সতীনের ঘর
সিজন ২
পর্ব ৩ + শেষ পর্ব।
একদিন সাজ্জাতের মা আর সাজ্জাত ভিডিও কলে কথা বলছিলো।আমিও সেখানে ছিলাম।সাজ্জাতের মা সাজ্জাত কে বার বার শুধু বিয়ের জন্য অনুরোধ করছিলো
– বাবা দয়া করে এবার একটা বিয়ে কর।আমি মরার আগে আমার নাতি নাতনির মুখ দেখে মরতে চাই।
– তাহলে এ জীবনে তোমার আর মরা হবেনা।
– মানে?
– মানে বিয়েই করবোনা, নাতি নাতনী আসবে কোথা থেকে?
– বাবা আমি কি তোর কাছে খুব বেশি কিছু চেয়ে ফেলেছি?
সাজ্জাত চুপ করে রইলো।আমি সাজ্জাতের পাশেই কাজ করছিলাম,আমাকে দেখে আন্টি সাজ্জাত কে বললো
– তোর সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই,সুফিয়া কে দেখা যাচ্ছে ওর কাছে ফোনটা দে।
তারপর সাজ্জাত আমার কাছে ফোনটা দিয়ে,কাজে মন দিলো।আমি আন্টির সাথে কথা বলতে লাগলাম।সালাম দিয়ে কথা শুরু করলাম
– কেমন আছেন আন্টি?
– কেমন আর থাকি বলো,ছেলেটা দেখোনা আমার কোনো কথাই শুনেনা।কত বলছি একটা বিয়ে করে সংসারী হতে, কিন্তূ কে শোনে কার কথা!তুমি একটু বুঝাতে পারোনা সাজ্জাত কে,তুমি তো ওর খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড,তোমার কথা নিশ্চয় ও রাখবে।
– আমিও তো সাজ্জাত কে বলি বিয়ের কথা।
– মা আমার একটা কাজ করে দিবে?
– কি কাজ?
– তুমি তো ওর খুব কাছের বান্ধবী,আমার যত টুকু মনে হয় ও তোমার কাছে অনেক কিছু শেয়ার করে,তুমি কি বলতে পারবে ওর বিয়ে না করার কারণ টা?
– আমি চমকে গিয়ে বললাম,সঠিক বলতে পারছিনা আন্টি।
– সাজ্জাত কি এই ব্যাপারে কখনো তোমাকে কিছু বলেনি?
– আমি চুপ করে রইলাম।
– জানো,সাজ্জাত একদিন বলেছিলো, সে নাকি একটা বিবাহিত মেয়ে কে পছন্দ করে,আর মেয়েটা নাকি ওর বয়সেও বড়।সেদিন এ কথা শুনে ওর সাথে খুব রাগারাগি করেছিলাম কিন্তূ এখন মনে হচ্ছে,আমি ভুল করেছি। মেয়েটা বিবাহিত হলেও আমার কোনো সমস্যা নাই,আমার ছেলের জন্য বৌ দরকার।আমার ছেলের যদি ভালো হয় তাহলে আমারও ভালো।
তুমি কি আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবে?
– জী বলুন আন্টি,আমি চেষ্টা করবো।
– তুমি একটু খোজ নিয়ে দেখবে,মেয়েটা কে?
