মেঘের দেশে তারার মেলা পর্ব -০৩

#মেঘের_দেশে_তারার_মেলা 💚
#Mishka_Moon (লেখনীতে)
#পর্ব_৩

“অনিমা আর কারো সাথে দেখা না করেই বাড়ি চলে যায়। কিন্তু মনে মনে তার আফসোসের শেষ নেই। ভাইয়ের একটাই মেয়ে যত সম্পত্তি আছে সব সে একাই পাবে। আবিরের সাথে বিয়ে দিতে পারলে সব তার ছেলের হতো।

আহির খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, যেসব বাচ্চারা কি*ডন্যাপ হয়েছে তারা পাশাপাশি বিল্ডিং এ থাকতো। এটা কোনো ছোট মাথার কাজ না। পেছনে কোনো বড় মাথা আছে আহির তা বুঝতে পেরেছে। ছদ্মবেশ নিয়ে বিল্ডিং এর আশে পাশে তথ্য যোগাড় করার জন্য ঘুরাঘুরি করছে।

আরফান রহমানের কাছে এখন সবটা ক্লিয়ার। ছেলের ছয়-সাত মাস বাড়ি না আসার কারণ সে বুঝতে পেরেছে। আহির মেসে থেকে পড়াশোনা করে। তবে মাসে একবার হলেও তার মায়ের জন্য তাকে বাড়ি আসতে হয়। ছেলে কে না দেখলে সে অসুস্থ হয়ে পরতো। প্রতিদিন ফোন দিয়ে কথা বলতো। কিন্তু হঠাৎ কেমন জেনো বদলে যেতে লাগলো। আরফান রহমান ভেবে ছিলেন ছেলে রাগ করে বাড়ি আসছে না। ফোনও বন্ধ করে রেখেছে। আহির দেড় মাস আগে বাড়ি ফিরেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই মিসেস আরফান রুমে আসে।

~ তুমি কি এখনো রাগ করে আছো?

~ আমি রাগ করার কে?

~ এসব কি বলছো তুমি আমাদের সব কিছু।

~ মা ছেলে মিলে ভালোই অভিনয় করলে। আমি কতো বকা দেখো যে মা ছেলে কে না দেখে, না কথা বলে থাকতে পারতো না। সেই মা হঠাৎ ছেলের সাথে কথা বলতে চাইতো না। বাড়ি ফিরে আসতেও বলতো না।

~ কেনো এমন করেছি তুমি জানো না? এর আগে একবার টেনিং এ যাওয়ার আগে তুমি অসুস্থতার অভিনয় করে যেতে দেওনি। এবারো তোমাকে জানালে তুমি কখনোই যেতে দিতে না।

~ আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো আলোটা বন্ধ করে দাও।

কথাটা বলেই চুপচাপ শুয়ে পরে আরফান। স্বামী কে কিছু না বলে তিনিও শুয়ে পরে।

সকাল বেলা পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য পিহু অর্পাকে ডাকতে আসে। আরফান রহমান বসে চা খাচ্ছিলেন। পিহুকে সদর দরজায় দেখে ডাক দেয়।

~ পিহু মা যে ভেতরে আয়।

~ না বড় আব্বু পরীক্ষা দিতে যাবো দেরি হয়ে যাবে। আমাদের পরীক্ষার কেন্দ্রটা একটু দূরে পরেছে জানোই তো।

~ অর্পা তৈরি হচ্ছে ততক্ষণ কি বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি আয় তো। তার তোর পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?

~ লিখিত ভালোই হচ্ছে কিন্তু এমসিকিউ ভালো হচ্ছে না। সব গুলোই মনে হয় জমজ ভাই বোন।

~ হা হা!! ভালো করে পরীক্ষা দিস।

পিহু চল আমি রেডি তাড়াতাড়ি চল। আব্বু আসছি আমরা দোয়া করো।

~ আচ্ছা সাবধানে যাস।

পিহুদের আজকে পরীক্ষা শেষ। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি আসার পথে আবার সেই ছেলেরা বিরক্ত করতে থাকে। দুপুর বেলা আশে পাশে মানুষ না দেখে তাদের ভয় ভয় করছিল। কিন্তু পিহু সাহস না হারিয়ে অর্পার হাত ধরে হাঁটতে থাকে। কিছু দূর যেতেই একটা রিক্সা পেয়ে যায়।

