যখন তুমি এলে পর্ব ৯

#যখন_তুমি_এলে।
#পর্ব- ০৯।

সকাল সকাল বিরুনিকার এ অবস্থা দেখে সাচীর চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা। সিঁড়ি রুমে সাচীর সাথে বিরুনিকার দেখা।
সাচী হাই তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করলো,
” সকাল সকাল কে তোমাকে রাঙিয়ে দিলো শুনি? কার এতোবড় সাহস,একবার নামটা বলো।”
” ব্যাঙ!”
” সাচীর চোখ থেকে ঘুমের ভাব পালালো বিরুনিকার কথা শুনে। চোখ মুছার ভান করে বললো,
” ব্যাঙ পেলে কোথায় তুমি? আর ব্যাঙের শরীরে রং থাকে নাকি? ইয়াক…তোমার মুখে ব্যাঙ হিসু করে দেয় নি তো?”
বিরুনিকা ভাবলো,যেমন ভাই তেমন তার বোন। ব্যাঙ নাকি হিসু করে দিছে? এদের দুটোর মাথাতে যে কি আছে, ওরাই জানে। বিরুনিকা নিজের জামাটা ভালো করে সাচীকে দেখালো। তারপর বললো,তোমার কি মনে হয় ব্যাঙের পেটে এতোই হিসু থাকে? আর তাও আবার কালারফুল? বিরুনিকা কথাটা বলে সাচীর মুখের দিকে একটা ভ্রু উপরে তুলে তাকিয়ে রইলো। সাচী এবার ফিক করে হেসে দিল। হাসতে হাসতে বললো,ব্যাঙ কালারফুল হিসু করে, লাইক সিরিয়াসলি! হাসতে হাসতে সিঁড়িতে বসে পড়লো সাচী। বিরুনিকাকে ইশারা করলো পাশে বসার জন্য। বিরুনিকা মুখ ভার করে বসলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সাচীই প্রশ্ন করলো,
” ব্যাঙটা কি আমার শ্রদ্ধেয় ভাইজান?”
” হ্যাঁ, তোমার শ্রদ্ধেয় ভাইজান। সায়াহ্ন ব্যাঙ,কুনোব্যাঙ। বিরুনিকার কথা শুনে সাচী আরো জোরে হেসে উঠলো। তারপর বললো, খুঁজে খুঁজে তো সেই ব্যাঙের পায়েই উষ্টা খেলে। সে কুনোব্যাঙ, আর তুমি কোলাব্যাঙ। ওয়াও,কি জুটি!
কোন এক তপ্ত দিনে তোমাদের ধরে বিয়ে দিয়ে দিবো,যেন বৃষ্টি হয়। দেখনা, গ্রামে বৃষ্টি হওয়ার জন্য ব্যাঙের বিয়ে দেয়। অবশ্য এখন এমনিতেই বৃষ্টি থামার নাম নেয় না,তাই এখন তোমাদের বিয়ে করারও চান্স নাই। এটা বলে সাচী হো হো করে হেসে উঠলো।
বিরুনিকা দূর বলে উঠে চলে গেল। সাচী পিছন থেকে বললো,
“বিয়ের পর কি তাহলে তোমাকে ব্যাঙ ভাবী ডাকবো?”
বিরুনিকা একটু পেছন ফিরে তাকালো,ধীর স্বরে বললো,আগে ভাবী তো বানাও ননদী। সাচী কিছুক্ষণের জন্য ভাবনায় ডুবে গেছিলো।

ফোনে নাম্বার ডায়াল করতে করতে ছাদে উঠলো। দেখে সায়াহ্ন দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবছে,আর গাল ঘষছে। সাচী কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ফোনটা কেটে দিলো একটু বাজতেই। সায়াহ্ন কে জিজ্ঞেস করলো,
” ভাইয়ু কোন সমস্যা?”
” আরে দেখনা মেয়েটা কি করলো।”
” কোন মেয়ে?”
” আরে ঐ যে প্রেসার ল হওয়া মেয়েটা।”
” ভাইয়ু, ওর একটা নাম আছে। আর নামটা অনেক সুন্দর, বিরুনিকা কবির।”
” এতোবড় নাম মনে থাকেনা আমার। যেখানে দুই অক্ষরে এতো সহজ সহজ নাম আছে,সেখানে মানুষ যে এতো বড় বড় নাম কেন রাখে ভেবে পাই না আমি। নাম বড় রাখলেই কি, সে বড় বিখ্যাত মানুষ হয়ে যাবে?”
” সাচী জানে তাই ভাইয়ের সাথে কথা বলতে গেলেই, এসব উদ্ভট যুক্তির সম্মুখীন হতে হয়। তাই খুব একটা কথাও বলা হয় না। আর ইদানিং সাচীও নিজের মত বিজি থাকে। পরীক্ষা শেষ। নতুন একটা শর্টফিল্ম এর থিম মাথায় এসেছে। সেটার জন্য প্রস্তুুতি নিতে হবে। সাচী সায়াহ্নর গালে রং দেখে বললো,ছবি কি আর্ট পেপারে আঁকছো,নাকি গালে?”
” সায়াহ্ন বিরক্তি নিয়ে বললো,আরে আমিতো আর্ট পেপারেই আঁকছিলাম৷ ঐ মেয়েটাই তো গালে…এটুকু বলে সায়াহ্ন থেমে গেল।
তবে সাচী যা বুঝার বুঝে গেল। এখানে একটু আগে রঙ মাখামাখি হয়েছে। দুজনের গালের একই অবস্থা। সাচী মুখ টিপে হাসছিলো। ওর ভাইটা এতো বোকা কেন,কিছু বুঝেনা।
বুঝলে এতোদিনে ঘরে ভাবী থাকতো। বুয়ার হাতের রান্না খেতে হতো না। বিরুপুর রান্না যা টেস্ট না। একবার খেলে, আঙুল চাটবে বারবার। আর কথা না বাড়িয়ে, সাচী ফোন কানে ধরে ছাদের অন্যপাশে চলে গেল। আর সায়াহ্ন জিনিস গোছগাছ করে নিচে নেমে গেল। বিড়বিড় করে কি বলতে বলতে নিচে নেমে গেল।

