শেষ পাতার তুমি পর্ব ২৭+অন্তিম পর্ব

#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২৭

জুবায়ের পানির বোতল হাতে পাশে দাঁড়িয়ে বলল–একটা কথা বলি।

রায়ান–জি স্যার,বলুন।

জুবায়ের –বিদেশ যাওয়ার চিন্তা ছিলো নাকি কখনো?

রায়ান–ভার্সিটি লাইফের শুরুর দিকে প্লান ছিলো বাট মধ্যবিত্ত বুঝতেই পারছেন স্যার।

জুবায়ের –হুমম।

রায়ান–হঠ্যাৎ এমন প্রশ্ন স্যার?

জুবায়ের –দেখো,শান্ত কে বিদেশ যাওয়া বা কিছু করা থেকে আমরা আটকাতে পারি বাট দেশে যে ওর কতো লিঙ্ক তা আমরা জানি না।তোমরা দেশে থাকলে ও বারবার এ্যাটাক করবে।

রায়ান–বাট,বিদেশ যেতে অনেক খরচ স্যার তারওপর কাগজপত্র ও লাগবে অনেক যা আমার নাই।

জুবায়ের –সে সব আমি দেখে নিবো।তুমি শুধু বলো কোন দেশে যাবে?

রায়ান–বাট স্যার,আমার তো পাসপোর্ট ও নাই।

জুবায়ের –সব হয়ে যাবে রায়ান।আয়ানা নিয়ে দূরে পাড়ি দেও নয়তো বাঁচাতে পারবে না ওকে।

রায়ান–স্যার,আপনি যেখানে ভালো বুঝেন।আমার কোনো পরিচিতি ও নাই এসব ব্যাপারে।

জুবায়ের –আমার বোন কানাডাতে থাকে।তাহলে ওখানে সেটেল করো।এছাড়া উপায় নেই।আমি ব্যবস্হা করছি।

রায়ান শুধু কাঁধ দোলালো।

জুবায়ের কানে ফোন নিয়ে প্রস্হান করলো।

রায়ান চায়ের কাপটা ফেলে তাবুতে গিয়ে কিছু মেডিসিন সাথে নিয়ে আবারও রওনা হলো।

আয়ানা ঘরে পৌঁছে দেখলো আয়ানা মাত্র গোসল সেরে বেরিয়েছে।

ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে।

আয়ানা চুল মুছতে মুছতে –আপনি এসেছেন।

রায়ান–জ্বর ছিলো,আবার রাতে গোসলের কি দরকার ছিলো?

আয়ানা–কাল থেকে গায়ে পানি দেই নি।কেমন জানি লাগছিলো!এখন ভালো লাগছে।

রায়ান আয়ানার কাছে এসে জ্বর চেক করে বলল–মেডিসিন খাও দ্রুত,যাতে জ্বর না আসে।

আয়ানা ওষুধের পাতা থেকে ওষুধ খেয়ে নিলো দ্রুত।

ওষুধ খেয়ে ঘুরতেই রায়ান জাপটে ধরলো।

আয়ানা–এতো কষ্ট করে কি এসব করতে আসেন?

রায়ান আয়ানার কাধে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলল–হুমম।

আয়ানা হেসে রায়ানকে জড়িয়ে ধরলো।

রায়ান–একটা কথা বলার ছিলো।

আয়ানা–বলুন।

রায়ান বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারটা আয়ুকে খুলে বলল।

আয়ানা–আমি মা কে ছাড়া যাবো না।

রায়ান আয়ানা চোখে চুমু দিয়ে বলল–আমরা মা কে ছাড়া যাবো ও না।

আয়ানা–তাহলে আমরা কানাডাতে যাচ্ছি।

রায়ান–হুমম।

আয়ানা–ওকে।আমাকে দ্রুত নিয়ে যাবেন তো এখান থেকে?

