শেষ অধ্যায়ে তুমি পর্ব -০৬+৭

#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৬

ডাক্টার মুখের মাস্ক খুলে বলে, “সরি, আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আপনারা তো জানতেন উনার হিমোগ্লোবিন লেভেল কম ছিলো। তারউপর উনি শারিরিক ভাবে অনেকটাই দুর্বল ছিলেন। এই অবস্থায় সার্জারি রিস্ক ছিলো আর আমরা দেরী করলে আরও রিস্ক বেশি হতো।

ডাক্টার এর কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তূরের মা-বাবা ও পরিবার। বাকিদের বিশ্বাস হচ্ছে না তূর আর নেই।

একটু পরে ডাক্টার বলে,
“আপনারা এখন প্রে করুন যাতে উনি জলদি রিকোবার করেন!”

ডাক্টারের কথায় সবাই তার দিকে তাকায়। ডাক্টার বলে,
“শী ইজ ইন স্টেজ অফ কোমা। কবে রিকোভার হবে বলতে পারছি না। ব্রেইন টিউমার সার্জারির পরে কোমাতে যায় পেশেন্ট অনেক সময়। প্রে করুন যেন জলদি রিকভার করে।

ডাক্টারের কথা শুনে তাওহিদ বলে,
তাওহিদ: আপনারে ডাক্টার কে বানাইছে বলেন তো? আপনার কপাল ভালো যে এখানে অর্ক এই মুহূর্তে নাই! তাহলে এতক্ষণ যে আপনি তূর মারা গেছে এরকম টাইপ কথাগুলা বলে আমাদের জান বের করে ফেলছিলেন আর পরে বললেন কোমাতে আছে। এই কথার পরেই অর্ক আপনার অবস্থা খারাপ করে দিতো।

ডাক্টার তাওহীদের কথা শুনে ভড়কে যায়। সে ভাবে,
ডাক্টার: আসলেই তো জীবনে কত এরকম সার্জারি করলাম কখনোই তো পেশেন্টের ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে এমনভাবে পেশেন্টের সার্জারির পরের অবস্থা বলিনি। জানিনা কেন সার্জারির দুইদিন আগে আমার মেডিকেল কলেজ জীবনের স্যার যখন আমাকে বলল এই মেয়েটার সার্জারির জন্য আমাকে লাগবে তখন আমি হসপিটালে চলে আসলাম রোগীর অবস্থা দেখার জন্য। এই মেয়েটিকে দেখেই আমার চোখ থমকে যায়। কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারলাম না যখন মেয়েটা হসপিটালে ভর্তি ছিল মেয়েটা আনম্যারেড ছিল। কিন্তু সার্জারির সময় ফরম ফিলাপের সময় ম্যারিড কেন?

এগুলা ভাবতে ভাবতে ডাক্টার চলে যায় তার স্যারের কেবিনে। কেবিনে নক করে,

স্যার: ওহ “ইফতি” আসো। জার্মানির থেকে ফিরেছো আজ এক মাস হলো কয়েকদিন পরে এখানেই জয়েন করতে। তুমি কিন্তু অনেক ভালো ভালো হাসপাতাল থেকে অফার পেয়েছিলে। এখন ফ্রি তাই ভাবলাম আমার ছাত্র যেহেতু আমার মতো নিউরোসার্জন তাই তাকে ডাকি সার্জারির জন্য। মেয়েটা কিছুটা ডিপ্রেশনে ছিল তার উপর অনেক উইক। এখন তো কোমাতে চলে গেলো।

ইফতি: অন্যান্য গ্রেড ওয়ান টিউমারের থেকে এটা একটু জটিল সার্জারি ছিল। কিন্তু স্যার আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না।
স্যার: কি ইফতি?
ইফতি: সার্জারির দুইদিন আগে যখন মেয়েটার রিপোর্ট আমি চেক করছিলাম তখন দেখেছি মেয়েটা আনম্যারেড। কিন্তু সার্জারির পর বন্ড সাইনে তখন দেখলাম মেয়েটা ম্যারিড।

ইফতির কথা শুনে স্যার একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো আর বললো,
স্যার: হুম ইফতি তুমি ঠিক বলেছো। মেয়েটার তিনদিন আগে বিয়ে হয়েছে এই হাসপাতালেই।