– আমি আর কোনো কথা বলার সাহস পেলাম না।আমি তো ভালো করেই জানি মেয়েটা কে।
কিন্তুু বার বার সাজ্জাত কে বুঝিয়েও কোনো কাজ হলো না।ও বিয়ে করবেনা এটাই ওর শেষ কথা।আর যদি বিয়ে করে তাহলে আমাকেই করবে।
সাজ্জাতের মা ও আস্তে আস্তে ছেলের বউ দেখার ইচ্ছা মাটি চাপা দিতে লাগলো।আমিও ও কে বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছি,তাই আর কিছুই বলিনা এখন।কি আর বলবো,বিয়ের করতে বললেই বলে
– তুমি রাজি থাকলে এখনই করবো। আমিও আর রাজি হইনা,সাজ্জাতের বিয়েও আর হয় না।
এভাবেই কেটে গেলো বিশ টা বছর।
বিশ বছর পর…
দুবাইতে সেটেল হওয়ার প্ল্যান ছিলো, কিন্তূ ভিসা পাসপোর্ট এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তা আর সম্ভব হলো না।আর কোম্পানির নিয়ম হলো বিশ বছর জব করার পর সেখানে আর জব করতে পারবে না।নতুন প্রজন্মকে ও তো চাকরি করার সুযোগ দিতে হবে।তাই এখন বাধ্য হয়েই দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে।
দেশে ফিরে আসার আগে সাজ্জাত কে বললাম
– অনেক তো ব্যাচেলর জীবন কাটালে এখন দেশে গিয়ে বিয়ে করে সংসারী হও।
– সংসার জীবন টা আমার কপালে নাই।
– কপালে নাই নাকি তুমিই সেটাকে জোর করে দূরে ঠেলে দিচ্ছো?
– সুফিয়া অনেক তো হলো,চলো না এবার আমরা বিয়ে করে ফেলি।
– বিয়ে! এই বয়সে?
– সমস্যা কি?
– হাহাহা,আমি এখন ঊনপঞ্চাশ এ পা রেখেছি।
– আমিও তো চৌচল্লিশ এ পা রেখেছি।
– তবুও তুমি এখনও যুবক।
– তুমিও আমার কাছে যুবতী।
– সাজ্জাত তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাসো এটা আমি জানি।
– এতদিনে জানলে?
– যদি সত্যি ভালোবেসে থাকো একটা কথা রাখবে?
– বলো।
– না আগে প্রমিজ করো।
– আচ্ছা করলাম।
– তুমি এবার একটা বিয়ে করে ফেলো।
– সরি আমি এই প্রমিজ টা রাখতে পারলাম না।
– তাহলে পারলে আমাকে ভুলে যেও।
– সেটাও আর পারলাম না।তবে কথা দিচ্ছি তুমি না চাইলে তোমাকে আর জ্বালাবো না। সাজ্জাতের কথা শুনে,অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।কি বলবো ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না।তাই আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসলাম ওখান থেকে।
এইতো আজকেই এক সাথে দেশে ফিরলাম দুজন। সাজ্জাত চলে গেছে ওর গ্রামের বাড়িতে,আর আমি এখানে আসলাম।অনেকেই ভাবছেন আমি কেনো ফিরে এলাম এই অভিশপ্ত জিবনে।সব অপমান ভুলে নিজের আত্মসম্মান কে মাটিচাপা দিয়ে এখানে ফিরে আসার কি কোনো দরকার ছিলো?
আমি বলবো দরকার আছে।জিবনে তো কষ্ট কম করিনি,টাকাও ইনকাম করেছি অনেক।এ গুলো দিয়ে কি আর জীবনের সব হয়?জিবনে বেচে থাকতে হলে মনের শান্তির প্রয়োজন,আর আমি সেই শান্তির খোজেই এখানে এসেছি।
আমি হাতে কিছু কাগজ পত্র নিয়ে বিজয়ের ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিড়ি বেয়ে উপরে গেলাম।ঘরের ভেতরে পা রাখতে গিয়েও পিছিয়ে গেলাম। ঘরটার ভেতরে যেতে একটা অস্বস্তি হচ্ছে।দরজার সামনে গিয়ে ভাবছিলাম ঘরে ঢুকবো কি ঢুকবো না।বিজয় আমাকে দেখে বললো
– বাইরে দাড়িয়ে আছো কেনো,ঘরে এসো।
– আমি ঘরের ভেতরে গিয়ে,বিছানার এক পাশে বসলাম। ঘরটাকে ভালো করে দেখছিলাম।সব কিছু আগের মতোই আছে,যেভাবে ছোটো সাজিয়েছিলো।এই সাজানো সংসার রেখে ছোটো আজ অন্য দুনিয়ায় বাস করছে।
সুফিয়া যখন ঘর দেখায় ব্যাস্ত,বিজয় তখন সুফিয়াকে দেখছিলো।আজ প্রায় বিশ বছর পর সুফিয়া এভাবে বিজয়ের সামনে বসে আছে, এতোদিন পরে আবার সুফিয়ার সাথে দেখা হবে ভাবেনি। সুফিয়া সেই আগের মতোই আছে,বয়সের ছাপ এখনও ও কে ছুঁতে পারেনি।খোঁপা করা চুলে বড্ডো মায়াবী লাগছে দেখতে।সুফিয়ার চোখ বিজয়ের চোখে পড়তেই,বিজয় অন্যদিকে ফিরে তাকায়।বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকার পর সুফিয়া বললো
– বিজয় তোমার সাথে কিছু কথা আছে,কাজ ও বলতে পারো।
– কাজের কথা না হয় পরেই বলি,একটা প্রশ্নের জবাব দিবে?
