শুধু তোমারই জন্য ১২ পর্ব ও শেষ পর্ব

##শুধু_তোমারই_জন্য পর্ব ১২ শেষ পর্ব
##সাবানা_খাতুন

অর্নব কাঁকনের বাড়ি যায় খুঁজতে ।সেখানে গিয়ে জানতে পারে কাঁকনের বাবার মৃত্যুর পর কাঁকন সব কিছু বিক্রি করে কোথায় যেন চলে গিয়েছে।অর্নবের অনেক অনুশোচনা হয়,কাঁকন আশ্রয় খুঁজতে গিয়েছিল তার কাছে, আর অর্নব কিনা কাঁকনকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।কিছু বলার আর ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল না। বাড়িতে আসে ভাঙা মন নিয়ে।কনকবালা জিজ্ঞাসা করল কিরে খবর পেয়েছিস কিছু,?অর্নব দুদিকে ঘাড় নাড়ল অর্থাৎ না ।জানো ঠাকুমা কাঁকনের বাবা মারা গিয়েছে।কনকবালা বললেন জানি আর তার মৃত্যু তোর কারনে হয়েছে, অর্নব অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল আমার জন্য ! তোর মনে আছে ওর বাবার প্রথম যখন হার্ট অ্যাটাক হয় ।তখন ডাক্তার বলেছিল দ্বিতীয় বার আঘাত লাগলে ওনাকে বাঁচানো যাবে না।আর তুই সেই আঘাতটা দিয়েছিস যখন বললিস যে কাঁকন কে তুই নকল বিয়ে করেছিস।ভদ্র লোক আঘাত টা নিতে পারলেন না,আট মাস কোমায় থাকার পর ,চলে গেলেন।অর্নবের যেন মাথা ঘুরে যাবে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, আমি একটা এত বড় অপদার্থ যে একটা তুচ্ছ কারন কে এত জটিল করে বাড়িয়ে দিয়েছি।

