#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৪
মিহাল যখন তূরের কেবিনে ঢুকতে যায় দেখে তূরের পাশে নার্স দাঁড়িয়ে আছে কারন একটু পরে রক্ত দেওয়া শেষ হবে তূরকে। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে তূর। হাসপাতালের সাদা বেডে হালকা নীল জামা পরিহিত তূরকে মেঘ রাজকন্যা লাগছে মিহালের কাছে!
মিহাল মনে মনে ভাবে, মেয়েটা শ্যামাও না শুভ্রও না কিন্তু এক উজ্জল সোনালী আভা ছড়িয়ে থাকে মেয়েটার সরল মুখমন্ডলে ঠিক যেনো ওর নাম “নূর” এর স্বার্থকতা, আর টানা টানা চোখে এক রহস্যময়ী মায়া, যদি কেউ এই চোখের রহস্যে ধরা দেয় তাহলে যতক্ষণ না তূর নিজে রহস্যময়তা থেকে বের করবে আপনি বের হতে পারবেন না। এই রহস্যময়ী মায়া দৃষ্টি থেকে সবসময় নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে মিহাল। শুধু চোখ রহস্যময়ী না ওর হাসিটাও রহস্যময়ী। হাসির সাথে খেলে যায় ওর চোখের রহস্যময়তা।
কিন্তু তূরকে এ অবস্থায় দেখে মিহালের মনে হচ্ছে মেঘ রাজকন্যা নিজকে কালো মেঘে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। এই কালো মেঘে তূরের নিজেকে আচ্ছন্ন করার কারণটা তো মিহাল নিজেই। এটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিহাল।
_______
মিহালের বাবা ” মিস্টার কায়েস মুনতাসির” মা ” মিসেস মহিমা আক্তার” তূরের বাবা মায়ের কাছে করিডোরে বসে। তূরের চাচা “শাহিন মাহমুদ” ডাক্তারের সাথে সার্জারির বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেছে নীরা, নাফিহা বাসায় আছে তাদের ছোট চাচাতো ভাই ও চাচির সাথে, বিকেলে তারা একবার আসবে একসাথে।
মিহালের মা তূরের মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছে,
মিহালের মা: আপা আপনি চিন্তা করবেন না দেখবেন তূর মা সুস্থ হয়ে যাবে। আল্লাহ নিশ্চয়ই এত সুন্দর ফুলের মত মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট দিবে না।
মিহালের মায়ের কথা শুনে তূরের মা কিছু বলে না কিইবা বলবে যেখানে ডাক্তার বলছে রিস্ক আছে। তূরের ব্লাড হিমোগ্লোবিন লেভেল এখন 7 mg/L তাই আজকে এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছে আবার কালকে দিবে।
নাদিয়ার বয়ফ্রেন্ড “শাফকাত” আজকে তূরকে নাদিয়ার সাথে দেখতে এসেছে। তূরকে সে ছোট বোন মনে করে। সেই হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল মেয়েটাকে এই অবস্থায় দেখবে সে কখনো ভাবেনি।
_______
রক্ত দেয়া শেষ হবার পর তূরের মা-বাবা, চাচা ও মিহালের মা-বাবা দেখা করে। তূরের অবস্থা এখনো অতোটা খারাপ হয়নি। সবাই চলে যাবার পরে অর্ক, আসফির সাথে মিহাল তূরের কেবিনে ঢুকে।
তূর একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে মিহালের চোখের দিকে। তূরের চাহনী দেখে মিহাল চোখ নামিয়ে ফেলে যা মিহাল সবসময় করে।
মিহালকে বেড সাইড টুলে বসতে দেয় আসফি। আর অর্ক নিজেকে সংযত করে রেখেছে। কথায় আছে মানুষ বেশি হাসিখুশি হলেও নিজের আপন জনের একটু কষ্টে কষ্টদাতার প্রতি কঠোর হয়ে যায়।
মিহাল বসে তূরকে জিজ্ঞাসা করে,
মিহাল: কেমন আছো?