স্যারের কথা শুনে ইফতির খারাপ লাগে। তারপর বলে,
ইফতি: কার সাথে বিয়ে হয়েছে স্যার?
স্যার: তা জানি না কিন্তু বিয়ের সময় কেবিনের দরজা বন্ধ ছিল তাই হাসপাতালের কেউ দেখতে পারেনি। আমি ঐসময় হাসপাতালে ছিলাম না।

ইফতি স্যারের সাথে টুকটাক কথা বলে সেখান থেকে চলে যায়।

————-
এক সপ্তাহ পর তানজিনা তূরকে কোমা অবস্থায় হাসপাতালে দেখতে আসে সাথে ডাক্টার আরিফ এসেছেন। ডাক্টার আরিফ আসার কারন তার বন্ধু ডাক্টার ইফতি দুইদিন আগে জয়েন করেছে এখানে নিউরোলজিস্ট ও সার্জন হিসাবে। আর তানজিনাও যেহেতু ওর বান্ধবী কে দেখতে যাবে তাই ভাবলো একসাথেই যাওয়া যাক।

আরিফ হাসপাতালে এসে ইফতির কেবিনে চলে যায়। তানজিনা যায় তূরকে দেখতে। ওখানে ইতি, ইনায়া, রাফি ও মিহাল ছিলো। সবার সাথে দেখা করে তূরকে দেখতে যায়। তানজিনার সাথে মিহালও যায়।

আরিফ ইফতির কেবিনে যেয়ে ইফতিকে জড়িয়ে ধরে। দুই বন্ধু একসাথে সরোয়ার্দি মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করে জার্মানিতে গিয়েছিল। আরিফ ইফতির তিনমাস আগে দেশে ব্যাক করে। দুই বন্ধু কথা বলার মাধ্যে ইফতি জিজ্ঞাসা করে

ইফতি: কিরে বিয়ে-শাদী করবি না?
আরিফ: করবো তো আগে তোর ভাবিকে মানিয়ে নেই।
ইফতি: ওহো!! তাহলে কে আমার ভাবি? তুই আমাকে বললি না!
আরিফ: তোকে কি বলবো তোর ভাবিকে এখনো বলতে পারলাম না!

আরিফের কথা শুনে ইফতি অবাক হয়ে যায় আর বলে,
ইফতি: লাইক সিরিয়াসলি ব্রো!! তুই ভাবীকে এখনো বলোস নাই! জার্মানিতে যার পিছে পিছে হাসপাতালের সব মেয়ে ডাক্তার, মেয়ে মেডিকেল স্টুডেন্ট ও নার্সরা পাগল আর সে পাত্তাই দিতো না আর এখন সে একটা মেয়ের পিছে ঘুরে!! আই কান্ট বিলিভ দিস ব্রো!

ইফতির কথায় আরিফ নিঃশব্দে হাসলো।
আরিফ: আমি ওর পিছে পিছে ঘুরিনা! ও আমার জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্টার্ন।
ইফতি: ওহ! বলে দে নাহলে পাখি ফুরুত হয়ে গেলে কি করবি।
কথাটা বলার পর বিষন্নতায় ইফতির মন ভরে যায়।
আরিফ এটা খেয়াল করল ইফতিকে জিজ্ঞাসা করে,
আরিফ: কিরে, তোর আবার কি হলো? তোর মনটা খারাপ মনে হচ্ছে? ছেকা টেকা খাইছো নাকি?
এটা বলে আরিফ হাসতে থাকে।

ইফতি একটা হতাশ নিশ্বাস ছেড়ে বলে,
ইফতি: একপ্রকার ছেকাই বলা যায়। মেয়েটারে ভালো লাগছে কিন্তু মেয়েটা এখন কোমাতে আছে।

ইফতির কথা শোনে আরিফ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আরিফের তাকানো দেখে ইফতি বলে,

ইফতি: স্যার আমাকে দশ দিন আগে একটা রোগীর ডিটেইলস পাঠায়। সেই রোগীর ব্রেইন টিউমার গ্রেড ওয়ান স্টেজে আছে। স্যার চেয়েছিল মেয়েটার সার্জারি আমিও সাথে করি যেহেতু আমি আর এক সপ্তাহ পর জয়েন করতাম। হসপিটালে এসে যখন মেয়েটাকে দেখি, বিলিভ মি ‘শী লুকস লাইক অ্যান অ্যান্জেল’।