– কি প্রশ্ন?
– সেই যে গেলে আর তো খোজ নিলে না।
– তুমিও তো খোজ নিতে পারতে।
– কে বললো খোজ নেইনি?তুমি যাওয়ার দুই মাস পর তোমার অফিসে গিয়েছিলাম।তোমার কোনো সঠিক কন্টাক্ট নাম্বার না পেয়ে,সাজ্জাতের কাছে ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তূ ও বললো
– তুমি নাকি আমার সাথে কথা বলতে চাওনা।অনেক অনুরোধ করার পর ও তোমার সাথে কন্টাক্ট করার কোনো নাম্বার বা অ্যাড্রেস কিছুই দেয়নি।
– সাজ্জাত যা করেছে আমার ভালোর জন্যই করেছে।
– তারপর আবার কিছুদিন পর তোমার অফিসে গিয়ে তোমার সাথে যোগাযোগ করার নাম্বার চাইলে তারা আমাকে দেয়নি,ওনারা বলেছেন কাওকে ঠিকানা বা নাম্বার দেওয়া অফিসের রুলসের বাইরে।তাই বাধ্য হয়েই আবার সাজ্জাত কে ফোন দিলাম কিন্তূ সাজ্জাত যা বললো,তাতে আমি অনেক টা শকড হয়েছিলাম।
– কি এমন বলছিলো সাজ্জাত?
– বলেছে তুমি আর সাজ্জাত নাকি বিয়ে করেছো।
– কি????
– হুম।আরো বললো আমি যেনো তোমাদের লাইফে বাধা হয়ে না দাড়াই।তোমরা সুখে সংসার করছো,তোমাদের যেনো ভালোভাবে সংসার করতে দেই।তাই আমি আর তোমাদের ডিস্টার্ব করতে চাইনি।
– তুমি কি বিশ্বাস করো,আমার আর সাজ্জাতের বিয়ের কথা?
– করেছিলাম কিন্তু মনের মধ্যে আজও একটা সংশয় কাজ করে,যদি তোমাদের বিয়ে হয়েই থাকে তাহলে ডিভোর্স লেটার পাইনি কেনো।তবে আজ পুরোপুরি শিওর হলাম যে,তোমাদের বিয়েটা হয়নি।
– কিভাবে সিওর হলে?
– যদি তোমার সাজ্জাতের সাথে বিয়ে হতো,তাহলে তুমি আমার জিবনে আবার ফিরে আসতে না।
– ফিরে এসেছি কে বললো?
– কে বলবে,চোখের সামনেই তো দেখতে পাচ্ছি।
– সব সময় চোখে দেখা সব কিছু সত্যি না ও হতে পারে।
– হয়তো।তবে একটা জিনিষ খুব জানতে ইচ্ছে করে সাজ্জাত এমন টা কেনো করলো?
– ও আমাকে খুব ভালোবাসে তাই।
– আর তুমি?
