মেঘের দেশে তারার মেলা পর্ব -০২

#মেঘের_দেশে_তারার_মেলা 💚
#Mishka_Moon (লেখনীতে)
#পর্ব_২

“হ্যাঁ এবার আহিরের চাকরিটা হয়ে গেছে। জয়নিং লেটার এসেছে। বাড়ির সবাই খুব খুশি তবে একজন বাদে। সে বার বার চেষ্টা করেছে আহিরের পুলিশ এর চাকরিটা জেনো না হয়। কিন্তু কথায় বলে না কপালের লিখন না যায় খন্ডন। সেই একজন আর কেউ না স্বয়ং আহিরের বাবা। আহিরের মতো বয়সে তারও একই স্বপ্ন ছিল। তা পূরণও হয়েছিল কিন্তু কিছু অ*মানুষের জন্য স্বপ্নটাকে কুর*বানী দিতে হয়েছিল একটা সময়। অতীতের কথা গুলো ভাবলে এখনো তার কষ্ট হয়। চোখ ভিজে যায় আহিরের বাবার বিষন্ন চেহারা সব চোখ এড়ালেও ফুলমতির চোখ এর এড়ায় না। ছেলে কে চোখ দিয়ে ইশারা করে কাছে ডাকে। কাছে যেতেই ফুলমতি বলে~ অনেক তো হলো এবার ছেলেটাকে চাকরিটা করতে দে। ওকে আর বাধা দিস না।

আরফান রহমানের মায়ের কথার উত্তরে কিছু না বলে যায়। আহিরের মায়ের জেনো খুশি আর থামছে না। গ্যাসে তরকারি রান্না করছিল এতো সব কিছুর মধ্যে ভুলেই গেছে। গ্যাসের চুলা বন্ধ না করেই ছুটছে দুই জা কে খবর দিতে। বাড়ি দূরত্ব প্রায় পাশাপাশি হওয়াতে বেশি সময় লাগেনি যেতে। অর্পা খুশিতে নাচতে থাকতে।

আহিরের চাকরি খবর শুনে মনে হচ্ছে আরো একজন খুশি হয়নি। আহির তার দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো~ কি রে মুখটা ওমন বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন?

মোটেও না চাকরি হয়ে তো আরো ভাব বেড়ে গেলো তোর। কি দেখে যে তোকে চাকরি দিলো এটাই আমার মাথায় আসছে না।

~ ছেড়ে দে তোর ঔ মশার মাথায় ঢুকবে না। মনে আছে তো কালকে কি বলে ছিলাম। তৈরি থাকিস!!

আহিরের কথা মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে বলে। পুলিশ হয়েছিস তে কি হয়েছে। একদিন এই পিহুকেই তোকে বাঁচাতে লাগবে মনে রাখিস।

~ হাতি ঘোড়া গেলো তল, মশা বলে কত জল”

তুই চুপ থাক এতোদিন তাও ঠিকঠাক ছিলি৷ এবারতো ঘু*ষ খেয়ে ভুঁড়িয়ালা এসিপি আহিরাজ রহমান হয়ে যাবি। হায় হায় লোকে আমাকে বলবে ~ ঔ ভুঁড়িয়ালা আহিরাজ তোমার কাজিন না! লজ্জা তখন আমার মাথা কাটা যাবে।

আহির মুড খারাপ করার জন্য পিহু একাই যথেষ্ট। পিহুর কথায় বিরক্ত হয়ে কিছু না বলেই চলে যায়। কথায় কথা বাড়বে আজকে আর সে মুড খারাপ করতে চায় না।

রান্নার পুড়া পুড়া গন্ধ আসতেই ফুলমতি দৌড়ে যায়। পেছন পেছন পিহুও যায়। চুলা অফ করে পিহুর দিকে না তাকিয়েই চলে যায় ফুলমতি। কোনটা একটা কারণে পিহুকে তেমন পছন্দ করেন না তিনি। তবে সেটা মুখে না বললেও পিহু ঠিকই বুঝতে পারে।

