বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব ১

বর্ষণের সেই রাতে- ২
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

১.

শক্ত দড়ি দিয়ে হাত বাঁধা অবস্থায় মাটিতে একদম চুপচাপ বসে আছে অনিমা । চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরা জলগুলোও শুকিয়ে গেছে। শরীরের কিছু কিছু অংশে মারের দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কালো রঙের একটা কাপড় দিয়ে মুখটাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে ওর। তবে এটার খুব একটা প্রয়োজনীয়তা নেই আপাতত, কারণ মেয়েটা এখন আর চিৎকার করছে না। তবে আশেপাশে বেঁধে রাখা মেয়েগুলো ছটফট করে যাচ্ছে, কেঁদে কেঁদে বাঁধা মুখ দিয়েও অস্ফুট স্বরে চিৎকার করে যাচ্ছে বাঁচার আকাঙ্ক্ষায়। কিন্তু সেসবই ব্যর্থ। এখানে ওদের কান্না শোনার মত কে-ই বা আছে? চৈত্র মাস হলেও বাইরে বর্ষারকালের মতই মুষলধারে বৃষ্টি পরছে। খানিক বাদে বাদে গগন কাঁপিয়ে বজ্রপাত হচ্ছে, আর আকাশ আলোকিত হচ্ছে বিদ্যুৎ এর ঝলকানিতে। একজন একজন করে মেয়ে নিয়ে যাচ্ছে মাঝখানে, আর সেই মেয়েদের দেখে আশেপাশে দাঁড়ানো ক্রেতারা তাদের নির্দিষ্ট দরদাম করছে। যে বেশি দাম বলতে পারছে তাকেই হস্তান্তর করা হচ্ছে মেয়েটাকে। কেনা-বেচার এক নিকৃষ্ট খেলা চলছে এখানে। কিছুক্ষণ পরেই অনিমার পালা এলো। মধ্যবয়সী একটা লোক ওকে টেনে মাঝে নিয়ে দাঁড় করালো। কিন্তু মেয়েটার মধ্যে তেমন কোন ভাবান্তর নেই। যেন সে বুঝেই গেছে যে কিছু বলে কোন লাভ নেই। ওকে টেনে মাঝে নিয়ে যেতেই আবার সেই দরদাম করা শুরু হয়ে গেল। কিছু লোক ললুপ দৃষ্টিতে দেখছে ওকে। কে নিয়ে যেতে পারে সেটা নিয়েই হচ্ছে অমানবিক প্রতিযোগিতা। অন্যসময় হলে হয়ত এই লোকগুলোর দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল করতেই ব্যস্ত হয়ে যেতো ও। কিন্তু এখন কিছুই করছেনা চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। বাজারের পন্যের মত তার দর ধরা হচ্ছে, এরচেয়ে জঘন্য অনুভূতি কী হতে পারে? হঠাৎ করেই ওখানে পুলিশের গাড়ির হুইসাল বেজে ওঠে চারদিকে। লোকগুলো সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। এখানে পুলিশ কীকরে এলো। পালাতে চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি কারণ পুলিশ চারদিক ঘিরে নিয়েছে অলরেডি। মেয়েটাকে যেই লোকটা ধরে রেখেছিল সে ওকে ওখানেই ছুড়ে ফেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করল কিন্তু তার আগেই পুলিশ ধরে ফেলল। মুহূর্তেই চারপাশে হৈ চৈ পরে গেল। ফায়ারিং ও হল একটু আধটু। অবশেষে পুলিশ সবাইকে ধরে ফেলতে সক্ষম হল। মেয়েগুলোর চোখে মুখে স্বস্তি ফিরে এল বাঁচার আনন্দে। কিন্তু অনিমা চোখ তুলে এখনও দেখেও নি আসলে চারপাশে কী হচ্ছে। যেন এসবে ওর কিছু যায়-আসে না।

এর মধ্যেই একটা কালো রঙের গাড়ি এসে থামল ওখানে। গাড়ি থেকে কালো টিশার্ট, ওপরে কালো জ্যাকেট আর জিন্স পরা সুঠাম দেহি একটা ছেলে বেড়িয়ে এল। সম্পূর্ণ কালো রং ফর্সা শরীরে যেন ফুটে উঠেছে। প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে তাই দ্রুতপদে ভেতরে এলো সে। আসতে আসতে বৃষ্টিতে হালকা ভিজে গেল। গায়ের জমা জলটুকু ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে আসতে এস.পি. সোহাগ এগিয়ে এলো। ছেলেটা তার দিকে না তাকিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,

” কাজ হয়ে গেছে?”

