই এক বোন। সবার বড় আরফান রহমানের এক ছেলে এক মেয়ে ,মেজো আরাফ রহমানে দুই ছেলে, ছোট আহান রহমানের এক মেয়ে আর অনিমা রহমানের এক ছেলে। মাঝে মাঝে ভাইয়ের সংসারে এসে অশান্তি লাগানোই তার কাজ। বর্তমানে তিন ভাই মিলে ব্যবসা করে। আর ছেলে মেয়েদের মানুষ করছে। তিন ভাইয়ের আলাদা আলাদা বাড়ি হলেও মনের কোনো দূরত্ব
নেই।

আহিরের পুলিশ হওয়ার ইচ্ছাটা আরফান রহমানের একদম পছন্দ না। কিন্তু আহির যতবার এর কারণ জিজ্ঞেস করছে ততবারই এড়িয়ে গেছেন তিনি।

শীতকালে পিঠাপুলির উৎসব শীতকে যেন আরো জাঁকজমক করে তোলে। বাড়িতে মেহমানদের যেনো মেলা বসে যায়। গ্রামে হোক বা শহর শীত মানেই পিঠাপুলির উৎসব। হরেকরকমের পিঠা কতশত নকশাই না থাকে সেই পিঠাতে।

বাড়িতে মেহমান আসলে এক দুই কথা বলবেই তাই বলে তোমার ছেলে রাত বিরাতে বের হয়ে যাবে? আর তারা ভুলতো কিছু বলে নি। একবার, দুবার করতে করতে অনেক বারই পুলিশের চাকরির জন্য কত কিছুই না করলো! তাতে কি কোনো লাভ হয়েছে? দেশে কি পুলিশের চাকরি ছাড়া আর কিছু নেই? পুলিশের চাকরিই কেন করতে হবে তাকে?
আজকে বাড়ি আসলে আমার রুমে পাঠিয়ে দিবে। খুব জরুরি কথা আছে তোমার ছেলের সাথে। লায় দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছো এখন আমাকেই কিছু করতে হবে।

সব সময় আমার ছেলেটার সাথে মেজাজ দেখিয়ে কথা বলো কেন? ছেলেটার আমার কত স্বপ্ন পুলিশের চাকরি করবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমার দোয়া আছে আমার ছেলের সাথে। সে ঠিকই একদিন পুলিশ হবে। একদম আমার ভাইয়ের মতো। আর তোমার বোনেরই বা কি দরকার ছিল বাপের পয়সায় খায় বলার!? আমার ছেলে তোমার পয়সায় খাবে নাত পাড়ার লোকেরা খাবে? মেহমান মেহমানদের মতো থাকতে বলবে।

তর্কাতর্কি মধ্যেই গান গাইতে গাইতে বাড়ি আসলো আহির। তার গানের লাইন গুলো এমন ছিল জেনো আরফান সাহেব কে উদ্দেশ্য করেই গাইছে,,,

চাকরি কেমনে হবে মামা, চাচার
জোর তো নাই, ব্যাচেলার আমি ব্যাচেলার,,,

দেখলে তোমার ছেলেকে আমরা যে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। একবারো তাঁকালো না পর্যন্ত।

মিসেস আরফান স্বামীর কথা পাত্তা না দিয়ে। আহিরের পেছন পেছন খাবার নিয়ে ছুটলেন। মায়েদের যে সব দিকে খেয়াল রাখতে হয়।

অর্পা আর পিহু পাশাপাশি শুয়ে আছে। বাবা মা বাড়ি চলে গেলেও পিহু যায়নি। শোন অর্পা তোর ঔ শয়*তান ভাইটা পুলিশ হওয়ার আগেই দেখবি আমি পুলিশ হয়ে গেছি।

~ ওভাবে বলিস না পিহু ভাইয়ার কতো শখ বলতো। কিন্তু আমার মাথায় একটা কথাই আসে না যে সব কিছুতে টিকে যাওয়ার পরেও ভাইয়ার চাকরি কেনো হয় না?

এটা কিন্তু তুই ঠিক বলেছিস। বিষয়টা গভীর ভাবে ভাবতে হবে। তুই টেনশন নিস না আমরা এইচএসসিটা দিয়ে নেই। আমাকেই কিছু একটা করতে হবে।

~ ছাতার মাথা। তুই কি পিন্সেস ডায়না রে যে তুই বললেও চাকরি দিয়ে দিবে।

আমি পিন্সেস ডায়নার খালাতো নানির ফুফাতো বোনের নাতির মামার মেয়ে। আমাকে রোজ ফোন দেয় তো মাঝে মাঝেই কথা হয় আমাদের।

তুই চাপাবাজী বন্ধ করবি? ঘুৃমাতো কাল সকাল সকাল প্রাইভেট আছে।

তুই আর তোর ভাই তো এখন আমার মূল্য বুঝবি না। তবে একদিন বুঝবি বুঝবি।

অর্পা আর পিহু কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পরে। সকালে দিদুনের চেচামেচিতে ঘুম ভাঙে দুজনের। বিরক্ত হয়ে বাহিরে চলে আসে। পিহুর দিদুনের নাম ফুলমতি। ফুলমতি তার ভাইয়ের ছেলেকে ফোন দিবে এটা নিয়ে চেচামেচি করছে। আরফান রহমান অনেক বার নাম্বার চাইলেও দিতে পারছে না। তার মতে ফোন থাকলেই ফোন দেওয়া যায়। নাম্বার লাগবে কেন!!

চেচামেচি শুনে আহিরও বের হয়ে আসে। ফুলমতি কে উদ্দেশ্য করে বলে,,, কি গো সুন্দরী সকাল সকাল রেডিও চালু করেছো কেনো?

তুইও এমন ভাবে বলছিস আমাকে দাদুভাই। আমি আর থাকবো না এই বাড়িতে চলে যাবো। তোরা আমাকে আমার ভাইয়ের বাড়িতে রেখে আয়।

তোমাকে ছাড়া আমি কেমনে থাকবো দিদুন। কোথাও যেতে হবে না। আমাকে বলে কি হয়েছে।

মহিনকে মোবাইল করতো। ওর সাথে আমার কথা আছে।

আচ্ছা এখনই ফোন নিয়ে আসছি। এইতো চলে এসেছি এবার নাম্বার দাও।

তুই কি তোর বাবার মতো মূর্খ হয়ে গেলি? মোবাইল তো তোর হাতেই আছে নাম্বার লাগবে কেন? তুই তাড়াতাড়ি মোবাইল করে আমার হাতে দে।

আহির করুন চোখে সবার দিকে তাকালো। সবাই মিটমিট করে হাসছে।

হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠলো ” চিঠি এসেছে কেউ আছেন?

এতো সকালে কিসের চিঠি আসলো! আহিরে চোখে মুখে খুশির ঝলক।

~!?

#চলবে?

#মেঘের_দেশে_তারার_মেলা💚
#Mishka_Moon (লেখনীতে)
#সূচনা_পর্ব

( বিঃদ্রঃ অধিকাংশ মানুষেরই দেখি কাজিন রিলেটেড গল্প পছন্দ। তাই আমিও একটু চেষ্টা করলাম। কেমন হয়েছে জানাবেন। ভুল ক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here