মেঘের দেশে তারার মেলা পর্ব -০৪

#মেঘের_দেশে_তারার_মেলা 💚
#Mishka_Moon (লেখনীতে)
#পর্ব_৪

নিখোঁজ হওয়া বাচ্চাদের পরিবারকে ফোন করে মুক্তি*পণের টাকা চেয়েছে। ২০কোটি খুব বড় এমাউন্টের টাকা। আহির চিন্তিত শেষ পর্যন্ত বাচ্চা গুলোকে বাঁচাতে পারবে তো? টাকা দিলেই যে বাচ্চাদের দিয়ে যাবে তার কি গ্যারান্টি আছে? আর এতো টাকা কারো পরিবারের দেওয়াই সম্ভব না।

কিন্তু আহির কে অবাক করে দিয়ে পরিবার গুলো টাকা দিতে রাজি হয়ে যায়। আর পুলিশদের মাথা ঘামাতে নিষেধ করে দেয়। কিন্তু আহির এর শেষ দেখেই ছাড়বে।

আহির খোঁজ পেয়েছে একটা গোডাউনে বাচ্চাদের আটকে রাখা হয়েছে। পুলিশ নিয়ে সেখানে চলে যায়। গোডাউনের চার পাশ ঘিরে কিছু পুলিশ নিয়ে ভেতরে যায়। কি*ড*ন্যাপাররা পালানোর চেষ্টা করলেও পারে না। কি*ড*ন্যাপের সাথে যুক্ত ছিল বিল্ডিং এর ময়লা নিয়ে যাওয়া এক লোক। তাকে সন্দেহ করে ফলো করে আহির। আর দিন শেষে তার সন্দেহই সঠিক হয়।

বাচ্চা গুলোর পরিবারের এতো টাকা দিতে চাওয়ার কারণ! কা*লো টাকার ব্যবসার সাথে তারা জড়িত ছিল। তার মানে কি*ড*ন্যাপার সব খোঁজ খবর নিয়েই মাঠে নেমে ছিল।

বুদ্ধিমত্তার সাথে কে*স সমাধান করার জন্য সবাই আহিরের প্রশংসা করতে থাকে। আহিরের তো ছুটি প্রয়োজন বাড়ি যেতে হবে। মেহেরের কেবিনে গিয়ে নক করে।

~ ম্যাম আসবো?

~ আসুন।

~ ম্যাম আমার ছুটির প্রয়োজন খুব।

~ কয় দিনের?

~ দুদিনের।

~ আচ্ছা যেতে পারেন। তবে যেকোনো প্রয়োজনে আপনাকে যেকোনো অবস্থায় চলে আসতে হতে পারে।

~ ঠিক আছে।

আহির বের হতে যাবে এমন সময় মেহের ডাক দেয়। ~ শুনুন।

~ জ্বি ম্যাম?

~ কংগ্রাচুলেশনস। আপনার কাজ আমার ভালো লেগেছে।

~ ধন্যবাদ ম্যাম।

~ এবার আপনি আসতে পারেন।

আহির একটা ভাড়া বাসা নিয়েছে এক মাস হলো। একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা তাকে রান্না করে দিয়ে যায়। কিন্তু এক সপ্তাহ যায়না বাজারের জিনিস পত্র উ*ধাও হয়ে যায়। তবে দামী কোনো জিনিস নয়, রান্নার তরিতরকারি, তেল, মশলা। কাজটা কার আহির বুঝতে পারলেও কিছু বলে না। ঢাকা শহরে বিশ্বস্ত লোক পাওয়া কঠিন।

পুলিশের বাড়িতেও চু*রি আহির মনে মনে ভেবে হাসে। মহিলাটাকে দুই দিনের ছুটি দিয়ে বেরিয়ে পরে বাসের উদ্দেশ্যে।