– আমি চুপ করে রইলাম।
– আচ্ছা বাদ দাও।তুমি ফিরে এসেছো এটাই যথেষ্ট।তোমাকে আবার কখনো এভাবে দেখতে পাবো ভাবিনি।সুফিয়া তুমি ফিরে এসে ভালো করেছো,এই অসুস্থ মানুষটার পাশে তোমাকে খুব দরকার।আজকাল নিজেকে খুবই একা একা লাগে।
– কেনো, একা কেনো লাগবে,তোমার তো ছেলে মেয়ে সবাই আছে।
– তাদের আর সময় কই আমার খোজ রাখার,তারা তো নিজেদের কাজ নিয়েই ব্যাস্ত।তারা তো এখন আমার খোজ নেওয়া ছেরেই দিয়েছে।
– কিন্তূ একসময় এই সন্তান না হওয়ার কারণেই তুমি আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলে।
– আমি জানি,আর তার জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।নতুন জীবনের চাকচিক্যে নিজেকে কোথায় যেনো হারিয়ে ফেলেছিলাম।তবে এটাও সত্যি তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা মিথ্যে ছিলো না।
– কি লাভ এমন সত্যি ভালোবাসা দিয়ে,যা কষ্ট ছাড়া কিছুই দেয় না।
– আমি জানি আমি তোমার উপর অনেক অন্যায় করেছি,দ্বিতীয় বিয়ের জন্য সব সময় তোমাকে দায়ী করে,নিজে দিব্যি সংসার করে গেছি।আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও সুফিয়া।I am very very sorry.
– সরি বললেই কি সব কিছুর সমাধান হয়ে যায়?তোমার এই সরি কি আমার হারিয়ে যাওয়া সময় গুলো ফিরিয়ে দিতে পারবে?পারবে আমার কষ্ট গুলোর সমাধান করতে?পারবেনা।
– ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমার যে আর কিছুই করার নেই।
– আছে, এখনও কিছু করার আছে।
সুফিয়া হাতে নিয়ে যাওয়া কয়েক টা কাগজের মধ্যে,একটা কাগজ বিজয়ের সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো
– এইযে তোমার বাড়ির কাগজ,এই বাড়িটা এক সময় তোমার মা আমাকে লিখে দিয়েছিলো,আজ আমি সেটা তোমাকে ফেরত দিলাম।
– এটা করার কি কোনো দরকার ছিলো?
– অবশ্যই,এখন আমার যথেষ্ট অর্থসম্পদ আছে,আমি ঐগুলা দিয়েই খুব ভালো করে চলতে পারবো।তাছাড়া যেই বাড়ীতে আমি থাকিনা, সেই বাড়ী শুধু শুধু নিজের নামে রাখার কি দরকার।
– সুফিয়া আরেকটা কাগজ বিজয়ের সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো,এই কাগজে তোমার একটা সই লাগবে।
– এটা কিসের কাগজ?
– ডিভোর্স এর।
– মানে?
– মানে আমি ডিভোর্স চাই।
– এতদিন পর ডিভোর্স চাইছো?
– হ্যা,ডিভোর্স টা আমার লাগবে।
– এমনটা করো না সুফিয়া,তোমাকে যে এখন আমার খুব প্রয়োজন।
– যখন তোমাকেও আমার খুব প্রয়োজন ছিলো,তখন আমিও তোমাকে পাশে পাইনি,তাহলে কিভাবে আশা করো আমাকে পাশে পাওয়ার?
– সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করা যায়না?
– সব কিছু ভুলেই তো আজ শেষ বয়সে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি।
– সাজ্জাত কে বিয়ে করার জন্যই কি এই ডিভোর্স?
– হতে পারে।
– যদি সই না করি?
