শেষ কান্না পর্ব ৯

#শেষ_কান্না
#পর্ব_৯
#লেখা_Bobita_Ray

বাবুটা মিহি শব্দে কেঁদেই চলেছে! অরুর শরীর ক্লান্ত থাকায় তন্দ্রার ভাব এসে গেছে।তন্দ্রা ভাব কেটে যাওয়ার পর বাবুর কান্নার শব্দে চোখ মেলে তাকাতেই চমকে উঠল অরু।রাকিব অরুর মাথার কাছে বাবুটাকে কোলে নিয়ে চুপটি করে বসে আছে।রাকিব মৃদু হেসে অরুকে ভরসা দিয়ে বলল,
-“ভয় পাবেন না ভাবি।আমি বাবুটার কান্নার শব্দ শুনে দেখতে এসেছি।
অরু কিছু বলল না।বিছানা ছেড়েও উঠল না!শরীর দূর্বল থাকায় শুয়েই রইল।রাকিব বাবুটার কপালে পরম মমতায় একটা চুমু খেল।ফুলমতি ঘরে এসে ভেংচি কেটে বলল,
-“ঢঙ দ্যাইখা বাঁচি না।এ্যরে রাকিব তুর কাম-কাজ নাই।এইখানে আইসা আবালের মত হা কইরা বইসা রইছা ক্যাঁ?
রাকিব চোখ রাঙিয়ে বলল,
-“মা…
ফুলমতি তাচ্ছিল্যে করে বলল,
-“একে তো পেট থেইক্কা কালা ম্যাইয়া জন্ম দিছে। এহনে আমার কাম করার ভয়তে ভাব ধইরা শুইয়া রইছে হুহ।
রাকিব অবাক হয়ে বলল,
-“মা তুমি ওকে কালো বলছ কেন?বাবুটার গায়ের রঙ যথেষ্ট ফর্সা।দেখছ মুখটা কত সাদা।
ফুলমতি চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-”আমার থেইক্কা বেশি বুঝস তুই?তুর বোন রথীও না এই ম্যাইয়ার মতো ধলা হইছিল তুর মনে নাই? পরে কি হইলো! আস্তে আস্তে হেই কাল্লায় হইয়া গেল।দুনিয়া-দারি তো আর কম দেখলাম না।এহনে জন্মের পর দেখলেই বুঝবার পারি কুন ম্যাইয়া ধলা হইবো আর কুন ম্যাইয়া কালা।আমার কথা ভালা কইরা মিলিয়ে নিস, বড় হইয়া এই ম্যাইয়া যদি কুচকুচে কালা না হয় তাইলে আমার নামও ফুলমতি না হুহ।কথাগুলো কপোট রাগে বলে গটগট করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল ফুলমতি। রাকিব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-“ভাবি মায়ের কথায় কিছু মনে করবেন না।
অরুর চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল।কাপড়ের আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে নিয়ে বলল,
-“রাকিব ভাই, রায়হান কোথায়?
রাকিব মাথা নিচু করে বলল,
-“ভাই তো সকালে গঞ্জে গেছে কিছু কাঁচামাল আনতে এখনো মনেহয়,ফিরেনি।
-“রায়হানকে কেউ খবর দেয় নাই?
