শুধু তুই পর্ব ৩১+শেষ

#শুধু তুই
#পর্বঃ৩১
#Tanisha Sultana (Writer)

আজ জিসানের গায়ে হলুদ। ছেলের বাড়ি থেকে তত্ত্ব নিয়ে মেয়ের বাড়িতে যাওয়া হবে। তুলি তিন ঘন্টা যাবত সেজেই যাচ্ছে। আর জুজু তুলির পিছনে ঘুমছে

“ও মা আমাকে সাজিয়ে দাও

” এই তো সোনা লিপস্টিক টা লাগিয়ে তোমাকে সাজিয়ে দেবো।

তুলি লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে বলে। সায়ান বসে বসে তামাশা দেখছে।

“জুজু সোনা এসো আমি রেডি করিয়ে দেই

সায়ান জুজুকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দেয়। তুলি সাজিয়ে দেয়। জুজু চলে যায়।
তুলি আয়না দেখতে দেখতে বলে

” একদম নুসরাত ফারিয়ার মতো লাগছে আমাকপ তাই না

“জঘন্য লাগছে

” সয়তানরা ভালো জিনিস চোখে দেখে না

“এরকম সাজার মানে কি?

” কিরকম সাজছি

“পেট বের করে শাড়ি পড়ছো কেনো?

” আমার পেট অনেক সুন্দর তাই মানুষকে দেখাতে যাচ্ছি

“তুলি মেজাজ গরম করবানা

” আমি কি করলাম

“ভালো করে শাড়ি পড়ো

” আরে এরকম স্টাইলের শাড়ি এভাবেই পড়তে হয়। অন্য ভাবে পড়লে হ্মাত লাগবে। ইউটিউব দেখে পাক্কা এক ঘন্টা লাগিয়ে শাড়িটা পড়েছি।

“সায়ান টান দিয়ে তুলির শাড়িটা খুলে দেয়।

” করছেনডা কি?

“দেখো কি করি

” আমার শাড়ি😭

“চুপ😡

তুলি সায়ানের ধমকে চুপ করে যায়। সায়ান তুলিকে শাড়ি পরিয়ে দেয়।

“পারফেক্ট। দেখো

তুলি আয়নায় তাকিয়ে দেখে মোটামুটি হয়েছে। তুলি চলে যেতে নেয় সায়ান হাত ধরে

” আমার কিউট বউটা কি রাগ করেছে

“সত্যি আমি কিউট

” হুমমম

তুলি খুশি হয়ে সায়ানের গাল টেনে চলে যায়। বিয়ে বাড়ির সবার কাছে ঘুরে ঘুরে বলে সায়ান শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। তুলি জুজু আর সায়ান ছবি তুলছে তখন জুজু বাবা বলে দৌড়ে চলে যায়। সায়ান তুলিও পেছনে যায়। গিয়ে দেখে জুজু নিরবের কোলে। মনাও নিরবের কাছে যায়

নিরব বলে

“মনা আমি বিবাহিত জুজু আমার মেয়ে

” জানি

“তারপরও

“ভালোবাসি তোমায়। তুমি বিবাহিত তোমার মেয়ে আছে এতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না। ভালোবাসলে বিয়ে করতে হবে সারাজীবন একসাথে থাকতে হবে এমনটা তো নয়। দুর থেকেও ভালোবাসা যায়। আমি তোমাকে দুর থেকেই ভালোবাসতে চায়। জুঁই আপু বেঁচে থাকলে আমি নিজে তোমাকে জুঁইয়ের কাছে ফিরিয়ে দেবো

” তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো আর আমি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোমার লাইফে এসেছি। তোমার ভাইয়ের থেকে তোমাকে আলাদা করার জন্য ভালোবেসেছি। আমার নিজের ওপর নিজেরি রাগ হচ্ছে