রায়ান–খুব দ্রুত।

এরপর আয়ানাকে কোলে নিয়ে বিছানাতে হেলান দিয়ে বসে পরলো রায়ান।

আয়ানাকে বুকে জড়িয়ে নিলো,

কিছুক্ষণের মধ্যেই আয়ানা ঘুমিয়ে পড়লো।

রায়ান আয়ানাকে বিছানাতে শুয়িয়ে দিয়ে চলে গেলো।

তাবুতে ফিরতেই আকিফ বলল–শান্ত মেবি কাল ফিরবে এখানে,ওর কল রেকর্ড ট্রেস করে যা বুঝলাম।

জুবায়ের –রায়ান কাজ কম্পিলিট তো?

রায়ান–ইয়েস স্যার।

জুবায়ের –তাহলে এখন অপেক্ষা কাল রাতের।

রায়ান–হুমম।

আকিফ–ভাবি ঠিক আছে তো?

রায়ান–কিছুটা।

আকিফ–কাল ভাবিকে নিয়ে ঢাকা পৌছুতে পারলে একটু নিশ্চন্ত হই।

রায়ান–হু।

রায়ান আর আকিফ তাবু থেকে বেরিয়ে একটু দূরে গাছতলাতে এসে দাঁড়ালো।

দুজনে দুটো সিগারেট ধরিয়ে টানতে শুরু করলো।

রায়ান–তা তুই বিয়ে থা করছিস কবে?

আকিফ–নাতাশার বাড়িতে টুকটাক ঝামেলা আছে।মিটলেই বিয়ে।

রায়ান–বেস্ট অফ লাক।

আকিফ–আমি খুব হ্যাপি,যে তুই আবার সবটা শুরু করেছিস।

রায়ান–আয়ু মানুষটাই এমন,ও আমাকে বাধ্য করেছে ওকে ভালোবাসতে।

আকিফ–হুমম।নাবিলার মতো কেউ তোর জন্য আছে এটাই বড়।

রায়ান–আয়ু আর নাবিলা টোটালি আলাদা।আয়ু নিজের মতো,চুপচাপ কিন্তুু ওর আপন হতে পারলে তার কাছে সবচেয়ে চঞ্চল সে।আর নাবিলা সদা চঞ্চল,সবার কাছে।

আকিফ–হুমম।নতুন জায়গায় নতুন করে শুরু কর।

রায়ান– ইনশাআল্লাহ

অপরদিকে,,

শান্ত–একে একে সব কানেকশন ফেইল হয়ে যাচ্ছে।

শান্তর সহকারী –জি স্যার,আমাদের দেশের বাইরের গ্যাং গুলোর ইনফরমেশন কেউ পাবলিশ করে দিয়েছে তারা এখন কাস্টাডিতে আছে।

শান্ত–আমাদের নাম বাইচান্স মেনশন করলে ইন্টারন্যাশনালি কেস খাবো আমরা।(বেশ রেগে)

সহকারী –স্যার,আমরা ট্রাই করেও বুঝতে পারছি না।

শান্ত রেগে চেয়ারে লাথি দিয়ে বলল–ইউজলেস।এখন তো আয়ুকে নিয়ে দেশের বাইরেও যেতে পারবো না।

শান্ত বেশ রেগে গটগট করে বেরিয়ে গেলো।

রাত শেষে,একটু একটু করে ভোরের আলো ফুটেছে,চারিদিকে নিস্তব্ধ, ব্যস্ত নগরীর মানুষজন এখনো ঘুমের রাজ্য এ।

দু একটা কুকুর রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে।

ঠিক এমনই সময়, ঢাকার বিলাশবহুল ফ্লাটের একটা বেশ বড় কামরাতে বসে আছে আফজাল আর আয়ানার মা।

আয়ানার মা–আয়ু তোমার নিজের সন্তান নয় কিন্তুু আফজাল বলোতো জন্ম না দিলে কি পিতা হওয়া যায় না?পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা রক্তের সম্পর্ক ছাড়াই ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।আমার আয়ু তো জন্মের আগেই তোমার কাছে এসেছে,আহাদ কে তা সে জানেই না।তাহলে তুমি কেন পারলে না তার বাবা হয়ে উঠতে?

