মেঘের দেশে তারার মেলা পর্ব -১০

#মেঘের_দেশে_তারার_মেলা 💚
#Mishka_Moon (লেখনীতে)
#পর্ব_১০

~ “আমি যদি আর না ফিরে আসি তুই কি করবি!?
~ “ফিরবি না কেনো তুই?

পিহুর হঠাৎ খুব রাগ হয়ে যায়। আহির কে উদ্দেশ্য করে বলে” ~তুই কি আরেক বিয়ে করে সংসার করার জন্য যাচ্ছিস! যে আর ফিরবি না বলছিস?

পিহু কে রাগতে দেখে আরেকটু জ্বালানোর জন্য আহির বলে”~ কি জানি বলা তো যায় না করতেও পারি।

মজা করে কথাটা বললেও পিহুর খারাপ লাগতে শুরু করে। আসলে একটা মানুষ অন্য একটি মানুষের সাথে থাকতে থাকতে মায়ায় জড়িয়ে পরে। আর পৃথিবীর সব থেকে পবিত্র সম্পর্ক হচ্ছে স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্ক। পিহু আর কিছু না বলে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে যায়। আহিরও তাতে বাঁধা দেয়না কারণ পিহুর কিছুটা সময় একা থাকা দরকার। আহির চায় যাওয়ার আগে পিহু নিজের মনের কথা গুলো যেনো বুঝতে পারে।

সারা রাত পিহু এপাশ ওপাশ করেছে রাতে তার চোখে ঘুম আসেনি। ঘুম কাতুরে মানুষের চোখে ঘুম আসছে না এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?” না হলেও এটাই হয়েছে পিহুর সাথে। তার মন কিছুতেই আহির কে যেতে শায় দিচ্ছে না। সামনে ভর্তি পরীক্ষা এই সময়ে আহির কি করে পারছে এতো বড় শহরে একা ফেলে যেতে!”? এর উত্তর পিহুর জানা নেই। পিহুর চেয়ে আহিরের কাছে তার কাজই এখন বড়। চোখের দুপাশ থেকে জল গড়িয়ে শুখিয়ে গেছে। পিহু তবুও এক মনে তাকিয়ে আছে, মাথার উপরের ছাদটার দিকে।

আজকে সকালে আহিরের আর ডাকতে হয়নি পিহু একাই ওঠে গেছে। আহির ঘুম থেকে ওঠে দেখে পিহু রান্না করছে। মনে মনে হাসে আহির ” তাকে কি বিদায়ী খাবার খাওয়াবে?
তবে পিহু রান্নাটা ভালোই পারে।


পিহুকে মেহেরের বাসায় রেখে আহির চলে গেছে আজ এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহে আহির একবারো ফোন করেনি। পিহু নিজেই নিজের মনকে বোঝায় হয়তো ফোন করার সুযোগ পায়নি। কিন্তু মন কি তা বোঝে! মানুষ সব কিছুর সাথে লড়াই করতে পারলেও নিজের মনের কাছে সবাই পরাজিত সৈনিক। বাড়ি থেকে ফোন আসলেও পিহু এটা ওটা বলে কেটে দেয়। তবে এর মধ্যে একবার আবির এসেছিল। সে সবটাই জানে মেহের তাকে আগেই বলেছে। পিহুকে সান্ত্বনা দিয়ে চলে গেছে। আর কয়েকটা দিন বাকি পরীক্ষার কিন্তু পিহু তার তো পড়ার কোনো খবরই নেই। তবে মেহেরের সাথে তার ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে।

রাতে পিহু একা এক রুমে শুয়ে আছে। হঠাৎ ছোট বেলার কিছু কথা মনে পরে যায়।

একদিন আম বাগানে খেলতে গিয়ে পিহু আহির কে বলে” ~ আহির ভাই আম খাবো একটু গাছে উঠে পেরে দে না?

~ পাগল নাকি পিহু তুই বাগানের মালিক দেখলে পি*টাবে আমাকে।

~ কেউ নেই তো এখন উঠ না।

পিহু আর অর্পা নিচে দাঁড়িয়ে ছিল। আহির গাছে উঠতেই পিহু গিয়ে গাছের মালিক ডেকে আনে। আহির ভাবতেও পারেনি পিহু এমন করবে। আহির কে উদ্দেশ্য করে বলে” আমি ফকির না আহির ভাই? তোদের বাড়িতে ভিক্ষা করতে এসেছিলাম। দয়া করে রেখে দিয়েছিল। এসব বলা না দেখ কেমন লাগে। টাটা বাই বাই বলে চলে যায়।

নিচে গাছের মালিক আহির কে নেমে আসতে বলছে। কিন্তু নামলেই তো মা*র খাবে তাই চুপচাপ গাছের ডালে বসে আছে। লোকটির বয়সটা একটু বেশি গাছে উঠতে পারবে না। আর কাউকে ডাকতে গেলেই আহির নেমে পালাবে।

সকাল বেলা আরফান রহমান আহিরের হাতে টাকা দিয়ে বলেছিল “~ আমার দুই মেয়েকে আইসক্রিম কিনে দে তো নিয়ে গিয়ে।

আহির দুজনকে নিয়ে দোকানে যায়। একজন লোক তখন আহির কে জিজ্ঞেস করে বাবা এই মেয়ে দুটো তোমার কে হয়?

আহির হাসি মুখে বলে এটা অর্পা আমার বোন আর এটা পিহু কিন্তু ওর পরিচয় বলা যাবে না।

~” কেনো বাবা?
~ এতো করে যখন বলছেন তখন বলছি।

একদিন সন্ধ্যার সময় একটা বাচ্চা মেয়ে আমার কাকাই এর বাড়িতে যায়। গিয়ে বলে আমাকে কিছু খেতে দিবেন?

