যখন তুমি এলে পর্ব ১৪

#যখন_তুমি_এলে।
#পর্ব- ১৪।
#জাহান_লিমু।

তুহিন চলে গেছে আজ তিনমাস। সাচী পাগলের মত তুহিনের খোঁজ করছে। সারাক্ষণ তুহিনের ফোনে কল,মেসেজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনটাই তুহিন অবধি পৌঁছায়না। কারন নাম্বারটাই যে খোলা নেই। তবুও মনে ক্ষীণ আশা নিয়ে প্রতিনিয়ত কল করে যাচ্ছে,যদি ফোনটা অন করে। কিন্তু যে নিজে থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়, তাকে খোঁজে বের করা কি আদৌ সম্ভব?
তবুও সাচী হাল ছাড়েনি। তুহিনের বোনের সাথেও কথা বলেছে। কিন্তু কোন আশানুরূপ সাফল্য পাওয়া যায় নি। সাচী একেবারে ভেঙে পড়েছিলো। তবুও নিজেই নিজেকে শক্তি যোগালো। এত সহজে ভেঙে পড়লে চলবেনা। সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক,তুহিনকে খুঁজে বের করতেই হবে। কারণ তুহিন সাচীকে সত্যটা বলতে পারতো। কিন্তু তা না করে তুহিন এভাবে নিজেকে আড়াল কেন করলো?
এটাই এখন সাচীর সবচেয়ে বড় ভাববার বিষয়। কিন্তু যতদিন তুহিনকে না পাবে,ততদিন এ প্রশ্নের সমাধান সে পাবেনা। আর ততদিন সাচীরও শান্তি মিলবেনা। কাজ বা পড়াশোনা কোনটাই ঠিকঠাক করতে পারছেনা সে। কিন্তু এভাবে তো চলা যায় না।
অনেক ভেবে চিন্তে সাচী ঠিক করলো,সে স্বাভাবিক জীবন যাপনই করবে। সবকিছু ছেড়ে দিয়ে উদাসীন হয়ে গেলে কারো কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু যে সময়টা এখন ওর জীবন থেকে চলে যাচ্ছে, সেই সময়টা আর কখনো ফেরত আসবেনা। সময়কে গুরুত্ব না দিলে,একসময় সময়ও আমাদের কোন গুরুত্ব দিবে না। আর বাকী রইলো তুহিনকে খোঁজার কথা,সেটাও না হয় সময়ই করে দিবে। কারন এভাবে খুঁজে সাচী তুহিনকে পাবেনা,এতটুকু বুঝতে পারছে। কারণ তুহিন নিজেকে এমনভাবেই আড়াল করেছে। তুহিনকে কেমন যেন একটা রহস্যের জাল মনে হচ্ছে সাচীর। যে রহস্য ভেদ করা খুব সহজ নয়।
তাই সাচী তার স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসলো। আবার নিজেকে ব্যস্ত করে তুললো। অবশ্য এতে ওর ভাইয়ের ভূমিকা অনেক। সায়াহ্নই সাচীকে মোটিভেট করেছে। সায়াহ্নর ধারণা,
আমাদের জীবনে যাই ঘটে যাক না কেন,কখনোই নিজের কাজের উপর সেটার প্রভাব পড়তে দিতে নেই। কারণ তোমার কাজের মাধ্যমেই মানুষ তোমাকে চিনবে। তাই জীবনের চরম দুর্যোগের মুহুর্তেও নিজের কাজের প্রতি লয়াল থাকতে হবে। এককথায় একদম প্রফেশনাল হতে হবে কাজের ব্যাপারে। সেটা যত ছোটখাটো কাজই হোক না কেন। আমরা আজকাল অল্পতেই ডিপ্রেশনে পড়ে যায়। তারপর সব কাজ,পড়াশোনা বাদ দিয়ে উদাসীন হয়ে যায়। অথচ তুমি যদি কাজের মধ্যে থাকো,তাহলে ডিপ্রেশন তোমার ধারেকাছেও আসতে পারবেনা। যখন আমরা সবার থেকে,সবকাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখি,তখন ডিপ্রেশন ঝেঁকে বসে। আমরা নিজেরাই সেটা টের পাই না। আমরা ভাবি একা থাকলে ভালো লাগবে। হ্যাঁ,মাঝে মাঝে নিজেকে একা সময় দেয়ার প্রয়োজন আছে বৈকি। নিজেকে সময় দেয়া অবশ্যই জরুরী। তবে যখন ডিপ্রেশনে পড়ে যায়, তখন মানুষের সান্নিধ্যে থাকাই ভালো। পরিবারের সাথে,বন্ধু বান্দবের সাথে,ছোট বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো উচিত তখন। নিজেকে বন্দি করে রাখাতে কোন কিছুর সমাধান নেই। যতসম্ভব নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়তে দেয়া উচিত। একটা দিন অবহেলায় চলে গেলে,সেই একটা দিনই বিরাট কিছু হয়ে দাঁড়ায় কখনো।
