#লাবণ্যর_সংসার
#পর্ব_2
#কৃ_ষ্ণ_ক_লি
—“ ভালো রান্না করেছে বলে কি ও কে মাথায় তুলে নিয়ে নাচতে হবে? একুশ বছরের ধিঙ্গি মেয়ে একটা, বাচ্চা মেয়ে তো আর নয় যে রান্না করে অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে! এসব ন্যাকামো তোমরা করতে পারো। বউ হয়ে এসেছে যখন সব কাজ ওকেই করতে হবে। ”
লাবণ্য রান্না করা খাবার খেয়ে সবাই যখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ , শিউলি বেগম খাবার মুখে দিয়েই মুখ গোমড়া করে রইলেন। আতীক সাহেব , রুমানিয়া বেগম লাবণ্যকে ভালো রান্না করার জন্য অনেক প্রশংসা করছিলো শিউলি বেগম রাগে ফেটে পড়ছিলেন। এই মেয়েকে তিনি সহ্য করতে পারছেন না।
—“ ভাবী মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট দিয়ে কথা বলো না। ”
—“ কষ্ট দিয়ে কথা আমি কি বললাম? আমার তো কোনো কথাই বলা যাবেনা দেখছি। আচ্ছা আমার অন্যায় হয়েছে। আমি আর কিছু বলবো না। ”
লাবণ্য আটকানোর চেষ্টা করলেও শিউলি বেগম রাগ দেখিয়ে উঠে চলে যান।
—“ ভাইয়া ভাবীর হঠাৎ করতে রাগের কারণটা বুঝতে পারলে? কাল সবেমাত্র মেয়েটা এই বাড়িতে এসেছে আজ মেয়েটার বৌভাত। অন্তত আজকের দিনটাতে মেয়েটার সাথে এমন আচরণ না করতে পারতো। ”
—“ আমি আর কি বলবো বলতো। যাইহোক সন্ধ্যার অনুষ্ঠানের জন্য সবকিছু দেখ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না। ”
লাবণ্য বেশ অনেকক্ষণ হল ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। ডান হাতে পাঁচ আঙুলের দাগ বসে অনেকটাই লাল হয়ে গেছে। হাতটা ধরে নিয়ে মাঝে মাঝে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠছে। বিয়ের দ্বিতীয় দিনেই ও বুঝে যায় সংসার জীবন ওর কাছে সহজ – সরল হবে না। প্রতি পদে পদে ও কে পরীক্ষা দিতে হবে।
আজ সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে লাবণ্য নিজের মা, বাবা, চাচা – চাচী, বোন, ভাইয়া ও ভাবীকে পেয়ে ভীষণ খুশি হয়। লাবণ্যর শাশুড়ী মাও বেশ হাসি খুশি। লাবণ্যর পরিবারের সাথে বেশ হেসে কথা বলছিলেন। যা দেখে আজ সকালে করা ব্যাবহারে যে কষ্টটা লাবণ্য পেয়েছিলো তা যেনো নিমেষেই হারিয়ে গেলো। বুঝতে পারলো শাশুড়ী নামক মানুষটা গম্ভীর প্রকৃতির হলেও বেশ ভালো। লাবণ্যর মুখেও হাসি ফুটে ওঠে।
বাবা-মা চলে যাওয়ার সময় লাবণ্য জড়িয়ে খুব কাঁদলো। সবাই সান্ত্বনা দিয়ে চলে গেলো। লাবণ্য ওদের সাথে যাবে বলেছিলো কিন্তু নিবিড়ের সম্মতি না পেয়ে আর কিছু বলে না।
লাবণ্যর মতে সব কিছু ভালোভাবে মিটে গেলেও ,ওর জন্য যে কি আছে তা ওর ভাবনার বাইরে!
বিছানায় বসে নিবিড়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো। সশব্দে দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ পেতেই সেদিকে তাকিয়ে দেখে নিবিড় বেশ রেগে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। লাবণ্য কিছু বুঝে , বলে উঠার আগেই নিবিড় ওর হাতটা পিছনে মুড়িয়ে ধরে। ঘটনার আকস্মিকতায় লাবণ্য চিৎকার করে উঠে। যার কারণে নিবিড় গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে লাবণ্যর হাতটা আরও জোরে চেপে ধরে। লাবণ্য কেঁদে ফেলে শব্দ করে।
—“ কি করছেন? আমার ব্যথা করছে তো? ”
—“ দু দিন হল বিয়ে করে আসতে না আসতেই ট্রিপিক্যাল বউদের মতো কূটকাচালী শুরু করে দিয়েছিস? এখন থেকেই শ্বশুরবাড়ির নিন্দা করা শুরু করে দিয়েছিস? ”
নিবিড়ের রাগ মেশানো গম্ভীর কন্ঠের কথা শুনে মাথা ঘুরতে লাগে। ঘটনার কিছুই তো বুঝতে পারছে না ও। কূটকাচালী কি! আর ও কি করেছে!