কনকবালা বলেই চললেন,তুই ওকে দোষ দিয়েছিস যে বাবুর যা হয়েছে তার জন্য ও দায়ি যদিও এতে কাঁকনের দোষ নেই।আর তুই ওর বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ি, বল তুই নিজেকে কি শাস্তি দিবি,তবুও মেয়েটা সব ভুলে তোর কাছে এসেছিল শুধু তোর কাছে থাকবে বলে।আর তুই তাকে যা কষ্ট যা যন্ত্রণা দিয়েছিস,অন্য কেউ হলে তোকে চরম শাস্তি দিত,ও এসেও ছিল তোকে শাস্তি দিতে।আমাদের ভালবাসা আর তোকে ভালবেসে ওর মনে প্রতিহিংসা টা চলে গিয়েছিলো ও কত বড় মনের মানুষ আমি সেইদিন পরিচয় পাই,ওর বেঁচে থাকার শেষ সম্বল ওর বাবাকে তোর জন্য হারিয়েছে।তবুও তোকে ক্ষমা করে তোর সাথে জীবন কাটাবে ভেবেছিল কিন্ত তুই কি করলি? অর্নব আর পারছে না হু হু করে কেঁদে উঠল,ঠাকুমা চুপ কর তুমি, আমি আর পারছি না ইচ্ছা হচ্ছে এক্ষুনি নিজের জীবন দিয়ে দেই।আমার জন্য একটি মেয়ের জীবন এইভাবে নষ্ট হয়ে গেলো আমি এতটাই স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম যে একবারো ওর মনের কথা জানতে পারিনি।ওর কাছে একটা বারের জন্য ক্ষমা চাইবো আমি ।আমি ওর বড় অপরাধী,এই সময় রুমাদেবী এলেন,কি হল বাবু তুই কাঁদছিস কেনো? কনকবালা বলল কাঁকনের জন্য কাঁদছে,কাঁকন চলে গিয়েছে,এতে কান্নার কি আছে? ভালই হলো চলে গিয়েছে শান্তি পেলাম।অর্নব রেগে গিয়ে বলল সব তোমার উস্কানিমূলক কথাতে হল।আমার কথাতে অবাক হয়ে রুমাদেবী বলল তুই কি বলছিস,ঠিক সেইসময় নয়না আর তার বাবা মার প্রবেশ, অর্নব বেশ ঝাঁঝ দিয়ে বলল দাঁড়ান আপনারা কোথায় যাচ্ছেন ? সমর সেন বলল অভিরাজের এইরকম হবে আমি একটুও বুঝতে পারিনি ।অর্নব বলল যা হওয়ার তাতো আপনি করে দিয়েছেন ,সবাই অবাক হয়ে যায়, মানে কি বলতে চাইছো তুমি ?সমর বলল,আসলে কি জানো নয়না আমার একমাএ মেয়ে ছোটবেলা থেকে ওকে কোনো কষ্ট দেয়নি,চোখের সামনে যদি সুসাইড করতে যায় তাহলে কি করি বলতো।এবার আরতি দেবী মুখ খুলল আর তোমাকে ও অনেক ভালবাসে তুমি ওকে ছেড়ে কাঁকন নিয়ে থাকবে বলতেই মেয়েটা মরতে গিয়েছিল ? অর্নব এইবার বলল আচ্ছা আপনার মেয়েকে কেন ছাড়ব একবারও কি বলেছে আপনাদের ,মানে কি বলতে চাইছিস তুই রুমাদেবী জিজ্ঞাসা করল? তাহলে শুনুন আপনাদের মেয়ে বিদেশে গিয়ে লিভটুগেদার করে মানে অন্য পুরুষের সাথে বিয়ে ছাড়াই একঘরে থাকে আর কি কি করে সেটা বলার প্রয়োজন নেই নিশ্চয় ।একটা বড় দেখে বোমা ফাটল যেন ঘরে ,নয়নার মুখ নিচু হয়ে আছে,সবাই অবাক ,আবার আপনাদের মেয়ে আমার সামনে তার রাত কাটানোর গল্প ফলাও করে আমাকে বলছে।কোন ছেলে সহ্য করবে যে বিয়ের আগে তার হবু বৌ কুমারিত্ব খুইয়ে এসেছে।খারাপ ছেলেরাও ভাল বৌ চায়, আর কাঁকনকে যাই হোক আমি ইচ্ছা অনিচ্ছার সাথে বিয়ে করেছিলাম।আপনার মেয়ের জন্য অনেক কষ্ট দিয়েছি কাঁকনকে আজ তার ফল পাচ্ছি,আজ আমি কাঁকনকে অনেক অনেক ভালবাসি কিন্ত সে এখন শোনার মতো এখানে অনুপস্থিত ।কতটা কষ্ট আমি ওকে দিয়েছি কিন্ত ও সব মুখ বূঝে সব সহ্য করেছে,আমি একটা হতভাগা,অর্নবের চোখ থেকে জল গড়িয়ে গেল, সে আমার স্ত্রী তাকে বাদ দিয়ে আপনাদের মেয়েকে গ্রহন করতে যাচ্ছিলাম।আমার এটাই জীবনের বড় ভুল হয়ে দাড়াল।সমর সেন বলল আমাদের চরম ভুল হয়ে গিয়েছে আমাদের মেয়ের কথা শোনা, তুমি ঠিক কাজ করেছো ,এইরকম মেয়ে থাকার থেকে না থাকাই ভাল ছিল।,যাও কাঁকন কে নিয়ে আসো,আমার কোনো হেল্প লাগলে বলো।আপনি আর কি হেল্প করবেন যে এতদিনের বন্ধুত্ব কে সামান্য কারনে সম্পর্কের দাঁড়িপাল্লায় মাপলেন তার কাছ থেকে কোনো কিছু আশা করা বৃথা।বিজনেস আর ফ্যামিলি কে এক করে দেখে আপনি কোনো মহান কাজ করেননি।

২ বছর পর………….