আরিফ: আরে বাহ! এতক্ষণ তুই আমাকে খোটা দিচ্ছিলি এখন তো তুই নিজেই পাগল হয়ে গেছিস! তোর পিছেও কিন্তু জার্মানিতে মেয়েরা কম ঘুরতো না। আমরা দুজন ছিলাম চকলেট বয়!!
এটা বলে কলার ঝাঁকায় আরিফ।

আরিফের কথায় হেসে ফেলে ইফতি। তারপর বলে,
ইফতি: কিন্তু আমি হাসপাতালে আসার একদিন আগেই নাকি মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে হাসপাতালের কেবিনে। আমি এই খবরটা সার্জারি করার আগে বন্ড দেখে জানতে পারি। পরে স্যারকে জিজ্ঞাসা করায় স্যার আমাকে বলল আমি আসার আগের দিন ওই মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে কেবিনে কিন্তু জানেনা কার সাথে বিয়ে হয়েছে।

আরিফ: মেয়েটার সার্জারির বন্ডটা দেখলেই তো হাজবেন্ডের নাম জানতে পারিস তুই।
ইফতি: না রে! জানতে চাই না। যা আমার না তা আমার না। এমনিতে মেয়েটা কোমাতে আছে।

আরিফ: তা নাম কি মেয়েটার?
ইফতি আরিফকে নাম বলতে যাবে তার আগেই আরিফের কাছে তানজিনার ফোন আসে। আরিফ ফোন রিসিভ করে কথা বলে। তানজিনা আরিফ হসপিটালে এখন ব্যাক করবে কিনা জানতে ফোন দিয়েছে। আরিফ হ্যাঁ বলে। এরপর ফোন রেখে আবার ইফতির কাছে যায়।

আরিফ: তো বললি নাতো মেয়েটার নাম কি?
ইফতি: আরে বাদ দেতো, নাম জেনে কি করবি? তুই আগে ভাবীর নাম বল।
আরিফ: আমি নাম জেনে কি করব না? তাহলে তুই তোর ভাবীর নাম কেন জানতে চাইছিস?

ইফতি: আমার কথা তোর কথা কি এক! আমার যাকে ভালো লেগেছে সেই মেয়েটা বিবাহিতা। তোরটা তো আর বিবাহিতা না। তাই না!

আরিফ: হার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস ইস, ‘ইটস কমপ্লিকেটেড!’
ইফতি এটা শুনে হাসতে থাকে সাথে আরিফও।
আরিফ: ওর নাম ‘মেহবিন’। তানজিনা মেহেবিন।

নাম শুনে ইফতি বলে,
ইফতি: অনেক সুন্দর নাম তো। একটু আগে কি ভাবী ফোন দিয়েছিল?
আরিফ: হ্যাঁ রে, মেহেদিন তার এক ফ্রেন্ডকে দেখতে এসেছে। তাই আমিও ভাবলাম যেহেতু একই হাসপাতালে তাই তোর সাথে দেখা করে যাই। যেতে হবে বাই।

ইফতির সাথে বিদায় নিয়ে চলে আসে। হাসপাতালের গেটে আরিফ তানজিনাকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে। তাই আরিফ ঐখানে যায়।

মিহাল তানজিলার সাথে কথা বলছে,
মিহাল: কেমন আছো তানজিনা?
তানজিনা: হুম ভালো। তুমি কেমন আছো?

তানজিনার কথা শুনে মলিন হাসে মিহাল। মুখে বলে,
মিহাল: ভালোই আছি। তা তোমার ক্যাম্পিং কেমন গেলো?
তানজিনা: ভালো। এখন আমি ডাক্তার আরিফ জুবায়েরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্টার্ন। উনার সাথে সার্জারিতে পার্টিসিপেট করতে পারবো।

এগুলো বলার সময়ই ওইখানে আরিফ এসে যায়।
আরিফ: হাই!
মিহাল: হেলো! হু আর ইউ?

আরিফ কিছু বলবে তার আগেই তানজিনা বলে,
তানজিনা: মিহাল, সে আমার সিনয়র।
তানজিনার কথা শুনে মিহাল আরিফের সাথে হাত মিলায়।
আরিফ: আপনি কি মেহবিনের ফ্রেন্ড?