“নিরব ইটস ওকে। ভাইয়ার সাথে দেখা করবে না

” কোন মুখে যাবো। আমি কতো অন্যায় করেছি ওর সাথে

“সরি বলে দিও

” ঠিক আছে

নিরব আর মনা সায়ান তুলির সামনে যায়। নিরব মাথা নিচু করে বলে

“সরি সায়ান। তোকে ভুল বুঝেছি। আসলে প্রিয়ার মৃত্যুটা আমি মেনে নিতে পারি নি। জেদের বসে জুঁইকে বিয়ে করি। বিয়ের দুই মাস পরেই তোদের ওই পার্টিতে ঙান হারায়। জুঁইয়ের বাবা তোর নামে মিথ্যা অপবাদ দেয় যে তুই আমায় মেরে ফেলেছিস৷ আসলে আমি পাগল হয়ে গেছিলাম মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আর জুঁইয়ের বাবা চায় নি তার মেয়ে একটা পাগলের সাথে সংসার করুক। তাই এতো নাটক।

তুই আমার মেয়েটাকে আগলে রেখেছিস। যদি তুলি না বলতো তাহলে তো আমি জানতেই পারতাম না আমার মেয়ে আছে। ভেবেছিলাম জুঁই বেবিটা নষ্ট করে দিয়েছে। থ্যাংক্স এন্ড সরি

সায়ান নিরবকে জড়িয়ে ধরে। কিছু খন ইমোশনাল ড্রামা চলে।

“জুঁইয়ের খবর জানোস? (সায়ান)

” কাল আমার থেকে দশ লাখ টাকা নিয়ে কানাডা চলে গেছে সজীবের সাথে। ও ওর লাইফটা নতুন করে সাজাতে চায়। আমি অনেক রিকোয়েস্ট করেছিলাম কিন্তু থাকবে না আমার সাথে।

“ভালোই হয়েছে। আমি জানি তুই মনাকে ভীষণ ভালোবাসিস। বিয়ে করবি। জুজু তুমি কি মনাকে মামনি বানাবে

” কি মজা মনা আন্টি আমার মা হবে

জুজু তো খুব খুশি। বড়োরা মিলে সিদ্ধান্ত নেই জিসান তন্নির সাথে মনা নিরবেরও বিয়ে হবে।

ভালোভাবেই দুই জোড়া বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।
রাতে তুলি এতো এতো খাবার নিয়ে বসেছে। জিসান তন্নি আর সায়ান হা করে দেখছে তুলিকে

“দোস্ত রাহ্মস হইলি কবে? এতো খাইলে তো দুইদিনে আমাদের হাতে বাটি ধরায় দিবি (জিসান)

” আমি কি খাবার গুলো আমি খাওয়ার জন্য নিছি না কি? (তুলি)

“তাহলে (তন্নি)

তুলি সায়ানকে টান দিয়ে পাশে বসিয়ে বলে

” আমার জামাই খাইবো। দেখনা কেমন শুকায় গেছে। আমার ফিউচার বেবিরা তো কইবো আমি ওদের বাবাকে খেতে দেয় না

সায়ানের হেচকি উঠে যায়

“এএতো খাবার

” জিসান তুলি একটু বাইরে যা তো

“কেনো?

” জামাইয়ের হেঁচকি বন্ধ করতে হবে

“বন্ধ হয়ে গেছে। সায়ান হেঁচকি বন্ধ করে বলে

” গুড এবার খাও

জিসান ভিডিও করছে

“সায়ান মাহবুবরে ট্যাগ কইরা পোষ্ট করমু আমার ব্রো খাচ্ছে (জিসান)

” এই না। এমন করিস না (সায়ান)

“জিসান পোষ্ট করবে না যদি আপনি আমাদের ঘুরতে নিয়ে যান (তুলি)

” তার মানে ব্লাকমেইল করার জন্য এমনটা করছো (সায়ান)

“ইয়াহ। ইয়েস ওর নো

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সায়ান ইয়েস বলে।

এরকম দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসায় দিন কাটছে সায়ান তুলির।