– সমস্যা নেই,আমার টা আমি করে দিয়েছি। এই বলে ওই বাড়ী থেকে শেষ বারের মতো,চিরদিনের জন্য বের হয়ে আসলাম।এই বাড়ীতে আর কখনো আসবো না,এই বাড়ির মানুষ গুলো খুব স্বার্থপর।
অনেকেই ভাবছেন আমি ডিভোর্স নিয়ে,এখন সাজ্জাতের সাথে বিয়ে করে সুখে ঘর সংসার করবো।বিজয় ও সেটাই ভেবেছে কিন্তূ না, সে আমাকে ভুল বুঝেছে,তবুও আমি তার ভুল ধারণা ভাঙার কোনো প্রয়োজন মনে করিনি,থাক না কিছু ভুল ধারণা নিয়ে,তাতে কি আসে যায়।যৌবন কাল কাটিয়েছি স্বামী ছাড়া,তখন যখন বিয়ে করিনি এই শেষ বয়সে বিয়ে করে নিজের নামের সাথে কলঙ্ক জড়াতে চাইনা। হ্যা তবে আমি সাজ্জাতের ভালোবাসা কে সম্মান করি,আর ওর ভালোবাসাকেই সম্মান করেই আমার এই ডিভোর্স নেওয়া। সাজ্জাত যেমন বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে,আমিও তেমন বিজয় কে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।ডিভোর্স নেওয়ার আরেকটা কারণ হলো,এই পরিচয় টা আমাকে খুব বিপাকে ফেলে,প্রায় মানুষের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়,সব কিছুতে স্বামীর নামটা শুধুই জড়িয়ে থাকে,আজ এই সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে কি পেয়েছি জানিনা তবে মনে শান্তি পেয়েছি।
বিজয় ভেবেছিলো,আমি সব কিছু ভুলে গিয়ে,ছোটোর জায়গা দখল করে নিবো।আবার ওর সাথে সংসার করবো। কিন্তূ না আমি নিজেকে এতোটা অপমান করতে পারবো না।এমন টা করলে যে আমি নিজের কাছেই ছোটো হয়ে যেতাম।তার চেয়ে একা একা সম্মান নিয়ে বেচে থাকবো,এটাই আমার শেষ বয়সের স্বস্তি।
আসলে বিজয় আমাকে কখনো ভালোবাসেনি,আমার প্রতি ওর একটা মায়া জন্ম নিয়েছিলো মাত্র,একটা গরীব মেয়েকে বিয়ে করে একটা পরিচয় দিয়েছিলো,যেই পরিচয়টা আজ আমি নিজেই মুছে দিয়েছি।ডিভোর্স টা না হলেও কোনো সমস্যা ছিলো না,তবুও আত্তার শান্তি বলে তো একটা কথা আছে।ভালোবাসা বিহীন মিথ্যে পরিচয়ের বোঝা আর বইতে চাইনা।
একবছর পর…
দেশে এসে একটা স্কুল খুলেছি,যেখানে স্বল্প বেতনে বাচ্চারা ভালো পড়াশোনা করতে পারবে।কয়েকজন ভালো টিচার ও সাজেস্ট করেছি।যারা খুব গরীব বা এতিম তাদের কাছে কোনো টাকা পয়সা নেই না,বিনা বেতনে পড়াই।স্কুল ছুটির পর দুই একটা প্রাইভেট পড়াই,নিজের খরচ টা তো চালাতে হবে।কলেজ জীবন প্রাইভেট পড়ানো দিয়ে শুরু করেছিলাম এখন শেষ বয়স টা প্রাইভেট পড়িয়েই কাটাচ্ছি।
আজ জীবনের প্রথম মা না হতে পারার আফসোস টা ভালো লাগায় পরিণত হলো।বিজয় সন্তান না হওয়ার কারণেই একদিন দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলো,আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে ছিলো।এখন তার তিনটা সন্তান থাকার পরেও সে একাকিত্ততায় ভোগে আর আমি সন্তান না থাকা সত্বেও হাজারো বাচ্চার মাঝে নিজের মাতৃত্ব কে খুঁজে পাই।
সাজ্জাত মাঝে মাঝে ফোন করে খোজ খবর নেয়।ও ফোন দিলেই আমি বলি
– এবার তো একটা বিয়ে করো।
– বিয়ে করতাম যদি তুমি বিজয়ের সাথে সংসার করতে।তুমি যখন সেটা করোনি,আমারও আর বিয়ে করা হলোনা।
– আর কত বাহানা সাজাবে বিয়ে না করার?