মিহাল কিছু বলবে তার আগে তানজিনা বলে,
তানজিনা: হ্যাঁ, আমার ফ্রেন্ড। সেও তূরকে দেখতে এসেছে। বায় মিহাল পরে কথা হবে।

এটা বলে তানজিনা আরিফেরৱসাথে চলে যায়। মিহাল ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
#শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-৭

( নিচের লেখা গুলো পড়বেন দয়া করে)
কেটে যায় একমাস। তূর এখনো কোমাতে। ডাক্টার বলেছিলো, কোমা সাধারণত চার সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় না কিন্তু পোস্ট কোমা মাস থেকে বছর গড়িয়ে যেতে পারে।

মিহাল সপ্তাহে দুইবার তূরকে হাসপাতালে দেখতে আসে। আজ একমাস তূর নিস্তব্ধতায় শুয়ে আছে। কেবিনে আর কেউ নেই। তূরের পাশে বসে আছে মিহাল।

বিয়ের পর থেকে সার্জারির আগের কথা——-☆
“ফ্লাশব্যাক

বিয়ে পড়ানোর পরে সবাই তূরের কেবিন থেকে চলে যায়। তখন তূর মিহালকে বলে,

তূর: খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই না তখন তোমার? তানজিনার কথাগুলো তোমাকে কষ্ট দিয়েছে?

মিহাল: একটু তো কষ্ট হচ্ছিল, আমি ও কে নরমালি ভালোবেসেছি। ভেবেছিলাম তানজিনা যেহেতু “আকদ” করতে রাজী না কিন্তু করলে শুধু রেজিস্ট্রি করবে তাই মনে হয় তানজিনার মত আছে। আমি তো জানতাম না ও পরিস্থিতির চাপে পড়ে বিয়ে করেছে। আমি এটলিস্ট কাউকে ফোর্স করে বিয়ে করতে চাইনি।

মলিন হেসে তূর বলে,
তূর: আমিও তো তোমাকে ফোর্স করে বিয়ে করেছি!!
মিহাল: না তুমি আমাকে ফোর্স করনি। তুমি আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছো। তানজিনার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছো। তুমি কিছু শর্ত আমায় দিয়েছো কিন্তু ওগুলো অতটা খারাপ ছিল না।

তূর: হুম। আমার এখন ঘুম পাচ্ছে, আমি ঘুমাবো।
মিহাল: তাহলে তুমি ঘুমাও। আমি বাইরে যাই।

পরেরদিন তূরকে আরো এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়।
ডাক্টার ইফতি তূরের রিপোর্ট দেখে। নার্স বলে তূরের লম্বা চুল গুলে কাটতে হবে তাই তূরের মন খারাপ।

লিরা, ফাইজা তূরকে দেখতে আসে। তারাও তূরকে বুঝায় মন খারাপ না করতে সুস্থ হলে চুল আবার হবে। তূর বলে,
তূর: হুম, মিহাল কই?
লিরা: বারোটার দিকে আসছিলো তুই ঘুমাচ্ছিলি তাই এক ঘন্টা থেকে চলে গেছে।
তূর: ওহ। আমি আজকে চুল কাটবো না। কালকে মিহাল আসলে আমি ঘুমালেও ওরে দেখা করতে বলবি।

ফাইজা: আচ্ছা তূর তুই সুস্থ হয়ে যাবার পরে কি হবে কিছু ভেবেছিস?
লিরা: কি হবে মানে? কি বলোস তুই? তূর সুস্থ হলে আগের মতো আমাদের সাথে থাকবে। আমরা তো চার মাস পর আমেরিকা যাব মাস্টার্স করতে।

ফাইজা: আমি সেটা বলিনি! তূর যে মিহাল কে বিয়ে করলো, মিহাল কিন্তু এখনো তানজিনাকে ডিভোর্স দেয় নি!

লিরা কিছু বলবে তার আগেই তূর বলে,

তূর: এটা মিহাল এর ব্যাপার। মিহাল যদি নিজের জেদ ধরে রেখে তানজিনা সাথে থাকতে চাই তো থাকুক! আমি কিছু বলবো না আমার দেওয়া শর্তগুলো মানলেই হলো। “কিন্তু বাই চান্স যদি ওদের ডিভোর্স হয়ে যায় ওদেরকে আমি আর একসাথে কখনোই হতে দিব না এটা আমার শর্তে আছে।”
কথাটা বলে একটা রহস্যময় হাসি দেয় আর লিরা ফাইজা তূরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

সার্জারির আগের দিন তূরের দুই বেনী করা লম্বা চুল গুলো কাঁটা হয়। চুল কাঁটার আগে তূর মিহালকে বলেছে তার চুলগুলো যেনো সার্জারির পরে মরে গেলে কবরের ভিতর দেওয়া হয় আর না মারা গেলে ওগুলো তূরের কাছে সেফলি দেয়া হয়। আমি মরে গেলে তানজিনাকে জোর করে হলেও শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করে নিও। না মারা গেলেও করতে পারো।