” হ্যাঁ কিন্তু তুই কীকরে জানলি যে এখানে এসব হচ্ছে?”

ছেলেটা ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো। তারপর চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে বলল,

” সবগুলো মেয়েকে বার করার ব্যবস্থা কর। আপাতত থানাতে রাখ। ওদের বাড়ির লোকেদর সাথে কথা বলে ওদের বাড়িতে পৌছানোর ব্যবস্থা কর।”

একে একে সব মেয়েকে উদ্ধার করে বেড় করে আনছে পুলিশ। কিন্তু অনিমা এখনও ওখানে, ওভাবেই বসে আছে। ছেলেটার চোখ অনিমার ওপর পরতেই ও অবাক হল। যেখানে সব মেয়েগুলো ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছটফট করছে সেখানে এই মেয়েটা এত শান্ত হয়ে বসে আছে কেন? এর কী বেড়োনোর ইচ্ছে নেই? এখানেই থাকতে চায় নাকি? কিন্তু মেয়েটার এমন ইচ্ছেই বা কেন হবে? একজন মেয়ে কনস্টেবল আসতে নিলেই ছেলেটা হাতের ইশারায় বারণ করল। তারপর নিজেই আস্তে আস্তে ওর কাছে ওর সামনে এক হাটু ভেঙ্গে বসল। সুক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অনিমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওর হাত খুলতে গেলেই অনিমা ভয় পেয়ে গুটিয়ে গেল। এখনও মাথা তুলে তাকায় নি ও। দেখেনি কে ওকে স্পর্শ করতে এসছে। ভালো চেহারার মানুষগুলোর নিকৃষ্ট রূপ দেখতে দেখতে এখন কারো মুখ দেখার কৌতূহলই শেষ হয়ে গেছে ওর। ছেলেটা নরম কন্ঠে বলল,

” ভয় পাবেন না। এখন আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদ।”

অনিমা কেঁপে উঠল। এত মধুর কন্ঠস্বর? তাও পুরুষের? উপন্যাস আর কল্পকথায় নারী কন্ঠের বহু মধুময় বর্ণণা শুনেছে ও। ভাগ্যিস তারা এই পুরুষ কন্ঠ শোনেনি। তাহলে হয়ত এই পুরুষ কন্ঠকেও লিপিবদ্ধ করে ফেলতো। কিন্তু তবুও অনিমার চোখ তুলে দেখতে ইচ্ছে করল না এই মধুর কন্ঠের অধিকারীকে। ছেলেটা অনিমার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে লেডি কনস্টেবলকে বলতেই সে এসে অনিমার হাত মুখ খুলে দিল। এরপর ওকে বাইরে নিয়ে গেল।ও পুরো নির্জীব বস্তুুর মত সেদিকেই গেল যেদিকে ওকে নিয়ে গেল।

ছেলেটা কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনিমার যাওয়ার দিকে। এরপর ওখানে কিছুক্ষণ থেকে নিজের কাজ সেড়ে নিল। জায়গাটা বাজেয়াপ্ত করে নেওয়ার পর পুলিশরা সব চলে গেল। শুধু সোহাগ আর ঐ ছেলেটা রয়ে গেল। সোহাগ বলল,

” গ্রেট জব! জানিস কতগুলো মেয়ে বেঁচে গেল। এই র‍্যাকেট টা বহুদিন যাবত ধরার চেষ্টায় ছিলাম। অবশেষে।”

ছেলেটা ফোনে কিছু একটা করছিল। সোহাগের কথা শুনে ছেলেটা বলল,

” শুধু চেষ্টা দিয়ে করলেই হয়না। সঠিক চেষ্টা করতে হয়। তুই যদি রাজস্হানে বরফ খোঁজার চেষ্টা করিস আর কাশ্মীরে উট। তাহলে দিনরাত চেষ্টা করলেও রেসাল্ট কী হবে? জিরো।”

সোহাগ হাসল ছেলেটার কথায়। ছোটবেলা থেকে চেনে একে। ছেলেটা এরকমই। এতো ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে খুব কম মানুষই পারে। যেকোন রকম পরিস্হিতিতে নিজেকে শান্ত রাখতে জানে সে। প্রতিটা কাজ খুবই বিচক্ষণতার সাথে করে । এত নিখুঁত একটা মানুষ কী করে হয় সেটাই ভাবে ও। সোহাগ বলল,

” বাড়ি যাবি এখন?”

