১.
~মিস.আদৃতা আপনি আজ এইমুহূর্তে আমাকে বিয়ে করবেন নয়তো আমার ভাইয়ের সাথেও আমি আপনার বোনের বিয়ে হতে দেবো না।এবার ভেবে দেখুন কি করবেন?আমাকে বিয়ে করবেন নাকি ছোট বোনের বিয়ে ভেঙে যেতে দেখবেন?
বিয়ে বাড়িতে আদৃতাকে স্টোর রুমে নিয়ে এসে কথাগুলো বলে উঠলো আদিয়াত।
এদিকে আদিয়াতের বলা কথাগুলো শুনে আদৃতা অবাক হয়ে আদিয়াতের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
~এসবের মানে কি মি.আদিয়াত?
আদিয়াত বাঁকা হেসে বললো
~এতো মানে খুঁজে লাভ নেই মিস।আমার যা বলার আমি বলেছি। এখন কি করবেন সেটা সম্পূর্ণই আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।
এবার আদৃতার একদম রাগ উঠে গেলো।রেগে গিয়ে হালকা চিৎকার করে বলে উঠলো
~আপনাকে আমি বিয়ে করবো না।আর রইলো আপনার ভাইয়ের সাথে আমার বোনের বিয়ে হতে দিবেন না তাই তো?তবে শুনুন আরিয়ান আর আহি দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে।ওদের বিয়ে আপনি আটকাতে পারবেন না।
আদিয়াত খুব ঠান্ডা মাথায় বললো
~আপনি খুব ভালোভাবেই জানেন আমি বললে আরিয়ান যতোই আহিকে ভালোবাসুক না কেন ও বিয়েটা করবে না।
এবার আদৃতাকে একরাশ ভয় ঘিরে ধরলো।আদৃতা মনে মনে ভাবলো সত্যিই তো আরিয়ান কখনোই আদিয়াত সাহেবের কথা অমান্য করবেন না।আর আহি?ও তো আরিয়ানকে খুব ভালোবাসে..।এই বিয়েটা ভেঙে গেলে আহি যদি সত্যিই উলটো-পালটা কিছু করে বসে?তবে কি এবার ওর সুখের জন্য আমায় আদিয়াত সাহেবকে বিয়ে করতে হবে?
এসব ভাবতে ভাবতেই আদিয়াত খুব শান্ত ভঙ্গিতেই বললো
~আপনার ভাবা শেষ হলে এবার যা করার করুন।যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হন তবে ঠিক আছে আর যদি রাজি না হন তবে আমি আমার ভাইকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাই..।আমার আবার সময় নষ্ট করা পছন্দ না।
~আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি মি.আদিয়াত।
কথাটা বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললো আদৃতা আর সঙ্গে সঙ্গেই ওর চোখ থেকে টুপ করে গড়িয়ে পড়লো একফোটা নোনাজল।
আদিয়াত কিছু না বলে বাঁকা হেসে স্টোররুমের দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো।
স্টোররুম থেকে নিজের ঘরে আসতেই আদৃতা দেখলো আহি ওর রুমে বসে আছে তাও আবার বিয়ের সাজে..।
আদৃতা কিছুটা অবাক হলো কিন্তু তবুও মুখে হালকা হাসির রেখা টেনে বললো
~আহি কি ব্যাপার তুই আমার রুমে তাও আবার এখন?
আহি আদৃতাকে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো
~তোর কখনো আমার সুখ সহ্য হয় না?যেই দেখলি বড়লোকবাড়ির ছেলের সাথে আমার বিয়ে।ওমনি ঐ বাড়িরই আরেক ছেলেকে পটিয়ে নিলি?হাহ্ আমার তো তাও আরিয়ানকে পটাতে অনেক সময় লেগেছিলো রে।কিন্তু তুই তো দেখছি আমার থেকেও ফাস্ট?তোদের তো আগে থেকে পরিচয়ও নেই তাই না?আর আরিয়ানের পরিবার যখন বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে এসেছিলো তখন একবার ওর ভাইকে দেখেছিলি এরপর একদিন বাড়িতে এসেছিলো আর আজকে বিয়েতে এলো।মানে তোদের দেখাই হলো মোট তিনবার?এরমধ্যেই বিয়ে অবধিও পৌঁছে গেলো ব্যাপারটা?বাহ্ তুই তো দেখছি পাকা খেলোয়াড়।
আদৃতা এবার আর সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে বলে উঠলো ~চুপ আর একটা কথাও বলবি না তুই।
আহি কিছু না বলেই বিরক্তির দৃষ্টিতে একবার আদৃতার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আহি বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই কতগুলা মহিলা এসে আদৃতাকে একটা লেহেঙ্গা দিয়ে বললো এটা পরে নিতে।আদৃতা একপলক তাদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো যে এরা পার্লারের লোক।আদৃতা লেহেঙ্গাটার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হলো কারণ লেহেঙ্গাটা একদমই সাদা রঙের।আদৃতা মনে মনে ভাবলো
~এ লোক কি পাগল নাকি?বিয়েতে সাদা রঙের লেহেঙ্গা?
এরমধ্যেই পার্লারের মহিলারা লেহেঙ্গাটা পরার জন্য তাড়া দিলো।
আদৃতা আর কিছু না ভেবে লেহেঙ্গা পরে নিলো।লেহেঙ্গা পরা হলে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে একপলক দেখে নিলো।শ্যাম বর্ণের শরীরে সাদা লেহেঙ্গাটা খুব একটা খারাপ লাগছে না।
এরপর পার্লারের মহিলারা আদৃতা’কে সাজানো শুরু করলো আর আদৃতা চুপচাপ বসে ভাবছে একটা মানুষ যাকে কিনা ও ভালো করে চেনেই না তার সাথে বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে কি করে জড়াবে?সামনে কি হবে?আর আহিও তো ওকে ভুল বুঝলো।আচ্ছা আহি তখন কি বললো আরিয়ানকে পটাতে অনেক সময় লেগেছে..?আহি তো আরিয়ানকে ভালোবাসে তাহলে এগুলা কি বললো?ধুর হয়তো রাগের মাথায় বলে ফেলেছে।
২.
