মেঘের দেশে তারার মেলা পর্ব -১১

#মেঘের_দেশে_তারার_মেলা 💚
#Mishka_Moon (লেখনীতে)
#পর্ব_১১

~ “তুই এখন থেকে আমার সব কথা শুনে চলবি। যা করতে বলবো তাই করতে হবে। বল রাজি”!?
~ “সুযোগে সৎ ব্যবহার করছিস তো আমারও মনে থাকবে”।

~ “তোর দোলনা কেনা লাগবে না। তুই যা মনে রাখ”।
~” না না আমি রাজি আহির ভাই”।

~ “এইতো পথে এসেছিস। যা আমার খুব গরম লাগছে একটু শরবত বানিয়ে আনতো”।

~” কিসের শরবত!?
~”যেটা পারিস বানিয়ে আন যা। আমি এখানেই বসে আছি।

একটু পরে পিহু দৌড়াতে দৌড়াতে শরবত নিয়ে আসে। দৌড়াতে গিয়ে অর্ধেক ফেলেই দিয়েছে। আহিরের হাতে শরবতের গ্লাস দিয়ে বলে,,~”এনেছি এখন দোলার ব্যবস্থা করে দে।

আহির বলে”ধর্য্য ধর আগে খেতে দে। এই বলে এক চুমুক দিতেই ফেলে দেয়। পিহুর দিকে তাকিয়ে বলে” এটা কি বানিয়েছিস”?

~”কেনো ভালো হয়নি বাসায় যা ছিল তাই বানিয়েছি”।
~”তুই একটু খেয়ে দেখ।

~” না না আমি অন্যের জন্য বানানো জিনিস খাইনা।
~” ভালো কথা চিনির বদলে লবণ কেনো দিয়েছিস!??

~” বাসায় চিনি শেষ আর বিকল্পও নেই তাই লবণ দিয়ে কাজ চালিয়েছি।

~” খুব ভালো কাজ করেছিস।
~”কেনো খুব খারাপ লাগার তো কথা না আমি লেবুও দিয়েছি”।

~” দিয়েছিস তবে লবণ খুবই কম হয়ে গেছে”।
~” ও আচ্ছা এই ব্যাপার। এখনি আনছি।

~” থাক ভাই তোর শরবত আমার লাগবে না। তুই ফে*ল দোলনা পাবি না যা ভাগ।

~” আমি কিন্তু বড় আব্বু কে গিয়ে বলবো তুই আমাকে মে*রে*ছিস।

~” বল গিয়ে যা। আমি কাউকে ভ*য় করি নাকি।
~” তাইনা এখনি বলছি।

“পিহু কিছুটা দূরে গিয়ে আবার ঘুরে আসে। আর আহির কে উদ্দেশ্য করে বলে~” তুই না আমার ভালো ভাই দে না। আমি আর দুষ্টুমি করবো না। ভালো হয়ে যাবো সত্যি”।

~” তুই আর ভালো যাইহোক আচ্ছা তুই যা আমি দেখছি।
~” কিন্তু দোলনা রাখবি কই কাকাই তো নিতে দিবে না তোদের বাড়িতে।

~” অর্পার রুমের সাথে বারান্দা সেখানে দিলেই হবে আমরা দুজন খেলবো।

~” আচ্ছা।

“আহিরের কাছে এতো টাকা নেই যে পিহু কে এখন দোলনা কিনে দিবে। তাই কি করবে ভাবতে থাকে হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি চলে আসে। আহির নিজেকে বাহবা দিতে দিতে ফুলমতির কাছে যায়। ফুলমতি কখনো আহিরের ইচ্ছে অপূর্ণ রাখেনি। বড় নাতি বলে কথা। ফুলমতির ঘরে গিয়ে তার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরে”।

~” কি রে দাদু ভাই কি হয়েছে তোর এভাবে কিছু না কইয়া শুয়ে পরলি যে!?

~” দিদুন আমার মন খারাপ।
~” কেনো রে কি হয়েছে! তোর বাপে কিছু কইছে?

~” না না তা না।
~” তয় না কইলে বুঝুম কেমনে?

~” দিদুন আমার একটা দোলনা খুব পছন্দ হইছে।
~” তুই আবার দোলনা পছন্দ করিস কবে থেকে!?