ছেলেটা ভেজা চুলগুলো আঙুল দিয়ে নেড়ে নিয়ে বলল,

” হ্যাঁ। আমার তো আর কোন দরকার নেই আই থিংক।”

” না তা নেই, আমাকে আবার এখন থানায় যেতে হবে।”

” হ্যাঁ গিয়ে দেখ মেয়েগুলো সব ঠিকঠাক বাড়ি প‍ৌছছে কী-না।”

” আচ্ছা দেখা হবে আবার।”

সোহাগ ছেলেটার সাথে হাগ করে বিদায় দিয়ে নিজের জিপে উঠে গেল। আর ছেলেটাও নিজের গাড়িতে উঠে চলে গেল নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

বর্ষণ থামার নামই নিচ্ছে না। আর বজ্রপাতও সমান তালে হচ্ছে। নিরব রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করেই ছেলেটার মনে পরল সেই মেয়েটার কথা। মেয়েটাকে ধরতে যেতেই তার ভয়ে গুটিয়ে যাওয়া, ভেজা চুল, ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাওয়া। যদিও মেয়েটার মুখটা সেভাবে স্পষ্ট দেখতে পায়নি ও। কিন্তু যেটেকু দেখেছে মনে গেঁথে আছে। ওভাবে চুপচাপ বসে কেন ছিল মেয়েটা? হঠাৎ ওর ফোন বেজে উঠল। কানে ব্লুটুথ থাকায় আর গাড়ি থামাতে হয়নি। ফোনটা রিসিভ করে বলল,

” হ্যালো।”

” সোহাগ বলছি।”

ছেলেটার মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল। ও জানতো সোহাগ ফোন করবে। এটাই যেন হওয়ার ছিল। ও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,

” হ্যাঁ বল। কোন সমস্যা হয়েছে?”

” একটা মেয়ে কোন কিছু বলছেনা। বারবার ওকে জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু নিজের নাম, ঠিকানা কিছুই বলছে না। কী করা যায়?”

” ভালোকরে জিজ্ঞেস করেছিস?”

” হ্যাঁ। কিন্তু মেয়েটা বলছে ওর কোন বাড়ি নেই। ও কোন বাড়ি যেতে চায় না।”

ছেলেটা যেন এটা শোনারই অপেক্ষা করছিল। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” আমি আসছি।”

মুখে সেই রহস্যময় হাসি ধরে রেখেই গাড়ি ঘোরালো ছেলেটা। গন্তব্য পুলিশ স্টেশন।

_______________

অনিমা মাথা নিচু করে চুপচাপ একটা চেয়ারে বসে আছে। ভেজা অবস্থায় কেঁপে কেঁপে উঠছে ও। এখনও ও চোখ তুলে তাকিয়ে দেখেনি ওর আশেপাশের মানুষগুলো কারা। সোহাগ বেশ কয়েকবার ওকে জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু অনিমা বারবার একটাই কথা বলছে ‘ ও কোথাও যেতে চায় না। ওর কোন বাড়ি নেই। ও যাবেনা কোথাও’। সোহাগও এখন বিরক্ত হয়ে বসে আছে। আর অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর কালো পোশাক পরা সেই ছেলেটা ভেতরে এল। ওকে দেখে সোহাগ দাঁড়িয়ে গেল। এসে আসেপাশে না তাকিয়ে সোহাগের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কোন মেয়েটা?”

সোহাগ চোখের ইশারায় দেখাল। ছেলেটা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। এরপর চেয়ার টেনে ওর সামনে বসে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে জিজ্ঞেস করল,

” কী নাম আপনার?”

অনিমা এই নিয়ে তিনবার নিজের নাম বলেছে এদের। তাই এখন আর বলার ইচ্ছা ছিলনা ওর। তবুও আবার সেই কন্ঠ শুনে উত্তর দিতে ইচ্ছে করল। তাই ভাঙা কন্ঠে বলল,

” অনিমা।”

ছেলেটার মুখে হাসি ফুটল। চোখে মুখে মারাত্মক স্বস্তি। নিজের উত্তেজনা কে অনেক কষ্টে দমিয়ে বলল,

” আপনি বাড়ি ফিরতে চান না? আপনার বাবা-মার কাছে যেতে চান না?”