নতুন একটা শর্টফিল্মের কাজ শুরু করতে চাইছে সাচী। কিন্তু থিমটা ঠিকঠাক গুছাতে পারছেনা। তবে সেখানে একজন কিশোরী মেয়ে দরকার। এই ষোল-সতের বয়সের কোন মেয়ে। আর মোটামুটি অভিনয় জানে। তাই সেখানে এমন কাউকে প্রয়োজন,যে মোটামুটি প্রফেশনালি অভিনয় জানে। বিরুনিকার ছোটবোন স্মরণিকাকে দিয়ে ট্রাই করে দেখা যেতে পারে অবশ্য। একটু বুঝিয়ে শুনিয়ে নিতে হবে। আর মেইল ক্যারেক্টার হিসেবে সাচীর কাজিন সোহানই থাকবে। আগের শর্ট ফিল্মেও সোহান অভিনয় করেছিলো। সোহানও সাচীর বাবার সাথে মঞ্চ নাটকে অভিনয় করে। ঢাবির নাট্যকলা
বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র সে। পাক্কা অভিনেতা। সাচীর বাবার ধারণা,সোহান একদিন অনেক বড় অভিনেতা হবে।

————————————————————————–

রোহানী অস্থির হয়ে তানিমকে একের পর এক কল করে যাচ্ছে। যদিও জানে, তানিম হয়তো অফিসে এখনো। তবুও বারবার কল দিচ্ছে। প্রথম কয়েকবার কল কেটে দিলেও,এবার আর তানিম ফোন কাটছেনা। আবার রিসিভও করছেনা।রোহানী হতাশ হয়ে বসে পড়লো। এ মুহুর্তেই তানিমের সাথে কথা বলার দরকার। নয়তো বিপদ বাড়বে। ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে,রোহানী এবার ঝামেলায় পড়ে গেল। মা,বাবা তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিজনেস ম্যান ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছে। ছেলের কোম্পানির শাখা নাকি লন্ডনেও আছে। বয়স পঁয়ত্রিশ প্লাস। কিন্তু সেসব রোহানীর মা বাবার কাছে কোন ম্যাটার করেনা। বড় বিজন্যাসম্যান দেখে বিয়ে দিতে গেলে বয়স একটু এরকম হয়ই নাকি। রোহানীর বাবাও ওর মায়ের থেকে তের বছরের বছরের বড়। টাকা থাকলে, বয়স নাকি কোন ফ্যাক্ট না।
আজ সকালে ছেলে রোহানীর সাথে মিট করতে এসেছিলো। তবে রোহানীর কাছে ছেলেটাকে সুবিধার মনে হলো না। মেজাজ অত্যন্ত কড়া। রোহানী এখন সত্তর কেজির মত আছে ওজন। সেটা দেখে ছেলে নিজে রোহানীর খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে স্ট্রিক্টলি নিষেধ করে গেলো। জিরো ফিগার বানাতে বললো রোহানীকে। সম্পূর্ণ তিরিক্ষি মেজাজে কথাগুলো বলায় রোহানীর রাগে গা কাঁপছিলো। অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরণ করলো তখন। কারণ মা বাবার সামনে কিছু বলা যাবেনা ছেলেকে। তবে চলে যাওয়ার পর বাবার কাছে গিয়ে যা বলার বললো। সব মেয়েদের মায়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। কিন্তু ওদের দুই বোনের সেটা নেই। ওদের মা কে ছোট থেকেই পার্টি,মেকআপ,সাজগোজ, হ্যাং আউট এসব করতেই দেখেছে। ওরা বড় হয়েছে কাজের লোকের কাছে। আর বাবা তো ব্যবসার কাজে সারাবছর এদেশ থেকে