মিহালের কথায় তাচ্ছিল্যের সাথে তূর বলে,
তূর: ভালো! তুমি কেমন আছো?
তূরের কথায় মিহাল অন্য মনস্ক হয়ে যায়। আজ কয়েকদিন হলো তানজিনাকে ফোন করলে ব্যাস্ত বলে রেখে দেয়। বিয়ের পর সপ্তাহ দুই রাতে কিছুটা কথা হতো তাও মিহাল বলতো তানজিনা শুধু কথার উত্তর দিত আর তার মেডিকেলের কথাবাত্রা বলতো। আস্তে আস্তে সেটুকু সময়ও কমে আসে।
মিহালের কথার জবাব না পেয়ে তূর আবার জিজ্ঞাসা করে,
তূর: বললে না তো কেমন আছো?
মুখে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে মিহাল বলে,
মিহাল: ভালোই আছি। তুমি যদি এই অবস্থায় ভালো থাকতে পারো তাহলে তো আমার আরো ভালো থাকার কথা।
মিহালের অপ্রতিরোধ্য উত্তরে তূর মুচকি হাসে আর বলে,
তূর: ঠিক বলেছো। আমি যদি এ অবস্থায় ভালো থাকতে পারি তুমি তো বিয়ে করে বউ নিয়ে খুব সুখে সংসার করছো তাই না?
তূরের কথায় মিহালের চোখ মুখ মলিন হয়ে যায়। কিছু না বলে চলে যেতে নিলে তূর আটকায় আর বলে,
মিহাল: বিয়ে করবে আমায়? চিন্তা করো না তোমার সুখের সংসার আমি নষ্ট করব না। হয়তো এই সার্জারির সময় আমি মরেও যেতে পারি তাই শুধু চাই মৃত্যুর আগে তোমার স্ত্রী হয়ে যেতে।
মিহালের পা যেনো থেমে গেছে। কি শুনছে সে! তূর তাকে বিয়ে করতে চায় এটা জানা সত্বেও যে মিহাল বিবাহিত!
তূরের কথায় মিহালের প্রচন্ড রাগ হয়, রাগে হাত মুঠো করে নেয় সে। এরপর রাগত স্বরে বলে,
মিহাল: তোমার মাথা ঠিক আছে তূর! কি সব বলছো তুমি? আমি বিবাহিত।
অর্ক ও আসফি কিছুক্ষণ আগে ওদের কথার মাঝে কেবিনের বাইরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
মিহালের কথায় তূর রহস্যময় ভাবে হাসে। মিহাল তূরের হাসির কারণ খুঁজে পায় না। তূর মিহালকে বলে,
তূর: বসো। কিছু কথা বলি তোমার সাথে এরপর আর কথা বলার সুযোগ হবে কিনা তাতো জানিনা।
তূরের কথায় নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বেড সাইড টুল বসে।
তূর: আমি তোমার ও তানজিনার মধ্যে তুমি না চাইলে আসবো না বিয়ের পরেও। তোমার আইনত রেজিস্ট্রি করা বউকে আমাদের বিয়ের কথা আমি ও আমার বন্ধুরা আর আমার পরিবার কেউ জানাবে না। এমনকি আমি যদি মরেও যাই তাও জানাবে না।
মিহাল তূরের দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি বলছে তূর এসব?
তূর আবার বলে,
তূর: আমি তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী হবো এটা তোমার পরিবার, আমার পরিবার, আমার আত্মীয়-স্বজন, আমার বন্ধুবান্ধব যাদেরকে বলা যায় তারা ব্যতীত যারা চক্ষু সাক্ষী থাকবে তারাই জানবে।আর কেউ জানবে না যদি না তুমি জানাও। যদি আমি মারা না যাই তাহলে আমাকে তোমার আইনত দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিচয় দিতে হবে।
আর হ্যা, তোমার আর তোমার রেজিস্ট্রি করা প্রথম স্ত্রীর মাঝে আমি আসবো না।
মিহাল কিছুটা অস্থির হয়ে বলে,
মিহাল: দেখো তূর আমি তানজিনাকে ভালোবা..