অনিমা ভাঙা কন্ঠেই বলল,

” বাবা-মা নেই।”

এটা শুনে সোহাগ চমকে উঠল, খানিকটা দুঃখ ও পেল। কিন্তু অদ্ভুতভাবে ছেলেটা এই কথাটা শুনে আরও স্বস্তি পেল। তারপর অনিমার দিকে আরেকটু ঝুকে বলল,

” তাহলে এখন কোথায় যাবন আপনি? কোথায় যেতে চান?”

অনিমা চুপ করে রইল। উত্তর নেই, নাকি উত্তর দেওয়ার ইচ্ছে নেই সেটা কেউ জানেনা। ছেলেটা থুতনিতে হাত রেখে অপেক্ষা করছে ওর উত্তরের। অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও কোন উত্তর না পেয়ে বলল,

” বলুন? কোথায় যেতে চান?”

কথাটা বলতে বলতেই অনিমা ঢলে পরল। ছেলেটা দ্রুত উঠে ধরে ফেলল। নিজের সাথে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রেখে লম্বা একটা শ্বাস ফেলল ছেলেটা। এরপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে কোলে তুলে নিল অনিমাকে। ওকে নিয়ে যেতে নিলেই সোহাগ বলল,

” এখনই নিয়ে যাচ্ছিস?”

ছেলেটা থেমে গিয়ে বলল,

” এরকমই তো কথা ছিল?”

” কিন্তু.. ”

” পরে কথা বলছি এ বিষয়ে এখন আসি।”

বলে অনিমাকে নিয়ে চলে ছেলেটা। সোহাগ সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে মনোযোগ দিল।

______________

সোফায় বসে বিছানায় শুয়ে থাকা অনিমার ঘুমন্ত মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই ছেলে। বৃষ্টি নেই এখন, মাঝেমাঝে টপটপ আওয়াজ আসছে শুধু। তবে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। অনিমাকে ওর বাংলোতে এনে সার্ভেন্ট দিয়ে ভেজা পোশাকটা বদলে দিয়ে ওর একটা শার্ট পরিয়ে দিয়ে গেছে। ও নিজেও চেঞ্জ করে নিয়েছে সেই ফাঁকে। রুমটা আবছা অন্ধকার। তবে সেই আবছা অন্ধকারেই মোমের হালকা আলোয় অনিমার মুখটা দেখে চলেছে ও। এভাবেই দেখতে ওর বেশি ভালো লাগছে। দরজায় নক পরতেই উঠে গিয়ে দরজা খুলল। একটা মেয়ে ওর দিকে কফির মগ এগিয়ে দিল। ও সেটা নিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে অনিমার দিকে একপলক তাকিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল। রেলিং ভর দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট শ্বাস ফেলল। কী থেকে কী হয়ে গেল? কী করতে গিয়েছিল আর কী করে এল? মেয়েটাকে নিয়ে তো এল, এবার? যা হওয়ার হয়েছে। পরেরটা পরে দেখে নেবে। এসব ভাবতে ভাবতে আবারও ঝপাঝপ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আর ছেলেটা সেই বৃষ্টি দেখতে দেখতে কফির মগে চুমুক দিল।