—“ শ্বাশুড়ী খুব খারাপ তাই না রে! ভেবেছিলি পায়ের ওপর পা তুলে বসে খাবি। কিন্তু তা আর হলো না বল! আজ দুটো রান্না করেছিস বলে এতো কষ্ট হয়েছে যে তোর বাপের বাড়িতেও সেটা জানাচ্ছিস? ”
নিবিড়ের হুংঙ্কারে কেঁপে উঠে লাবণ্য। এতক্ষণে বোধগম্য হয় ব্যপারটা।
সবাই যখন গল্প – কথায় মশগুল তখন লাবণ্যর ভাবী রুকসার এসে ওর সাথে আলাদা ভাবে কথা বলে। লাবণ্যকে জানতে চায় ওর কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, বাড়ির মানুষ গুলো কেমন! লাবণ্য হাসিমুখে ওর ভাবী রুকসারকে জানায় এখানের সবাই খুব ভালো। ও অনেক উৎফুল্ল হয়ে জানায় যে ও আজ সবাইকে রান্না করে খাইয়েছে। সবাই ওর হাতের রান্না করা খাবার খেয়ে ভালো বলেছে। রুকসারা হাসিমুখে লাবণ্যর গালে হাত রেখে প্রতিত্তর করে বলে , ‘তাহলে তো বেশ ভালোই রে , আমার ননদিনী তো দেখছি পাকা গিন্নি হয়ে উঠছে। কিন্তু লাবণ্য বিয়ের পরদিন রান্না করতে দিলো। হাজার হোক তুই তো নতুন বউ।’ লাবণ্য হাসি মুখে বলে , ‘ আসলে ভাবী শাশুড়ী মা রান্না করতে পাঠিয়েছিলেন। উনি আমাকে রান্নাঘরের দায়িত্ব দিয়েছেন। ’ রুকসারা লাবণ্যর কপালে চুমু দিয়ে হাসছে। ‘ এটা খুব ভালো ব্যাপার তো! সবার মন জয় করে চলিস, আমি জানি তুই পারবি। ’ ব্যাস লাবণ্যর আর রুকসারার এতোটুকুই কথা হয়।
কিন্তু ওই যে যাকে না সহ্য করতে পারা যায় তার একটা কথার শব্দ শুনলেই গা জ্বলে যায়। লাবণ্য যখন কথাগুলো বলছিলো তার পাশ দিয়েই শিউলি বেগম যাচ্ছিলেন। কিন্তু ওরা তা খেয়াল করেনি। নিশ্চয়ই উনিই ছেলেকে বলেছেন। তাই তো নিবিড়ের এমন আচরণ।
নিবিড়ের কাছ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু নিবিড় এতোটাই শক্ত ভাবে ধরে আছে যে লাবণ্য হাতটা নাড়াতেই পারছে না। উল্টে যন্ত্রণা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
—“ আমার হাতটা ছাড়ুন , যন্ত্রণা হচ্ছে আমার প্লিজ। আপনি ভুল বুঝছেন আমাকে। আমার কথাটা একটু শুনুন। ”
—“ আমি কিছু শুনতে চাইছি না , যা আমার কানে এসেছে , তুই যা করেছিস খবরদার তুই আর এক কাজ করবি না। তাহলে কিন্তু তোর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে ।”
লাবণ্যকে একপ্রকার শাসিয়ে ওর হাতটা ছেড়ে দেয় নিবিড়। লাবণ্য নিজের হাতটা ধরে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে থাকে।
—“ আপনি বিশ্বাস করুন আমি এমন কোনও কাজ করিনি। আমি এই বাড়ির নিন্দা করিনি। আপনার মা সম্পর্কে আমার শাশুড়ী মা হলেও উনি আমার নিজের মায়ের মতো। আমি উনার সম্পর্কে কাউকে খারাপ কোনও কথা বলিনি। আমি তো শুধু ভাবীকে বলেছিলাম আজ আমি আপনাদের সবাইকে রান্না করে খাইয়েছি। ছোটো – বড়ো আর কোনও কথাই বলিনি। ”
নিবিড় ধমকে উঠে,,
