মেঘের দেশে তারার মেলা পর্ব -১২

#মেঘের_দেশে_তারার_মেলা 💚
#Mishka_Moon (লেখনীতে)
#পর্ব_১২

“আহির রুমে এসে বসে ভাবতে থাকে এই দুই ভাই বোনের অতীতটা কি!?

“তবে এটা জানতে তার অপেক্ষা করতে হবে রাত পর্যন্ত। আহির এতটুকু বুঝে গেছে মায়শা তাকে মিথ্যা বলবে না। তার থেকেই সব কিছু বের করতে হবে”।

“কোনো খবর না দিয়ে ঢাকায় চলে আসে আহির আর পিহুর বাবা মা সাথে দিহান আর বিহানও এসেছে। কিন্তু আহির আর পিহু যেখানে থাকতো সেই বাসা তো এখন ফাঁকা কেউ নেই। বাড়ি দারোয়ানের কাছে জিজ্ঞেস করলে বলে~ “আহির স্যাররা তো অনেক দিন ধরে এখানে থাকে না৷ সবাই মিলে আহির আর পিহুকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেরাই সারপ্রাইজড হয়ে গেছে। আরফান আর কিছু না ভেবে পিহু কে ফোন করে বলে~” তোরা এখন কোথায়!?

“পিহুর ভর্তি পরীক্ষা তেমন ভালো হয়নি আহির থাকলে হয়তো ভালো হতো এসবই বসে ভাবছিল। বড় আব্বুর ফোন পেয়ে সালাম দিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়”।

~”কেনো বড় আব্বু!?
~”যেটা বলছি তার উত্তর দাও। আমরা সবাই এসেছি তোমরা বাসা চেন্জ করেছো একবারো তো বলোনি।
~” আসলে বড় আব্বু,,,,

“কথা শেষ হওয়ার আগেই আরফান রহমান আবার ঠিকানা জিজ্ঞেস করে। বাধ্য হয়ে পিহু ঠিকানা বলে দেয়। এখন তো আর কিছু করার নেই। মেহের এখনো থানায় যায়নি তবে যাওয়ার জন্যই তৈরি হচ্ছিল। পিহু এসে মেহের কে বিষয়টা জানালে, মেহের আবির কে ফোন করে এখানে আসতে বলে দেয়।

______

“কলিং বেল বাজতেই পিহু গিয়ে দরজা খুলে দেয়। মা কে দেখে দৌড়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। পিহুর মা সহ সবাই পিহুর দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। অনেকটা শুখিয়ে গেছে। মুখে কোনো হাসি নেই।”

“মুখোমুখি বসে আছে সবাই। আবির ঢাকাতেই থাকে তাই তারও আসতে বেশি সময় লাগেনি। যেহেতু পিহুর আর তার বিয়ের বিষয়টা নিয়ে তার মা এখনো রেগে আছে তাই তাদের সম্পর্কের কথা আরো কিছু দিন পরে জানাতে চেয়ে ছিল। কিন্তু সবার কাছে মেহের পরিচয় দিতে গিয়ে সত্যি বলতে হয়েছে। তবে এতে সবাই বেশ খুশিই হয়েছে। কিন্তু আহির তার কথা জিজ্ঞেস করতেই পিহু,মেহের,আবির তিনজনই চুপ করে যায়। কি বলবে এখন তারা? আহিরের মা আবার জিজ্ঞেস করে ~”কি রে বলছিস না কেনো আহির কথায়!?

~”আসলে বড় মামি আহির একটা কাজে গেছে।

~”সে-তো বুঝতেই পারছি বাসায় নেই। তা তিনি কখন আসবে শুনি? আজকে ওর খবর আছে মাস পেরিয়ে গেলো মা কে একটা ফোন করে না এতোটাই ব্যস্ত সে বলতে বলতেই কান্না করে দেয়।

“পিহু কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বলে ~” বড় আম্মু তুমি কান্না করো না।

~”আচ্ছা করবো না। এখন বলতো আহির আসবে কখন রাতে নাকি?

~” নাহ!
~”তাহলে কি বিকালেই চলে আসবে?

“আবির আর পিহু একজন আরেক জনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাঁকায় কি বলবে এখন তারা!? আবির পিহু কে চোখ দিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে বলে। আরফান রহমানের কাছে গিয়ে পাশে বসে বলে~”বড় মামু আমি সবাই কে কিছু বলতে চাই!?

~” শোনার জন্যই তো বসে আছি বল?
~” আহির এক বেলার কাজে যায়নি। অনেক গুলো দিনের জন্য গেছে।

~” মানে!?

মেহের এগিয়ে এসে বলে ~” আমি বলছি। সব কথা খুলে বলতেই আহিরের মা কান্না ভেঙে পরে। কান্না করতে করতেই পিহুর দিকে এগিয়ে গিয়ে দুই কাঁধে হাত রেখে বলে~” আমার ছেলেটাকে তুই আটকাতে পারলি না? যদি আর ফিরে না আসে আমি আমার ছেলেকে কোথায় খুঁজবো বল!?

“পিহু এবার আর সহ্য করতে পারে না হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়। মেয়ের কান্না কি বাবা মা সহ্য করতে পারে!?