এখনো অর্নব কাঁকনের কোনো খোঁজ পায়নি।যেখানে যেখানে সম্ভাবনা ছিল সব জায়গায় খুঁজেছে,পেপার পএিকায় ছবি দিয়ে লাভ হয়নি,এখন অর্নব অনেক পরিনত হয়ে গিয়েছে ।পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে মনের কষ্ট কে লাঘব করার চেষ্টা করেয় অভিরাজ কে রেস্টে রেখে কোম্পানির সমস্ত দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছে ,কাঁকনের করা প্রোজেক্টে ভাল ডিল পেয়ে কোম্পানি আরো জোর কদমে চলতে লাগল।
নয়না অনেকবার এসে ক্ষমা চেয়েছে,কিন্ত অর্নব এক কথা বলে আমি শুধু কাঁকনের জন্য ।
রাতের আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে তার মন শুধু কাঁকনের সাথে অদৃশ্য কথা বলে কেন চলে গেলে তুমি? একবার কি বলা যেত না মনের কথা।ভারাক্রান্ত বুকের কষ্ট চোখ থেকে ঝরে পড়ে।শাস্তি টা তো অনেক বড় দিলে , জানি দোষটাও অনেক বড় তাই বলে দুবছর এটা কি অনেক কম সময়?আর কত দিন,মাস ,বছর লাগবে তোমাকে খুঁজে পেতে? কোনোদিন কি আর দেখা পাবোনা তোমার,একবার তো সুযোগ দাও ক্ষমা চাওয়ার।

আজ অর্নবের মন অনেক বিষন্ন ।রেস্টুরেন্টে বসে আছে খাওয়ার অর্ডার দেওয়া হলেও এখানো আসছে না।ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকলেও কাজের দিকে মন নেই।হঠাৎ একজনের ছোঁয়া পেল পিঠে,আরে অর্নব না? ঘুরে দেখে তাদের কলেজের সিনিয়ার পল্লব ,অর্নব হেসে বলল আরে পল্লব দা তুমি এখানে ? ভাল আছোতো? পল্লব বলল হ্যাঁ ভালো রে তো এখন কি করিস? পৈতৃক কোম্পানি সামলাচ্ছি হেসে দেয় অর্নব ।আর তুমি কি করছো এখন ? একটা এনজিও চালাই,১বছর বাইরে ছিলাম,এই এলাম আসলে বিয়ে করতে যাচ্ছি তাই ফেরা আর কি? ওহ কনগ্র্যাচুলেশান বলল অর্নব ।পল্লব বলল শুধু অভিবাদন দিলে হবে না বিয়েতে আসতে হবে।,চারদিন পর বিয়ে ঠিকানা দিচ্ছি লিখে নে।আরে আমি কি করব গিয়ে বলল অর্নব ।ভাই তুই এলে খুব ভাল লাগবে আসলে বন্ধু রা কেউ যোগাযোগে নেই,তুই এলে ভাবব আমার তরফ থেকে কেউ আছে।আচ্ছা ঠিক আছে যাব না হলে,চল না আমার হবু বৌয়ের সাথে দেখা করিয়ে দেই ,ওকে ডেটিংএ নিয়ে এসেছি।চলো তাহলে বলে অর্নব পল্লবের পেছন পেছন গিয়ে দেখে একটি টেবিলে একটি মেয়ে মুখ ঘুরে বসে আছে,পল্লব ডাকল এই যে শোনো আমার একটা ভাই তোমাকে দেখতে চায়।মেয়েটি মুখ ঘুরাতেই অর্নব একদম ভুত দেখার মতো চমকে যায়,থরথর করে কেঁপে উঠে তার পা,মুখের ভাষা হারিয়ে যায়। এতো তার কাঁকন,কাঁকন ও অবাক হয় অর্নব কে দেখে, থমকে যায় সময় আবার তাদের কে সামনে রেখে।

কাঁকন কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল অর্নবের দিকে।তারপর মুখ ফিরিয়ে নিল,পল্লব বলল কাঁকন এ হল অর্নব চৌধুরী,আমার তো মনে হয় তোমরা একে অপর কে চিনবে একই কলেজে তো পড়াশোনা করেছো।আর আমার সাথে কাঁকনের পরিচয় এনজিও তে হয় ও যখন কাজের জন্য আসে তখন ।অর্নব এইবার বুঝল ,তাহলে কাঁকন এতদিন এর এনজিও তে কাজ করছিল ।কাঁকন বলল না আমি এনাকে চিনিনা,আগে কখনো দেখিনি ।অর্নব মনে মনে বলে নিজের বরকে চেনেনা এ কেমন স্ত্রী ।