—“ এই শুনো তোমাদের মেয়েলী ব্যাপারে আমার কোনও ইন্টারেস্ট নাই। আমি শুধু এটূকু বলবো আমার মাকে যেনো দ্বিতীয় বার অপমান আর না করো। তাহলে কিন্তু তোমার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যাবে। ”
লাবণ্য আর কিছু বলে না। ও আবারো বুঝে যায় এই বাড়িতে থাকতে হলে ও কে অনেক বাধা – বিপত্তির মুখে পড়তে হবে।
বর্তমানে,
লাবণ্য বিছানায় জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে একনাগাড়ে ফুঁপিয়ে চলেছে। যা ওই সোফায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকা নিবিড়ের বিরক্তির কারণ হচ্ছে। নিবিড় ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে এক দৃষ্টিতে লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে আছে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে। লাবণ্যকে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ওদের দরজায় ঠ্কঠ্ক করে তিনটে টোকা পড়ে।
—“ নিবিড় ভাইয়া আসবো? তোমার কফি নিয়ে এসেছি। ”
দরজার ওপাশ থেকে মেঘলার কথা শুনে নিবিড় একবার লাবণ্যর দিকে তাকায়। লাবণ্য চোখের পানি মুছে শাড়ির আঁচলটা পিঠে ভালো করে জড়িয়ে উঠে বসে। নিবিড় ভেবেছিলো লাবণ্য হয়তো দরজা খুলবে কিন্তু লাবণ্যর কোনও নড়াচড়া না দেখে নিবিড় নিজেই উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
—“ তুমি সত্যিই কাজ করছো এখনও পর্যন্ত! মামী বললো তোমার রুমে কফি দিয়ে যেতে। আমি তো মামীকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম তুমি ঘুমিয়ে গেছো। কিন্তু এসে দেখলাম সত্যিই। ”
নিবিড় মুচকি হেসে কফিটা হাতে নিয়ে সোফায় বসে পড়ে। মেঘলাও তার পিছু পিছু এসে পাশে বসে। নিজের হাত ঘড়িটা দেখে মেঘলা বলে,,
—“ একটা বাজতে চললো , আর তুমি এখনো কাজ করে চলেছো ! ”
—“ হুম কিন্তু পাগলী আর তিনদিন পর অফিসে যে তিনটা বড়ো বড়ো মিটিং আছে এক কোটি টাকার বুঝলি। তার আগে এই প্রোজেক্টটা কমপ্লিট করতে হবে। তা না হলে পুরো লস। ”
—“ নিবিড় ভাইয়া তুমি কাজটা তো আমাকেও বুঝিয়ে দিতে পারো। তাহলে তোমাকে রাত জাগতে হবে না , আমি করে দিব। ”
—“ সময় হোক তোকেই তো আমি দায়িত্ব দিব সবকিছুর। ”
—“ হুম এবার চলো ঘুমাতে যাও। আর এগুলো সকালে করে নিবে তিনদিন অনেক দেরী। ”
মেঘলা কি মনে করে পিছনে তাকিয়ে দাঁতে জিভ কেটে ফেলে। কপালে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। লাবণ্যর কাছে এগিয়ে আসে।
—“ তুমি ও এখনো জেগে আছো? ওহ গড্! আচ্ছা তুমি কি বলতো তোমার বর সারারাত ধরে কাজ করছে তুমি কিছু বলতে পারছো না? ”
মেঘলার এমন কথা শুনে লাবণ্য একটু ঘাবড়ে যায়। লাবণ্য নিজের ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে ধরা গলায় বলে উঠে, ,,
—“ আম… আমি কি বলবো? ”
—“ বাহ্ কি বলবো মানে? ও তোমার স্বামী , রাত জেগে কাজ করছে আর তুমি কিছু বলবে না। শরীর খারাপ করলে কিন্তু তোমাকেই সেবা করতে হবে!”