-“ভাই ভুলে বাড়িতে ফোনটা ফেলে গেছে। আর এখান থেকে গঞ্জে যেতে দু’ঘণ্টার বেশি সময় লাগে।হয়ত জানে না।আপনি চিন্তা করবেন না ভাবি দুপুর তো গড়িয়ে গেল একটু পরেই এসে যাবে।
অরু মন খারাপ করে বলল,
-“ও আচ্ছা”

রায়হান বিকাল তিনটের দিকে বাড়ি ফিরল। রায়হানের কাঁচা-তরকারির ব্যবসা।শহর থেকে গ্রামে এসে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল।কোন উপায় না পেয়ে নিজের জমানো কিছু টাকা আর অরুর স্বর্ণের চেইন বিক্রি করে কিছু কাঁচা তরকারি পাইকারী দামে কিনে দরদামে বিক্রি করত।সেই ব্যবসা থেকেই সংসার চলে।এখন যদিও দোকানটা একটু বড় করেছে।আজ পাইকারী দামে কাঁচা মাল কিনতে গিয়ে একদম দেরি হয়ে গেছে আবার সেগুলো দরদামে বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে কীভাবে বেলা গড়িয়ে গেল খেয়ালই করেনি রায়হান।বাড়িতে এসে ঘামে ভেজা শার্ট খুলে রেখে গামছা দিয়ে মুখ মুছে নিল।বলল,
-“অরু কই গেলে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দিয়ে যাও?গলা শুকিয়ে গেছে কাঠ হয়ে গেছে।
বার কয়েক ডেকেও কারো কোন সারাশব্দ না পেল না রায়হান।দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল রান্না ঘরের দিকে গ্লাসে পানি ভরে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিল।তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গেল ঘরের দিকে! ঘরে ঢুকে অরুর কোলে বাচ্চা দেখে চমকে উঠল রায়হান।অপলক তাকিয়ে রইল বাবুটার দিকে।বাবুটা এলোমেলো ভাবে হাত-পা নেড়ে চেড়ে খেলছে।কখনো ঠোঁট বাকিয়ে মিহি শব্দে কাঁদছে।আহ্ কি অমায়িক দৃশ্য।রায়হানের মনে হল, এরচে মধুর দৃশ্য আর হয় না।রায়হান কিছুটা ঝুঁকে বাবুটার কপালে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিল।অরু অভিমানি কণ্ঠে বলল,
-“তোমার এখন আসার সময় হল?
রায়হান অরুর কপালেও একটা চুমু খেল।তারপর সযত্নে অরুর মাথাটা রায়হানের বুকে চেপে ধরে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
-“থ্যাংক ইউ অরু…রায়হান আর কথা বলতে পারল না। দু’চোখ জলে টলমল করছে।অরুর কপালে আবারও ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে ঘনঘন বার কয়েক নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
-“ও কখন হয়েছে?
অরু আজ অনেকদিন পর পরম তৃপ্তিতে হাসল।একটা সময় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা স্বামী নামক মানুষটার অবহেলায় মন খুলে হাসতে ভুলে গিয়েছিল অরু। আজও তার একটু আদরে সব ভুলে তাকে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।সত্যিই নারী জাতি বড়ই অদ্ভুত!!
অরু মিষ্টি করে একটু হাসল।তারপর রায়হানের বুকে মুখ লুকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-“সকালে হয়েছে।
রায়হান আনমনে বলল,
-“আমিই মনে হয় একমাত্র হতভাগা বাবা তাই না অরু?নিজের সন্তান পৃথিবির বুকে এসেছে অথচ নিজেই জানি না।
-”ওমন করে বলছ কেন?
-“তুমি খুব ভালো অরু! অন্যকেউ হলে তো আমাকে মেয়ের কাছেই ঘেঁষতে দিত না। খুব সরি জান গত রাতে তোমার কাছে যাওয়া একদম ঠিক হয়নি।
অরু কথা বলল না!অনেকদিন পরে রায়হানের বুকে মাথা রেখে খুব শান্তি লাগছে!অরু মনে প্রাণে চাচ্ছে সময়টা এখানেই থেমে থাক।রায়হানের বুকে ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিল অরু।রায়হান দুষ্টু হেসে বলল,
-”কী ব্যাপার এমনি সময় তো কাছে গেলে আমাকে সহ্যই করতে পার না। আজ হঠাৎ এত আদর?
অরু লজ্জা পেয়ে রায়হানের বুকে মৃদু কিল মেরে বলল,
-”ধেৎ,
রায়হান অরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-“আমাকে একটু ছাড়। আমার নতুন আম্মাটাকে একটু কোলে নেই!