মিহালকে বলতে না দিয়ে তূর বলে,
তূর: ভালোবাসো তাইতো? আমি জানি। তুমি তানজিনাকে ভালোবাস আর ওকে নিজের করে রাখতে রেজিস্ট্রি করে রেখেছো শুধু রেজিস্ট্রি!
শরীয়ত মোতাবেক এখনোও ও তোমার স্ত্রী না! আর তানজিনা শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করতে স্রেফ মানা করে দিয়েছিলো শুধু সাইন করে বের হয়ে গেছিলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। তাইতো?
তূরের কথায় মিহাল চমকে যায় এরপর বলে,
মিহাল: তুমি এসব কি করে জানো?
তূর: ইনায়া বলেছে। তূরের ভাবলেশহীন জবাব
মিহাল যেন অবাক হয়ে যায় ইনায়া! ইনায়া বলেছে তূরকে এসব!
মিহালের অবাকতা বুঝতে পেরে তূর বলে,
তূর: হ্যা, তুমি ঠিক শুনেছ। রাফি ইনায়াকে জিজ্ঞাসা করেছিলো বিয়েটা কিভাবে হয়েছে তখন ইনায়া সব কিছু বলেছে। কিন্তু তুমি চিন্তা করো না তোমাকে যে আমি এখন বিয়ের কথা বলছি সেটা ইনায়া জানেনা আর আমরা জানাবো না। যত হোক ইনায়া তানজিনার বেস্টফ্রেন্ড।
মিহালকে প্রতিউত্তর করতে না দেখে তূর আবার বলে,
তূর: তোমাকে বিয়ে করতে চাওয়ার খবরটা আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন কেউই জানেনা। আমি সবার আগে তোমার মতামত চাই। তুমি চাইলে তানজিনাকে ইনডাইরেক্টলি জিজ্ঞাসা করে নিতে পারো।
তূরের কথায় মিহাল ভ্রু কুচকিয়ে তাকায়। মিহালের ভ্রু কুচকানো দেখে তূর বুঝে মিহাল বুঝতে পারেনি তূর কি বলেছে। তাই তূর আবার খোলসা করে বলে,
তূর: তুমি বুঝতে পারোনি তো আমার কথার মানে? আমার কথার মানে হচ্ছে তুমি এখন তানজিনাকে ফোন করবে আর ওকে ইনডাইরেক্টলি কিছু না কিছু বলে বিয়ের কথাটা জিজ্ঞাসা করবে। ফোনটা অবশ্যই লাউডস্পিকারে রাখবে।
আর আমার মতে বাঙালি মেয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে স্বামীর মুখে দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনলে একটুও খুশি হবে না প্রতিবাদ তো সে করবেই।
মিহাল ভাবে ফোন করবে কি না! তার মন বলছে ফোন করতে কারণ সে তানজিনার ওই কথার প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া দেখতে চায়। তাই সাতপাঁচ না ভেবে ফোন লাগায় তানজিনাকে আর এই দুপুরের সময় হয়তো কোনো রোগী থাকবে না। খাবারের সময় এটা ভেবেই তানজিনা কে ফোন লাগায়।
প্রথমবার ফোন করাতে তানজিনা ফোন কেটে দেয়। মিহাল কিছুটা হতাশ হয় এরপর দুই মিনিট পর ফের ফোন লাগায়। এবার আর ফোন কাটে না কিন্তু ফোন রিসিভ করে তানজিনা বিরক্তির সহিত বলে,
তানজিনা: কি সমস্যা তোমার হ্যা? একবার ফোন কেটে দিছি তাও ফোন দিচ্ছো? কি বলবা বলো আমার কাজ আছে।
মলিন কন্ঠে মিহাল বলে,
মিহাল: এখন তো লাঞ্চ টাইম এখন আবার কিসের কাজ তোমার?