মেঘলা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। লাবণ্য ঠোঁটের কোণে হাসি আনার চেষ্টা করে। মেঘলা লাবণ্যর মুখটা দুহাতে নিয়ে বলে,,,
—“ তোমার চোখ মুখের এমন অবস্থা কেনো? তুমি কান্না করছিলে? ”
মেঘলার কথা শুনে অজান্তেই চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে আসে লাবণ্যর। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্নাটা আটকানোর চেষ্টা করে। ছোটো থেকেই ওর এই একটাই খারাপ অভ্যাস , ওর অধিক কষ্টের সময় কেউ যদি ও কে কান্নার কথা বলে তাহলে ও হাজার চেষ্টা করেও নিজের কান্না থামাতে পারেনা। এখানেও তাই হলো। মেঘলার হাত ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।
—“ এ মা কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেনো? ”
মেঘলা লাবণ্যকে থামানোর চেষ্টা করছে। লাবণ্য মেঘলাকে জড়িয়ে কাঁদছে। একসময় লাবণ্যর চোখ চলে যায় নিবিড়ের দিকে। নিবিড়ের রাগী চেহারা দেখে অনেক কষ্টে লাবণ্য নিজের কান্না আটকায়। মেঘলা লাবণ্যর চোখের পানি মোছাতে থাকে।
—“ ও বুঝেছি নিশ্চয়ই তোমার বাড়ির লোকের কথা মনে পড়ছে। তোমার মা-বাবার কথা মনে পড়ছে। তুমি কেঁদো না প্লিজ। আমরা সবাই তো আছি তোমার পাশে। ”
মেঘলা লাবণ্যকে ছেড়ে নিবিড়ের কাছে এগিয়ে আসে। নিবিড়ে কাছ থেকে ল্যাপটপ টা কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেয়। নিবিড়ের হাত ধরে লাবণ্যর পাশে বসিয়ে দেয়।
—“ তোমার বউ কাঁদছে নিবিড় ভাইয়া। তুমি এক্ষুনি জড়িয়ে ধরো, কান্না থামাও। কাজ পরে করলেও হবে। নিজের বউকে ভালো রাখার চেষ্টা করো! নিজের বউকে ভালো রাখার দায়িত্ব নাও নিবিড় ভাইয়া। ”
—“ আচ্ছা ঠিক আছে , তুই যা চাইছিস তাই হবে।”
—“ কোথায় হল! বসেই তো আছো জড়িয়ে ধরো। ”
নিবিড় মৃদু হেসে লাবণ্যকে জড়িয়ে ধরে। মেঘলাকে হাসতে দেখে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
—“ তুই খুশি তো! ”
— “ হুম ভীষণ। এবার তোমরা নিজেদের মতো সময় কাটাও। আর হ্যাঁ রাত জাগবে না কিন্তু ঘুমিয়ে যাও। দুজনকেই শুভ রাত্রি। ”
মেঘলা বেরিয়ে গেলে নিবিড় দরজাটা সশব্দে বন্ধ করে দেয়। লাবণ্য কেঁপে উঠে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকার চেষ্টা করে। নিবিড় ওর দিকে তাকিয়ে থেকে তাচ্ছিল্য করে বলে,,,
—“ যত্তোসব নাটক..”
লাবণ্য নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিবিড় কফির কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দেয়।
—“ ধ্যাত… কফিটাই ঠান্ডা হয়ে গেলো। ”
নিবিড়ের ভ্রু কুঁচকে থাকা গম্ভীর মুখটা দেখে লাবণ্য বুকে অদম্য সাহস নিয়ে বলে উঠে,,,
—“ আমি কফিটা গরম করে আনবো? ”
কথাটা বলেই মুখ নীচু করে নেয় লাবণ্য। নিবিড় একপ্রকার ঝাঝিঁয়ে প্রতিত্তর করে,,
—“ থাক তার কোনও প্রয়োজন নাই। আমি ঠান্ডা কফি খেতে পারবো। ”
লাবণ্য আর কিছু না বলে চুপচাপ বিছানার এককোণে বসে পড়ে। নিবিড় কফিটা শেষ করে লাইট অফ করে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়ে। লাবণ্য বেড সাইড টেবিলে থাকা নাইট ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে নেয়। নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে। মূলত মানুষটাকে বোঝার চেষ্টা করছে। আজ যে আচরণটা ওর সাথে করলো তারপর কি মনে হয় মানুষটার সাথে মানিয়ে চলতে পারবে। স্বামী নামক মানুষটা কি ও কে বুঝবে আদেও! আসা থেকে একবারও তো ভালো করে কথা বলেনি। আজ সারাদিনেও তো একবারও কথা বলেনি লাবণ্যর সাথে। লাবণ্যর আশে