#শেষ_বিকেলের_আলো(ভ্যাম্পায়ার)
#পর্ব_২
#লেখক_দিগন্ত
বৈশাখী দেখে তার সামনে দাড়িয়ে আছে রেইন। তার উন্মুক্ত বুকে নজর পড়তেই বৈশাখী চোখ ঘুরিয়ে নেয়। রেইনের পড়নে শুধু একটা তোয়ালে। রেইন ধীরে ধীরে এগিয়ে আশে বৈশাখীর দেখে। বৈশাখী চিৎকার করে বলে,
-“একদম আমার কাছে আসবে না। আমার রক্ত আমি তোমায় খেতে দেবোনা।”
বৈশাখীর কথা শুনে রেইন তার বড় সাটা দাঁত দুটো বের করে। বৈশাখী ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। রেইনের খুব মজা লাগে বৈশাখীর অবস্থা দেখে। রেইন এসে বৈশাখীর গলা টি*পে ধরে। বৈশাখী ভাবছিল আজই বোধহয় এই পৃথিবীতে তার শেষ দিন।
তখনই বাইরের নজর যায় জানালার দিকে। বিকেল হয়ে গেছে। এখন শেষ বিকেলের আলো ফুটে এলেই হয়তো রেইন আরাভের শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে।
বৈশাখীর ভাবনার মধ্যেই রেইন তার গলা ছেড়ে দেয়। বৈশাখী হাফ ছেড়ে বাঁচে। দ্রুত নিঃশ্বাস নিতে থাকে। রেইন হঠাৎ বলে ওঠে,
-“বৈশাখী তুমি এখানে কি করছ?”
বৈশাখী বুঝতে পারে আরাভ তার নিজের শরীরে ফিরে এসেছে। বৈশাখী বলে,
-“আরাভ এই রেইন কে? ওই কি আমার শুভর হ*ত্যাকারী?”
-“রেইন, আস্ত শয়*তান ও একটা। আমি যদি আগে জানতাম এই পরিণতি হবে তাহলে কখনো ভ্যাম্পায়ার দের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতাম না। এখন ঐ শয়*তানটা আমার শরীর দখল করে আছে।”
-“তোমার নিজের শরীরে ফিরে আসার কি কোন উপায় নেই আরাভ?”
-“আছে। কিন্তু উপায়টা আমি জানি না। হয়তো রেইন জানে। তোমায় যে করেই হোক ওর কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।”
-“আমি কিভাবে জেনে নেব? ওর সামনে গেলে আমার ভয় করে। না জানি আমার কোন ক্ষতি করে দেয়।”
-“তুমি একদম ভয় পাবে না বৈশাখী। সাহসী হয়ে উঠতে হবে তোমায়। রেইনের মতো পিশাচদের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে হবে আমাদের।”
-“আমি কি করব?”
-“শোন আমার কথাটা মনযোগ দিয়ে। তুমি আলিসার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে পারো। ও আমার মতো ভ্যাম্পায়ার বিষয়ে ইন্টারেস্টেড। অনেক কিছু জানে ও। আর হ্যাঁ, আলিসা ছাড়া কাউকে এই ব্যাপারে বলবে না। এই রেইনের থেকেও সাবধানে থাকবে। সূর্যের তেজ কমে আসছে, আমার যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।”
বৈশাখী খুব মন দিয়ে কথাগুলো শোনে। ভয়ে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় কিন্তু সে যথাসম্ভব নিজেকে সাহস যোগানোর করার চেষ্টা করে।