– জানিনা…
– তোমার আর জানতেও হবেনা।এখন ফোন রাখো,বাচ্চারা পড়তে আসবে।
– চলো না,বিয়েটা করেই ফেলি।
– সাজ্জাত, স্বামী হওয়ার ক্ষমতা সব ছেলেরই থাকে,মনের মানুষ হওয়ার ক্ষমতা কয়জনে রাখে?তুমি আমার সেই মনের মানুষ,যা কে আমি আমার মনের একটা কোনে খুব যত্ন করে রেখেছি।বন্ধুত্ব বললে ভুল হবে,প্রেমিক বলাও মানায় না।কিছু সম্পর্কের কোনো নাম হয়না,তোমার আমার সম্পর্কটা ও নাহয় নাম বিহীন রয়ে যাক।
– সুফিয়া!
– হুমম?
– ভালোবাসি তোমায়।
– এখন রাখছি,ভালো থেকো।
এই ছেলেটা আসলেই পাগল।আমাকে ভালোবাসে পাগলের মতোই।ওর সাথে বিয়ে করে সুখী হতে পারতাম, কিন্তূ আমি কখনো ও কে বন্ধুর বেশি ভাবতে পারিনি।
তবে ভালো থাকতে হলে ওর মত একজন বন্ধুর খুব প্রয়োজন,আমি ওর বন্ধুত্ব কে সম্মান করি।শেষ বয়সে বিয়েটা আসলেই মানায় না,তবে যদি যুবতী হতাম সাজ্জাত কে বিয়ে অবশ্যই করতাম।জানিনা সাজ্জাত কখনো বিয়ের জন্য রাজি হবে কিনা,তবে যতদিন বেচে থাকবো,সাজ্জাত কে বিয়ের জন্য অনুরোধ করেই যাবো,হতেও পারে একদিন ও রাজি হয়ে গেলো…
মাঝে মাঝে নিষ্ঠুর পৃথিবীকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে,একটা বাচ্চাই কি সব?বাচ্চা ছাড়া কি জীবনে সুস্থ্য মত বাচা যায়না?শেষ বয়সের সম্বল হিসেবে সন্তান সন্তান করে পাগল হওয়া মানুষ গুলো ,সত্যিই কি শেষ বয়সে প্রাপ্য সম্মান পায়?অনেকেই তো দেখি অসুস্থ মা কে জঙ্গলে রেখে আসে,সন্তানের অনেক সম্পদ থাকার পরও বাবা ভিক্ষা করে খায়।আমি বলছিনা সব সন্তানরাই খারাপ শুধু বলছি,
আমরা যারা মা হতে পারিনা,এতে আমাদের কোনো দোষ নেই,আমরা মা হতে চাই কিন্তূ ভাগ্যে নেই বলে হয়তো হতে পারিনা।তাই বলে কি আমাদের স্বাভাবিক ভাবে বেচে থাকার অধিকার নেই?স্বামীর খারাপ ব্যাবহার,শাশুড়ির খোটা এসব ছাড়া আমাদের কপালে কিছুই জোটেনা।আর পারাপর্শিরা তো আছেই অপমান করার জন্য।
কেও কেনো বুঝেনা,আমরাও রাতের আধারে মুখ লুকিয়ে কাদি একটা বাচ্চার জন্য।মা না হতে পারার কষ্ট যে কতটা সেটা বলে বুঝানো সম্ভব না।আমরা এমনেই মন থেকে অনেক কষ্ট থাকি,আমাদের অপমান না করে,কষ্ট দিয়ে কথা না বলে একটু ভালোবাসা দিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যায়?
জানি নিষ্টুর পৃথিবী কখনো এর উত্তর দিতে পারবেনা।
জানিনা শেষ পরিণতি কি হবে,তবে আমাদের মত সুফিয়া রা সন্তান ছাড়া, স্বামী ছাড়া একা একাই বাচতে শিখে যাবে…
সমাপ্ত।
সালমা আক্তার