পাশেও আসেনি। সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে নিবিড় বন্ধুদের সাথে ব্যস্ত ছিলো, ব্যস্ত ছিলো মেহেমানদের নিয়ে। অনেক আশা নিয়ে বসে ছিলো আজ রাতেও। লাবণ্য মনে করেছিলো আজ হয়তো নিবিড় ওর সাথে গল্প করতে বসবে। হয়তো ওর রান্নার তারিফ করবে! তখন লাবণ্য জেনে নিবে নিবিড়ের পচ্ছন্দের খাওয়ার গুলো। কিন্তু আশার আলোটা হয়তো নিভে গেলো আজকের নিবিড়ের রণমূর্তি দেখার পর। নতুন মানুষের সাথে এমন আচরণ করতে পারে কেউ! লাবণ্যর মনের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
সকালে চোখ খুলে তাকিয়ে পাশে নিবিড়কে দেখতে পায় না লাবণ্য। বেডে হেলান দিয়ে থাকার জন্য ঘাড়টায় ব্যাথা অনুভব করছে লাবণ্য। ও আড়মোড়া দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। ডান হাতে দাগটা এখনো দগদগে লাল হয়ে আছে। অতিরিক্ত কান্নার কারণে চোখে ভীষণ জ্বালা করছে। মাথাটাও বেশ ভারি হয়ে আছে। দু হাতে চোখটা কচলে নিয়ে ওয়াশ রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে তার তলায় দাঁড়িয়ে পড়ে। বেশ কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরী করে নিজেকে। পরিপাটি করে শাড়িটা পড়ে নেয়। ভাগ্যিস ভাবীর জোরাজুরিতে শাড়ি পড়া শিখেছিল তা নাহলে এই বাড়িতে! কি যে অবস্থা হতো! নিজেকে প্রস্তুত করে সবকিছুর জন্য। না জানি আজ ওর কপালে কি আছে!
গুটিগুটি পায়ে নীচে নেমে আসে লাবণ্য। লাবণ্য রুমানিয়া বেগমদের ব্যাগপত্র দেখে এগিয়ে আসে মাথায় কাপড় দিয়ে। আতীক সাহেব লাবণ্যকে দেখে হাসি মুখে বলে উঠে,,,
—“ লাবণ্য মা এদিকে আয়। ”
রুমানিয়া বেগম হাসিমুখে লাবণ্যর মাথায় হাত রেখে বলে,,,
—“ সাবধানে থাকবে মা আমরা এবার আসি। ”
—“ আপনারা চলে যাচ্ছেন ?”
—“ হ্যা গো মা আমার অফিসে জরুরী কাজ আছে।”
নিবিড়ের ফুফা সাগর সাহেব কথাগুলো বলে মুচকি হাসলেন।
—“ নিবিড়ের সাথে চলে যেও আমাদের বাড়ি বুঝলে মা। সেখানে গিয়ে সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া যাবে ভালো করে কি বলো।”
সাগর সাহেব মুচকি হাসি দিয়ে লাবণ্যকে কথাগুলো বলে।
—“ সাবধানে যাবেন , আবার চলে আসবেন কিন্তু ফুফা – ফুপ্পিমা। ”
লাবণ্য হাসিমুখে কথাগুলো বলে। চোখ চলে যায় ওপাশে থাকা নিবিড় আর মেঘলাকে দেখে। দুজনেই বেশ হাসি খুশি। হঠাৎ নিবিড়ের সাথেই চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নেয়। মেঘলা দ্রুত লাবণ্যর কাছে চলে আসে।
—“ এই যে আমি আসছি সাবধানে থেকো তুমি। একদম কান্না কাটি করবে না। মামা মামী আছেন, নিবিড় ভাইয়া আছে তোমাকে আগলে রাখবে। তুমি কিন্তু কষ্ট পাবে না বুঝলে। ”
লাবণ্য মেঘলার কথায় হেসে ফেলে। মেঘলার গালে হাত দিয়ে বলে,,
—“ হুম তোমার কথাই রইলো। তুমিও নিজের যত্ন নিয়ো। আর হ্যা মাঝে মাঝে চলে এসো কিন্তু এখানে। ”
—“ হুম আসতে তো হবেই। কেননা আমার প্রিয় জিনিসটাই তো এখানে আছে। ”
লাবণ্য মেঘলার কথা শুনে একরকম থম্ মেরে যায়। কিছুক্ষণের জন্য সবাই চুপ হয়ে যায়। তারপর মেঘলা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
—“ আরে আমার প্রিয় ভাইয়া তো নিবিড় ভাইয়া। আমি তো ভাইয়ার কথাই বলছিলাম হি হি হি। ভাইয়াকে ভালো রেখো , ভাইয়ার খেয়াল রেখো।”
সবাই হেসে উঠে, লাবণ্য মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নাড়ায়। তবুও মেঘলার কথাগুলো শুনে লাবণ্যর বুকের ভিতরটা যেনো বিনা কারণে মুচড়ে উঠে।
চলবে….
(লেখায় ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন। 🙏)