(তূরের পরিবারের কথা গুলো অযথা প্রকাশ করি নি। সন্তান অসুস্থ থাকলে বাবা-মা যেমন করে ওদের বেলাও তাই হয়েছে)

ফ্লাশব্যাক এন্ড”
———-☆
মিহাল বলে,
মিহাল: তূর জলদি কোমা থেকে বেরিয়ে এসো না। তোমার চুলের ভার আমি নিতে পারছি না। তুমি বলেছিলে তানজিনাকে শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করতে! কিন্তু না, আমি তানজিনাকে জোর করে বিয়ে করবো না আর না ওকে জোর করে আটকে রাখবো। আর কিছুদিন দেখি, আমি কথা বলবো তানজিনার সাথে, কি চায় সে?

একটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে মিহাল আবার বলে,
মিহাল: তোমার মনে আছে তূর!! তানজিনা কি করেছিলো!! আবার বলছি তোমায়,
________
——” তানজিনা ও মিহালের ওই পদার্থবিজ্ঞানে পরীক্ষার খাতায় নাম্বার বাড়া-কমা নিয়ে যে ঝামেলা হয়েছিল সেটা একটু এক্সট্রিম লেভেলের ছিল।
তনজিনা নিজের খাতায় দুইটা প্রশ্নের উত্তরে মার্কস নেই তা দেখে স্যারের কাছে যায়। স্যার তখন যাদের নাম্বার যোগ-বিয়োগে বাড়ে কমে তাদেরটা ঠিক করছিল। মিহাল হাইয়েস্ট মার্কস পেয়েছে কিন্তু দুই নাম্বার যোগে বেশি হয়ে যাওয়ায় সে দুই নাম্বার কমাতে এসেছিল স্যারের কাছে।

তানজিনাকে স্যার অপেক্ষা করতে বলেছিল তাই তানজিনা স্যারের পাশেই দাঁড়িয়ে দেখছিল। তানজিনা সব সময় পড়ালেখা নিয়ে খুব সিরিয়াস থাকে তাই তার থেকে কেউ নাম্বার বেশি পেলে সে মনে মনে রেগে যায়।
স্যার যখন মিহালের দুই নাম্বার কমিয়ে দেয় তখন স্যার মিহালকে বলে, “তুমি খুবই সৎ মিহাল।”

স্যারের কথা শোনার পর তানজিনা ফট করে বলে উঠে,
” স্যার আপনি মিহালকে দুইনাম্বার বেশি কেন দিলেন? আর আমার দুইটা প্রশ্ন নাম্বার দিলেন না কেন?”
স্যার তো তানজিনার কথা শোনায় স্তব্ধ হয়ে যায় সাথে মিহালও।
তানজিনা আবার বলে,
” বুঝলাম স্যার মিহাল আপনার প্রিয় ছাত্র। তাই বলে আপনি দুই নাম্বার বেশি দিবেন!!”

তানজিনার কথা শুনে সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
স্যার তখন জোরপূর্বক হেসে বলে,
” না তানজিনা তুমি ভুল ভাবছো। এরকম ভুলে হয় কমবেশি অনেককেই নাম্বার দিয়ে দেই ভুলে। বয়স হয়েছে তো অত খেয়াল থাকে না। দাও দেখি তোমার কোন দুই প্রশ্নের নাম্বার বাড়ে।”

এরপর ওদের দুজনের নাম্বার সমান সমান হয়।

সেইদিন লাস্ট ক্লাস ছিল বায়োলজির। ঐদিন বায়োলজির খাতাও দেয় বায়োলজির মেম। তানজিনা বায়োলজিতে হাইয়েস্ট নাম্বার পেয়েছে কিন্তু মিহাল বায়োলজিতে অত ভালো না হওয়ায় মোটামুটি নাম্বার পেয়েছে।

কলেজ শেষে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিকেলে ম্যামের বাসায় যায় বায়োলজি পড়তে এরপর কেমিস্ট্রি পড়বে আরেকজনের কাছে। ইতি, ইনায়া, তানজিনা, তূর সহ আরো কিছু মেয়ে এবং ছেলেদের মধ্যে মিহাল, সাইফ (যে কিনা মিহালের ফিলিংস জানে তানজিনার প্রতি) সহ আরো কিছু ছেলে পড়তে যায়।