অর্নব বলে উঠল পল্লব দা আমি এখন আসি,তোমরা এনজয় করো।বলে অর্নব নিজের জায়গায় এসে বসল।আর ভাবছে এটা কি হল কাঁকন আবার বিয়ে করবে,না আমি এটা হতে দেব না। একবার ঝুঁকে দেখল তাদের টেবিলে না দুজনে কথা বলছে না,চুপচাপ খাচ্ছে।অর্নব তবুও খুশি যাক কাঁকনকে পাওয়া তো গেল,এবার আর তাকে হারাতে দেবে না।বাড়ি এসে ঠাকুমা কে নিয়ে এক পাক ঘুরে নিল আনন্দে ।কনকবালা বলে উঠল আরে থাম কি হয়েছে বলবি তো,কাঁকন কে পেয়েছি ঠাকুমা,কনকবালা ও অবাক হয়ে বলল সত্যি দাদুভাই কোথায় আমার দিদিভাই ? নিয়ে আসিস নি কেনো? নিয়ে আসব তবে এবার স্ত্রীর মর্যাদা আর অধিকার দিয়ে।

চার দিন পরে কাঁকন আর পল্লবের বিয়েতে হাজির হয় অর্নব ,সোজা ঢুকে যায় কাঁকনের রুমে,কাঁকন তখন সাজছিল লাল বেনারসিতে কাঁকনকে অপরূপ লাগছিল, নাকের নথ ঠিক করতে করতে আয়নায় দেখতে পায় পেছনে অর্নব দাঁড়িয়ে,চমকে যায় কাঁকন।অর্নব এসে জড়িয়ে ধরে কাঁকনকে ,তুমি কোথায় গিয়েছিলে আমাকে ছেড়ে,আমাকে ক্ষমা চাওয়ার একটা সুযোগ দিলে না কেনো? আমার অনেক অনুশোচনা হয়।কাঁকন হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল ,হুঁস ফিরতেই এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল অর্নবকে,কি করছ তুমি এখানে, পল্লব এলে কি ভাববে যাও এখান থেকে।কেনো যাব তুমি আমার স্ত্রী ,আর তুমি বিবাহিতা হয়ে আর একটা বিয়ে কি করে করতে পারো? বিবাহিতা অবাক হয়ে কাঁকন বলল ! আমি ডিভোর্সি এটা তুমি ভাল করে জানো ,আমি ডিভোর্স পেপারে সই করে এসেছি,কিন্ত আমি সই করিনি,এরমানে তুমি এখনো আমার স্ত্রী বলল অর্নব ।তোমার নয়না কোথায় জিজ্ঞাসা করল কাঁকন? আমি ওকে ছেড়ে দিয়েছি বলল অর্নব ।ওহ নিশ্চয় ওর মধ্যে ও কোনো দোষ দেখেছো যা তোমার ইগোতে খারাপ লেগেছে,তুমি পারো বটে,যখন ইচ্ছা হবে কাছে টেনে নেবে যখন ইচ্ছা হবে দূরে ঠেলে দেবে ।ঠিক এই সময় পল্লব এল রুমে অবাক হয়ে যায় অর্নবকে দেখে ,তুই এখানে কি করছিস?অর্নব বলল আমার স্ত্রীকে নিতে এসেছি ,কে তোর স্ত্রী ? জিজ্ঞাসা করল পল্লব,অর্নব কাঁকনকে দেখিয়ে বলল ঐ আমার স্ত্রী ।অর্নব সব কথা খুলে বলল পল্লব কে , পল্লব সব শুনে মন খারাপ করে বলল ঠিক আছে,তোরা কথা বল আমি বিয়ে ক্যানসেল করাচ্ছি,কাঁকন বলল দাঁড়ান বিয়ে ক্যানসেল করতে হবে না,দুজনে অবাক হয়ে যায় গিয়ে জিজ্ঞাসা করে কেন?

