শুভ্র রাঙা প্রেম পর্ব -০২

#শুভ্র_রাঙা_প্রেম 🤍
#পর্ব_২
#Usha (Writer)

৩.
কলিংবেলের আওয়াজ পেতেই তড়িঘড়ি করে দরজা খুললেন মিসেস.তৌসি।হাসিমুখে দরজা খুললেও দরজার বাইরে আদিয়াতের পাশে দাঁড়ানো মেয়েটিকে দেখে নিমেষেই তার মুখের হাসি উধাও হয়ে গেলো।তিনি চোখমুখ শক্ত করে জিজ্ঞেস করলেন
~তোমার পাশে এই মেয়েটা কেন আদিয়াত?আর ও এখানেই বা কি করছে তাও আবার এই পোশাকে?
আদিয়াত কিছু বলার আগেই আদিত্য আহমেদ গম্ভীর কণ্ঠে বললো
~আগে ওদের ভেতরে আসতে দাও তৌসি।তারপর আমি তোমাকে সব বলছি।
তৌসি আহমেদ কিছু বলতে যেয়েও আর বললো না,তিনি স্বামীর কথা মেনে নিয়ে শুকনো হেসে অর্ণব-তিষা-কে ঘরে আসতে বলে একপলক আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে চলে গেলেন।

((অনেকেই বলেছেন নাম বদলে দিতে তাই আরিয়ানের পরিবর্তে অর্ণব আর আহির পরিবর্তে তিষা রাখা হলো।))

আদিয়াত একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদৃতাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলো। আদিত্য আহমেদ ওদের সবাইকে যার যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললো।
আদিয়াত রুমে ঢুকেই আলমারি থেকে ট্রাউজার আর টিশার্ট নিয়ে ঢুকলো ওয়াশরুমে।আর আদৃতা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আদিয়াতের দিকে।মনে মনে বিড়বিড় করে বললো
~মানে কি হ্যা?বলা নেই কওয়া নেই সোজা ফ্রেশ হতে চলে গেলো?আমি যে আস্ত একটা মানুষ তার রুমে আছি তার সেদিকে খেয়াল নেই?

কিছুক্ষণ পর আদিয়াত টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আদৃতার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো
~কি ব্যাপার তুমি এখানে বসে আছো কেন?যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
আদৃতা শক্ত কন্ঠে জবাব দিলো
~আমি কি ও বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে এসেছি পড়ার মতো?
আদিয়াত ভাবলো সত্যিই তো আদৃতা নিজের বাড়ি থেকে তো কিছুই নিয়ে আসেনি?আচ্ছা তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি বলেই আদিয়াত বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।
কিছুক্ষণ বাদে ফিরলো একটা নীল রঙের শাড়ি নিয়ে।

আদৃতা বাঁকা চোখে শাড়িটার দিকে তাকিয়ে বললো
~এটা কার শাড়ি?মানে আপনার মা তো কখনোই তার শাড়ি আমাকে দেবে না?তবে..?
আদিয়াত বললো
~এতো ভেবে তোমার কাজ নেই।যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
আদৃতা বিরক্তি নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।

ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই চারিদিকে চোখ বুলালো আদৃতা।নাহ্ কোথাও আদিয়াত নেই।উনি আবার কই গেলো?ভাবতে ভাবতেই চোখ পড়লো বেলকনির দিকে।আদৃতা আনমনেই বেলকনির দিকে পা বাড়ালো।
~ভুলেও ওর কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করবি না।ও এখন আমার স্ত্রী। আর তুই ভালো করেই জানিস আদিয়াতের জিনিসে নজর দেওয়ার পরিনাম ঠিক কতটা ভয়ানক হয়?

বেলকনিতে আসতেই দেখলো আদিয়াত ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।তখনই আদিয়াতের বলা এই কথাটি কানে গেলো।
আদৃতা অবাক হয়ে মনে মনে ভাবলো
~তার স্ত্রী?মানে তো আমি।আমার ক্ষতি আবার কে করবে?
আদিয়াত ফোন রেখে রুমে যাওয়ার জন্য পিছনে ফিরতেই দেখলো আদৃতা দাড়িয়ে কিছু ভাবছে।আদিয়াত প্রথমে কিছুটা চমকে গেলেও পরে কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো
~তুমি এখানে কি করছো?
ভাবনার মধ্যে আদিয়াতের কন্ঠ শুনে ধরফরিয়ে উঠলো আদৃতা।এরপরে আমতা আমতা করে বললো
~আব..এমনি এসেছিলাম।
আদিয়াত মুখে দুষ্টু হাসি এনে বললো
~এমনি এসেছিলে নাকি আমাকে দেখতে এসেছিলে?
আদৃতা চমকে গেলেও কিছু একটা মনে পরতেই আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো
~আপনি কার সঙ্গে কথা বলছিলেন?আর আমার ক্ষতি করার ব্যাপারে কি বলছিলেন হ্যা?
আদৃতার কথায় আদিয়াতের মুখ গম্ভীর রূপ ধারণ করলো।তারপর কিছুটা শক্ত গলায় বললো
~এসব জেনে তোমার লাভ নেই।এই ব্যাপারে যেন আর কোনো কথা না শুনি।
বলেই বেলকনি থেকে বেরিয়ে গেলো।আদৃতা আদিয়াতের যাওয়ার পানে একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে সামনের খোলা আকাশটার দিকে তাকিয়ে রইলো।