এভাবে আর কতদিন আজকে তারা বেশিই ভয় পেয়েছে। বাড়ি গিয়ে অর্পা কান্না কাটি শুরু করে দেয়। বাড়ির সবাই খুব রেগে যায়। আর বিষয়টা এতোদিন গোপন রাখার জন্য ওদেরও বকাবকি করতে থাকে।

ছেলে গুলোর বাড়িতে বিষয়টি জানালে, একজনের পরিবার আবার উল্টো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে পিহুর জন্য। পিহুর পরিবার রেগে অপমান করে তাড়িয়ে দিলে তারা পিহুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। প্রভাব প্রতিপত্তির জোরে মানুষ তার মূল্যবোধ ভুলে যায়।

পিহুর বাবা মা অনেক ভয় পেয়ে যায়। এই খবর শুনে পিহুর জন্য আবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে অনিমা রহমান। আগের বার বিষয়টা না জানলেও। এবার পিহু নিজেই বলে, আমি আবির ভাইয়া কে বিয়ে করতে পারবো না।

কিন্তু পিহুর বাবা আহান রহমান এবার রাজি হয়ে যায়। তার বোনের সম্পত্তির লোভ থাকলেও এতটুকু তিনি জানেন পিহু কে সে কষ্ট দিবেন না। বরং আদরেই রাখবেন। আর আবির তো ভালো ছেলে। পেশায় ডাক্তার নতুন জয়েন্ট করেছে।

পিহু কাউকে বুঝাতে পারলো না। সে পড়াশোনা করতে চায়। বিয়ে করতে চায়না সে নিজেও পুলিশ হতে চায়। আরফান রহমানের কাছে ছুটে যায়।

~ বড় আব্বু আমি বিষয় করবো না তুমি কিছু করো প্লিজ।

~ কান্না করিস না মা। থাম আমি তোর বাবাকে বুঝাবো।

~ বড় আব্বু তুমিও তো জানো আমিও পুলিশ হতে চাই। ছোট বেলায় আমি আর আহির ভাই পুলিশ পুলিশ খেলতাম। অর্পাকে গ্রেফ*তার করে নিয়ে যেতাম। আমার অনেক ভালো লাগতো।

~ পুলিশের র*ক্ত যে ভালো তো লাগবেই।

~ বড় আব্বু এটা তুমি কি বললে? পুলিশের র*ক্ত মানে! বাবা তো ব্যাংকে চাকরি করতো আগে পুলিশের তো নয়।

আরফান রহমান মুখ ফসকে এই কথা বলে ফেলবে সে নিজেও ভাবতে পারেনি। আমতা আমতা করে বলে ~ কিছু না মা তুই যা আমি দেখছি।

পিহুর মন খারাপ থাকায় কিছু না বলে চুপচাপ চলে যায়। পিহু কান্না করছে অর্পা বসে শান্তনা দিচ্ছিল।

আরাফ রহমান বউ সন্তান নিয়ে শশুর বাড়ি গিয়ে ছিলেন। শশুর বাড়ি কক্সবাজার হওয়াতে তেমন যাওয়া হয়না। এবার ছেলেদের জন্য বাধ্য হয়ে এক মাসের জন্য গিয়ে ছিলেন। কিন্তু পিহুদের বিষয়ে জানতে পেরে আগের দিন রাতেই রওনা দিয়ে ছিলেন। আরাফ রহমানের দুই ছেলে দিহান আর বিহান জমজ। এবার দশম শ্রেণিতে উঠবে। নিজের বোন না থাকলেও অর্পা আর পিহু বলতে পাগল তারা। সারা রাস্তা দুজন পরিকল্পনা করতে করতে এসেছে কি ভাবে ছেলে গুলোকে মা*রবে। কিন্তু বাড়ি ফিরে বিয়ের কথা শুনে চমকে উঠে।

আরফান রহমান আর আরাফ রহমান দুই ভাই মিলে। আহান কে বুঝাতে থাকে কারো ভয়ে আমরা কেনো পিহু কে বিয়ে দিবো।

কিন্তু আহান রহমান বুঝতে নারাজ একটাই মেয়ে তার যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়? নাহ নাহ কিছুতেই না। ভাইদের সব কথা শুনলেও এটা মানতে নারাজ।

দুই ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,, আমার মেয়ে আমি যা বলবো তাই।