~” সে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু আমার কাছে তো এতো টাকা নাই দোলনা কেনার।

~” তোর টাকার কথা ভাবন লাগবো না। আমি আছি না?
~” তুমি কিনে দিবে সত্যি?
~” হ

“ফুলমতি আগের যুগের মানুষ। তাই আহির যতই তাকে শুদ্ধ ভাষা শিখানোর চেষ্টা করুক না কেনো এখনো সব কথা বলতে পারে না। তবে যেটুকু পারে যথেষ্ট”। ফুলমতি কে ছেলেরা যা টাকা দেয় হাত খরচের জন্য তা দিয়ে আহির কে দোলনা কিনে দেয়। ফুলমতির সব কিছুই ছেলেরা দেয় তারপরও হাত খরচের টাকা নিতে না চাইলেও জোর করে দেয়। সেগুলো ফুলমতি গুছিয়ে রাখে। আহির দোলনাটা এমন জায়গায় লাগিয়ে দেয় যাতে পিহু আর অর্পা যখন ইচ্ছে তখন খেলতে পারে”। পিহু তো মহা খুশি। এতো খুশি হয়ে ছিল যে প্রায় এক সপ্তাহ আহির কে জ্বালায়নি। কিন্তু আহির সে তো কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিল না। পিহু তাকে বিরক্ত না করলে এখন যেনো তার আর ভালোই লাগে না। আহির এটা ওটা বলে পিহু কে আবার রাগাতে থাকে। পিহু প্রথম কয়েক দিন কিছু না বললেও পরে আবার তার ফ্রর্মে ফিরে আসে”।

_____________

বর্তমান,,
“কত না সুন্দর ছিল দিন গুলো। পিহু এখন কি করছে? সেও কি আমাকে আমার মতো করেই মিস করে? নাকি আমাকে ছাড়াই সে ভালো আছে”!?

“দুটো মানুষের একই কষ্ট,একই ভাবনা। দূরত্ব যেনো তাদের জীবনে অন্ধকার হয়ে এসেছে। একজন আরেক জন কে দেখার জন্য ছটফট করছে। কে জানে এ দূরত্ব কবে শেষ হবে। কবে দেখা মিলবে তাদের”।

“সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসে পিহু কালকে তার ভর্তি পরীক্ষা। দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। তবে পড়ার প্রতি সে এখন আর আগের মতো মনোযোগী নয় পড়তে বসেও আহিরের কথা ভাবে। বাড়ির লোকদের আর কতদিন মিথ্যা বলবে? আহিরের কথা জিজ্ঞেস করলেই কাজে আছে বলে কথা ঘুরিয়ে ফেলে। আহিরের মা তো এবার বলেই দিয়েছে কি এতো ব্যস্ত থাকে মাকে একবার ফোন ও করতে পারে না! আমি কয়েকদিন পরেই ঢাকায় আসছি। পিহু কোনো মতো কথা বলে ফোন রেখে দেয়”।

“মেহের সকালে নাস্তা রেডি করে পিহু কে ডাকতে আসে। এখন তাদের অনেক মিল হয়ে গেছে। আগের মতো ইতস্তবোধ এখন আর হয়না পিহুর। এসেই পিহু কে উদ্দেশ্য করে বলে~ “ওগো আমার দেবরের পাগলী বউ চলো নাস্তা করতে হবে। মন খারাপ থাকলেও পিহু হালকা হাসে। এভাবেই দিন কাটছে পিহুর”।

“আহির কিছু তথ্য প্রমাণ জোগাড় করতে পেরেছে। সেগুলো খুব সাবধানে তার নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছে। তার কাছে একটা ফোন আছে তবে সেই ফোন থেকে এখনো কাউকে ফোন করেনি বিশেষ প্রয়োজনে রেখে দিয়েছে। কিন্তু যেগুলো পেয়েছে তা খুব তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু সে এখান থেকে বের হবে কি করে”!?

“হঠাৎ দরজায় কেউ নক করায় দরজা খুলে দেয় আহির। বাহিরে মায়শা দাঁড়িয়ে আছে। আহির তাকে দেখে জিজ্ঞেস করে ~” কিছু বলবেন?

~”হুম। ভাইয়া আপনাকে ডাকছে।
~”কেনো?
~”জানি না।
~”আচ্ছা আসছি।
~”একটা কথা বলবো?
~”জ্বি বলুন?