আহিরের মা আশে পাশের প্রতিবেশীদের বলে অবশেষে বাড়ি আসলো। হঠাৎ রান্নার কথা মনে পড়তেই রান্না ঘরে ছুটলো।

এক সপ্তাহের মধ্যে আহিরের ঢাকা যেতে হবে। পিহু আর অর্পার এক সপ্তাহ পরেই এইচএসসি পরীক্ষা। তবে কিছু দিন যাবত এলাকার কিছু বখাটে ছেলে তাদের বিরক্ত করছে। আহিরের রগচটা স্বভাবের জন্য অর্পা তাকে কিছু বলেনি এতোদিন তবে এবার না বললেই নয়।

বিকালে আহির বাড়ির বাহিরে বসে বন্ধুদের চাকরি হওয়ার খবর বলছিল। এমন সময় পিহু আর অর্পা সেখানে হাজির।

~ পুলিশ সাহেব আমার একটা কেস করার আছে। বিষয়টা খুব সাংঘাতিক তাড়াতাড়ি সমাধান করতে হবে।

আহির ফোন রেখে বলে কেনো কি হয়েছে? কোনো সমস্যা হয়েছে! নাকি মজা করছিস? আর এতোদিন তো ভাই বলতি তাও নাম ধরে ভাই বলতি। এখন আবার অন্য সুর বলে ফেল তাড়াতাড়ি।

অর্পা বলে না ভাইয়া বিষয়টা সত্যি সিরিয়াস। তুই একটা ঠান্ডা মাথায় শোন।

আহির এবার সিরিয়াস হয়ে বলে~ কি হয়েছে?

~ পুলিশ সাহেব আপনি আগে আমার কথা শুনেন। আমরা যেখানে যাই সেখানেই যায়। আমাদের দেখে গান গায়। যেতে বললে যায় না। রাত বিরাত নেই যখন তখন বিরক্ত করতে চলে আসে।

আহির এবার প্রচন্ড রেগে যায়। রেগে বলতে থাকে ~ কে এমন করছে একবার বল শুধু খু’ন করে ফেলবো।

~ কথা দিলেন কিন্তু মনে রাখবেন। আগে কথা শেষ করতে দিন। আবার মাঝে মাঝেই আমাকে কা*মড় দেয়। অনেক বার মা’রার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি তাই আপনার সাহায্য চাই।

আহির এবার জোরে চিৎকার দিয়ে বলে,, নামটা বলতে বলছি।

~ ওর তো নিজস্ব কোনো নাম নেই। বাবা মা রাখেনি তবে বংশগত একটা নাম আছে।

অর্পা অবাক চোখে পিহুর দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলছে এসব ও নিজেও বুঝতে পারছে না। আহির বিরক্ত হয়ে বলে বংশগত নামটাই তুই বল?

~ না হয় আমরা একটু বেশিই সুন্দরী তাই বলে এভাবে আমাদের সাথে,,,,, কান্নার অভিনয় করতে থাকে।

আহির পেছনে তাকিয়ে একটা ইট দেখতে পায়। ততক্ষণাক হাতে তুলে বলে তুই নাম বলবি নাকি তোর মাথায় ইট মা*রবো। তোর বলতে হবে না অর্পা তুই বল।

অর্পা নিজেও আমতা আমতা করতে থাকে। আহির বলে তোদের দুজন কে চ*ড়িয়ে কথা বের করতে হবে নাকি।

~ আসলে আহির ভাই ওর নাম হচ্ছে “মশা”।

আহির হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ের মাথায় গন্ডগোল আছে সে জানতো তবে এতো বেশি তা জানতো না।
আহির কিছু বলার আগেই পিহু অর্পার হাত ধরে দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে পিহুদের বাড়িতে চলে আসে দুজন।

অর্পা পিহুর মাথায় একটা চাটি মে*রে বলে। তুই এসব বললি কেন।

আরে গাধা তুই দেখলি না আহির ভাই কতটা রেগে গিয়ে ছিল। কয়েক দিন পরেই জয়েনিং এখন মা*রা মা*রি করলে যদি কোনো সমস্যা হয় চাকরির তাই কথাটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছি।