আফজাল মাথা নিচু করে বসে আছে।

মাথা নিচু রেখেই বলল–আমি টাকার লোভে পরে করেছি সবটা,,কিন্তুু বিশ্বাস করো গতদিন যখন শান্ত আয়ুকে মেরেছে কথাটা শুনেছি আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। আমি সহ্য করতে পারছি না।

আয়ানার মা আফসোসের হাসি দিয়ে বলল–এখন রায়ানই পারবে আমার আয়ুকে বাঁচাতে।আল্লাহ ভরসা।

আফজাল–তুমি আয়ু আর রায়ানকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাও।এদিকটা আমি সামলে নিবো।গুলশানের বাড়িতে যাও তুমি,আয়ু আর রায়ানকে ওখানে পাঠানোর ব্যবস্হা করছি।

আয়ানার মা–আবার কি ক্ষতি করবে আমার বাচ্চার??

আফজাল–আর ক্ষতি হবে না।আমার মা এর আর ক্ষতি আমি হতে দেবো না।

কথাটা বলেই আফজাল গুলশানের ফ্লাটের চাবি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

আয়ানার মা চাবিগোছা নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ সহ জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল।

আফজাল রওনা হয়েছে নন্দনবাজারের দিকে,

উদ্দেশ্য শান্তর বাগান বাড়ি।

আজ আর রায়ান আয়ুর সাথে দেখা করতে গেলো না,সারাদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলো সে আর শান্ত ও বাড়িতে আছে।

আয়ানা দরজা দিয়ে বসে আছে, শান্ত দরজা বেশ কয়েকবার নক করেছে শেষে বেশ হুমকি দিয়ে চলে গিয়েছে।

আফজালের পৌঁছাতে রাত পরে গিয়েছে, রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো, মেকানিক খুঁজে গাড়ি ঠিক করিয়ে আসতে দেরি হলো।

আফজাল এসে দাঁড়াতেই শান্তর বাগানে ধুম আওয়াজে আগুন জ্বলে উঠলো।

ঘটনা বুঝে ওঠার আগেই বাড়ির আর ৪/৫ জায়গায় একই ঘটনা ঘটে গেলো।

আফজাল ঘাবড়ে গেলো,আয়ানার কিছু হলো না তো।

ধীর পায়ে ভেতরে যেতে দেখলো রায়ান আয়ানাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে দৌড়ে কাছে যেতে নিলো,

কিন্তুু শান্তকে বন্দুক তাক করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থেমে গেলো।

শান্ত বারবার আয়ানাকে তার কাছে দিতে বলছে,রায়ানও নাকোজ করছে।

একপর্যায়ে শান্ত গুলি করতে গেলে,আফজাল দৌড়ে শান্তর হাত ধরে উল্টোদিকে মুড়ে ধরলো।

রায়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো।

আফজাল ধস্তাধস্তি করে বলল–রায়ান আয়ুকে নিয়ে যাও।।এদিকটা আমি দেখছি।

রায়ান দৌড়ে বেরিয়ে গিয়ে জুবায়ের এর গাড়িতে উঠলো।।

দরজা বন্ধ করার সময় দেখতে পেলো শান্তর গুলিতে ঝাঝড়া আফজাল মাটিতে লুটিয়ে পরছে।

রায়ান অপেক্ষা না করে চলে গেলো।

শান্তর লোকেরা তেমন কেউ নেই বলে শান্ত নিজে গাড়ি চালাচ্ছে, রায়ানদের গাড়ি ইতিমধ্যে অন্য রাস্তায় চলে গিয়েছে।

আওয়াজের দরুণ আয়ানা সেন্সলেস।

রায়ানরা গুলশান রওনা দিয়েছে অন্য রাস্তা দিয়ে,

যেখানকার ঠিকানা শান্ত জানে না।

জুবায়ের ৭ দিনের মধ্যে তাদের চলে যাওয়ার ব্যবস্হা করছে ততদিন লুকিয়ে থাকবে।

শান্ত গাড়ি নিয়ে রায়ানদের বাড়ির সামনে এসে থামলো।

বাড়ি এসে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে আবারও চলে গেলো।
#শেষ_পাতার_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২৮ (অন্তিম পর্ব)