আজ সকাল থেকেই তুলির মাথা ঘুরছে বমি হচ্ছে। কিন্তু কাউকে বলছে না কারণ একবার বলছিলো ফুটপয়জন হইছিলো। এখনও হয়ত তাই হইছে।

তুলি ওয়াশরুম থেকে বমি করে বের হয়। বিছানায় যাওয়ার মতো শক্তি নেই। পরে যেতে নেয় সায়ান ধরে

” তুলি কি হয়েছে

“ফুটপয়জন

” কিভাবে বুঝলা

“বমি হচ্ছে

” কখন থেকে

“সকাল থেকে

সায়ান তুলিকে বিছানায় সুয়িয়ে দেয়

” বলো নি কেনো?

“যদি বকা দেন

” পাগল একটা

তুলি আবার উঠে বসে

“আবার কি

” বমি করমু

সায়ান তুলিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। এভাবে তিন চার হয়

“তুলি চলো ডাক্তারের কাছে যেতে হবে

তুলির কথা বলার শক্তিও নেই।৷ সায়ান তুলিকে কোলে নিয়ে বের হয়।

জিসান ডাইভ করছে। সায়ান তুলিকে ধরে বসে আছে।
#শুধু তুই
#অন্তিম পর্ব
#Tanisha Sultana (Writer)

চোখ খুলে তুলি নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে। চারপাশে সবাইকে দেখতে পাচ্ছে কিন্তু সায়ান নেই। সবাই খুব খুশি

“এদের আবার কি হলো? এরা এতো খুশি কেনো? আমি অসুস্থ বলে কি?

তুলি উঠে বসতে যায় তুলির মা ধরে

” আস্তে বস

“বাবা জীবনেও তো এতো ভালোবাসা দেখাও নাই আজ কি হলো?

” তুই যে আজ আমাদের কি অনন্দ ছিলি তা তোকে বলে বুঝার পারবো না।

তুলি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তুলির শশুর তুলির মাথায় হাত বুলায়। শাশুড়ী মোটা স্বর্নের চুরি পরিয়ে দিচ্ছে। তুলির বাবা আর জিসান পাল্লা ধরে মিষ্টি খাচ্ছে

“কেউ আমারে বলবা কি হচ্ছে?
তুলি বলে

” কি হচ্ছে মানে তুই দেখতে পাচ্ছিস না (তন্নি)

“আমার ফুটপয়জন হলো আর তোমারা এতো খুশি কেনো?

” তুই মা হতে চলেছিস
তুলির শাশুড়ী বলে। তুলি তো ঢিংকাচিকা ডান্স দিতে থাকে। সবাই অবাক তুলির নাচ দেখে। সায়ান ঔষুধ নিয়ে রুমে এসে দেখে তুলি ধেই ধেই করে নাচছে। সায়ান তুলিকে বসায়

“এতো লাফাচ্ছ কেনো?

তুলি টুক করে সায়ানের গালে একটা চুম্মা দেয়। সবাই মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়

” উফ জামাই আপনি যে আমাকে কি উপহার দিছেন তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না

“বোঝাতে হবে না। জাস্ট চুপচাপ থাকবা

” আমি আর চুপচাপ ইম্পসিবল

“বেবির জন্য থাকতে হবে

” কেনো?

“তুমি এতো লাফালাফি করলে বেবিও তো লাফালাফি করবে

” সত্যি

“হুম

” তাহলে তো এখন থেকে সব সময় লাফালাফি করবো

“পাগল তুমি

” আপনারই তো বউ

“কপাল আমার

” হুম এতো কিউট বউ পাইছেন

“সাথে বাঁদরও

” বেবি বাইরে আসলে ওকে বলে দিবো

“দিও এখন খেতে হবে

” খেলেি তো বমি আসে

“তবুও খেতে হবে

সায়ান জোর করে তুলিকে খাইয়ে দেয়। খাওয়া শেষে

” কি হচ্ছে

“বমি পাচ্ছে

সায়ান তুলিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। বমি করিয়ে আবার নিয়ে আসে