এবার কিছুটা শান্ত স্বরে তানজিনা বলে,
তানজিনা: আমার কাজ তুমি বুঝবে না মিহাল। তুমি তো আর ডাক্তার না। ডাক্তারদের সারাক্ষণ কাজ থাকে। হ্যাঁ এখন লাঞ্চ টাইম আমি লাঞ্চ করে আবার রোগি দেখব। তোমার কিছু বলার থাকলে জলদি বলো।
মিহাল: তোমার কি আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দেওয়ার জন্য একটু সময় হবে না?
তানজিনা: দেখো মিহাল আমার সিনিয়র লাঞ্চের জন্য বসে আছে। আমরা সবাই একসাথে লাঞ্চ করছি। গ্রামের মোড়ল আজকে আমাদের লাঞ্চ করাচ্ছে। তাই তোমার যদি কিছু বলার থাকে তো বলো, না হলে পরে কথা বলবো।
মিহাল: পরে না এখন একটু কথা বলবো। সবার সাথে কথা বলার টাইম হয় তোমার, আমার সাথে একটু পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারবে না?
তানজিনার এবার আবার বিরক্ত লাগছে তাই সে বলে,
তানজিনা: ওকে বল কি বলবে।
মিহাল নিজেকে ঠিক করে বলে,
মিহাল: আচ্ছা তানজিনা আমাদের সম্পর্কটা কি শুধু কাগজে কলমে?
মিহালের এই অদ্ভুত প্রশ্নে তানজিনার বিরক্তি আরও বাড়িয়ে দেয় কিন্ত তাও মাথা ঠান্ডা রেখে শান্ত গলায় উত্তর দেয়,
তানজিনা: সত্যি বলতে মিহাল আমাদের বিয়েটা শুধু কাগজে কলমে। কারণ শরীয়ত মোতাবেক তুমি আমার স্বামী না আর আমি তোমার স্ত্রী না। সেইদিন কি সিচুয়েশনে আমি রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করতে বাধ্য হয়েছি তুমি হয়তো জানো না। ফ্রেন্ড হিসেবে আমি তোমার সাথে কথা বলতে পারি কিন্তু স্বামী হিসেবে না। যেদিন তোমার ঘরে বউ হয়ে যাবো তখন থেকে আমার জীবনে তোমার ইন্টারফেয়ার আমি সহ্য করব। প্লিজ এর আগে আমার উপর অধিকারবোধ দেখাতে এসো না।
তানজিনার কথা শুনে মিহাল স্তব্ধ ও বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। তানজিনার কথা গুলো তার মনে আঘাত করে। সে তো ভুলেই গেছিলো সে এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে যে নিজের ইচ্ছা মতো করে সব করে।
ওইদিন যখন তানজিনা বিয়েতে মানা করে শুধু রেজিস্ট্রিতে রাজি হয় তখন মিহালের কিছুটা অন্যরকম লাগলেও আর পাত্তা দেয়নি।
মিহালের ভাবনার মাঝেই তানজিনা ফোন কেটে দেয়। তানজিনার সাথে কথা বলার শেষ পর্যায়ের দিকে অর্ক ও আসফি কেবিনে ঢুকে। আর এদিকে তূরের মুখে ঝুলে আছে তাচ্ছিল্যভরা বাঁকা হাসি।
আর মনে মনে ভাবে,
তূর: তানজিনা যদি তোমাদের বিয়ের পরেও কিছুটা হলেও ভালোবাসতো আমি তোমাকে কখনো বিয়ের কথা বলতাম না। এমনকি তানজিনা বিবাহিত এটাও তানজিনার পরিবার আত্নীয় স্বজন ছাড়া আর কেউ জানে না।
#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৫
মিহাল কেবিন থেকে বেরিয়ে গিয়ে ওয়াশরুমে যায়। হাত মুখ ধুয়ে কিছুক্ষণ আয়নার মধ্যে নিজেকে দেখে আর ভাবে,