৪.
অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও যখন আদৃতা বেলকনি থেকে আসলো না তখন আদিয়াত বেলকনিতে গেলো।বেলকনিতে যেতেই দেখলো আদৃতা দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে।খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে সেইসঙ্গে চাঁদের আলোও একদম ওর মুখ বরাবর এসে পড়েছে।আদিয়াত মুগ্ধ চোখে বেশ কিছুক্ষণ আদৃতার দিকে তাকিয়ে রইলো।বেশ অনেকটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে আদিয়াতের হুস ফিরতেই আদৃতার দিকে তাকিয়ে বললো
~এতো রাতে বেলকনিতে কি হ্যা?কাল সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।এখন রুমে এসে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
আদৃতা আদিয়াতের কথায় পাত্তা না দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বেশ শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
~আমায় কেন বিয়ে করেছেন মি.আদিয়াত?
আদিয়াত আদৃতার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেও আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো
~তোমায় কেন বিয়ে করেছি তা আমার যখন মনে হবে তোমাকে বলার সঠিক সময় এসেছে তখন ঠিকই বলবো।এর আগে প্লিজ এই কথাটা আমায় জিজ্ঞেস করো না।আর তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করেছি বলে যে তোমায় কোনোভাবে অসম্মান করবো কিংবা কোনো-কিছু নিয়ে জোর করবো তা কিন্তু নয়।আমি তোমার অনুমতি ছাড়া কখনোই তোমার কাছে যাবো না।কিংবা কোনোকিছু নিয়ে তোমায় জোর করবো না।তুমি আগে যেমন স্বাধীন ছিলে এখনও তাই থাকবে।শুধু একটুই পরিবর্তন হবে তুমি আগে মিস ছিলে আর এখন মিসেস।
আদৃতা একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আদিয়াতের কথা শুনছিলো।আদিয়াতের কথা শেষ হতেই আদৃতার মুখে দেখা গেলো একটুখানি মুচকি হাসি।
আদিয়াত আর কিছু না বলে বললো
~অনেকটা সময় বেলকনিতে ছিলে এখন রুমে চলো..।
আদৃতাও আর কিছু বললো না।চুপচাপ আদিয়াতের সাথে রুমে এলো।

রুমে আসতেই দেখলো খাবার রাখা।হয়তো কোনো সার্ভেন্ট এসে দিয়ে গেছে ভেবেই আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বললো
~আব..আপনি খাবেন না?
আদিয়াত শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো
~উহু আমি খাবো না।তুমি খেয়ে লাইট অফ করে ঘুমোও।গুড নাইট।
বলে খাটের একপাশে ঘুমিয়ে পড়লো।
আদৃতার নিজেরও খেতে ইচ্ছে করলো না তাই খাবারটা যেভাবে ছিলো সেভাবেই রেখে দিলো।এরপর ঘুমোতে গেলেই বিপত্তি ঘটলো।আদিয়াত তো খাটের একপাশে শুয়ে পড়েছে কিন্তু আদৃতা কোথায় শুবে?বালিশ হাতে নিয়ে সোফার দিকে এগোতেই আদিয়াত ক্লান্তিমাখা কন্ঠে বললো
~আমি এতোটাও খারাপ না যে তুমি খাটের আরেকপাশে ঘুমোতে পারবে না।আমাকে বিশ্বাস করে দেখতে পারো।রাত হয়েছে অনেক।মাঝখানে একটা কোলবালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো আদৃপাখি।
আদৃপাখি নামটা শুনতেই কিছুটা কেঁপে উঠলো আদৃতা।বড্ড আদুরে শোনালো আদিয়াতের মুখে এই নামটা।
আদৃতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদিয়াতের কথা মতো খাটের মাঝখানে একটা কোলবালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

