শুভ্র রাঙা প্রেম পর্ব -১১

#শুভ্র_রাঙা_প্রেম 🤍
#পর্ব_১১
#Usha (Writer)

২১.
আদিয়াত তোহার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
~মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার?কি বলছো এসব উল্টো পাল্টা?
তোহা হেসে বললো
~আমার মাথা খারাপ হয়নি তবে এমন কিছু হতে চলেছে যার জন্য তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে..।
বলেই বেড়িয়ে গেলো।
আদিয়াত ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।এই ঝামেলা ওর আর ভালো লাগছে না।

বাড়িতে চলে গেলো আদিয়াত।

বাড়িতে যেতেই দেখলো আদৃতা মিসেস.তৌসিকে সাহায্য করছে রান্নাঘরের কাজে…।

আদিয়াত ক্লান্ত দৃষ্টিতে একবার সেদিকে তাকিয়ে রুমে চলে গেলো।

আদিয়াত আসার ঘন্টাখানিক পরে আদৃতা রুমে গেলো।কিন্তু আদিয়াতের দিকে ফিরেও তাকালো না।নিজের ফোনের কাছে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় গেলো।
এই ফোনটা আদিয়াত ওকে কিছুদিন আগে কিনে দিয়েছিলো।

আদিয়াত আদৃতার আচরণে বেশ অবাক হলো।আদৃতার আবার কি হলো যে আদিয়াতকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলো?
আদিয়াত বারান্দার দিকে যেতে গিয়েও থেমে গেলো।দরকার কি ওকে বিরক্ত করার?ওর সময় হলে তো আসবেই আদিয়াতের কাছে।নিজের অজান্তেই আদিয়াতের মনে কিছুটা অভিমানের জন্ম হলো।

__♥__
তিষা অনেকক্ষণ ধরে ইফাজের জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও ইফাজ আসছে না।
তিষা অনেকটা বিরক্ত হলো।তারপর ইফাজকে কল করলো।দু’বার রিং বাজতেই ইফাজ কলটা রিসিভ করলো।
~কি হয়েছে তিষা? কল করছো কেন?(ইফাজ বিরক্ত হয়ে)
~মানেটা কি ইফাজ?আজকে আমার সাথে তোমার মিট করার ছিলো?তুমি সেটা ভুলে গেলে?(তিষা অভিমানী কন্ঠে)
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইফাজ বললো
~তিষা আসলে আমার কিছু কাজ পড়ে গিয়েছে হঠাৎ করে।তাই আজকে আসতে পারবো না।প্লিজ তুমি রাগ করো না। আমি কথা দিচ্ছি কালকেই আমি তোমার সাথে মিট করবো।
তিষা কিছুটা শক্ত কন্ঠে বললো
~ইফাজ তুমি কোনোভাবে আমায় ঠকাচ্ছো না তো?আমি দেখা করতে বললেই তোমার জরুরি কাজ পড়ে যায়।আরও নানা অযুহাত দিয়ে দাও..।কিন্তু কেন?কই আগে তো এমন করতে না?
ইফাজ এবার রেগে গিয়ে ধমকে বললো
~বলেছি তো কালকে দেখা করবো।এখন ন্যাকামি না করে ফোনটা রাখো তোহ্….!বলে নিজেই কল কে’টে দিলো।

তিষা বসে রইলো আরো বেশ কিছুক্ষণ..। ইফাজ সম্পর্কে ওর খালাতো ভাই হলেও তিষা ইফাজকে ভাইয়ের চোখে দেখেনি কখনো।বরং পছন্দ করতো তিষা ইফাজকে।ইফাজকে যখন প্রপোজ করেছিলো তখন ইফাজ একসেপ্ট করেছিলো।কিন্তু ইফাজের সাথে আদৃতার ঝামেলা হওয়ার পর ইফাজের কোনো খোঁজ খবর ছিলো না দুইবছর।