অর্নবের সামনে এসে দাঁড়ায় কাঁকন,আচ্ছা অর্নব তুমি কি কোনোদিন চাইবে না যে আমি একটু ভাল থাকি,আনন্দে থাকি।কেন চাইব না নিশ্চয় চাই এই জন্য তো তোমাকে নিতে এলাম,বলল অর্নব । মিথ্যা কথা বলছো তুমি, আজ যদি নয়না কোনো দোষ না করত তাহলে তুমি আমার দিকে ঘুরেও দেখতে না।তুমি প্রথম থেকেই আমার জীবনে আনন্দ নামক জিনিসটা কে আসতে দাও নি,প্রতিবাদ করেছিলাম বলে ঠকিয়ে বিয়ে করলে ,তারপর ছেড়ে চলে গেলে ঘুরেও দেখলে না আমি কেমন আছি।আমার বাবা এই শোক নিয়ে পৃথিবী ছাড়ল যে তার একমাএ মেয়ে স্বামী ছাড়া হয়ে গিয়েছে।তুমি বলতো তোমার মনে একবারো কি আমার পরিস্থিতির খোঁজ করার খেয়াল এসেছে ? অর্নব মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,কাঁকন বলতে থাকল,তারপর তোমার বাড়িতে এলাম শুধু এই আশায় যে তুমি যখন জানতে পারবে আমাদের বিয়ে নকল নয় আসল হয়তো ভুলে যাবে সব,কিন্ত আমি ভুল প্রমানিত হলাম।আমি তোমাকে ভালবাসি এই কথা বলার জন্য নিজেকে সাজালাম কিন্তু পেলাম কি ডিভোর্স পেপার।কিন্তু কাঁকন ওটা নয়না আমাকে দিয়েছিল ।যেই দিক ওটা তো ডিভোর্স পেপার আমি সেদিন আরোএকবার বিশ্বাস হারিয়েছিলাম নিজের ভালবাসার প্রতি ,তারপর আমার সামনে নিজের গার্ল ফ্রেন্ড কে নিয়ে যা প্রেম দেখিয়েছিলে সেটা নিশ্চিয় ভুলে যাওনি।আর আমার যা কষ্ট হয়েছিল একবার তো আসোনি কোথায় আমার কষ্ট কে ভাগ করে নিতে,তখন তোমার এই ভালবাসা কোথায় ছিল? তারপর তোমার বাবার অবস্থার কারনে দোষী করলে কাকে আমাকে।আমার মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমার বুকে একমণ পাথর চাপিয়ে দিয়েছে,এরপরেও কি বলবে আমার তোমার সাথে যাওয়া উচিৎ?আমি ওটা দুঃখে বলেছিলাম ,বলল অর্নব ।আনন্দে বল বা দুঃখে দুটোই সমান,আমি আমার বাবার মৃত্যুর জন্য তোমাকে দায়ি করিনি,সব ভুলে তোমাকে আপন করতে চেয়েছিলাম,আমি আজ আবার আমার জীবনের নতুন দিক খুঁজে পেয়েছি সেখানে তুমি এসে বাধা দিচ্ছো কেনো অর্নব ? আর কত কষ্ট দিলে তুমি সুখি হবে,?কাঁকন কেঁদে ফেলে।তুমি যাকে বিয়ে করছ তাকে কি ভালবাসো? জিজ্ঞাসা করল অর্নব ।আর যাকে ভালবেসে বিয়ে করলাম সে কি আমাকে কোনোদিন বোঝার চেষ্টা করেছে না আমার দুঃখকে।প্লিস কাঁকন ফিরে চল আর কোনোদিন এই অন্যায় হবে না, তুমি তো জানো না যেদিন বাবার হার্ট অ্যাটাক হয় সেদিন আমি তোমাকে প্রপোজ করব বলে ভেবে রেখেছিলাম,কিন্ত বাবার ঐরকম হওয়াতে কিছুই বলতে পারিনি,বিশ্বাস কর পারলে তুমি রিয়াকেও জিজ্ঞাসা করতে পারো।