“তোর মাথায় কি চলছে বলতো রাদ?”
” আমার মাথায় আবার কি চলবে? আমার মাথাটা কি রেললাইন নাকি,যে ট্রেন চলবে?”
” উফফ…তোকে আমার চারতলা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে মন চায় মাঝে মাঝে। রাদ চোখ বড় বড় করে বলতে লাগলো, আগে চারতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠতো তুই মুটি। তারপর প্রয়োজন হলে আমি নিজেই লাফ দিবো। তুই শুধু সিঁড়ি দিয়ে উঠে দেখা। রোহানী জানে,এর সাথে কথা বলাই বেকার। তাই মৃদু স্বরে বললো,” রাদ বস।”
” হঠাৎ কাক কন্ঠী থেকে কোকিল কন্ঠী হয়ে গেলি কি করে? নিশ্চয়ই কোন মতলব আছে। আচ্ছা বলে ফেল শুনি। রোহানী বিরক্ত হতে গিয়েও,সেটা সংবরণ করে নিলো। সম্পূর্ণ ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
” ঐ বিষয়টা বাদ দিলে হয় না?”
” কোনটা?”
” ঐটা।”
” ঐটা কোনটা?”
” রোহানী বুঝে গেল রাদ ইচ্ছে করে এমন করছে। তবুও সে বুঝিয়ে বললো সবটা। রাদ শুনে বললো,
” কই, আমি কি কিছু করছি নাকি? আমি কত ভদ্র একটা ছেলে। রোহানী বুঝলো এর পেট থেকে এখন কিছু বের করা যাবেনা। তবে পেটে পেটে যে বড় কোন ফন্দি আঁটছে সেটা সিউর।
আর সেটাই রোহানীকে ভাবাচ্ছে। কিন্তু এই ছেলের তো সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। রোহানী হতাশচোখে তাকালো।
কেন যে মুখ ফঁসকে সেদিন কথাটা বলে ফেলেছিল। এখন যে এর কি খেসারত দিতে হয় কে জানে। রোহানী মনে প্রাণে চাইছে যেন রাদ যা ভাবছে,সেটা না করে। কিন্তু রাদের চোখেমুখে অন্যরকম কিছুর ছাপ দেখতে পাচ্ছে সে। যেন মেয়েটা বা ছেলেটার সাথে ওর কোন শত্রুতা আছে। রোহানীকে চুপ থাকতে দেখে রাদ বললো,
” মুটি চল বার্গার খেয়ে আসি।”
” না,খাবোনা।”
” আরেকবার বল?”
” বললাম তো খাবোনা।”
” হে বার্গার, তুমি দুঃখ পেয়ো না। আজকের পর তোমার একজন ফ্যান কমে গেল। অবশ্য তাতে তোমার কি,তোমার জনপ্রিয়তা ছিলো,আছে এবং থাকবে। এক দুইজন ফ্যান হেটারে পরিণত হতেই পারে। যার জনপ্রিয়তা বেশি,তার হ্যাটারও বেশি। রোহানী গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। সেটা দেখে রাদ বললো,
তুই খেলে খাবি,না খেলে নাই। আমার সাথে, যেতে তো হবেই। রোহানীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টেনে নিয়ে গেল।
বেশ বড় একটা রেস্টুরেন্টে গেল ওরা। সেখানে বার্গারের ছবি দেখেই রোহানীর অবস্থা খারাপ। বেচারী এতো কষ্ট করে ডায়েট করছে। বার্গারটা যেন ওকে দেখে বলে উঠলো,
” কে তুই,আমি তোকে চিনিনা। তুই আমাকে স্পর্শ করবিনা।”
রোহানী ইমোশনাল চাহনিতে বার্গারের দিকে তাকিয়ে রইলো। রাদ চারটা বার্গার অর্ডার দিলো। আর রোহানীর জন্য স্যুপ। সামনে বার্গার রেখে,স্যুপ খাওয়া রোহানীর জন্য একটা ছোটখাট যুদ্ধসম ছিলো। রাদ রোহানীকে দেখিয়ে দেখিয়ে আরো মজা করে খাচ্ছিল।
শেষ পর্যন্ত রোহানী আর সংবরণ করতে পারলনা। বার্গারের একপাশে কামড় বসিয়ে বলতে লাগলো,
” একদিন খেলে কিচ্ছু হবে না। একদিন ডায়েট করে যেমন শুকিয়ে যায় না কেউ,তেমনি একদিন খেলেও মোটা হয়ে যাবোনা। রোহানীর যুক্তি শুনে রাদ কোক খেতে গিয়ে মুখ থেকে ছেড়ে দিলো সেটা। তবে বিপত্তি ঘটলো এরপরই।
কারন ওরা যে টেবিলটাতে বসেছিল, সেটা ছিলো মানুষ ঢোকার রাস্তার পাশে। আর সে কারনেই, সেদিক দিয়ে একটা কাপল আসছিলো। ছেলেটা চলে গেলেও,মেয়েটার ওড়না চেয়ারে আঁটকে গিয়েছিল। যার ফলাফল রাদের মুখের কোক, ঐ মেয়ের ওড়নায় গিয়ে ছিটে পড়লো। মেয়েটা অফ-হোয়াইট ওড়নার সাথে মেঝেন্ডা থ্রিপিছ পড়েছিল। ওড়নাটার অবস্থা সিরিয়াস! রাদ সরি বলতে যাবে,ঠিক তখনি থমকে গেল। একবার মেয়েটার মুখের দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার ঐ পাশে ছেলেটার দিকে। মেয়েটা রাগে ফুঁসছে। পারলে রাদকে বার্গারের ভিতর ভরে কাঁচা খেয়ে ফেলতো মনে হয়।