গাড়িতে ওঠার আগে একনজর বাড়িটার দিকে চোখ বুলালো আদৃতা।আজ থেকে বাড়িটায় আর কেউ থাকবে না।পুরো বাড়ি ফাঁকা পড়ে থাকবে।এ বাড়িতেই কে’টে’ছে ওর জীবনের ১৮ বসন্ত।এই বাড়িটার প্রতি খুব মায়া অনুভব হলো।আর হবে নাই বা কেন?বাড়িটা তো ওর নিজেরই।এই বাড়িতেই তো রয়েছে ওর মা-বাবার স্মৃতি। এই বাড়ির চারিদিকে কেমন যেন একটা মা মা গন্ধ পায় আদৃতা।অথচ আজ কিনা এই বাড়ি থেকেই চলে যেতে হবে ভাবতেই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা নোনাজল।
আদিয়াত আদৃতাকে বললো
~এবার গাড়িতে উঠে বসো।যেতে হবে আমাদের।
আদৃতা আর কিছু না বলে পিছু ফিরে একবার বাড়িটার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
আদৃতা উঠে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি চালানো শুরু করলো।
হ্যা কিছুক্ষণ আগেই আদিয়াত-আদৃতা আর আরিয়ান-আহির বিয়ে হয়ে গেছে।
আদিয়াত ওর বাবাকে বলার পরে তিনিও কোনো আপত্তি করেনি বরং হাসিমুখেই ছেলের আবদার মেনে নিয়েছে।কেননা আদৃতা মেয়েটাকে তার বেশ ভালো লাগে।
(আদৃতা রহমান।আরহান রহমান আর নিঝুম রহমানের মেয়ে।আদৃতার যখন ৫ বছর বয়স তখন হঠাৎ একদিন ওর মা সু’ই’সা’ই’ড করে।ছোট্ট মেয়েটি মা’কে হারানোর পরে যখন অনেক একা হয়ে পরেছিলো তখন মেয়ের দেখাশোনার জন্য আরহান রহমান তার অফিসের পি.এ তামান্না খান কে বিয়ে করে।অফিসের নানা ফাইলে সাইন করাতে বহুবার আদৃতাদের বাড়ি এসেছিলো মিসেস.তামান্না, সেই হিসেবেই বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো আদৃতার সাথে তার। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই মিসেস.তামান্না আদৃতা কে সহ্য করতে পারতো না।সবসময় অবহেলা করতো,শুধু আরহান রহমানের কাছে ভালো সাজতে তার সামনে আদৃতার সাথে খুবই ভালো ব্যবহার করতো।পরে যখন আহির জন্ম হয় তখন থেকেই মিসেস.তামান্নার অবহেলা,অত্যাচার আরো বাড়তে থাকে।আরহান রহমান নিজের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও আদৃতাকে অনেক ভালোবাসতো।তিনি যখন আদৃতার প্রতি মিসেস.তামান্নার অবহেলা দেখেছে তখন তার কিছুই করার ছিলো না।একদিকে আদৃতা অন্যদিকে ছোট্ট আহি।এভাবেই আদৃতা আর আহি দু’জনই বড় হয়।আদৃতা অনেক শান্ত-শিষ্ট হলেও আহি একদমই অহংকারী,সবসময় পার্টি শপিং এসবেই মত্ত থাকে।আর আদৃতাকে সহ্য করতে পারে না। ৪ বছর আগে একটা এক্সিডেন্টে আরহান রহমান আর মিসেস.তামান্না দু’জনই মা’রা যান।তারা মা’রা যাওয়ার কিছুদিন পরে আদৃতা আর আহি জানতে পারে আরহান রহমানের সব সম্পত্তি আদৃতার নামেই করে দিয়েছিলো তিনি।এরপর থেকে আহি আদৃতাকে আরো হিংসে করা শুরু করে।
বাকিটা পরে বলবো…)
(আদিয়াত আহমেদ।আদিত্য আহমেদ আর তৌসি আহমেদ এর বড় ছেলে।ছোট ভাই আরিয়ান আহমেদ।আরিয়ান পড়াশোনা শেষ করে এখন বেকার আছে।আর আদিয়াত বাবার বিজনেস এর সব দায়িত্ব বুঝে নিজেই এখন সব সামলাচ্ছে)
__♥__
গাড়ি এসে থামলো একটা দুই তলা বাড়ির সামনে।বাড়ির চারপাশটা চমৎকার ভাবে সাজানো।আদৃতা যখন বাড়ির চারপাশ দেখতে মগ্ন তখনই আদিয়াত বলে উঠলো
~বাড়িটাকে দেখার অনেক সময় পাবে এখন চলো ভেতরে,আরিয়ানরাও এসে পরেছে।
আদৃতার জানা নেই এরপরে কি হবে?আদিয়াতের মা যখন তার বড় ছেলের বিয়ের কথা জানবে তখন কি হবে?আদৃতা শুনেছে মিসেস.তৌসি নাকি খুব রাগী?এসব ভাবতে ভাবতে আদৃতা আনমনেই পা বাড়ালো সামনের দিকে।
চলবে…
#শুভ্র_রাঙা_প্রেম 🤍
#সূচনা_পর্ব
#Usha (Writer)