জ্ঞান ফিরতেই আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো অনিমা। মাথাটাও ভার হয়ে আছে। ভালোকরে তাকিয়ে নিজেকে আবছা অন্ধকার একটা ঘরে আবিষ্কার করে চমকে উঠল। একটু আগের কথা মনে পরতেই তাড়হুড়ো করে উঠে বসল। এটা কোথায় ও? আবার কোথায় এনে ফেলল নিয়তি ওকে? শরীর ভীষণ দুর্বল লাগছে, তবুও আস্তে করে নেমে উঠে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলোনা। বাইরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। রুমে কয়েকটা লাল মোমবাতি জ্বলছে। অনিমা অবাক হয়ে পা টেনে ধীরে ধীরে হাটতে হাটতে চারপাশটা দেখছে। রুমটা খুব বড় আর পুরোপুরি স্পষ্ট দেখা না গেলেও মনে হচ্ছে খুব শৌখিন মানুষের ঘর। ব্যালকনিতে চোখ পরতেই একটু এগিয়ে রেলিং ধরে এক সুঠাম দেহের মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হল। লোকটা বাইরে দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে আর ধোঁয়া ওঠা একটা মগে চুমুক দিচ্ছে। আবছা অন্ধকারে অবয়ব রূপে এটুকুই দেখা যাচ্ছে। অনিমা ভেতরটা কেঁপে উঠল। কে এই লোকটা? ওকে কোথায় নিয়ে আসা হয়েছে? খারাপ কোন লোকের হাতে পরেনি তো? জগতে ভালো লোক আছে? এসব ভেবে কাঁপা পায়ে একটু পিছিয়ে যেতেই টি-টেবিলে ধাক্কা খেল ও। সেই আওয়াজে ছেলেটা পেছন ঘুরে তাকালো। অনিমা উঠে পরেছে দেখে ভেতরে এগিয়ে গেল। অনিমা দেখল লোকটা এগিয়ে আসছে।লোকটা যত ভেতরে যাচ্ছে অনিমার ভয় তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ও যাকে ভাবছে এটা যদি সে হয় তাহলে ও কী করবে? কোথায় পালাবে? কীকরে পালাবে? আর যাবেই বা কোথায়?

ছেলেটা এগিয়ে এসে অনিমার সামনে দাঁড়ালো। অন্ধকার ঘর, বাইরে বৃষ্টি আর বাতাসের শো শো আওয়াজ হচ্ছে, বেলকনি দিয়ে সেই বাতাস এসে ঘরের ভেতরের সব পর্দা নড়ছে, মোমবাতির আগুনের শিখা কেঁপেকেঁপে উঠছে। আনিমা ভয়ে কিছু বলতে পারছেনা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই ঠান্ডা পরিবেশেও ঘাম বেড়োচ্ছে ওর। নিশ্বাস আটকে আসতে চাইছে। ছেলেটা একটা মোমবাতি নিয়ে অনিমা আর নিজের মাঝ বরাবর রাখতেই মোমের আলোয় ছেলেটার মুখ পরিষ্কার হয়ে গেল। অনিমা চমকে উঠল। না সে ভেবেছিল তা নয়, যাকে ভেবে সে ভয় পাচ্ছিল এ সে নয়। কিন্তু যাকে দেখলো তাকেও দেখবে বলে আশা করেনি অনিমা। অনিমা অবাক হয়ে নিচু স্বরে বলল,

— ” আপনি?”

ছেলেটা অতি সহজভাবে মুখে সেই সুন্দর সৌজন্যতার হাসি ফুটিয়ে বলল,

— ” আমি আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের। সবাই রকস্টার এডি বলেই চেনে।”

অনিমা ভাষা হারিয়ে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। বলেনা অতিরিক্ত অবাক হলে মানুষ স্তব্ধ হয়ে যায়। অনিমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। যার গান শুনে ওর সকাল কাটত আর রাতে ঘুমাতে যেত, সেই দি গ্রেট রকস্টার আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের ওরফে এডির বাড়িতে তারই সামনে দাঁড়িয়ে আছে ও? এটাকি কল্পনা? স্বপ্ন? নাকি হ্যালুসিনেশন? কী হচ্ছে ওর সাথে? কার কাছ থেকে কার কাছে যাচ্ছে ও। কে নিচ্ছে, কে ছাড়ছে, কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ও। সবকিছু এত জটিল কেন। এসব ভেবে আবার ঘুরে উঠল ওর মাথা, দাঁড়িয়ে থাকা আর সম্ভব হল না, ঢলে পরল আদ্রিয়ানের বুকে।

#চলবে…

( সিজন ১ এর সাথে এটার কোন মিল নেই। যারা ১ পড়েন নি তারাও এই সিজন পড়তে পারবেন। এটা দেওয়ার জন্যে সকলে আমার অতিষ্ঠ করে দিচ্ছিল। মানে দিতেই হবে এই টাইপ। পরে দেব ভাবলে আর দেওয়া হবে কী-না জানিনা। আর যখন বলে ফেলেছি দেব, তাই না দিয়ে যাওয়াটা ঠিক হত না। তাই দিলাম। “জল-ফড়িঙের খোঁজে” কাল দিনে দেব। এবার যারা যারা চকলেট, আইসক্রিম আরও কীসবের লোভ দেখিয়েছিলা, নিজ দায়িত্বে পার্সেল করে দিও। হ্যাপি রিডিং 😑)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here