#শুধু_তুমি
#পর্ব-2
#Nirzana(Tanima_Anam)
“কে কোথায় আছো দেখে যাও আমার ছেলে এ কাকে বিয়ে করে এনেছে এই মেয়ের না আছে রূপ না আছে গুন।ছেলে ধরা মেয়ে কোথাকার আমার ছেলেকে ফাসিয়ে বিয়ে করা হয়েছে তাই না”
এক নাগাড়ে গর গর করে কথাগুলো বলে দম নেয় আফিয়া বেগম।
তার সবচেয়ে আদরের ছোট ছেলে হলো সরব।ছেলেকে ভালোবেসে নিজে গিয়ে নুসরাতকে দেখে পছন্দ করে এসেছিলেন তিনি।তার মতে তার ছেলের একমাত্র যোগ্য সহধর্মীনী যদি কেউ হয়ে থাকে সে হচ্ছে নুসরাত নূহী নয়।
কিন্তু শেষমেষ কি হলো সেই ছেলেই নাকি এই মেয়েকেই বিয়ে করে আনলো।
রাগে গা জ্বলছে তার।
-সরব….আমি জানি না তুমি কি করেছো কেন করেছো শুধু এই টুকু জানি এই মেয়েকে আমি তোমার বউ বলে মা নি না মানবো না যেখান থেকে এনেছো সেখানে রেখে এসো যাও।যাও ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বার করে দাও
সরবকে তীক্ষ্ণ সুরে কথাগুলো বলে ঘুরে দাড়ায় আফিয়া বেগম।হাটা ধরে নিজের ঘরের দিকে।
নূহী তখনও দরজায় দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।এই একটা বিয়ে কিনা তার সব কেড়ে নিলো একদিকে সে মাকে হারালো একদিকে দিদিকে
এতোক্ষন পর মুখ খোলে সরব
-মা যেই সিচুয়েশনেই হোক না কেন আমি নূহীকে বিয়ে করেছি এটাই সবচেয়ে বড় সত্যি তাই নূহী এই বাড়িতেই থাকবে….সে
আমার বউ
কথাগুলো বলেই সরব নূহীর হাত ধরে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে যায়।
আফিয়া বেগম ছেলের এমন ঘটনায় একরকম হকচকিয়ে গেছেন।
“নূহীকে প্রথম থেকেই বেশ অপছন্দ করত আফিয়া বেগম।নূহী দেখতে খুব একটা সুন্দর নয়।গায়ের রংটা শ্যামলা হলেও দেখতে মন্দ নয়।তবে নূহীর রূপের বর্ণনা দেওয়া জন্য তেমন বিশেষ কিছুই খুজে পান না আফিয়া বেগম।লেখাপড়া নিয়েও তেমন কিছু বলার নেই সবে হাই স্কুল পাশ করে কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে সে এদিকে তার ছেলে বিলেত ফেরত।এই রকম মেয়েকে কি করে মেনে নিবেন তিনি এই ভেবে কোনো কুল কিনারা পাচ্ছেন না আফিয়া বেগম”
নূহী ঘরে এসে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসেছে।কাল রাতে যদি না সে এমন ভূল করতো না এই বিয়েটা হতো না এতো কিছু….
মস্ত বড় ভূল করে ফেলেছে সে
সরব বেশ কিছুক্ষন তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।এদিকে নূহী কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে ফেলেছে।গাল দুটো লাল টমেটো হয়ে গেছে
-কান্না থামাও
সরব বেশ ধমকের সুুরে কথাটা বলে নূহীকে
নূহী হটাৎ ধমক শুনে চমকে উঠে।এবার কান্নার বেগ বেশ বেড়ে গেছে।
-এই মেয়ে চুপ করবা…না কি???
-আপনি কি আপু কে সত্যিই বিয়ে করবেন না???
-কিহ্???
-আমাকে কোথাও একটা রেখে আসুন তারপর আপুকে বিয়ে করে নিন।আমি না থাকলে হয়তো আজ আপনাদের বিয়ে হয়ে যেতো!!