আরেকদেশ করেই কাটিয়ে দিতো। যতটুকু সময় পারতো,মেয়েদের সময় দিতো। তবে সেটা নিতান্তই হাতেগোনা। বড় হতে থাকলো,আর ধীরে ধীরে সব বুঝতে লাগলো। তাই নিজের মতই চলাফেরা করতো। সোহানী অবশ্য এতোটা সাফার করেনি। কারন সঙ্গ দেয়ার জন্য রোহানী ছিলো। সেই বোনের টেক কেয়ার করতো। মা তার বড়লোক বান্ধবীদের নিয়েই বিজি থাকতো। আর যে ছেলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে,সে মায়ের কোন বান্ধবীর আত্নীয়।
বাবার রুমে গিয়ে রোহানী কাঁদো কাঁদো গলায় সব খুলে বললো। সব শুনে জাভেদ শিকদার তানিমের সাথে সরাসরি কথা বলতে চাইলেন। রোহানী মনে মনে খুশি হলেও,একইসাথে অবাকও হলো। তবে সেটা প্রকাশ করলোনা। মা অবশ্য তখনো কিছু জানেনা। আর সেই কারনেই রোহানী তানিমকে একটানা কল করে যাচ্ছে। কিন্তু তানিমের তো কোন পাত্তাই নেই।
অবশেষে তানিম কলব্যাক করলো আধাঘন্টা পর। রোহানী প্রায় হুমড়ি খেয়ে ফোনটা রিসিভ করলো। সাথে সাথে বলে উঠলো,
” প্রয়োজনের সময় তোমাকে কল করলে কখনো পাওয়া যায় না। কখন থেকে ফোন দিচ্ছি, তার মানে নিশ্চয়ই কোন ইমার্জেন্সি ছিলো।”
” তানিম হুঁট করে রেগে বললো,আমিও হয়তো বিজি ছিলাম,তাই বারবার কেটে দিচ্ছিলাম। একটা বাচ্চামেয়েও তো সেটা বুঝার কথা। তা না করে একটানা কল দিয়ে যাচ্ছো অভদ্রের মতো। সবসময় নিজের দিকটা ভাবলে চলে না। অপর পাশের ব্যাক্তিরটাও ভাবতে হয়।”
রোহানী পুরো চুপ হয়ে গেল। তানিম এমন কঠিন সুরে কথা বলছে কেন, ভেবে পাচ্ছে না। বেশি এক্সাইটেড ছিলো,তাই এতোগুলো কল দিয়ে ফেলেছে। তাই বলে এতো রাগ দেখাতে হবে? রোহানীর বেশ অভিমান কাজ করলো। তাই চুপ করে রইলো। কোন কথা বললোনা কয়েক মুহুর্ত। তখন তানিম একটু জোরে বললো,
” কেন ফোন দিয়েছিলে বলবে নাকি ফোন রেখে দিবো?”
” রেখে দেন। এমনি দিয়েছিলাম। অভিমানী সুরে বললো রোহানী। তবে তানিম সে অভিমান টের পেয়েছে বলে মনে হয় না।”
” তানিমেরও রাগ হলো,তাই সত্যি সত্যিই লাইনটা কেটে দিলো।”
রোহানী ফোন হাতে নিয়ে হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। ভালোবাসি বলা হয়ে গেলে কি,সত্যিই অপর পাশের মানুষটা বদলে যেতে শুরু করে?

————————————————————————–

বেশ কদিন ধরে সাচীর মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফলো করছে। কিন্তু কাউকেই দেখতে পায় না। ভীষণ বিরক্ত লাগছে বিষয়টা।
আজকে আবার তুহিনের বোনের বাসায় যাচ্ছিল। তখনো মনে হলো কেউ ওর পেছন পেছন গিয়েছিলো। কিন্তু এবারও কাউকে দেখতে পেলো না। বাসায় গিয়ে তুহিনের বোনের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো। আগেরবার পুরোপুরি বিষয়টা খোলে বলেনি সে। তবে এবার সবটা বলে দিলো। যা হবার হবে। দোষ যখন নিজের,ভুল যখন নিজে করেছে, তখন সে কারণে যদি তাকে ছোট হতে হয়,তবে হবে। সে যে তুহিনকে সন্দেহ করেছিলো,তুহিনকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছিলো,সব সব বলে দিলো। সেটা হয়তো তুহিন মানতে পারেনি। কিন্তু তার জন্য এভাবে দেশ ছেড়ে,নিজের কাজ ছেড়ে, নিরুদ্দেশ হওয়ার কি মানে?