অর্নব একটা কথা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আমরা একে অপরের কোনোদিন হতে পারব না।যখনই আমাদের মধ্যে কেউ একজন মনের কথা বলতে গিয়েছে তখনই সমস্যা হয়েছে,আমরা এক হয়ে গেলেও কোনোদিন সুখি হতে পারব না ।কারন একটাই পরিচয়ের পর থেকে এ অবধি তোমার কাছ থেকে বিশ্বাস নামক বস্তু পায়নি,আর যে মানুষ বার বার ঠকায় সে অন্য কারোর কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করে কি করে?তুমি ভালবাসার নামে শুধু বিশ্বাসঘাতকতা করেছো আর এই রকম সম্পর্ক শুধু কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দেয়নি ।,আর আজকে কেউ আমার হাত ধরছে আমার জীবনটাকে সুন্দর করতে চাইছে সেখানে আবার তুমি তোমার স্বার্থ দেখছো।প্লিজ বন্ধ করো আর কত নিচে নামবে।আজ নয়না নেই বলে আমার কাছে এসে ভালবাসার নাটক দেখাচ্ছো! না হলে কাঁকন কোথায় সেটা খোঁজ পর্যন্ত নিতে না।আমি যদি তোমার স্ত্রী হতাম তোমাকে ক্ষমা করে দিতাম ,কিন্ত আমি একজন নারী আর আমার আত্মবিশ্বাস ,আত্মমর্যাদাকে বারে বারে তোমার অহংকারের পায়ে পিষে দিয়েছো।আর যদি তুমি সত্যি আমাকে ভালবাসো তাহলে আমাকে আমার মতো বাঁচতে দাও।হাত জোড় করে বলছি আমি আর পারছি না।আমার আর ক্ষমতা নেই তোমার কাছ থেকে আরো আঘাত সহ্য করার,এই হৃদয় তোমার দেওয়া আঘাতে চুরমার হয়ে গিয়েছে ।এখন তোমার মিষ্টি কথায় জোড়া লাগবে না।আমার বেঁচে থাকার অধিকার দয়া করে কেড়োনা,বন্ধ কর তোমার মিথ্যা প্রেমের খেলা। অর্নবের চোখে জল,তার কাছে বলার কোনো ভাষা নেই ,হয়তো এটাই তার প্রাপ্য ।অর্নব চোখে জল নিয়ে বলে উঠল ঠিক আছে কাঁকন তুমি যা চাইবে তাই হবে,আমি তোমাকে ভালবাসি আর তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা।ডিভোর্স পেপার বের করল অর্নব বলল ঠিক আছে এই নাও ডিভোর্স পেপার এতে আমি সাইন করে দিচ্ছি,আজ থেকে তুমি মুক্ত তোমার যাকে ইচ্ছা তাকে বিয়ে করো,আমি আজ প্রমান দেবো যে আমি সত্যি বদলে গিয়েছি।অর্নব পেপারে সাইন করে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যায়,আর কাঁকন ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠে ।

অর্নব আর কাঁকন কাউকে বিয়ে করেনি তারা অন্য কাউকেও তাদের জীবনে প্রবেশও করতে দেয়নি।একে অপরের থেকে দুরে থেকেও ভালবাসা অটুট রেখেছে।অর্নব সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকে আর কাঁকন এনজিওর কাজে ।শুধু রাত টা দুজনের একে অপরের আপন,ফুরে ফুরে বাতাস কে বলে যা নিয়ে যা সুখ আমার প্রিয় মানুষের কাছে আর পূর্নিমা রাতের চাঁদের আলো কে দুজনেই মনে মনে একে অপর কে বলে,আমি থাকব শুধু তোমারই জন্য,শুধু তোমারই জন্য , শুধুই তোমারই জন্য ।

…….. ..,………সমাপ্ত …………………….

আমি জানি অনেকেই রাগ করবেন মিলনান্ত না করার 😊😊

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here