মিহাল: কি করা উচিত আমার? আমি ভালোবেসে কখনো নিজের আত্নসম্মান নষ্ট করবো না। এই আত্মসম্মানের জন্যই তো আমি তানজিনাকে বিয়ে করেছি। আমার ভালোবাসা একতরফা ছিলো কিন্তু আমি হারাতে চাইনি তানজিনাকে ও হারতেও চাইনি তানজিনার কাছে।
ওয়াশরুমে আরো কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বেরিয়ে মিহাল তূরের কেবিনে যায়।
এদিকে তূর একা কেবিনে। অর্ক ও আসফি কাজে বাহিরে গেছে। নিস্তব্ধতার মাঝে তূর ভাবছে,
তূর: আমি তোমাকে ভালোবাসলেও কখনো এটা বলিনি তোমায়। আমার চোখের দিকে তুমি তাকাও না এটাও আমি জানি। এই চোখে তুমি ভালোবাসা দেখেছো ঠিকি কিন্তু আমি না বলাতে স্বস্তিতে ছিলে। কিন্তু আজ আমি তোমার স্বস্তি নষ্ট করতে বাধ্য হয়েছি, দেখি তোমার উত্তর কি হয়! তোমার উত্তরের ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। মনে মনে বলেই হাসপাতালের সাদা ছাদের দিকে তাকায়।
মিহাল তূরের কেবিনে এসে দেখে তূর ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে ওর রহস্য ঘেরা চোখে এখন কেমন মলিনতার ছাপ। মেঘ কন্যা কালো মেঘের আচ্ছাদন থেকে বের হতে যেন সূর্যের প্রতীক্ষা করছে।
মিহাল নিঃশব্দে তূরের পাশের টুলে বসে। তাকিয়ে আছে মিহাল আজ তূরের চোখের দিকে! জানতে চায় এই রহস্যময়ী চোখ মলিন কেনো হলো। তূরের দৃষ্টি এখনো ছাদের দিকে। মৌনতা ঘিরে আছে দুজনকে। মৌনতা ভেঙে তূর দৃষ্টি স্থির রেখে বলে,
তূর: কি সিদ্ধান্ত নিলে তাহলে?
মিহাল তূরের কথায় কর্ণপাত না করে এখনো একদৃষ্টিতে তূরে চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তূর এবার মিহালের দিকে মাথা ঘুরিয়ে তাকায়। এরপর বলে,
তূর: আজ দেখি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছো? ভয় করছে না? যদি তলিয়ে যাও!
মিহাল: আমি রাজী!
মিহালের কথায় তূর আশ্চর্য ও অবাক হয়ে যায়। তূরের আশ্চর্য হওয়া দেখে মিহাল মলিন হাসে আর ভাবে,
মিহাল: এতো ভালো না বাসলেও পারতে। আমি তানজিনা কেও এতো ভালোবাসি না, যতোটা তুমি আমায় বাসো।
কিন্তু মুখে বলে,
মিহাল: “আমরা যাকে ভালোবাসি সে আমাদের ভালোবাসে না, আর আমাদের যারা ভালোবাসে আমরা তাদের ভালোবাসি না।”
এটুকু বলে একটু থামে আবার বলে,
মিহাল: আমি তো জয় করেও পেলাম না। তুমি নাহয় পাও।
তূর মনে মনে বলে,
“কিছু পাওয়ার মধ্যেও না পাওয়া থাকে।”
এরপর বলে,
তূর: সবাইকে কিভাবে বলবে?
মিহাল: এখনো ভাবিনি।
তূর: আন্টিকে আমার কাছে পাঠাবা এর আগে আমার আব্বু-আম্মু কেও পাঠাও।
মিহাল অবাক হয়ে বলে,
মিহাল: তুমি নাহয় তোমার পরিবারকে মানাতে পারলে কিন্তু আমার পরিবার কি রাজী হবে!! আমার অলরেডি বিয়ে হয়েছে।
তূর: তোমার কি মনে হয় আমার পরিবার তোমার বিয়ের কথা জানে না?
মিহাল: জানে!!!
তূর: হুম।
মিহাল: তাহলে তারা কিভাবে রাজী হবে?