অরু রায়হানের বুক থেকে মাথা উঠাল।অরুর কাছে সব যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। রায়হান হঠাৎ এতটা অমায়িক ব্যবহার করছে ভাবতেই একরাশ ভালোলাগায় ছুঁয়ে গেল অরুর সারা শরীর, মন।
রায়হান খুব সাবধানে বাবুটাকে কোলে তুলে নিল।বাবুটা চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে।রায়হান বাবুটার কপালে,গালে,ঠোঁটে,চোখে,মুখে,হাতে,ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিল।অরু বাপ,মেয়ের সুখময় মিলনের অমায়িক দৃশ্য দেখে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলল।
অরুর বুক এখনো চাপ ধরে আছে।ব্যাথায় টনটন করছে।পেটও প্রচুর ব্যাথা করছে।ব্যাথায় চোখ,মুখ কেমন ঝাঁপসা হয়ে আসছে।ধীরে ধীরে শুয়ে চোখ বুজল অরু।

***
বাবুটার বয়স এখন তিন মাস। মেয়েটা সত্যিই দেখতে কালো হয়েছে।প্রথম প্রথম গায়ের রঙ বোঝা না গেলেও ধীরে ধীরে চেহারায় সাথে গায়ের রঙটাও ফুটে ওঠেছে। দেখতে হয়েছে একদম রথীর মত।সেই চোখ,সেই ঠোঁট,সেই হাসি,সেই মায়াবী চেহারা।অরু তো সময় পেলেই মেয়ের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।মেয়ের গায়ের রঙ নিয়ে অবশ্য অরুর কোন মাথা ব্যাথা নেই।কিন্তু রায়হান অনেকটা বদলে গেছে।আগের মতো মেয়ের কাছে ঘেঁষে না,মেয়েকে ঠিক মত কোলে নেয় না,আদর করে না।কিন্তু মেয়েটা হয়েছে বাপ পাগলী আর কাউকে চিনুক আর না চিনুক এই ক’দিনে বাবাকে খুব ভালো করেই চিনে গেছে।রায়হানকে দেখলে রায়হানের কোলে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যায়।কিন্তু রায়হান খুব কৌশলে কাজের বাহানায় এড়িয়ে যায়।কখনো বা কোলে নিলেও চোখ,মুখ কুঁচকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়ের প্রতি বাপের অনিহা অরু বুঝে কিন্তু ভয়ে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না।শুধু আঁচলে মুখ গুঁজে নীরবে চোখের জল ফেলে। এর মাঝে একদিন অরু আর রায়হানের বিয়েটাও নতুন করে সম্পর্ণ হয়েছে।ফুলমতি তো আরেক ধাপ উপরে। মেয়েটা জন্ম নেওয়ার পর থেকে আঁধোও কখনো কোলে তুলে নিয়েছে না কী সন্দেহ।সারাক্ষণ ভ্রুঁ কুঁচকে বিড়বিড় করার তালেই থাকে।অরু খুব আশা নিয়ে একদিন বলেছিল,
-“মা মেয়েটার নাম রাখব কী?
ফুলমতি কপাল কুঁচকে বলেছিল,
-“কি আর নাম রাখবি।হইসে তো কালা!কাজলী নাম রাখগা!