আরাভের চোখগুলো আবার লাল হয়ে যায়। বৈশাখী বুঝতে পারে রেইন ফিরে এসেছে। রেইন বৈশাখীর দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-“আরাভের সাথে আমাকে কিভাবে ধ্বংস করা যায় সেই নিয়ে কথা বলছিলে নিশ্চয়ই? তাহলে শুনে রাখো এটা এত সহজ হবে না। আমি রেইন দা কিং অফ ভ্যাম্পায়ার। আমাকে শে*ষ করা এত সহজ নয়।”
কথাগুলো বলে মুহুর্তে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় রেইন। বৈশাখী পুরো ঘরটা ভালো ভাবে খুঁজে দেখে রেইন কোথাও লুকিয়ে আছে নাকি। সারা ঘর খুঁজে না পেয়ে নিশ্চিত হয়।
অন্যদিকে
রেইন বাদুড়ের রূপে বৈশাখীর রুমেই লুকিয়ে ছিল। সে মনে মনে বলে,
-“দিনরাত ২৪ ঘন্টা তোমাকে আমি নিজের নজরে রাখব বৈশাখী। দেখি তুমি আমার নজর এড়িয়ে কি কি করতে পারো।”
_____________
রাতের ডিনার করতে ডাইনিং টেবিলে আসে বৈশাখী। নিজের চোখের সামনে রেইনকে স্বাভাবিক ভাবে খেতে দেখে অবাক হয়। বৈশাখী বিড়বিড় করে বলে,
-“ভ্যাম্পায়াররা তো মানুষের খাবার খায়না শুনেছিলাম। তাহলে এ কিভাবে খাচ্ছে। অবশ্য গল্প আর বাস্তবে অনেক অমিল।”
শাবানা খাতুন এক বাটি স্যুপ এনে বলেন,
-“এই নে আরাভ তোর প্রিয় গার্লিক স্যুপ।”
বৈশাখী এবার প্রচণ্ড অবাক হয়৷ রসুন তো ভ্যাম্পায়াররা একেবারে সহ্য করতে পারে না। ছোটবেলা থেকে তো সেটাই দেখে এসেছে বিভিন্ন সিনেমায়। আর এই ভ্যাম্পায়ার কিং রেইনের প্রিয় খাবার কিনা গার্লিক স্যুপ!
বৈশাখীকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রেইন তার কানে ফিসফিস করে বলে,
-“এখনই অবাক হয়ো না জানেমন। আমার সম্পর্কে সামনে আরো অনেক কিছু জানতে পারবে। এখনই যদি এত অবাক হও তাহলে সামনে কি করবে?”
বৈশাখী প্রচণ্ড রেগে যায় রেইনের কথা শুনে। হাত মুখ শক্ত করে বলে,
-“আমাকে একদম জানেমন বলবে না।”
-“ভুলে যেওনা তুমি আমার বিয়ে করা বউ। তাই আমার কথামতোই তোমাকে চলতে হবে জানেমন।”
বৈশাখী রেগে খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে যায়। শাবানা খাতুন বলেন,
-“মেয়েটাকে এভাবে না বললেও পারতি তুই।”
এসব দেখে একজনের গা হাত পা জ্ব*লে যাচ্ছিল। সে হলো আলিসা। বৈশাখীকে এমনিতেই তার পছন্দ নয়। তার উপর তার এমন ব্যবহারে আলিসার রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছিল।
_________
বৈশাখী আরাভের কথামতো রাত্রিবেলা সন্তপর্ণে বেরিয়ে আসে। তার উদ্দ্যেশ্য আলিসার সাথে কথা বলা। আলিসার রুমের বাইরে আসলে দেখতে পায় এখনো লাইট জ*লছে। ভেতর থেকে আলিসার পড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েটা বরাবরই বইপোকা। সারাদিন বই পড়ে কা*টায়।
বৈশাখী রুমের সামনে এসে দরজা নক করে বলে,
-“ভেতরে আসবো?”
অপছন্দের স্বরটি কানে আসতেই আলিসা পড়া থামিয়ে দেয়। বৈশাখীকে দেখে বিরক্তির দৃষ্টিতে বলে,
-“কি চাই তোমার?”