তূর: তোমার ভাবতে হবে না আমি দেখে নিবো। আমাদের রেজেস্ট্রি পেপারে কিছু শর্ত থাকবে। শরীয়ত মোতাবেক বিয়ের পর ঐ শর্ত ওয়ালা রেজিস্ট্রির পেপারে তোমার সাইন করতে হবে। চিন্তা করো না, তোমার আইনত প্রথম বিয়ের ব্যাপারে কোনো কিছু নেই।
মিহাল শর্তের কথা শুনে ভ্রু কুচকায়। এরপর বলে,
মিহাল: কি শর্ত?
তূর স্মিত হেসে বলে,
তূর:
1. আমাকে কখনো ডিভোর্স দিতে পারবে না।
2. তৃতীয়বার আমি ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না। আমি মরে গেলেও এই শর্ত বহাল থাকবে।
3. তুমি চাইলে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা তোমার প্রথম স্ত্রীর কাছে পাবলিক নাও করতে পারে কিন্তু যেখানে প্রয়োজন সেখানে আমায় স্বীকৃতি দেওয়া লাগবে।
4. বিয়ের দেনমোহর তুমি নিজে।
এইতো এগুলো ছিল শর্ত বলে একটা মিষ্টি হাসি দেয়।
শর্তগুলো শুনে মিহালের মাথা ভনভন করে ঘুরছে।
মানে একটা বাচ্চার কাছ থেকে যেন তার খেলনা কেউ কেড়ে নিতে না পারে সেই ব্যবস্থা😅।
মিহালকে বেকুবের মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে তূর বলে,
তূর: দেখো আমি জানি দুই নাম্বার শর্তটা কঠিন একটু। আমি মরে গেলে তোমার তানজিনার গা জ্বালানো কথা শুনেই থাকতে হবে আর যদি ওরে ছেড়ে দাও তো আজীবন বিপত্নীক হয়ে থাকতে হবে। ফিলিং দুঃখ ফর ইউ😅।
তূরের মুখে এসময় হাসির কথা শুনে মিহাল নিজেও হেসে দেয়। এতক্ষণ পর মিহালের মনে হচ্ছে, মেঘ কন্যার মন আকাশে কালো মেঘেরা কিছুটা হলেও সরে গেছে। কারো মুখের হাসির কারণ তো হতে পেরেছে সে!
ভাবলেশহীন ভাবে তূর বলে উঠে,
তূর: আমার জীবনের #শেষ_অধ্যায়ে_তুমি থাকবে। আর তোমার জীবনেরও শেষ অধ্যায়ে আমি থাকবো আমি মরে গেলেও। ভাবছো তো কিভাবে? শর্ত গুলার মধ্যেই আছে।
মিহাল কিছু বলে না। কেবিনের বাহিরে চলে যায় আর তূরের বাবা-মাকে ভিতরে পাঠিয়ে দেয়। একটু পর নিজের মা কেও পাঠাবে।
তূরের বাবা-মা বিবাহিত ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজী হয়না প্রথমে কিন্তু তূরের কিছু বুঝানোতে রাজী হয়। তেমনি করে মিহালের মা কেও রাজী করায় কিছু বলে। মিহালের বাবা কে মিহালের মা রাজী করায়।
( মিহালের মা ও তূরের বাবা-মা কে কিভাবে রাজী করিয়েছে তা পরে জানবেন।)
আসফির মামা উকিল তাই পেপার আসফি তাকে দিয়ে আগেই বানানোর কথা বলে রাখে। সন্ধ্যায় কাজী ও আসফির মামা উকিলকে রেজিস্ট্রি পেপার সহ নিয়ে আসে।
বিয়েতে তূরের বন্ধু-বান্ধব শুধু ইনায়া বাদে ও মিহালের ইউনিভার্সিটির দুই বেস্ট ফ্রেন্ড রিজভি ও তাইজুল আসে। তুরের দুই বোন, চাচি ও চাচাতো ছোট ভাই বাসা থেকে আসে। মিহালের বড় বোন ও বোনের জামাইকে ডাকা হয়।
মিহালের বড় বোন “কায়রা” রাজী ছিলো না। কায়রার তানজিনাকে পছন্দ না হলেও ডিভোর্স এর আগে আরেক বিয়ে দিতে রাজী না সে। বোন জামাই “রিয়াদ” সে মিহালের সাথে কথা বলার পর নিজের বউকে চুপ করায়। তারা সবাই ওয়াদা বদ্ধ যে তানজিনা ও তার পরিবার কেউ বিয়ের ব্যাপারে জানবে না যদি না মিহাল চায়।
সন্ধ্যার দিকে বিয়ে পড়ানো হয়ে যায়।
_________
এদিকে লাঞ্চের পর ডাক্তার আরিফ জুবায়ের কয়েকটা রোগী দেখে একটু ফুসরত পাওয়ার পর তানজিনাকে ডাকে।
আরিফ: মিস মেহেবিন!