কাকাই আর কাকিমনি বলে ” ~ তুমি কে? কোথা থেকে এসেছো?

~ আমি ভিক্ষা করে খাই আমার কেউ নেই।

আমার কাকিমনির তো দয়ার শরীর এটাকেই রেখে দেয় মেয়ে বানিয়ে। তখন থেকে আমাদের বাড়িতেই থাকে। আহির কথা শুনে লোকটি শব্দ করে হাসে। অন্য দিকে পিহু রেগে আ*গু*ন। মনে মনে প্রতি*শোধ নেওয়ার অপেক্ষাতেই ছিল। আর শেষমেষ আহির কে এইভাবে ফাঁ*সিয়ে দিলো।

লোকটি দুই ঘন্টা গাছের নিচে বসে ছিল। এক সময় বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরে। সেই সুযোগে আহির নেমে পালিয়ে চলে আসে।

আহির যখন দশম শ্রেণিতে পড়তো তখন থেকেই অনেক প্রেমের প্রপোজাল পেতো। তবে সে সেদিকে পাত্তা দিতো না।কিন্তু পিহু আর অর্পা সেই সব মেয়েদের থেকে আইসক্রিম, চকলেট নিয়ে খেতো। তার বিনিময়ে তাদের চিঠি নিয়ে এসেছে আহিরের রুমে রেখে যেতো। আর লুকিয়ে আহিরের নাম্বার নিয়ে সেই মেয়েদের দিতো। একদিন চিঠি নিয়ে বাড়ি ফিরে, বসার রুম থেকে পিহু তার নিজের রুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ বইয়ের মধ্যে থেকে চিঠিটা পরে যায়। সেদিন স্কুল ব্যাগ না নিয়ে যাওয়ার কারণে বইয়ের ভাজে রেখে ছিল। একটু পরেই আহিরের রুমে রেখে দিতো পিহু আর অর্পা দুজন মিলে। কিন্তু তার আগেই ফুলমতির হাতে পরে যায়। কি যে হৈচৈ শুরু করে ছিল বাড়িতে। চিঠিতে কারো নাম থাকাতে সবাই ভেবে ছিল পিহুকেই কেউ দিয়েছে। ফুলমতি তো বলেই দিয়ে ছিল এই মেয়ের পড়া বন্ধ। কিন্তু তখন আহির এসে বাঁচিয়ে নিয়ে ছিল। সবাই কে বলে ছিল চিঠিটা তার এতটুকু বলতেই আরফান রহমানের হাতে মা*র খেতে হয়েছিল তাকে। তিনি ভেবে ছিলেন এই বয়সেই তার ছেলে প্রেম করছে। তার পরে থেকে পিহু কারো চিঠি না নিলেও নাম্বার দেওয়ার কাজ চালিয়ে গেছে। তখন তো খারাপ লাগতো না তাহলে আজকে কেনো খারাপ লাগছে!? অন্য একটি মেয়ের সাথে অভিনয় করতে গিয়ে যদি সত্যি তাকে ভালোবাসে ফেলে তখন কি করবে পিহু?

পিহুর খুব কান্না পাচ্ছে। সে আহিরের কাছে যেতে চায়। কিন্তু চাইলেই কি সব পাওয়া যায়?

__

অন্যদিকে আহিরের প্লান মতোই মায়শার ভাই তাকে তুলে নিয়ে আসে। তবে মায়শা বাদে আর কেউ এখানো জানে না আহির পুলিশ।

এখানে এসে জানতে পারে মায়শার মা মা*রা যাওয়ার পরে, মায়শা আর তার ভাইয়ের সাথে কথা বলেনি। কিন্তু এই প্রথম নিজের মুখে আহির কে এনে দিতে বলেছিল। শহর থেকে অনেকটা দূরে নির্জন একটা জায়গায় থাকে তারা। তবে আহির কে আনার সময় চোখ বেঁধে নিয়ে এসেছিল। রাস্তা ঘাট আহিরের অচেনা।

মায়ান চৌধুরীর এক মাত্র বোন মায়শা চৌধুরী। আহির এখানে আসার পর থেকেই রান্না বান্না থেকে শুরু করে তার যাবতীয় কাজ মায়শা নিজেই করে। অনেক ভাবে নিজের মনের কথা আহির কে বোঝাতে থাকে। কিন্তু আহির সে তো একজনে আ*সক্ত। তার দু*ষ্ট মিষ্টি পিহুটাকে যে অনেক ভালোবাসে। হাজারো মানুষের ভিড়ে সে শুধু পিহুকেই খুঁজে। আহির নিজের কাজে লেগে পরেছে। কিন্তু অনেক সিকিউরিটি থাকার কারণে এখনো পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনি। তবে পুরো বাড়িটা খুব ভালো করে দেখে নিয়েছে। জানালার পাশে বসে ছিল। হঠাৎ দোলনা দেখতে পায়। আহিরের ছোট বেলার পিহুকে মনে পরে যায়।

~” আহির ভাই আমাকে দোলনা কিনে দিবি?
~” তোকে আমি কেনো কিনে দিবো? কাকাই কে বল যা।

~” বাবা বলেছে দোলনা কিনে দিলে আমি নাকি আর পড়বো না সব সময় খেলবো তাই দিবে না। তুই কিনে দে না?

~ ” দিতে পারি একটা শ*র্ত আছে?

~” কি!?

#চলবে?

(বিঃদ্রঃ আমার পরীক্ষা চলছে বেশি বড় করে লিখতে পারিনি। রি-চেক করা হয়নি🥺🖤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here