সেটাই সাচী ভেবে পাচ্ছে না আজ অবধি।
সাচীর প্রতি রাগ,নিজের উপর,নিজের কাজের উপর কেন দেখাবে?
স্বাভাবিক ভাবে সাচীর সাথে ব্রেকআপ করে দিলে,সাচীর কিছুই করার ছিলো না। কারণ সে নির্দোষ,সাচীই ভুল ছিলো।
এতো এতো প্রশ্ন সাচীর মাথায় জট পাকাচ্ছে,কিন্তু উত্তর কেবল একজনই দিতে পারে। কিন্তু সে কোথায়?

সাচীর কথা শুনে তুহিনের বোন খুব বেশি অবাক হলো বলে মনে হলো না। স্বাভাবিক ভঙ্গীতেই বললো,এখন বুঝতে পারলাম তুহিনের এমন আচরণের কারণ। তুরীনের কথা শুনে সাচী বিস্মিত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালো। তুরীন সাচীর তাকানো দেখেই বুঝতে পারলো, কেন এমন করে তাকিয়েছে।
সাচীকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে রেখে রান্নাঘরে গেলো। ফিরে এলো হাতে দুটো কফির মগ নিয়ে। সাচী অন্য কিছু খেতে চাইছিলোনা,তাই শুধু কফি আনলো। সাচীর হাতে মগটা দিয়ে নিজে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো,
” বুঝলে,সম্পর্কে বিশ্বাসটা খুব জরুরী। আর তুহিন মোটামুটি সেলিব্রিটি হওয়া স্বত্তেও, কোন মেয়ের সাথে আজ অবধি জড়ায়নি। সে কেন যেন কোন মেয়েকে সহজে ভরসা করতে পারতনা। এটা ওর একটা মানসিক সমস্যা বলতে পারো। তাই আমাকে সবসময় বলতো যে আমার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করবে। ভাবা যায়, এরকম একটা স্মার্ট ছেলের মুখে,এমন ধরনের কথা?
কিন্তু তুহিন এমনি। এমনিতে সবার সাথে মিশুক। তবে এসব ব্যাপারে সে খুবই সতর্ক।
কিন্তু হঠাৎ তোমাকে দেখার পর,সে কেমন যেন বদলে যেতে লাগলো। তোমাকে যেদিন দেখেছে,সেদিনই তোমার কথা আমাকে বলেছিল। আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। এরপর ধীরে ধীরে তোমরা অনেকটা এগিয়ে গেলে। একে অন্যকে মনের কথা জানিয়ে দিয়েছিলে।তাই তুহিন বলেছিলো,সরাসরি তোমার পরিবারের সাথে কথা বলাবে। কারণ সে কোন রিস্ক নিতে চায় নি। প্রথম প্রেমই,শেষ প্রেমে পরিণত করতে চেয়েছিলো সে। তার রেশ ধরেই,তারপর আমি কথা বললামও তোমার বাবার সাথে। কিন্তু যখন সবকিছু প্রায় ঠিক,তখন তোমাদের মধ্যেই ঝামেলা লেগে গেলো। সেখানে আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোন সুযোগ ছিলো না। কারণ তোমরা দুজনই প্রাপ্তবয়স্ক। যথেষ্ট ম্যাচিউর। সেখানে আমাদের হস্তক্ষেপ করাটা শোভনীয় লাগতনা। কারণ জীবনটা তোমাদের,তাই সিদ্ধান্তও তোমাদের। আর পরিস্থিতি এত বাজে হলো যে,তুহিনও দেশ ছেড়ে চলে গেলো। আর তুমিও তখন কোনকিছু বলতে চাইছিলে না। তাই আমিও চুপ ছিলাম। কারন সেখানে আমার করার মত কিছু ছিলো না। ভেবেছিলাম তোমরা দুজন সময় নেও। কারণ তোমাদের সম্পর্কের মাত্র কয়েকমাস হয়েছে। কাউকে জানতে বুঝতে আরো সময় লাগে। যদিও এংগেজমেন্ট এর পরেও সে সময় পেতে। তবে তুহিনের কথা অনুযায়ীই এংগেজমেন্ট এর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। তোমাকে নিয়ে সে কোন ঝুঁকি নিতে চায় নি। কিন্তু সেই দেখো, কি থেকে কি হয়ে গেলো।