আহির এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কোনো মানুষ যে মশার বিরুদ্ধে কেস করতে পারে। তা সে পিহু কে না দেখলে জানতেই পারতো না। কয়েক দিন পরে চলে যাবে এই ভাবে আর কিছু বলতে গেলো না ওদের।

এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা চলে যায় আহির। আজকে তার প্রথম দিন থানায়। থানায় গিয়েই একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খায়। আহির কোনো মতো স্যরি বলে ভেতরে চলে যায়। পেছন পেছন সেই মেয়েটিও যায়।

চেয়ারে বসে থাকা পুলিশ কর্মকতা জিজ্ঞেস করে “আপনি আহিরাজ রহমান?

~ জ্বি স্যার।

ওয়েলকাম পরিচয় করিয়ে দেই উনি পুলিশ অফিসার মেহেরিমা মেহের। আপনি উনার আন্ডারে কাজ করবেন। উনি আপনার সিনিয়র।

আহির কোনো মতো পরিচিত হয়ে নিজের কাজ বুঝে নেয়। আহিরকে একটা কেবিন দেখিয়ে দেওয়া হয়। কেবিনে বসে মনে মনে ভাবছে আবার সেই মাইয়া মানুষ। ছোট বেলার একটা কথা মনে পরে গেলো।

“” ছোট বেলায় ক্লাস ফাইবে থাকতে,একটা মেয়েকে দেখে বলেছিল তোমাকে দেখতে অনেক মিষ্টি। তোমাকে আমার অনেক ভালো লাগে। তুমি আমার বন্ধু হবে?

মেয়েটি কি বুঝেছিল এক মাত্র সেই জানে। আহির কে বলে ছিল তুমি আমাকে প্রপোজ করেছো। এখন থেকে প্রতি দিন তুমি আমায় চকলেট কিনে দিবে। নইলে কিন্তু স্যারের কাছে বিচার দিবো।

সেই দিনের পর থেকে টানা এক মাস। বাবার দেওয়া দশ টাকার মধ্যে পাঁচ টাকার চকলেট কিনে দিতে হয়ে ছিল মেয়েটিকে। তবে এক মাস পরেই মেয়েটি অন্য জায়গায় চলে গিয়ে ছিল। তাই বেঁচে গিয়ে ছিল আহির। তারপর থেকে মেয়েদের থেকে দূরে দূরে থাকে সে।

ভাবনার মাঝেই ডাক পরে আহিরের। তার প্রথম কেস কিড*ন্যা*পের স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকটা বাচ্চা কিড*ন্যাপ হয়েছে। তাদেরই খুঁজে বের করতে হবে আহিরের।
আহির তার কাজে লেগে পরলো।

অনিমা রহমান পিহুদের বাড়ি এসেছে। পিহুর সাথে তার ছেলে আবিরের বিয়ের কথা বলতে। কিন্তু পিহুর বাবা মা না করে দেয়। অনিমার স্বভাব সম্পর্কে তারা আগে থেকেই অবগত। আবির ভালো ছেলে হলেও, একটাই মেয়ে তাদের দেখে শুনে বিয়ে দিবেন একদম তাড়াহুড়ো করবেন না।

অনিমা অপমানিত হয় মনে মনে, ভাই আর ভাবিকে উদ্দেশ্য করে বলে এরপর আমি নয় তোমরাই যাবে তোমাদের মেয়ের বিয়ের কথা বলতে নইলে আমার নামও অনিমা নয়। এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে বের হয় যায়।

পেছন থেকে ভাই ডাকলেও পেছন ঘুরে তাকায় না।

#চলবে?

( বিঃদ্রঃ আজকে গল্প লেখার সময় আটটা মশা কা*মড় দিয়েছে। বিরক্ত হয়ে পিহুকে দিয়ে কেস করাতে গেছিলাম কিন্তু আহির নিলো না!🥺)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here