“পিহুর বাবা মা এগিয়ে এসে পিহু কে সামলাতে থাকে। কিন্তু পিহুর চোখের পানি যেনো আজকে শেষই হচ্ছে না।”

_______

“রাতে আহির ছাদে আসতেই মায়শা কে দেখতে পায়। আগে থেকে বসে আছে। আহির তার আসার কথা জানান দিতে হালকা একটু কাশি দেয়।”

মায়শা চোখ বন্ধ করে বসে আহিরের অপেক্ষাতেই ছিল। চোখ না খুলেই আহির কে উদ্দেশ্য করে বলে ~”বসুন!

আহিরের একটু ইতস্ততবধ হলেও পাশে বসে পরে। আহির মায়শা পাশাপাশি ছাদের রেলিং এর পাশে বসে আছে অনেকটা সময় হয়ে গেছে। এখনো মায়শা কিছু বলছে না। তাই বাধ্য হয়ে জিজ্ঞেস করে ~” আপনি কি কিছু বলবেন না?

~”বলবো। তবে দেখছিলাম আপনার ধর্য্য কতটা।
~” আশা করি দেখা শেষ।

~” হুম।
~” এখন তাহলে বলুন।

মায়শা আহিরের জানার এতো আগ্রহ দেখে হালকা হাসে। তারপর আহির কে উদ্দেশ্য করে বলে বলছি।

অতীত,,,

“আমাদের একটা ছোট পরিবার ছিল। সুখের কোনো অভাব ছিল না। আমি, ভাইয়া,বাবা,মা মিলে আমাদের পরিবার। কিন্তু আমাদের সুখের পরিবারটা একটা ঝড়ে শেষ হয়ে গেলো। আমার বাবা একজন সাংবাদিক ছিল। মা হাউজওয়াইফ। ভাইয়া তখন সবে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।”

“একদিন ঝড় বৃষ্টির রাতে বাবা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বাড়ি আসে। শরীরে অসংখ্য আ*ঘা*তের দা*গ। ভাইয়া বাসায় ছিল না বন্ধুদের সাথে ট্যুরে গিয়ে ছিল। কথায় বলে না! বিপদ যখন আসে তখন সব দিক দিয়েই আসে। আমি ক্লাস সেভেন এ পড়তাম।”

“বাবাকে ঔ অবস্থায় দেখে আমি আর মা ছুটে যাই কাছে। বাবা মায়ের হাতে একটা ফোন দিয়ে বলে ~” মায়ানের মা এ–খানে কি–ছু ভি–ডিও আছে। কয়েক জন নে—তার গো—পন ভি–ডিও– এগুলো ও–দের হাতে প–ড়তে দিও না। আ–মার ছেলে মেয়ে–দের দেখে রে–খো। এটা বলে বাবা শেষ নি*শ্বাস ত্যা*গ করে।

“আমার আর মায়ের পুরো পৃথিবী যেনো থমকে গেলো। বাবা কে আমি অনেক বেশি ভালোবাসতাম বাবার মৃ*ত্যু*টা স*হ্য করতে পারিনি।”

“ভাইয়া আসার অপেক্ষায় জা*না*জা পরেরদিন রাতে দেওয়া হলো। ভাইয়া কে বাবার মৃ*ত্যু কথা বলেনি শুধু খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি আসতে বলা হয়েছিল। ভাইয়া আসলো সন্ধ্যার দিকে। মা সেই রাতে থেকেই সেন্স*লেস হয়ে পরে গিয়ে ছিল।২৪ ঘন্টা পরে মায়ের সে*ন্স ফেরে বাবা কে নিয়ে যাওয়ার সময় শেষ বারের মতো দেখতেও পারেনি।

“জানেন সেদিন ভাইয়া যখন বাড়ি আসে। আমার, মায়ের, আর বাবার জন্য অনেক জিনিস নিয়ে এসেছিল। বাবার সেগুলো দেখতেও পেলো না। আমি টিফিনের টাকা গুছিয়ে একটা ঘড়ি কিনে ছিলাম বাবার জন্য। বাবার অনেক পছন্দ ছিল ঘড়ি। কিন্তু বাবাকে আর দেওয়া হলো না। সেদিনই যে বাবা আমাদের ছে*ড়ে চলে গেলো।”

“সেদিন অনেক মানুষ এসেছিল। অনেক নেতা, অনেক পুলিশও এসেছিল। তারা বলে ছিল এটার তদন্ত করবে। কিন্তু না তারা কিছুই করেনি। মা তাদের হাতে বাবার দেওয়া ফোনটা তুলে দিলে তারা এটা ওটা বলে আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। তারপর কয়েকদিন মিডিয়ার কাছে নাটক করে কে*সটা ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের বুঝতে বাকি ছিল না তারা টাকা খে*য়েছে। অনেক কাছের মানুষও পর হয়ে গেলো। ভাইয়া রে*গে একটা পুলিশের গা*য়ে হাত তোলায় একদিন জে*লে থাকতে হলো। মা টাকা দিয়ে ভাইয়া কে ছাড়িয়ে নেয়। আমাদের যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে আমাদের দুই ভাই বোন কে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। কিন্তু ভাইয়া কিছুতেই এসব ভুলতে পারে না।”

~” কি করে পারবে বলুন তো। এটা কি কোনো সন্তানের পক্ষে
মানা সম্ভব!?

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here