-“আগে ভেতরে তো আসতে দাও। তারপর সব বলব।”
-“ঠিক আছে এসো। যা বলার তাড়াতাড়ি বলে চলে যাও।”
বৈশাখী ভেতরে আসে। আলিসার রুমটা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,
-“তোমার রুমে বই থাকবে সেটা জানতাম কিন্তু তাই বলে এত ভ্যাম্পায়ারের কস্টিউম,মাক্স,ভ্যাম্পায়ার রিলেটেড বই! এসব আশা করিনি মোটেও।”
-“বেশি প্যাচাল না করে কি বলতে এসেছ সেটা বলে চলে যাও 😒”
-“আমি এখন যেটা বলতে চলেছি সেটা বোধহয় তোমার বিশ্বাস হবে না। না হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু যা বলব তা শতভাগ সত্য।”
-“বলো কি বলতে চাও।”
-“আরাভ একজন ভ্যাম্পায়ার।”
-“কি? এসব কি বলছ তুমি। ফালতু কথা। যাও বেরিয়ে যাও এক্ষুনি।”
-“আগে আমার পুরো কথাটা তো শোন। তারপর সব বুঝবে।”
বৈশাখী আলিসাকে সবকিছু খুলে বলে। সব শুনে আলিসার কোন ভাবান্তর নেই। সে বলে,
-“তুমি যে সত্য বলছ তার কি প্রমাণ? আর তাছাড়া আমি ভ্যাম্পায়ারের সম্পর্কে যতদূর জানি তারা কখনো কোন মানুষের শরীরে এভাবে থাকে না। এখানে আষাঢ়ে গল্প বাদ দিয়ে ঘুমাও গিয়ে। নিশ্চয়ই নেশা করেছ।”
-“তুমি বিশ্বাস করো আমার কথা। আচ্ছা বেশ এসো আমার সাথে। আমি প্রমাণ করে দেব আমি সত্য বলছি।”
আলিসাকে টেনে নিয়ে আসে বৈশাখী। তাকে আরাভের রুমের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে রুমের ভেতরে যায়। আলিসা বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে ভিতরে কি হয়।
বৈশাখী রেইনের সামনে গিয়ে বলে,
-“ভ্যাম্পায়ারের বা*চ্চা তোকে শে*ষ করার উপায় আমি জেনে গেছি।”
রেইন ফিরে তাকায়। বৈশাখীর দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হেসে বলে,
-“তোমার মতো একটা সাধারণ মেয়ে ভ্যাম্পায়ার কিং রেইনের কি ক্ষতি করবে? তুমি তো বাচ্চা আমার কাছে।”
বৈশাখী রেইনকে সজোরে একটা থা*প্পড় মা*রে। রেইন প্রচণ্ড রেগে যায়। রাগে তার চোখ লাল হয়ে যায়। একজন সাধারণ মেয়ে তাকে থা*প্পড় মে*রেছে এটা কিছুতেই মানতে পারছে না। বৈশাখীকে তুলে জোরে আছা*ড় মা*রে। বৈশাখীর মাথা মেঝেতে লেগে ফে*টে রক্ত পড়তে থাকে।
রেইন হাসছে। বাইরে থেকে এই বিভৎস দৃশ্য দেখে আলিসা। ভয় পেয়ে তখনই সেখান থেকে পালিয়ে যায়। বৈশাখী রেইনকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
-“এই কাপুরুষ ভ্যাম্পায়ার একটা সাধারণ মেয়ের উপর হাত তুলতে লজ্জা করল না। পুরুষত্বহীনদের আবার লজ্জা। আয় এসে আমার রক্তগুলো চে*টে খা। এই কাজটাই তো তোরা ভালো করতে পারিস।”
রেইন এগিয়ে আসে। বৈশাখীকে টেনে হিচড়ে বিছানাতে তোলে। তারপর বলে,
-“কি বললি আমি পুরুষত্বহীন। এবার তোকে বুঝিয়ে দেব আমার পুরুষত্ব আছে কি নেই।”
বলেই বৈশাখীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে রেইন। বৈশাখী ব্যাথায় চিৎকার করতে চাইলে তার মুখ চেপে ধরে। বৈশাখী রেইনের সাথে পেরে উঠছিল না।
রেইন বৈশাখীর কানে ফিসফিস করে বলে,
-“আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করো না জানেমন। আমি যদি একবার খারাপ হয়ে যাই তাহলে সেটা তোমার জন্য মোটেও ভালো হবে না।”
(চলবে)