শান্ত গাড়ি নিয়ে রায়ানদের বাড়ির সামনে এসে থামলো।

বাড়ি এসে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে আবারও চলে গেলো।

শান্ত পাগলের মতো রায়ানকে খুঁজে চলেছে।

অপরদিকে,

গুলশানের বাড়িতে,

রায়ানকে ধরে কাঁদছে তার মা।

বাড়িতে আগুন লাগার আগেই জুবায়ের এর লোকজন তাদের অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলো তারপর জুবায়ের এখানে নিয়ে এসেছে।

আয়ানার সেন্স ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে।

রায়ান রেশমিকে শান্ত করে বলল–আর কেঁদো না মা।সব ঠিক আছে।

আরও বেশ কিছু আলোচনার পর রায়ান আর আয়ানাকে রেখে বাকিরা চলে গেলো অন্য ঘরে।

রায়ান আয়ানার পাশে বসে তার কপালে হাত দিয়ে বলল–জ্বরটা নেই।

আয়ানা রায়ানের বাহু জড়িয়ে কাঁধে মাথা দিয়ে বলল–আমার জন্য আপনাদের কতো কষ্ট পেতে হলো আর এখন দেশও ছাড়তে হবে।

রায়ান–তোমার জন্য সব ছাড়তে রাজি আমি।

আয়ানা হুহু করে কেঁদে দিলো।

রায়ান আর বাঁধা দিলো না।একটু কান্না সবারই প্রয়োজন।

৭ দিন পর,

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।

এই ৭ দিন খুব ভয়ে ছিলো রায়ানরা।

আজ জুবায়ের এর সাহায্য নিয়ে বিমানবন্দরে চলে এসেছে।

শান্তকে জেলে রাখা হয়েছে তবে খুব সম্ভব কালই ছাড়া পেয়ে যাবে।

রাত ১.৩০ টার ফ্লাইটে উঠে রায়ানরা রওনা হলো তাদের গন্তব্যে।

রায়ানের কাঁধে মাথা রেখে প্লেনের জানালা দিয়ে রাতের আকাশ দেখতে ব্যস্ত আয়ানা।

রায়ান–এতো চিন্তা করো না,সব ঠিক হবে এবার থেকে।

আয়ানা মাথা তুলে মুচকি হেসে আবারও আকাশ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

দীর্ঘ ১৩ ঘন্টার জার্নি আর কাগজপত্রের কাজ শেষ করে কানাডিয়ান সময় বিকাল ৪ টায় রায়ানরা পৌঁছালো কানাডার টরেন্টো শহরে।

তাদের এয়ারপোর্ট থেকে নিতে এসেছে জুবায়ের-এর বোন।

গাড়িতে উঠেই দাদী–কি ঠান্ডা রে বাপু এহানে?টিকুম কেমনে?

রায়ান–আরে টিকে যাবা, সমস্যা নাই।

জুবায়ের এর বোন সারার বাড়িতে রায়ানরা উঠেছে আপাতত।

বেশ সুন্দর গোছানো বাড়ি, সারা আর সারার ছেলেই থাকেন এ বাড়িতে।

বেশ জার্নি করে আসায় রায়ানরা খেয়ে রেস্ট নিতে চলে যায়।

পরদিন,

সকাল বেলা জুবায়ের এর ফোনে জানতে পারে শান্ত জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে তবে ওরই কোনো লোক ওর ওপর এ্যাটাক করেছে, এখন হাসপাতালে ভর্তি।

বেশ গুরুতর অবস্থা।

কথাটা শুনে বাড়ির সবাই দীর্ঘশ্বাস নিলেও মনে মনে স্বস্তি পেলো।

আজকের সকালটা তাদের জীবনে এক নতুন জীবনের আগমনী বার্তা।

প্রায় বছরখানিক পর,,

রায়ান সারার সাহায্য নিয়ে এখন কানাডার এক স্বনামধন্য কোম্পানিতে বেশ ভালো পর্যায়ে চাকরি করছে।