পিহুর এবার খুব টেনশন হচ্ছে রাতে ওর বিয়ে। কিন্তু আহির ভাই এখনো আসলো না। তাহলে কি ও কিছু করবে না?
এদিকে আবির ভাইয়ের ও কোনো খবর নেই। আহির কে অনেক বার ফোন দিলেও পিহুর ফোন রিসিভ করে নাই।

যেহেতু ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হবে। কাছের কয়েকজন লোক ছাড়া তেমন কেউ নেই।

সন্ধ্যার দিকে আবিরের আসার কথা থাকলেও আবির আসে না। অনিমা বার বার ছেলে কে ফোন দিয়েও পায়না।

আবির পালিয়েছে সে কিছুতেই পিহু কে বিয়ে করবে না। মাকে এতোদিন বুঝিয়েও লাভ হয়নি। আবির পিহুর ফোনে একটা মেসেজ দেয়।

~ “” পিহু তোকে আমি সারাজীবন আমার বোনের চোখেই দেখেছি। আর আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি তোকে বিয়ে করতে পারবো না। তুইও রাজি না এই বিয়েতে আমি জানি। আমি পালিয়ে যাচ্ছি। বাকিটা তুই আর আহির মিলে সামলে নিস।”” (আবির)

পিহুকে বিছানায় বসিয়ে সাজাচ্ছিল অর্পা। হঠাৎ পিহু উঠে নাচতে শুরু করে। অর্পা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ~ আবার কি হলো?

পিহু ফোন এগিয়ে দেয়। মেসেজটা দেখে অর্পাও খুব খুশি হয়। অর্পার মাও তাকে নানার বাড়ি পাঠিয়ে দিবে পিহুর বিয়ের পর। সেখানে থেকে পড়াশোনা করবে। কিন্তু পিহু বা অর্পা কেউ রাজি নয়।

~ অর্পা রে এখনো তো তোর শয়*তান ভাইটা আসলো না রে।

~ টেনশন করিস না ভাইয়া চলে আসবে। আর বড় কথা তোর বিয়েটা তো হচ্ছে না।

আবির আহান রহমানের ফোনেও একটা মেসেজ পাঠায়।

~ (” ছোট মামা আমি পিহু কে বিয়ে করতে পারবো না। আমাকে মাফ করে দিও”) (আবির)

আহান রহমান নিচে বসে পরে। অনিমা রহমানকে জিজ্ঞেস করে ~ আবির এই বিয়েতে রাজি ছিল না?

মাথা নিচু করে অনিমা উত্তর দেয় ~ নাহ।

~ কেনো করলি এমন? আমাকে আগে বিষয়টা জানাতে পারতি কাজী চলে এসেছে এখন কি করবো আমি?

~ কিছুই করতে হবে না কাকাই।

~ আহির বাবা তুই এসেছিস। দেখনা আবির কি বলছে।

~ কাকাই অন্যর ভয়ে তুমি পিহু কেনো বিয়ে দিবে? আমরা আছি না? আমি এর সমাধান করেই যাবো

আহান রহমান এবার বলে ~ আজকেই আমার মেয়ে কে বিয়ে দিবো যেভাবেই হোক।

সবাই চমকে উঠে। আহির নিজেও এবার অবাক হয়। এখন সে কি করবে। পিহুর মা এবার বলে ~ না কিছুতেই না। মেয়ে তোমার একার না।

আরফান রহমান বলে ~ পিহুর বিয়ে হবে আহিরের সাথে।

সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। আহির আর পিহু অবাক চোখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলে~ নাহ অসম্ভব। কখনো না।

বাসর ঘরে বসে আছে পিহু। হ্যাঁ সবার সিদ্ধান্তে বাধ্য হয়েই তাদের বিয়েটা করতে হয়েছে। ফুলমতি অনেক চেষ্টা করে ছিলেন বিয়েটা যেনো না হয়। কিন্তু অবশেষে তাদের বিয়েটা হয়েই গেলো। মিসেস আরফান প্রথমে রাগারাগি করলেও পরে রাজি হয়ে যায়। আর পিহুর বাবা মা!
তারা তো অনেক খুশি বাড়ির মেয়ে বাড়িতে থাকবে। সারাজীবন চোখের সামনে থাকবে এর থেকে আনন্দ আর কি হতে পারে বাবা মার।