অরু অনেক কষ্টে দাঁতে ঠোঁট চেপে কান্না আঁটকিয়ে বলেছিল,
-“আচ্ছা।
সেই থেকে অবুঝ, নিষ্পাপ,মেয়েটার নাম দিয়েছে কাজলী।যদিও অরু কাজু বলে ডাকে।অরুর খুব কষ্ট হয়।যখন অরু একাজ-সেকাজ করে, আর মেয়েটা বিছানায় শুয়ে শুয়ে খিদে পেটে চিৎকার করে কাঁদে।কখনো ফুলমতি ধরতে যায় না।আবার অরু কাজ ফেলে মেয়ের কান্না থামাতে গেলেও বকবক করে।আর বলে,
-“কী এক ফ্যাঁচফ্যাঁচানি জন্মাইছে দিন রাইত ভ্যাঁ ভ্যাঁ করার তালেই থাকে।আল্লাহ্ এত পোলাপাইন দেখছি এই ট্যাটনা ম্যাইয়ার মতন কাউরে দেহিনি।ম্যাইয়াডা মায়ের মতই সেয়ানা হইসে।

অরু পুরোটা সময় শাশুড়ির কথাগুলো নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে শুনে।একদিন তো রেগে গিয়ে এই ছোট্ট মেয়েটার গায়েও হাত তুলেছিল অরু।পিঠে,গালে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বলেছিল,
-“এত মানুষ মরে আমি কেন মরি না।তুই এত হার জ্বালানি হবি জানলে জন্মের সময়ই তোকে গলা টিপে মেরে ফেলতাম।মেয়েটা সেদিন সারাটা দিন চিৎকার করে কেঁদেছে।অরুও মেয়েকে বুকে আগলে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছে।মেয়ের সারা মুখে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিয়েছে বার বার বিড়বিড় করে অবুঝ মেয়েটার কাছে মাফ চেয়েছে।মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। ভয়ে অরু মেয়েটাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বলেছে,
-“আমার সোনা মা! প্লিজ স্বাভাবিক হ।আর তোকে মারব না!বকব না!ভুলেও তোর গায়ে হাত তুলব না। আমার ভুল হয়ে গেছে মা।আমাকে মাফ করে দে সোনা।
ঘণ্টাখানিক মেয়েটাকে আদর করার পর, মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার পর, মেয়েটি কি বুঝল কে জানে! কান্না থামিয়ে অরুর বুকের দুধ খুঁজতে লাগল।অরুর চোখে জল মুখে হাসি ফুটে উঠল।কারণ একটু আগে যখন মেয়েটির মুখে দুধের বোটা পুরে দিয়েছিল অরু মেয়েটি বার বার সরিয়ে দিচ্ছিল।কিছুতেই দুধ খেতে চাচ্ছিল না।অরু ভালো করেই বুঝে গেছে মেয়েটা খুব জেদী হয়েছে।

***
কাল রাকিবের বিয়ে,বাড়িতে মানুষজন আসতে শুরু করেছে।অরুর পরার মতো ভালো কোন শাড়ি নেই। ন’মাস সংসার করার পর মাত্র দুটো কম দামি তাঁতের শাড়ি কিনে দিয়েছিল রায়হান।সেই শাড়িই এতদিন পরেছে। শাড়ি দুটোও পুরান হয়ে গেছে।বাড়ির বড় বৌ একটু ভালো শাড়ি না পরলে লোকে কি বলবে।তাছাড়া বরযাত্রী যেতে হলেও ভালো একটা শাড়ি পরে একটু সেজে গুজে যাওয়া উচিৎ।একদিন কথার ছলে রায়হানকে বলেছিল অরু,
-” কাজুর বাবু, আমাকে দুটো শাড়ি কিনে দিও। বাড়িতে রাকিব ভাইয়ের বিয়ে।পুরান শাড়ি পরলে লোকে কি বলবে ?
রায়হান সিগারেট ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলেছিল,
-“তুমি অন্যভাবে ম্যানেজ করো এই মুহূর্তে আমার কাছে টাকা নেই।জানোই তো ব্যবসায় লস খাইছি।সংসারের হাল ধরায় কষ্টকর সেখানে তোমাকে নতুন শাড়ি কিনে দিব কোত্থকে?