-হুম্ম ঠিকিই বলেছো তুমিই এক মাত্র মানুষ যে হুট করে আমাদের মাঝ খানে চলে এসেছো।।।কিন্তু কি করার এখন তো আর কোনো উপায় নেই।তুমি যে আমার সব জায়গাটা দখল করে নিয়েছো।
-কি??
-কিছু না!!
-শুনুন আমার না কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই মা ও ঐ বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দিবে না।আমায় আপাতোতো একটু আশ্রয় দিন আমি কলেজ হস্টেলে সিট পেয়ে গেলে সেখানে চলে যাবো আর
-আর??
-আপনি আপুনিকে বিয়েটা করে নিন আমি চলে যাবো!!!
-হেই তোমার এই সব বাজে কথা অফ করে যাও এই সব শাড়ি চেন্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও কাল থেকে একই শাড়ি পড়ে আছো।গো….
নূহী কাচুমাচু মুখ করে উওর দেয়
-আমার কাছে কোনো শাড়ি নেই জামা কাপড়ও নেই আমি তো আমার ল্যাগেজটাও স্টেশনে ফেলে এসেছি……আর
নূহী কথা বলার আগেই সরব অ্যালমারি থেকে একটা প্যাকেট এনে নূহীর হাতে ধরিয়ে দেয়
নূহী প্যাকেটটা খুলে দেখে একটা সোনালী পাড়ের কালো শাড়ি।
-এটা আপুর জন্য কিনেছিলেন বুঝি??গিফট???
নূহীর কথার প্রতি উওরে সরব শুধু একটু মুচকি হাসি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
পা বাড়ায় মায়ের ঘরের দিকে।মাকে অনেক কিছু বোঝাতে হবে।মাকে অনেক কিছু বলতে হবে…….
নুসরাত সেই সন্ধ্যে থেকে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।সরব ছিলো তার কলেজ লাইফের বন্ধু বেশ ভালোই বন্ধুত্ব ছিলো দুজনের।
কলেজ পাশ করার পর দুজন এক সাথে কানাডায় স্কলারশিপ পায়।ব্যাস দুজন একসাথে উড়াল দেয় বিদেশে।
একসাথ থাকতে থাকতে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব তারপর সেটা কি করে ভালোবাসার রূপ নেয় তা নিজেও জানে না সে।
বিদেশে পড়াশুনার পাট চুকিয়ে দেশে ফিরে আসে দুজন। মাঝে বেশ কিছু দিন কোনো নুসরাতের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে নি সরব।
এসময়গুলো বেশ খারাপ কেটেছে নুসরাতের
তারপর হটাৎই একদিন সরবের মা এ বাড়িতে আসে নুসরাত সরবের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।নুসরাত যেন হাতে সাত রাজার ধন পায়।এক কথায় বিয়েতে রাজি হয়ে যায় নুসরাত।তারপর একেবারে এঙ্গেজমেন্টের দিনে সরবকে দেখেছিলো নুসরাত।আর আজ বিয়ে ছিলো।
তবে বিয়েটা হলো না।তীরে এসে ভালোবাসা নামক তরীটা ডুবে গেলো তার।
যদি নূহী মাঝে চলে না আসতো তাহলে হয়তো এতোক্ষন সে বিয়ের জন্য তৈরী হতো।বউ সেজে অপেক্ষা করতো সরবের জন্য।
আচ্ছা সরবও তো আমাকে ভালোবাসে তাহলে সে নূহীকে কেন বিয়ে করলো কেন????
এরকম শত শত প্রশ্ন মাথার মধ্যে কিল বিল করছে তার।
কোনো কূল কিনারা না পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে সে উদ্দেশ্য সরবের বাড়ি যাবে সে।সরবকে সরাসরি প্রশ্ন করবে কিসের এতো দরদ তার নূহীর উপর??? কেন করলো সে নূহীকে বিয়ে??কাল রাতে নূহী যখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলো তখন কেন সে নূহীকে সবার সামনে কোলে করে নিয়ে গেল কেন???
চলবে……..
(জানি না গল্পটা কেমন হচ্ছে ভালো না লাগলে আর লিখবো না।ধন্যবাদ)