~”আপনাকে তো তুলে আনা হয়েছে কিন্তু আপনি এমন ভাবে থাকেন মনে তো হয় নিজের ইচ্ছাতে এসেছেন।

~”ঝামেলা করলেই তো আপনার ভাই আমাকে যেতে দিবে না। তাই আমার তো কিছু করার নেই।

~”আপনাকে আমি সত্যি অনেক ভালোবাসি।
~”আমি যে অন্য কাউকে ভালোবাসি।

~” জানেন ছোট বেলা থেকে আমি যাকে বেশি ভালোবেসেছি তাকেই হারিয়েছি। কিন্তু আপনাকে আমি হারাতে চাইনা। আমি সব জানি আপনি এখানে কেনো এসেছেন তবুও কাউকে কিছু বলিনি। এটা জানতে পারলে ভাইয়া আপনাকে মে*রেই ফেলবে। আমার ভাইয়া এই কাজে ইচ্ছা করে আসেনি। এর পেছনে একটা বড় কারণ আছে”।

~”কি কারণ?
~”এখন এসব বলার সময় নয়। রাতে ছাদে আসবেন সব বলবো। এখন চলুন।

“বসার রুমে মায়ান চৌধুরী বসে রয়েছে। চার পাশে অনেক কয় জন গার্ড দাঁড়িয়ে আছে। আহির আর মায়শা গিয়ে সামনে দাড়ায়। খবরের কাগজ পড়তে পড়তেই তাদের বসতে বলে মায়ান”।

আহির কোনো ভনিতা ছাড়াই জিজ্ঞেস করে ~”কেনো ডেকেছেন?

~” আমার বোন আপনাকে ভালোবাসে আর আপনাকেই বিয়ে করতে চায়। এতে কি আপনার আপত্তি আছে!?

“আমি আমার পিহু কে ভালোবাসি। সে আমার বিবাহিত বউ। তাকে ছেড়ে কিছুতেই এই বিয়ে করতে পারবো না। কথা গুলো মনে মনে বললেও কন্ঠে আনতে পারে না আহির। যদি পিহুর কোনো ক্ষতি করে দেয় এরা! এখন আহির পিহুর কাছে নেই তাকে বাঁচাবে কেমনে”?

~”কি এতো ভাবছেন,পরিবারের কথা! তাদেরও কি নিয়ে আসবো এখানে!?

~”না তার প্রয়োজন নেই। আমার কিছুটা সময় দরকার।
~” কিন্তু,,

কথার মধ্যেই মায়শা মায়ান কে থামিয়ে বলে~” উনি সময় নিক আমার কোনো সমস্যা নেই।

মায়ান বলে ~”ঠিক আছে বোন যা বলবে তাই। বোন তুই একটু ভেতরে যা তো।

“মায়শা প্রথমে যেতে না চাইলেও শেষমেষ যেতে হয়। মায়ান আহির কে উদ্দেশ্য করে বলে ~” পৃথিবীতে আপন বলতে আমার শুধু বোন আছে। সে ছাড়া আমার আর কেউ নেই। কিন্তু সে আমাকে আমার কাজের জন্য ঘৃণা করে। সে আমার কাছে থাকে না। শহরে থাকে সেখানে থেকেই পড়াশোনা করে। আমার কাছে খুব কমই আসে। আমার পরিচয়ও সে কাউকে দেয়না। এতে আমার কষ্ট নেই আমার বোন ভালো থাকলেই আমি হ্যাপি। তার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি। আমার এতো ক্ষমতা আর আমি এটা জানতে পারবো না! যে আপনি পুলিশ। এতেও আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি আপনার পরিবারের কোনো ক্ষতি করবো না। তবে দেখবেন আমার বোন যেনো কষ্ট না পায়। তাহলে কিন্তু আমি আপনাকে ছাড়বো না। মানুষ কিন্তু জন্মগত ভাবে খারাপ হয়না পরিস্থিতি তাকে খারাপ বানায়। যাইহোক আপনি এখন আসতে পারেন”।

“আহির রুমে এসে বসে ভাবতে থাকে এই দুই ভাই বোনের অতীতটা কি!?

#চলবে?

( বিঃদ্রঃ পরীক্ষা শেষ। গল্প নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করবো
ইন শাহ আল্লাহ। রি-চেক করা হয়নি। 🤗🖤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here