” আর ইউ ওকে সাজ? মেয়েটার সাথের ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো।”

” মেয়েটা ওড়নাটার দিকে তাকালো। চকচকা নতুন ওড়নাটায় দাগ পড়ে গেছে মুহুর্তেই। রাদ অনুতপ্ত। কিন্তু মেয়ের মুখ দেখে মনে হচ্ছে না সরি বলাতে বিশেষ কোন কাজ হবে। তবুও ভদ্রতার খাতিরে সরি বলতেই হয়। রাদ সেটাই করলো৷ কিন্তু এর ফলাফল যে আরো মারাত্মক পর্যায়ে যাবে,সেটা কল্পনাও করতে পারেনি।
মেয়েটা রাদের হাত থেকে কোকের গ্লাসটা নিয়ে পুরোটা ওর মাথায় ঢেলে দিলো। তারপর গ্লাসটা টেবিলে রেখে বললো, “সরি।” উপস্থিত সবাই সেই লেবেলের শকড খেয়েছে। রোহানী পুরো থ হয়ে রইলো। কি হচ্ছে, না হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। কেমন যেন মাথা ঘুরাচ্ছে। আর একইসাথে ভয় বাড়ছে। এদের দুটোকে দেখে তো মনে হচ্ছে পূর্ব জন্মে একজন সাপ,আরেকজন নেউল ছিলো। চোখ দিয়েই একজন আরেকজনকে ভস্ম করে দিবে মনে হচ্ছে। কিন্তু এসবের কোন কূল কিনারা বের করতে পারছেনা রোহানী। ওর কাছে সব ধোঁয়াশা লাগছে। মেয়েটা ছেলেটাকে হাতে ধরে নিয়ে চলে গেল। এই রেস্টুরেন্টেই বসলো না। আর রাদ তখনো মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে৷ সেটা দেখেই রোহানীর আরো ভয় বাড়ছে,গলাটা কেমন শুকিয়ে আসছে। ঢকঢক করে একগ্লাস পানি মুহুর্তেই শেষ করলো৷ গ্লাসটা টেবিলে রেখে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” ভাই,মাথা কি বেশিই গরম হয়ে গেছে? কোকটা তো ঠান্ডায় ছিলো৷ এটা বলে রোহানী জিভে কামড় কাটলো। কিন্তুু রাদ কোন কথা না বলে সেখান থেকে দ্রুতগতিতে বের হয়ে গেল। রোহানী কোনক্রমে বিলটা মিটিয়ে, রাদের পিছু ছুটলো৷ কিন্তু রাদ এভাবে যাচ্ছেটা কোথায়?”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here