ততদিনে তিষাও ইফাজকে ভুলেছিলো।তারপর পেয়েছিলো অর্ণবকে।অর্ণব খুব বড়লোক বাড়ির ছেলে হওয়ায় তিষা লোভে পড়ে অর্ণবকে পটানোর চেষ্টা করতে থাকে..।এবং একসময় সফল হয়।তারপর অর্ণবকে চাপ দিয়ে ওর ফ্যামিলিকে ওদের কথা বলায়।তারপর বিয়ে হলো ওদের।

বিয়ের আগেরদিন ইফাজের ফোন আসে।তখন তিষা কি করবে আর?পরদিন অর্ণবের সাথেই বিয়ে হয়েছে কিন্তু ইফাজের সঙ্গেও আবার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে।ইফাজ যখনই টাকা চেয়েছে অর্ণবের থেকে টাকা নিয়ে ইফাজকে দিয়েছে। আদৃতার সব খবর ইফাজকে দিয়েছে তিষা।কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে ইফাজ ওকে আগের মতো সময় দিচ্ছে না,কথাও বলছে না বেশি।ও কিছু বললেও খারাপ ব্যবহার করছে..!তিষা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।কিন্তু মনে আদৃতার প্রতি একটা রাগ জন্মালো।ওর ধারণা আদৃতা ঐদিন যদি ওকে টাকাটা দিতো সেটা ও ইফাজকে দিলে ইফাজের সাথে সবকিছু ঠিকঠাক থাকতো।


২২.
তিষা বাড়িতে ফিরতেই মুখোমুখি হলো অর্ণবের।অর্ণব তিষার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
~তুমি বাড়ি থেকে বেড়িয়েছো ৩টা বাজে আর এখন রাত ৮টা বাজে।এতো সময় তুমি কোথায় ছিলে?
তিষার এমনিতেই মেজাজ ভালো ছিলো না।তারপরে আবার অর্ণবের রাগী দৃষ্টিতে তিষা নিজেও দ্বিগুণ রেগে গেলো।জোরে বললো
~আমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে গিয়েছিলাম।তোমায় বলতে বাধ্য নই আমি।
~তুমি বাধ্য।অনেক সহ্য করেছি কিন্তু আর পারবো না।তুমি কোথায় যাচ্ছো কি করছো এসব জানা আমার প্রয়োজন।রোজই আমার থেকে এতো টাকা নিয়ে কিই বা করছো তুমি?(অর্ণব)
~একদম বেশি কথা বলবি না বলে দিচ্ছি। তোর টাকার অভাব আছে নাকি?সম্পত্তি ভাগ হলেও তো কত কিছু পাবি।তবে কয়েকটা টাকার জন্য এমন করছিস কেন তুই?তোর টাকার জন্যই তো তোর পিছনে ঘুরেছি তোকে বিয়ে করেছি।
বলতেই তিষার খেয়াল হলো ও কি বলে ফেলেছে রাগের মাথায়।

তিষা আমতা আমতা করে অর্ণবকে বললো
~অর্ণব আমি রাগের মাথায় কিনা কি বলেছি তুমি কিছু মনে করো না।সরি আসলে রেগে গেলে কি বলে ফেলি আমি নিজেও জানি না।

অর্ণব কিছু বললো না। চুপচাপ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।আর মনে মনে নিয়ে ফেললো কঠিন এক সিদ্ধান্ত।

__♥__
আদৃতা সারাদিনেও আদিয়াতের সাথে কথা বলেনি।আদিয়াত নিজের জেদ নিয়ে আর থাকতে পারলো না।আদৃতাকে ডেকে মলিন কন্ঠে বললো
~কি হয়েছে তোমার আদৃপাখি?তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেন?
আদৃতা শক্ত কন্ঠে বললো
~আমার আবার কি হবে?যাইহোক আপনার কোনো দরকার আমায়?
আদিয়াত হঠাৎই রেগে গেলো।আদৃতাকে কিছুটা ধমকের সুরে বললো
~সমস্যা কি তোমার?কি হয়েছে না বললে বুঝবো কি করে?হুট করে এমন অদ্ভুত ব্যবহার কেন করছো?
আদৃতার চোখ ছলছল করে উঠলো।আদিয়াত আগে কখনো ওর সাথে এমন ব্যবহার করেনি।
আদৃতা মাথা নিচু করে ছলছল করা চোখজোড়া লুকিয়ে বললো
~আমি কোনো অদ্ভূত ব্যবহার করছি না।এখন আমায় দয়া করে একটু একা থাকতে দিন।আমার ভালো লাগছে না।