আয়ানা পড়াশোনা করছে,রেশমি আর রেদোয়ান বেশ আছে,সারাদিন বিদেশী শহর ঘুরে,বাড়িতে কাজ করে সময় যায় তাদের।

দাদি এখন আগের মতো হাঁটতে পারেন না।তাই তিনি সকাল হলেই কারো সাহায্য নিয়ে বাঙালি মহিলারা যেখানে নানা হস্তশিল্পের কাজ করেন সেই ট্রেনিং সেন্টারে চলে যান।

রাতে খাবার টেবিলে,

রেদোয়ান –বাবু,তোর আর আয়ু মা র তো ৩য় বিবাহবার্ষিকী তো সামনে।গত ২ বার ঝামেলাতে কোনো উদযাপন হয়নি।এবার তো কিছু করি আমরা।

রায়ান–আমিও ভেবেছি বাবা।

দাদি–দ্যাশের কথা খুব মনে পরে রে।মরার আগে একবার যাইতে পারলি ভালো হইতো।

রেশমি–মা,এভাবে বলবেন না।আমরা যাবো দেশে।

আয়ানার মা–চিন্তা করবেন না খালা,শান্ত টার শুনেছি যাবত জীবন কারাদন্ডের ঘোষণা দিয়েছে।

রায়ান–তাও এই মুহূর্তে না যাওয়া ই ভালো কারণ শান্তর তো লোকের অভাব নেই।

দাদি–শয়তান ছেড়া।।জেবনডা তেনা তেনা কইরা দেলো।।দাদু তুই যা দেখ ওই মাইয়াডা আবার ঘরে ঘুম।

রায়ান–হুমম দাদি।

রায়ান ঘরে এসে দেখে আয়ানা মুখের ওপর বই রেখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।

রায়ান–এই মেয়ের বলে সপ্তাহবাদে পরীক্ষা, দেখো কেমনে ঘুমাচ্ছে।

রায়ান কাছে গিয়ে আয়ানার মুখ থেকে বই সরিয়ে আয়ানাকে ঠিক শুইয়ে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পরলো।

পরেরদিন,

আয়ানা দ্রুত রেডি হচ্ছে আর রায়ান সোফাতে বসে চা খাচ্ছে আর তা দেখছে।

আয়ানা ব্যস্ত সুরে–তুমি বসে আছো কেনো?অফিস যাবে তো নাকি?

রায়ান উঠে এসে আয়ানাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুজে দিলো।

আয়ানা আরও ব্যস্ত হয়ে–আজব তো! ভার্সিটি যাবো আমি ছাড়ো।তোমারও তো অফিস আছে।

রায়ান ফিসফিস কন্ঠে বলল–আজ সানডে আয়ু।

আয়ানা খানিক থমকে দাঁড়িয়ে, মুখ কাচুমাচু করে বলল–এটা রেডি হওয়ার আগে বলতে,আমি আরও খানিক ঘুমিয়ে নিতাম।

রায়ান আয়ানার কাঁধে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলল–ম্যাডামের তো আজকাল কোনোদিকে নজর নেই,,আমি বেচারা স্বামী কতক্ষণ বসে আছি তার খেয়ালই নেই।(বাচ্চাদের মতো মুখ করে)

আয়ানা ফিক করে হেসে বলল–আহারে! খুব কষ্ট তো আমার বরের।

রায়ান–অনেক! দাও এখন আদর করে আমার কষ্ট দূর করে দাও।

আয়ানা–মোটেই না।রেডি যখন হয়েছি তখন ঘুরতে নিয়ে চলো আমায়।আমি গিয়ে মা,বাবা কে রেডি হতে বলি।

বলেই রায়ানকে জোর করে ছাড়িয়ে চলে গেলো।

রায়ান ও একটু ফ্রেস হয়ে রেডি হতে চলে গেলো।

বাড়ির সবাই মিলে আজ এসেছে টরেন্টো থেকে একটু দূরে নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে।

অবাক নয়নে চেয়ে দেখছে সবাই বিশাল এই জলরাশির খেলা।

সারাদিন ঘোরাফেরার পর বাড়িতে ফিরলো সবাই।

রায়ান আর আয়ানা ফ্রেস হয়ে কফি নিয়ে তাদের বারান্দাতে বসে আছে।

আয়ানা রায়ানের কোলে বসে আছে।

আয়ানা–একটা কথা বলবো তোমায়?

