মেঘের দেশে তারার মেলা পর্ব -০৯

#মেঘের_দেশে_তারার_মেলা 💚
#Mishka_Moon (লেখনীতে)
#পর্ব_৯

একটু বেলা করেই আহির ওদের বাড়ি যায়। গিয়ে দেখে সদর দরজা খোলা কাউকে ডাক না দিয়ে ভেতরে চলে যায়। চেয়ারে ফুলমতি কে বসে থাকতে দেখে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

~ কেমন আছো দিদুন?
~ কে তোর দিদুন! আমি তোর কেউ না ছাড় আমাকে।

~ কেনো আমি আবার কি করলাম?
~ কিছুই না তোর শশুর বাড়ি যা এখন তারাই তো তোর সব।

~ কে বলছে তোমাকে?
~ কার কওয়া লাগবে আমি বুঝি।
~ খালি ভুল বুঝো। বাকি সবাই কই?

আহিরের গলা পেয়ে অর্পা আর মিসেস আরফান ছুটে আসে। অর্পা তো ভাইয়া বলে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।
~ ভাইয়া তুই কখন এসেছিস?
~ ভোরে দিকে।

~ কই আমাকে তো কেউ বলেনি। পিহু এসেছে?
~ হুম এসেছে। তুই কবে আসলি?
~কাল বিকালে।

আর কিছু না বলে অর্পা দৌড়ে চলে যায় পিহুর সাথে দেখা করতে। আহির তার মায়ের দিকে তাকাতেই মিসেস আরফান রান্না ঘরে চলে যায়। আহির ও পেছন পেছন যায়।

~ মা তুমি কথা বলছো না কেন? আমি এসেছি তুমি খুশি হওনি?

~ আমি খুশি হওয়ার কে যার বাড়ি এসেছিস তাকে গিয়ে বল?

~ মা তুমিও এমন করছো? কেউ জানতো না আমরা আসবো। কাকিমনি অসুস্থ হয়ে পরে ছিল পিহুর জন্য তাই এসেছি। আর সেখানেই প্রথম গিয়েছি।

মিসেস আরফান বিষয়টা বুঝতে পারে। তাই আহির কে বলে~ আচ্ছা। তুই খেয়েছিস?

~ না তোমার সাথে দেখা না করে কেমনে খাই?
আহিরের মায়ের সব রাগ শেষ। আহির কে বলে~ পিহুর মা অসুস্থ। এই অবস্থাতেই নিশ্চয়ই রান্না করেছে?

~ হ্যাঁ।
~তাহলে এখন পিহুদের বাড়িতে খেয়ে নে আর দুপুরে আমি রান্না করবো তোদের জন্য।
~ আচ্ছা মা।

তিন চারদিন ভালোই কাটে বাড়িতে। কিন্তু আহিরের এবার যেতে হবে। মেহের ফোন দিয়ে ছিল। পিহুর অনেক মন খারাপ হয়ে যায়। এখন আর যেতে ইচ্ছা করছে না পিহুর।কিন্তু সামনে এডমিশন নইলে আরো কয়েকটা দিন পিহু কে থাকতে দিতো। পিহুও বাধ্য হয়ে ঢাকা চলে আসে। আবার যার যার মতো ব্যস্ত জীবন কাটাতে থাকে।

দুই সপ্তাহ পর,
পিহু কিছু দিন ধরে দেখছে আহির আর তাকে জ্বালাছে না। পিহু কিছু বললেও হাসি মুখে মেনে নিচ্ছে কিছু বলছে না। এমনটা পিহুর একদম ভালো লাগছে না। তাই আহিরকে গিয়ে সিরিয়াস ভাবে বলে~ তোর কি না মানে আপনার কি কিছু হয়েছে?

আহির কয়েকদিন ধরেই পিহু কে কিছু বলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সাহস করে বলতে পারছে না।

~ কি হলো কিছু বলুন?
~ পিহু আমি তোকে কিছু বলতে চাই?

~ কি?
~ তুই ভুল বুঝবি না বল?

~ ভুল কেনো বুঝবো? আর কি এমন কথা?
~ আসলে,,,

পিহু এবার চিন্তায় পরে যায় কি এমন কথা তাকে এতো ভাবতে হচ্ছে?

~ আসলে কি?
~ আমাকে একটা কাজে যেতে হবে।

~ তো যান এখানে ভুল বোঝার কি আছে?
~ তুই বুঝতে পারছিস না। একদিনের কাজ না।

~ তাহলে কতদিনের?
~ কয়েক সপ্তাহ, কয়েক মাস, আবার নাও ফিরতে পারি।

~ মানে কি বলছিস?
~ পিহু তোকে এখন থেকে মেসে থাকতে হবে।

~ তুই প্লিজ বিষয়টা ক্লিয়ার করে বলবি?

আমি নতুন আমাকে তেমন কেউ চেনে না। আর আমার কাজের উপর খুশি হয়ে আমাদের সিনিয়র অফিসার আমাকে একটা সিক্রেট মিশন দিয়েছে। পরিচয় গোপন করে এখন আমাকে সেই মিশনে যেতে হবে। যদি সফল হই ধরা না পড়ি তবে আবার দেখা হবে। আর যদি ধরা পড়ি জানি না কি হবে। এতো গুলো কথা এক সাথে বলে পিহুর দিকে তাকায় আহির। পিহুর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। চোখ থেকে পানি পড়ছে।

~ আরে পাগলী কান্না করছিস কেন?
~ তুই কি মজা করছিস?