বায়োলজির ম্যাম মিহাল কে একটা প্রশ্ন করে যে, “বিপাক কি?”
মিহাল এটার উত্তর দিতে পারেনা। তখন এটার উত্তর তানজিনা দেয়,

“কোন জীবের দেহে সংঘটিত সকল রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একত্রে বিপাক বলে।”
তানজিনা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ক্রুরদৃষ্টিতে মিহালের দিকে তাকায়।

ম্যাম পড়ার রুম থেকে একটু অন্য রুমে গেলে তানজিনা বলে,
” দেখেছিস ইনু সামান্য ‘বিপাক কাকে বলে?’ এটাই পারেনা সে আবার ভালো স্টুডেন্ট!! খালি পদার্থবিজ্ঞানে ভালো নাম্বার পাইসে কে জানে স্যারের সাথে কোনো এক্সট্রা যোগাযোগ আছে কিনা!!”

তানজিনার কথায় ইনায়া, ইতি, তূর সহ সবাই অবাক। সাইফ তো মিহালকে কানে কানে বলে,
” কি ভাই কেমন মেয়েরে ভালোবাসছিস তুই! এই মেয়ের তো নিজের পড়ালেখার উপর অহংকারে ভরা।
মিহাল তখন সাইফের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। মিহালের দৃষ্টি দেখে সাইফ চুপ করে যায়।

ইনায়া বলে, “তানু, কি বলতাছিস এগুলা!! মাথা ঠিক আছে তোর? একটা প্রশ্ন নাই পাড়তে পারে ভুলে যেতেই পারে ইটস সিম্পল।

তানজিনা বলে,” যে পদার্থ বিজ্ঞানের কঠিন কঠিন সূত্র মনে রাখতে পারে সে বায়োলজির একটা বেসিক সংজ্ঞা মনে রাখতে পারে না!!”

তূর বলে, “তানজি, তোর ইচ্ছা তুই ডাক্তার হবি আর মিহালের ইচ্ছা ইঞ্জিনিয়ার হবে। তুই যেমন ম্যাথ একটু কম পারিস অন্যান্য সাব্জেক্ট এর থেকে ঠিক তেমনি মিহালও বায়োলজি একটু কম পারে। ম্যাথে তো মিহাল সেকেন্ড হাইয়েস্ট পাইছে কিন্তু তুইতো সিক্স হাইয়েস্ট পাইছিস। তখন কি মিহাল তোকে কিছু বলছে?

কথাগুলো বলে তূর মিহালের দিকে তাকায়, দেখে মিহাল শান্ত দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মিহাল অত্যাধিক রেগে গেলে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় এর প্রমাণ তূর স্কুলে একবার পেয়েছিল।

তূরের কথার রেশ ধরে ইতি সায় জানায়।
তখন তানজিনা বলে, “তূর তুই ও ইতি তোরা তো এখন মিহালের হয়ে বলবিই! তোরা একই স্কুল থেকে আসছিস না! কিন্তু ইনু, তুই কেমনে মিহালের হয়ে কথা বলিস?

ইনু বলে, ” দেখ তানু, কাউকে এভাবে বলা ঠিক না। তোরে আমি এগুলো স্কুল থেকে বলে আসতেছি।”

ঐ ঘটনার পর থেকে মিহাল আগের মতো তানজিনাকে লুকিয়ে দেখে না! যা মিহাল ক্লাসের ফাকে করতো। তানজিনার ইগনোরেন্স মিহলের মধ্যে জেদের সৃষ্টি হয়।——–
__________

মিহাল চেয়েছিলো তানজিনাকে যদি বিয়ে করতে পারে তাহলে তানজিনার অহংকার কিছুটা হলেও ধ্বংস করতে পারবে।

এগুলা বলে নিঃশ্বাস ফেলে মিহাল। তূরতো ঘুমিয়ে আছে তার কোনো হেলদোল নেই।

মিহাল ভাবে, “তানজিনা, আমাকে ভালো না লাগলে রেজিস্ট্রির বিয়েতেই বা কেন রাজি হয়েছিলে? তুমি বলেছিলে পরিস্থিতির চাপে পরে রেজিস্ট্রি করতে বাধ্য হয়েছো! কিন্তু কি?”

সব ভাবনা চিন্তা ছেড়ে মিহাল তূরের কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here