রায়ান আরও একটু গভীর করে জড়িয়ে ধরে বলল–পারমিশনের কি আছে?বলো তুমি।

আয়ানা–আমি একটা বেবি চাই রায়ান।

আয়ানাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে হাতের মাঝে মুখটা নিয়ে বলল–কিন্তুু আমি যে চাই তুমি পড়াশোনা করে,নিজের পরিচয় গড়ে তোলো।এখনি বাচ্চা নিয়ে তোমাকে ঘরে আটকাতে চাই না আমি।

আয়ানা দ্রুতগতিতে মাথা নাড়িয়ে বলল–কোনো অসুবিধা হবে না।বাড়িতে মা- বাবা তো আছেই বেবিকে সামলাবে।

রায়ান–আয়ু,সবাই সামলায় কিন্তুু পরিশেষে একটা বাচ্চার কিন্তুু মা কে সবচেয়ে বেশি দরকার।পড়াশোনা করতে গেলে বাচ্চাকে অবহেলা করা হবে আবার বাচ্চা দেখতে গেলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে।আর তাছাড়া অনেক সময় আছে।

আয়ানা মনটা খারাপ করে রায়ানের বুকে মাথা দিয়ে পরে রইলো।

রায়ান বুঝেও চুপ করে রইলো।

বেশ ব্যস্ত সময় কাটিয়ে সবাই প্রায় হাপিয়ে উঠেছে।

আয়ানা পুরো হাত পা ছড়িয়ে পরে আছে বিছানাতে পরীক্ষা শেষ হয়েছে তার।

বিছানাতে শুয়ে দাদির কথাগুলো কিভাবে রায়ানের সামনে বলবে তা ভাবছে।

এরই মাঝে দরজা ঠেলে রায়ান ভেতরে এলো।

আপেল মুখে পুরে বলল–কি ব্যাপার?এভাবে শুয়ে আছো কেন?

আয়ানা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আবারও ঘুরে শুয়ে পরলো।

রায়ান–আজব তো! রাগ দেখাচ্ছো কেন?

আয়ানা একটু কড়া কন্ঠে বলল–জানো না কেন?

রায়ান এগিয়ে এসে আয়ানাকে কোলে নিয়ে বলল–জানি তো মিসেস।

আয়ানা–নামাও আমায়।

রায়ান কোনো কথা ছাড়া৷ আয়ানাকে নিয়ে গেস্টরুমের বারান্দার দিকে গেলো।

বারান্দাতে এসে আয়ানাতো পুরো থ!

বারান্দাটা বেলুন দিয়ে সাজানো।ছোট ছোটো মোমবাতি জ্বলছে।

ছোট্ট একটা কেক রাখা।

আয়ানাকে নামিয়ে রায়ান জড়িয়ে ধরে বলল–হ্যাপি এ্যানিভার্সারি আয়ু।

আয়ানাও মুচকি হেসে রায়ানকে উইশ করলো।

মুখটা ফুলিয়ে বলল–খানিক পরই ১২ টা বাজবে আর বিবাহবার্ষিকী শেষ, উনি সারাদিন পর এখন আয়োজন করেছেন।

রায়ান–তুমি তো আমার চিরদিনের সাথী।রোজই আমাদের বিবাহবার্ষিকী কারণ নিত্যদিন নতুন করে আমি তোমায় পেতে চাই।কারণ আমার ডায়েরির শেষ পাতায় শুধু তুমিই।আমার #শেষ_পাতার_তুমি

আয়ানা রায়ানকে জড়িয়ে ধরলো।

আয়ানা–আমিও তোমায় পেতে চাই সবসময়।

#সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here