~ নারে সত্যি বলছি।
~ আহির ভাই তুই প্লিজ যাস না।

~ তুই আমাকে ভাই বললে আমি এমনিতেই অর্ধেক ম*রে যাই।

পিহু এবার আরো জোরে জোরে কান্না করতে শুরু করে। আহির কিছুটা এগিয়ে আসলে। পিহু আহির কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে ~ তুই প্লিজ যাস না। তোকে আর আমি একটুও জ্বালাবো না। সব কথা শুনবো।

পিহুর চোখে আহির কে হারানোর ভয় অন্য সময় হলে আহির হয়তো খুশি হতো। কিন্তু এখন তার নিজেরই ভয় হচ্ছে। তবে সাহস হারালে চলবে না। জিতে ফিরতে হবে।

~ তা হয় না রে পিহু। অনেক গুলো মানুষের জীবন জড়িয়ে আছে এখানে আমাকে যেতেই হবে।

~ অন্য কেউ নেই?
~ আছে। তবে সবাই কে বিশ্বাস করতে পারছে না।

~ কেনো?
~ কিছু পুলিশও জড়িত আছে তাদের সাথে।

~ আমি একা থাকবো কেমনে?
~ একটা কাজ করতে পারিস।

~ কি কাজ?
~ তোকে আমি মেহের ম্যামের কাছে রেখে যেতে পারি। ম্যাম একাই থাকে এখানে। কথা বলে দেখছি।

~ কিন্তু আমি তো তোর সাথে থাকতে চাই।
~ তুই আমাকে ভালোবাসিস পিহু?
~ জানিনা

~ কালকে সকালে রেডি থাকিস। তবে মনে রাখিস এই কথা তুই কাউকে বলবি না। আমি যে তোর কেউ হই তাও বলবি না।

~ সবাই জিজ্ঞেস করলে কি বলবো?
~ বলবি কাজে আছি।

~ তুই আমাকে ফোন দিবি?
~ সুযোগ পেলে। তবে দিতে পারবো কিনা জানি না।

~ কিন্তু তুই যাবি কি করে?
~ তুই আবার তুই তুই করছিস?

~ হুম।
~ আচ্ছা বাদ দে।
~ না বলুন?

~ তুই রাগ করবি না বল?
~ নাহ

মাসখানেক আগে আমি কয়েকটা ছিন*তাই*কারীদের হাত থেকে একটা মেয়ে বাঁচিয়ে ছিলাম। তবে হাতে ছু*ড়ির আঘাত লাগায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়ে ছিল। মেয়েটাকে হাসপাতালে রেখে আমি চলে যাই। তারপর আবার একদিন দেখা হয়। সেই দিন আমি একটা কাজে গাড়িতে না ওঠে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি সেই মেয়েটা যাচ্ছে পেছন থেকে খুব জোরে একটা গাড়ি তেড়ে আসছিল। কোনো মতো আমি সরিয়ে নিয়ে ছিলাম।

~ আপনি কি অন্ধ নাকি?
~ না আসলে ফোনে কথা বলছিলাম তো দেখতে পাইনি।

~ আপনার নাম?
~ মায়শা।

~ ওহ রাস্তা দিয়ে ঠিক মতো চলাচল করতে শিখুন। সব সময় আমি থাকবো না আপনাকে বাঁচাতে।

~কেনো থাকবেন না?
~ মানে?
~ কিছু না।

আর কিছু না বলে আমি সেখান থেকে চলে আসি। তবে মেয়েটি আমাকে ফলো করতে থাকে। আমাকে পছন্দ করতে শুরু করে। তবে সে প্রথমে জানতো না আমি পুলিশ। আর আমি খবর পেয়েছি সেই মেয়েটি একজন মাফিয়ার বোন। তবে সে এসব পছন্দ করে না তাই সাদামাটা হয়ে চলা ফেরা করে। আর এই জন্য আরো আমাকে কাজটা দেওয়া হয়েছে। যাতে আমি মেয়েটির সাহায্যে তাদের কাছে পৌঁছাতে পারি। এমন কিছু করতে হবে মায়শার ভাইয়ের লোকেরা এসে আমাকে তাদের আস্তা*নায় নিয়ে যায়।

~ এতো কিছু হয়ে গেলো আমি কিছু জানি না? আপনাদের কাজে একটা মেয়েকে ব্যবহার করবেন?

~ আর কিছু করার নেই রে। আমি এখনই সব বলতে পারছি না।

~ আপনি তার কাছে গিয়ে আমাকে ভুলে যাবেন নাতো?

~ ভুলে যাওয়ার জন্য তোকে বিয়ে করিনি। খেয়ে ঘুমিয়ে পর। সকাল সকাল বের হতে হবে। ভালো করে পড়াশোনা করবি। নিজের খেয়াল রাখবি।

~ হুম।
~ কি হলো আবার? একটা কথা বলি?
~ কিছুনা। হুম বলুন?
~!?

#চলবে?

( বিঃদ্রঃ অসুস্থতা, পরীক্ষা, মেহমান,বাড়ির কাজ সব মিলে বিরাট সমস্যায় ছিলাম। আমার পরীক্ষা কয়টা শেষ হলে নিয়মিত গল্প দিবো ইনশাআল্লাহ। কেউ রাগ করে থাকবেন না। এখন থেকে এক/দুইদিন পর পর দিবো ৫তারিখ পর্যন্ত।তারপর থেকে নিয়মিত পাবেন🥺🖤)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here