__♥__

গালে নরম কিছুর স্পর্শ পেতেই ঘুম ভাঙলো আদৃতার।চোখ মেলে পাশে তাকাতেই দেখলো একটা বিড়াল ওর গা ঘেঁসে বসে আছে।ও প্রথমে কিছুটা চমকালেও পরে নিজেই উঠে
বিড়ালটাকে কোলে তুলে নিলো।একদম সাদা বিড়ালটা।আদৃতার বরাবরই বিড়াল খুব পছন্দ।তাই এই বিড়ালটাকে দেখে যেন ওর দিনটাই একদম সুন্দরভাবে শুরু হলো।
আশেপাশে আদিয়াতকে না দেখে অবাক হয়ে ভাবলো আদিয়াত কই?পরে ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই ও যেন আকাশ থেকে পড়লো।সকাল ১১ টা বাজে আর ও কিনা মাত্র ঘুম থেকে উঠলো?আর আদিয়াতই বা কেন ওকে আরো আগে ডাকলো না।তড়িঘড়ি করে বিড়ালটাকে ছেড়ে বিছানা থেকে নামতেই দেখলো সোফার উপরে একটা শাড়ি সঙ্গে একটা চিরকুটও রাখা।ও কিছুটা এগিয়ে সোফার সামনে গিয়ে চিরকুটটা খুলে পড়তে শুরু করলো।
~গুড মর্নিং আদৃপাখি।জানো তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় না একটা ছোটোখাটো বিড়ালের বাচ্চার মতো লাগছিলো তাই আর ডাক দিতে ইচ্ছে করলো না।এখন তোমার সামনে যেই শাড়িটা রাখা আছে গোসল করে সেটা পরে নিচে চলে এসো।~

লিখাটা পরে আদৃতা শাড়িটার দিকে তাকালো।বেশ সুন্দর একটা লাল জামদানী শাড়ি।আদৃতা শাড়িটা নিয়ে গোসল করতে গেলো।

রেডি হয়ে ধীর পায়ে নিচে গেলো আদৃতা।পুরো বাড়িভর্তি মেহমান।এতো মানুষের মধ্যে ওর খুব অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু তবুও চুপচাপ এগিয়ে গেলো।সামনে যেতেই দেখলো আদিত্য আহমেদ সোফায় বসে আছে।আর তারপাশেই আদিয়াত এবং তাদের বিপরীত পাশের সোফায় অর্ণব-তিষা বসে আছে।আদিয়াতের মা’কে আশেপাশে কোথাও না দেখে মনে মনে কিছুটা তৃপ্তি পেলো।আদৃতার দিকে চোখ পড়তেই আদিত্য আহমেদ বললেন
~আদৃতা মামুনি এখানে এসে বসো আমাদের সাথে।
আদৃতা ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসলো আদিয়াতের পাশে।

আদিত্য আহমেদ সার্ভেন্টকে বললেন আদৃতার নাস্তা এখানে দিয়ে যেতে।এরপর সবার সাথে আগের মতোই গল্প শুরু করলো।
তিষা যে আদৃতাকে সহ্য করতে পারছে না তা আদৃতা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে।ও খুব গোপনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।তিষা ওর সৎ বোন হলেও কখনো তিষাকে ও সেই চোখে দেখেনি।সবসময় নিজের বোনের মতো ভালোবেসেছে,আগলে রেখেছে।বাবা-মা মা’রা যাওয়ার পরে তিষার খেয়াল রাখতে রাখতে ও যেন ভুলেই গিয়েছিলো ওর নিজের একটা জীবন আছে।বহুবার বিয়ের প্রস্তাব পেয়েও না করে দিয়েছে শুধু মাত্র তিষার জন্য।অথচ সেই তিষাই এখন ওকে সহ্য করতে পারে না।

এরমধ্যেই আদিত্য আহমেদ বলে উঠলেন
~আদৃ মা সবকিছুই তো হুটহাট হয় গিয়েছে তাই তুমি তো ঐ বাড়ি থেকে কোনো পোশাক আনোনি।আমি তোমার জন্য একটা শাড়ি অর্ডার দিয়েছিলাম কাল রাতে হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যে চলেও আসবে পার্সেল।তুমি আজ রাতের পার্টিটা একটু কষ্ট করে ঐ শাড়িটা দিয়েই চালিয়ে নিও।এরপর কাল আদিয়াতের সঙ্গে শপিং এ যেয়ে নিজের প্রয়োজনীয় যা যা লাগে তা কিনে নিও।
আদিত্য আহমেদের কথায় আদৃতা ভাবনার রাজ্য থেকে ফিরলো।আদৃতা হালকা হেসে বললো
~না বাবা শপিং করা লাগবে না আমি ঐ বাড়ি থেকেই আমার জিনিসপত্র গুলো নিয়ে আসতে চাই।আসলে ঐ বাড়িটা তো এখন ফাঁকা পড়ে আছে।তাই জিনিসপত্র গুলো ঐকানে থাকলেও এমনিতেও নষ্ট হবে।
আদিত্য আহমেদ বললেন
~হু তাও ঠিক।বেশ তবে কালকে আদিয়াত তোমায় ঐ বাড়ি নিয়ে যাবে।

আদৃতার প্রতি শশুরের এতো কেয়ারিং যেন তিষার সহ্য হলো না।ও উঠে চলে গেলো।তিষার এমন ব্যবহারে উপস্থিত সবাই বেশ অবাক হলো।

এরমধ্যেই সেখানে উপস্থিত হলেন মিসেস.তৌসি।মিসেস তৌসিকে দেখেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে গেলো আদৃতা।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here