তানজিনা: জ্বী স্যার।
আরিফ: প্লিজ ডোনট কল মি স্যার! ইটস ডক্টর আরিফ ফর ইউ।
ডক্টর আরিফ হেসে কথাটা বলে। তানজিনাও তার কথায় হেসে জবাব দেয়,
তানজিনা: ইয়েস, ডক্টর আরিফ বলুন?
আরিফ: তো কি অবস্থা তোমার এখন? কেমন আছো?
তানজিনা: ভালো, আমার আবার কি হবে?
আরিফ: না, দুপুরে দেখলাম তুমি কারো সাথে কিছুটা বিরক্তির সাথে কথা বলছিলে। তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
আরিফের কথা শুনে তানজিনার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। তানজিনাকে কোনো প্রতিউত্তর করতে না দেখে আরিফ আবার বলে,
আরিফ: এনিথিং রং মেহবিন?
তানজিনা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ঢুক গিলে বলে,
তানজিনা: নাথিং রং স্যার।
তানজিনার আবার স্যার বলায় ডক্টর আরিফ বাঁকা চোখে তাকায়। তানজিনা তার তাকানো দেখে বলে,
তানজিনা: সরি ডক্টর আরিফ। এটা বলে দুজনে হেসে ফেলে।
ডক্টর আরিফ এবার একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেই ফেললো তানজিনা কে,
আরিফ: মেহবিন তুমি কি সিংগেল? মানে কোনো রিলেশনে আছো?
ডক্টর আরিফের কথায় কি জবাব দিবে বুঝতে পারছে না তানজিনা। কয়েক সেকেন্ড নিজেকে ধারস্থ করে জবাব দেয়,
তানজিনা: ইটস কমপ্লিকেটেড।
এটা বলে তানজিনা আরিফের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে চলে যায় কিন্তু আরিফ সেটা বুঝে না। আরিফ তানজিনা যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে মাথা চুলকায়।
ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড————————-☆
তিনদিন পরে তূরকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। যাওয়ার আগে তূর সবার সাথে কথা বলে যায়। তার এখন বাঁচতে ইচ্ছা করছে বাকিটা যা হবার হবে। অটিতে ঢুকানোর আগে একবার পিছনে ঘুরে সবাইকে দেখে নেয়। মিহালের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে মলিন হাসি আঁকে।
পাঁচ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। নার্সদের অটির দরজা খুলে ব্যস্ততার মধ্যে যাওয়া আসা দেখছে সবাই। যতবারই অটির দরজা খুলে ততোবারই সবাই উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর অটির লাইট অফ হয় দরজা খুলে বেরিয়ে আসে সিনিয়র নিউরোসার্জন।
ডাক্টারকে অটি থেকে বের হতে দেখে সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে উঠে ডাক্টারের কাছে যায়। সবার চোখে-মুখে উৎকণ্ঠতাও ভয়ের ছাপ।
ডাক্টার মুখের মাস্ক খুলে বলে, “সরি…
চলবে,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয়নি। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। হ্যাপি রিডিং❤
চলবে,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয়নি। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। হ্যাপি রিডিং❤