সম্পর্কে মাঝে মাঝে গ্যাপের প্রয়োজন আছে। এতে করে একে অপরকে যাচাই-বাছাই করা যায়। একে অন্যের প্রতি ভালোবাসার গভীরতাটা ঠিকভাবে বুঝা যায়। তবে সেটা অবশ্যই একটা সীমার মধ্যে থেকে। যেন খুব বেশি গ্যাপও না হয়ে যায়। কারন কোনকিছুই বেশি বেশি ভালো না। তুহিন এখন যেটা করছে,সেটা অতিরিক্ত। অবশ্য সেক্ষেত্রে ওকেও সম্পূর্ণ দোষ দেয়া যায় না। কারণ ও মেয়েদের ব্যাপারে ভীষণ পসেসিভ ছিলো। ওর ধারণা ছিলো আজকালকার মেয়েরা খালি অযথা সন্দেহ করে,ন্যাকামো করে। কথায় কথায় ঝগড়া করে। অকারণে প্যারা দেয়। অবশ্য ওর ধারণা সম্পূর্ণ ভুল নয়। আজকাল অনেক মেয়েই এমন। আর সে কারনেই সে একবারে তোমাকে নিজের করে নিতে চেয়েছিলো। বেশিদিন প্রেমের সম্পর্ক থাকলে,সেখানে তিক্ততাও চলে আসে অনেক সময়। তাই বিয়ে করে নেয়াটাই ভালো।
এখন যা করবে, বুঝেশুনে করবে। তুহিন আজ হোক,কাল হোক দেশে তো আসবেই। তারপর দুজনে মিলে সর্ট আউট করে নাও সব। আমিও তুহিনকে বুঝাবো। যে মানুষ মাত্রই ভুল। তুমিও একটা ভুল করেছো। তার জন্য এভাবে নিজেদের কষ্ট দেওয়ার কোন মানে নেই। তুহিনটা পুরো একটা পাগল। সংসার করতে গেলে এরকম আরো কত ছোট বড় ভুল বুঝাবুঝি হবে। তাই বলে কি সংসার ছেড়ে দেয়া যাবে?
আমাদের জীবনটাই এমন। ভুলের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে আমরা ঠিক জায়গায় পৌঁছে যায় একসময়। আর এই ভুলগুলো থেকেই আমরা শিক্ষা নেই। যা পরবর্তীতে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমরা বিবেচনা করি।

তুরীন আপুর কথা শুনে সাচী কিছুটা আশা নিয়ে ফিরে এলো সেখান থেকে। কারণ তুহিন আপুর কথা ফেলতে পারবেনা। আপু তুহিনের তিনবছরের বড়। দুইটা মেয়ে আছে উনার। বড়টার বয়স নয়,ছোটটা ছয়। আর তারচেয়ে বড় বিষয় তুহিন তুরীন আপুকে ভীষণ ভালোবাসে। এখন শুধু তুহিনের ফেরার অপেক্ষা। অবশ্য সে সাচীকে গ্রহণ করবে কিনা,সেটা ভেবে সাচীর ভীষণ ভয় করছে। একটু ভুল তো হতেই পারে,তাই বলে এমন করবে?
বুঝিয়েও তো বলতে পারতো। তা না করে সে কি করলো?
একবার ফিরে আসুক শুধু।
কয়েকদিন পর সন্ধ্যায় ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো সাচী। হঠাৎ নিচে গাছের আড়াল থেকে কেউ সরে গেলো বলে মনে হলো। আবছা অন্ধকারে ঠিক বুঝা যাচ্ছিলো না কে। তবে সাচী এতটুকু নিশ্চিত ঝোঁপের ব্যাক্তিটা ওর দিকেই তাকিয়েছিলো। ও তাকানোর সাথে সাথে গাছের আড়ালে চলে গেছে। তাই সাচী আর দেখতে পেলো না। প্রথমে বিষয়টাকে পাত্তা না দিলেও, এবার বিষয়টা কেমন ঠেকছে সাচীর কাছে। একা নিচে যাওয়াটা এখন ঠিক হবে না। না হলে চেক করতে যেতো সে।
তাই পাত্তা না দিয়ে রুমে চলে গেলো। এমনিতেই মন মানসিকতা ঠিক নেই,তার উপর এসব উটকো ঝামেলা ভালো লাগে না।
হালকা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে বাইরে। ছাতা হাতে আরাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে সাচী। আর আরাদ বৃষ্টিতে ভিজছে।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here