পিহু আর আহির কে যখন কবুল বলতে বলা হয়। আহির তেমন সময় না নিয়েই বলে দেয়। আর পিহু? সে-তো কান্না কাটি শুরু করে দিয়েছিল বিয়ে করবে না বলে। সবার ধমক খেয়ে এক ঘন্টা পরে কবুল বলে ছিল। আহির প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ছিল। একে তো জার্নি করে এসেছে আবার খুুব ক্ষুধাও পেয়েছে। বাধ্য হয়ে দিহান আর বিহানকে দিয়ে খাবার এনে খেতে শুরু করেছিল। বাহিরের লোক না থাকায় কেউ কিছুই বলে না আহিরকে। বাড়ির সবাই বুঝতে পেরেছিল আহিরের দিকটা।

পিহু বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যায়। ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসে। ঘড়িতে দুটো বাজে। পিহুর খুব ঘুম পেয়েছে তাই শুয়ে পরে। একটু পরেই আহির রুমে আসে। এসে দেখে পিহু ঘুমাচ্ছে।

~ কি রে মহারানী ঘুমাচ্ছিস কেন?

কাঁচা ঘুম ভেঙে যায় পিহুর। বিরক্ত নিয়ে উঠে বসে। ~ কি সমস্যা ডাকছিস কেন?

~ আমি ঘুমাবো। খাটটা কি আমার শশুর যৌ*তুক দিয়েছে যে একাই সব জায়গা দখল করে ঘুমাচ্ছিস।

~ শোন আহির ভাই আমি পুরো খাটে একাই ঘুমাবো। তুই সোফায় অথবা নিচে ঘুমা।

~ আস্তাগফিরুল্লাহ বেয়া*দব মাইয়া। জামাই রে কেউ ভাই বলে? এটা বাংলা সিনেমা পাস নাই। যে বাংলা সিনেমার ডায়লগ দিবি।

“” না আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না। খবরদার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। আমি কিন্তু নিজেকে শে*ষ করে দিবো। আপনি আমার শ*রীর পেলেও মন পাবেন না। আমার মন প্রাণ জুড়ে শুধুই আমার ___ ড্যাশ (নাম তো জানিনা) আছে।

পিহু বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। এবার আর শুধু তাকিয়ে থাকতে পারলো না।

~ তুই একটা অ*সহ্যকর লোক।

~ আমি কেমন তা শুনতে চাইনি। তুই আমার বিয়ে করা বউ আমি এখন থেকে যা বলবো তাই করবি। অনেক জ্বা*লাইছিস পিহু রাণী এবার তোরে পাইছি। আহা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করমু তোরে এখন।

~ আমি বড় আব্বুকে বলে দিবো।

~ হা হা কালকে তোকে আমি ঢাকা নিয়ে যাবো। তখন বড় আব্বু কই পাবি? চুপচাপ বসে থেকে আমার পা টিপতে থাক। বলে আহির শুয়ে পরে।

পিহু কিছু না বলে চুপচাপ পা টিপতে শুরু করে। একটু সময়ের জন্য ভুলেই যায় তাদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আহির কে কিভাবে শায়ে*স্তা করবে ভাবতে থাকে।

~ কি রে আমার শশুর কি তোকে খেতে দেয়নি নাকি!? হাতে শক্তি নেই তোর? টেনশন নাই ঢাকা গিয়ে তোরে ভিটামিন কিনে দিবো।

পিহু এবার রেগে গিয়ে জোরে জোরে পা টিপতে শুরু করে। আর মনে মনে বলতে থাকে। “”একবার সুযোগ পাই তোকে দেখো নিবো শয়*তান আহিরাজ রহমান”।

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here