আদিয়াত কিচ্ছু না বলে রেগে চলে গেলো রুম থেকে।

__♥__
আদৃতা আনমনেই দোলনায় বসে নিজের ডায়েরিকে লিখে ফেললো কয়েক লাইন..
~একসাথে থাকতে থাকতে কখন যে মানুষটার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম আমি নিজেও জানি না।মানুষটার মধ্যে না একটা অন্যরকম মায়া ছিলো যা সবসময় আমায় আকৃষ্ট করতো।মানুষটা আমার কাছে ছিলো একদম স্নিগ্ধময়।তার সাথে থাকতে থাকতে আমি নিজেও শুভ্র রঙটাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু তিষার কথা হয়তো ঠিক ছিলো এই বাড়িতে আমি টিকবো কতোদিন?আজ তিষা আমায় বলেছিলো তার অফিসে খাবার নিয়ে গিয়ে সারপ্রাইজ দিতে।তিষার মুখে এই কথা শুনে প্রথমে বেশ অবাক হলেও পরে ভেবেছিলাম একদিন গিয়ে একটু সারপ্রাইজ দিলে কি এমন হবে?তারপর মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করে গিয়েছিলাম সেখানে..।কিন্তু দিতে পেরেছি কি সারপ্রাইজ?উহু পারিনি কারণ আমার জন্যই অনেক বড় ধরনের একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করে ছিলো।তারা হয়তো জানেও না তাদের কথার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম।সত্যিই তো আমার তো কোনো যোগ্যতাই নেই আদিয়াতের বউ হওয়ার।আমাকে বাঁচানোর জন্য দয়া দেখিয়ে আদিয়াত বিয়ে করেছিলো।আমি নাহয় নিরবেই সরে যাবো আদিয়াতের জীবন থেকে?!

অন্যদিকে,
আদিয়াত যখন ছাদে গেলো তখন মিসেস.তৌসি দেখলো আদিয়াতের মুখটা মলিন হয়ে আছে।মিসেস.তৌসির বুক কেঁপে উঠলো ছেলের মুখখানি দেখে।সে ভাবতে লাগলো
~আদিয়াতের কি হলো?চেহারা এমন মলিন হয়ে আছে কেন?ওর খুশির জন্য আমি সবকিছু মেনে নিয়েছি আদৃতাকেও সেনে নিয়েছি।তবে আজ ওর হঠাৎ কি হলো?রুমেই তো ছিলো তাহলে আবার এতো রাতে ছাদে গেলো কেন?

মিসেস.তৌসি আদৃতা আর আদিয়াতের বিয়ের পরের দিন মিসেস.তৃণার সঙ্গে যখন কথা বলেছিলো তখন মিসেস.তৃণা তাকে বলেছিলো এখন আদৃতাকে মন থেকে মেনে না নিলেও সবার সামনে এমন ভাব করুন আপনি মেনে নিয়েছেন।পরে নাহয় সুযোগ বুঝে ওর ঘাড়ে কোনো দোষ চাপিয়ে ডিভোর্স করিয়ে বাড়ি থেকে বার করে দিবেন।
মিসেস.তৌসি প্রথমে মিসেস.তৃণার কথামতো কাজ করলেও কিছুদিন পরেই আদিয়াতের খুশির কথা ভেবে আদৃতাকে মেনে নিয়েছে।আর মিসেস.তৃণা এই ব্যাপারে যখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলো তখন মিসেস.তৌসি মিসেস.তৃণাকে বলেছিলেন তার পরিবারের ব্যাপারে অন্যকেউ মাথা না ঘামালেই সে খুশি হবেন।
মিসেস.তৃণা অপমানিত হয়ে আর কিছু বলেন নি।

চলবে…

((

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here