এভাবেই দিন যাচ্ছে। সায়ান সারাক্ষণ তুলির সাথে থাকে। প্রচুর কেয়ার করে। সাথে অন্য সবাই তো আছেই।

এখন তুলির নয় মাস চলছে। সায়ান ফোনে কথা বলছে। তুলি আয়নার সামনে খাবার নিয়ে বসে আছে। কথা বলা শেষ করে সায়ান তুলির কাছে এসে বলে

” কও হয়েছে

“দেখুন না কেমন গোলুমলু হয়ে গেছি। আমি আট খাবো না

” এটা কোনো কথা

“এটাই কথা। এখন লোকে আমাকে দেখলে বলবে আমি মটু আর আপনি পাতলু

” ধুর কেউ এমন বলবে না। আমাদের বেবি তোমার পেটে তাই এমন মোটা দেখাচ্ছে বেবি বের হলে আবার আগস্ট মতো দেখাবে। এখন তুমি না খেলে বেবি তো হেলদি হবে না বলো

সায়ান বুঝিয়ে তুলিকে খাইয়ে দেয়।

তুলি সায়ানের কোলে মাথা দিয়ে সুয়ে আছে। সায়ান তুলির মাথায় হাত বুলচ্ছ

“তুলি

” হুম

“ধন্যবাদ এতো কষ্ট করে আমার বেবিটা তোমার মধ্যে গড়ে তোলার জন্য। জানো আমি কখনো ভাবতেই পারি নি তোমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলবো। তোমাকে ছাড়া আমি দুই মিনিট থাকতে পারি না। ভালোবাসি তোমায় খুব। আমি ভীষণ ভাবে আসক্ত হয়ে পরেছি তুমি নামক নেশায়।

” আমিও খুব ভালোবাসি আপনাকে। আচ্ছা বেবি হওয়ার পরে কি আপনি আবার নিরামিষ হয়ে যাবেন

“নাহহহ আরও বেশি রোমান্টিক হয়ে যাবো

” সত্যি

“হুমম। আমার পাগলি

তুলি সায়ানকে জড়িয়ে ধরে

আজ তুলির ডেলিভারি দিন। তুলিকে নিয়ে যাচ্ছে। সায়ান তুলির হাত ধরে বলে

“একদম ভয় পাবে না। আমি আছি তো। একটু কষ্ট হবে সয্য করে নিও। একটু পরেই আমি তোমার কাছে যাবো কেমন

তুলি মাথা নারায়।

তুলিকে নিয়ে যাওয়ার একঘন্টা পরে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আসে। সায়ান এতোখন মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলো। এখন উঠে দাঁড়ায়। সায়ানের বাবা মা কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়।
নার্স বাবুটাকে সায়ানের মায়ের কোলে দেয়। সায়ানকে বলে

” আপনার বউ আপনাকে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি যান

সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। সায়ান মাথা চুলকে মুচকি হেসে তুলির কেবিনে যায়। তুলি হাতে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। সায়ান তুলির মাথায় হাত রাখায় তুলি চোখ খুলে

“এতো দেরি করলেন কেনো?

” সরি

“জানেন আপনার বেবি আমাকে অনেক কষ্ট দিছে

” তাই

“হুমম। দেখেন আমার সুন্দর পেটটা কেটে ফেলছে

” আহারে

“পাপ্পি দেন সেরে যাবে

” কোন ডাক্তার বলছে

“ডাক্তার তুলি

সায়ান ফিক করে হেসে ওঠে

” ওই গানটা শোনান না

“কোনটা

” ওইটা

“এখানে

” হুম

এতো রোদ্দুর তুই এনে দিলি তাই, তোর বৃষ্টি আমি একটু পেতে চায়
মেঘলা হয়ে যাক আরও পাঁচটা বারো মাস কোনো বিকেল বেলাতে তুই আমার হয়ে যাস
#শুধু তুই শুধু তুই আর চাইছি না কিছু

সমাপ্ত
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here