ছোট ভাইয়ের কথায় তারা দুজনেই কষ্ট পায়। কারণ তারা সবাই পিহুকে একটু বেশিই ভালোবাসে। পিহু দরজায় দাঁড়িয়ে বাবার ব্যবহার দেখে অবাক। ছলছল নয়নে বড় আব্বু আর মেজো আব্বুর দিকে তাকিয়ে থাকে। পিহুর দিকে তাকিয়ে তারাও মাথা নত করে নেয়। কারণ তারা কিছুই করতে পারলো না।

ঘরোয়া ভাবে এক সপ্তাহ পরে বিয়ে ঠিক করে। আরাফ রহমান বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে আহির কে একটু বেশিই ভালোবাসে। দুই ভাই বিয়েতে থাকতে রাজি হয়নি। তাই আহির কে ফোন দিয়ে বাড়ি আসতে বলে।

আহির পিহুর বিয়ের কথা শুনে চমকে উঠে। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে ঠিক করার লোক তো কাকাই না৷ নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা হয়েছে। তার থেকেও বেশি চমকে উঠে আবিরের সাথে বিয়ের কথা শুনে।

~ কাকাই আমি আসবো তুমি টেনশন করো না।

আহির আবির কে ফোন দেয়। ~ কি রে ভাই এসব কি শুনছি তুই পিহু কে বিয়ে করবি?

~ না রে সালা তুই কিছু কর। মা আমার কোনো কথাই শুনছে না। আমার বিয়ে ঠিক করে এসেছে তাও না জানিয়ে। কিন্তু আমি বুঝলাম না পিহু রাজি হলো কেন!

~ আমার মনে হয়না ও রাজি হয়েছে। কিন্তু তোর যে গার্লফ্রেন্ড আছে তার কি হবে?

~ এক মাস হলো আমার ব্রেকআপ হয়েছে। কিন্তু ওকে ভুলা আমার পক্ষে অসম্ভব।

~ তাহলে আর কি বিয়ে করে নে।

~ তুই বলছিস? ভাই আবার বাঁ*চা আমাকে।

~ লজ্জা করে না তোর! আমার কাছে সাহায্য চাচ্ছিস আমি কিছু করতে পারবো না। তুই নিজে বিয়ে ভাঙ্গবি। রাখছি।

~ আরে শোন! যাহ রেখে দিলো। সবাই আমাকে কি পেয়েছে আজব লোকজন।

আহির পিহুকে ফোন দেয়। আহিরের নতুন নাম্বার হওয়াতে পিহু চিনতে পারে না। কয়েকবার রিং হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। একটু পরে আবার বেজে ওঠে। এবার কল রিসিভ করে সালাম দেয় পিহু।

~ ফোন ধরতে এতো দেরি হয়! নাকি বিয়ের জন্য সাতদিন আগে থেকে রুপচর্চায় বসেছিস।

~তুই!

~ হ্যাঁ! কেনো আবির কে ভেবে ছিলি?

~ আমার মন ভালো নেই আহির ভাই। তুই প্লিজ মজা করিস না।

~ আরে কাঁদছিস কেন! তোর কাজ সবাই কে বিরক্ত করা কান্নাকাটি করা না।

~ আহির ভাই কি দরকার বলে ফোন কেটে দে। কথা বলতে ভালো লাগছে না।

~ আচ্ছা শোন রাগিস না। তোর মতো আপদ কে আরো কিছু দিন বাড়ি রাখার সুযোগ আবিরই করে দিবে।

~ মানে?

~ তোর চিকন মাথায় ঢুকবে না! যা হচ্ছে হতে চিল পে*ত্নী।

~ হ্যালো হ্যালো আহির ভাই শোন।

কি বুঝালো ও! কোনো কারণ ছাড়া আহির ভাই (বর্তমান ভুঁড়িহীন পুলিশটা) কিছু বলে না। তার মানে আমার বিয়েটা হবে না। ইয়াহ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।

দিহান আর বিহান পিহুকে শান্তনা দিতে এসেছিল। এসে পিহু কে নাচতে দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।

~ পিহু আপু তুমি নাচছো কেনো?

নাচতে নাচতেই বলে~ আরে দুই রাজা এক সাথে যে আয় আয় খুশির খবর আছে। তোদের রেখে আমি কোথাও যাবো না। আহির ভাই যে কিছু করবে এই ভেবে সবাই খুশি হয়ে যায়।

~ কিন্তু আহির কি সত্যি কিছু করবে?

~!?

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here