অরু বিনিময়ে বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে।অরু মায়ের কাছে শখের বশে কাঁথা সেলাই করা শিখেছিল।ভাবতেই পারেনি বিপদের দিনে এই কাঁথা সেলাই কাজে দিবে।কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনটে কাঁথা সেলাই করেছে অরু। এবং কাঁথা তিনটে এক হাজার টাকা বিক্রি করেছে।সেই টাকা দিয়েই খুব কম দামের দুটো শাড়ি কিনেছে। এক জোড়া স্যান্ডেল কিনেছে,বাবুর জন্য চার সেট গজ মাপা কাপড়ের সুতি জামা বানিয়ে দিয়েছে।
রাকিব হলুদের অনুষ্ঠানের দিন কি মনে যেন কাজুর হাতে পাঁচশো টাকা গুঁজে দিয়েছিল। অরু সেই টাকা ভাঙেনি জমিয়ে রেখেছে ।কখন কোন কাজে লেগে যায় কে জানে!হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে শেষ রাতের দিকে সমস্ত কাজ সেরে অরু ঘুমাতে গেল।কাল বিয়ে! বাড়িতে মানুষজন গিজগিজ করছে।

খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে কাজুকে ঘুমের মধ্যেই দুধ খায়িয়ে দিল অরু।তারপর আবারও কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।একাজ-সেকাজ করে সবাইকে খেতে দিয়ে নিজেও এক ফাঁকে খেয়ে নিল।কাজুকে ঘুম থেকে ওঠিয়ে ওকে ফ্রেশ করে দিল।
বিকালে বরযাত্রী যাওয়ার জন্য সবাই রেডি হচ্ছে।অরুও হাত মুখ ধুয়ে এসে পাশের বাড়ির তাহেরের বৌ’য়ের কাছ থেকে একটা শাড়ি চেয়ে এনেছিল।সেই শাড়ি পরে,মাথার চুলগুলো একটা খোঁপা দিয়ে ভালো করে বাঁধল,চোখে একটু কাজল টানল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। ১০০টাকা দামের কেনা স্যান্ডেলটা পায়ে দিল।তারপর কাজুকে একটা সুতি জামা পরিয়ে,কপালে কাজলের টিপ দিয়ে ওকে রেডি করিয়ে দিল।অরুর শরীর থেকে ঘামের গন্ধ ভেঁসে আসছে। তাই পাউডার ছিটাল শরীরে।তারপর মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে রওনা হলো বৌ আনার উদ্দেশ্যে।রায়হান শার্ট,প্যান্ট,জুতা পরে রেডি হয়ে নিল।গাড়িতে অরুর পাশে বসল না। অন্যপাশে গিয়ে বসল।গাড়িতে উঠতেই চোখাচোখি হয়ে গেল।রায়হান এক পলক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অরুকে দেখল,মেয়েটা আর আগের মত নেই।অনেক শুকিয়ে গেছে,রাত জাগার কারণে চোখের নিচে কালি পরেছে,গলার রগ গুলো বেড়িয়ে গেছে,মুখের উজ্জ্বলতা ভাবটাও আর নেই। চেহারায় কেমন ছোঁপ ছোঁপ কালো দাগ পরে গেছে।অথচ যেদিন এই বাড়িতে বৌ হয়ে এসেছিল! সেদিন যেমন স্বাস্থ্য ছিল তেমন অমায়িক চেহারা।আজ রায়হান হারে হারে বুঝতে পারছে,সে কখনো অরুকে মন থেকে ভালোবাসেনি।সে তো প্রেমে পড়েছিল অরুর বাহ্যিক সৌন্দর্যের। অরুর গোপন সৌন্দর্য লুফে নেওয়ার জন্যই তো এতদিন ভালোবাসার এত নাটক,এক অভিনয়!যেই না অরুর সৌন্দর্যে ফাটল ধরেছে ওমনি রায়হানেরও অরুর দিক থেকে মন ওঠে গেছে।এখন আর ভালোলাগে না অরুকে।অরুর শরীরের ভাঁজে ভাঁজে মাদকতা খুঁজে পায় না।তাই তো অরুর কাছে এখন ঘেঁষতে রুচিতে বাঁধে।ইচ্ছে করে আরেকটা সুন্দরী যুবতীকে বিয়ে করে নিজের জৈবিক চাহিদা মিটাতে।যে রায়হানের শরীর,মন দুটোই চাঙ্গা করে দিবে। কথাগুলো আপন মনে ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করল রায়হান!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here