#সন্ধ্যামালতী (০৫)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
________________
সন্ধ্যার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে তার রেজাল্ট বের হওয়ার ২ দিন পরই। রেজাল্ট বের হতে এখনো ১২-১৫ দিন বাকি। সবাই খুশি এই বিয়েতে শুধু সন্ধ্যা চুপচাপ। সে কি করে বুঝাবে তার কিশোরী মন কি চায়? বকুল তো খুশিতে নাচানাচি শুরু করছে। বাদল এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসে তার দিকে। সন্ধ্যা তখনো তার নিজস্ব ভাবনায় বিভোর। বাদল এসে আস্তে করে ডাকে,
‘সন্ধ্যা!’
সন্ধ্যা চমকে তাকায়। তারপর মাথা নিচু করে নেয়। বাদল হেঁসে বলে, ‘তোর কি কিছু হয়ছে? বিয়েতে তুই খুশি না?’
সন্ধ্যা কি বলবে খুঁজে পায় না। চোখ বার বার এদিক ওদিক করতে থাকে। বাদল ফের বলে, ‘তোর কোনো সমস্যা থাকলে এখনই বল। নির্ভয়ে বল।’
সন্ধ্যা কিছু বলার আগেই সাহেদা পেছন থেকে বলে ওঠে, ‘হের কি সমস্যা থাকতো বাজান? তুমি শান্তিতে থাহো। বিয়া অইবো।’
সন্ধ্যা আর কিছু বলতে পারে না। চুপ করেই থাকে। বাদল হেঁসে বলে, ‘তবুও একবার সন্ধ্যার থেকে শুনি চাচি। ‘ও’ কি চায়?’
সন্ধ্যা মাথা নিচু করেই বলে, ‘আম্মা যা চাই আমিও তাই চাই বাদল ভাই।’
বাদল নিঃশব্দে হেঁসে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। সাহেদা অতিথি আপ্যায়ন করে সবাইকে বিদায় দিয়ে নিজে চলে যায় কাজে। সন্ধ্যা আয়াশদের সেখানে যাবে না যাবে না করেও পা বাড়ায় সেদিকে। বকুল তো সবার সাথে বাড়ি চলে গেছে। সন্ধ্যা রাস্তায় বের হতেই ফরিদের সাথে দেখা হয়। সন্ধ্যা চোখ মুখ শক্ত করে এগোতে নিলে ফরিদ এগিয়ে আসে। সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে যায়। ফরিদ এগিয়ে এসে সন্ধ্যার গাল চেপে ধরে বলে,
‘সেদিন তো বাড়িতে বটি নিয়ে এগিয়ে আসলি। আজ কেমনে বাঁচবি?’
সন্ধ্যা এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে অদ্ভুত ভাবে হেঁসে বলে, ‘কাকা আপনিও না! বাড়ির বাইরে নারী দুর্বল ভাবা লোক নিজেই বড় দুর্বল।’
বলেই পিছিয়ে যায়। ফরিদ সন্ধ্যার কোমড়ের শাড়ি টেনে ধরে। রাগে গা জ্বলে উঠে সন্ধ্যার। পাশে থাকা ইটের টুকরো তুলে নেয় হাতে। কিছু না ভেবেই ছুড়ে মারে ফরিদের দিকে। ভাগ্যবশত ইটের টুকরো টা সরাসরি ফরিদের কপালে লাগে। সাথে সাথে ফেটে গিয়ে টুপটাপ করে রক্ত পড়তে থাকে। সন্ধ্যার সেসব দেখার টাইম নাই। নিজের মতো হেলতে দুলতে চলে আসে। ফরিদ মাথা চেপে বসে পড়ে সেখানে।
সন্ধ্যা আনমনে হেঁটে আসে পুকুর পাড়ে। সেখানে চোখ পড়তেই দেখে দাঁড়িয়ে আছে আয়াশ। সন্ধ্যার মাথায় মুহুর্তেই দুষ্টু বুদ্ধি আসে। পা টিপে টিপে এগিয়ে আসে আয়াশের কাছে। পেছন থেকে শব্দ করে ‘ভাউ’ করে উঠে। আয়াশ চমকে পেছনে তাকাতেই ভর সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলে সন্ধ্যা দ্রুত এসে হাত ধরে। এত ভার তো সে সামলাতে পারে না ফলে দুজনেই একসাথে উল্টে পড়ে পানিতে। হুড়মুড় করে পড়ায় দুজনেই যথেষ্ট পানি খেয়ে বসে। ডুব দিয়ে উঠে দুজনেই আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে একে অপরের দিকে। সন্ধ্যার সৌন্দর্যে যেনো আরো একবার চোখ ধাধালো আয়াশের। ছোট ছোট চুলগুলো মুখের সাথে লেপ্টে গেছে। বিন্দু বিন্দু পানির কণা জমা আছে মুখে। ঠোঁট গুলো তিড়তিড় করে কেঁপে উঠছে বারংবার। আয়াশ দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। এ রুপের দিকে তাকালেই তার চোখ ধাঁধিয়ে আসে আর যারা বাজে নজরে তাকায় তাদের কেন চোখ ঝ’লসে যায় না! আয়াশের ভাবনার মাঝেই ভেসে আসে রানার কন্ঠ। আয়াশ সেদিকে তাকাতেই রানা বলে,
‘কিরে দুজনে কি পানিতে সাঁতার কাটতেছিস নাকি?’
আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে উঠে আসে। কিন্তু সন্ধ্যা পানিতেই থেকে যায়। আয়াশ জেরিনকে ইশারায় কিছু বলতেই জেরিন মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। লিজা বলে,
‘সন্ধ্যা তোমার তো ঠান্ডা লেগে যাবে!’
‘সমস্যা নেই আপু। পুকুরে গোসল করার স্বভাব আমাদের আছে সে হিসেবে আমার না শহুরে ডাক্তারের ঠান্ডা লাগতে পারে।’
আয়াশ চুল থেকে পানি ঝাড়তে ঝাড়তে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। পাশ থেকে আকাশ বলে, ‘মাম্মা কাহিনি কি? আজকাল তুমি পুকুরে ভেসে বেড়াচ্ছো!’
আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আকাশ গান ধরে, ‘প্রেমের মরা জলে ডুবে না..’
পাশ থেকে সাফি শুকনো ঢোক গিলে বলে, ‘দোস্ত তোদের আবার ভুত বা পেত্নী ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়নি তো? লা হাওলা ওয়ালা…
এটুকু বলতেই রানা বলে, ‘হা’রা’ম’জা’দা তোর ভুতের কাছেই আজকে তোরে রেখে যাবো।’
বলেই সাফির পেছনে জোড়ে একটা লা’থি দেয়। সাফি ধপাস করে পানিতে পড়ে। সন্ধ্যা ভয়ে পানির মধ্যেই পড়ে যেতে গিয়ে নিজেকে সামলে নেয়। সাফি পানিতে থতমত খেয়ে রানাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘শা’লা তুই আমারে পানিতে ফেললি কেন হা’রামি?’
তমাল গালে হাত দিয়ে বলে, ‘রানা তুই কবে তোর বোনের সাথে ওর বিয়ে দিলি?’
রানা ভেংচি কেটে দুপা এগিয়ে বলে, ‘আমার তো বোন বেশি হয়ছে যে ওর মতো ভুতে ভয় পাওয়া ছা’গলের সাথে আমার বোনের বিয়ে দিবো!’
সবাই শব্দ করে হেঁসে দেয়। সাফি ব্যঙ্গ করে বলে, ‘কপালে যদি লেখা থাাকে আমি তোর দুলাভাই হমু তাইলে তুই আটকাবি কেমনে?’
‘তাইলে তোরে প্রতিদিন ভুতের সাথে মিট করাবো।’
সবাই হু হা করে হাসতে থাকে। জেরিন একটা শুকনো টাওয়েল এনে সন্ধ্যার দিকে বাড়িয়ে দেয়। বলে,
‘এটা গায়ে দিয়ে উঠে আসো সন্ধ্যা। বেশিক্ষণ পানিতে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।’
সন্ধ্যা চুপচাপ টাওয়েল গায়ে জড়িয়ে উঠে আসে। ততক্ষণ ছেলেরা সবাই অন্যদিকে তাকিয়ে নিজেদের মতো গল্প করতে থাকে। আয়াশ সবাইকে ইগনোর করে চলে যায়। সন্ধ্যাকে নিয়ে জেরিন ভিতরে যায়। সাফিও উঠে আসে পানি থেকে। রানা বলে,
‘দোস্ত তোদের মনে হয় না আয়াশ আর সন্ধ্যার মধ্যে কিছু চলছে!’
লিজা বলে, ‘চলছে না বাট সামথিং ইজ ফিসি।’
তমাল ঝাড়ি মেরে বলে, ‘তোর হাইফাই ইংলিশ নিজের বয়ফ্রেন্ডের পকেটে রাখ। আমার মনে হয় আয়াশ আর সন্ধ্যা একে অপরকে একটু একটু পছন্দ করে।’
সাফি বলে, ‘তাই বলে দুদিনে!’
আকাশ সাফির মাথায় গাট্টা মেরে বলে, ‘আরেহ ভালোবাসতে কি যুগ যুগ লাগে নাকি?’
লিজা বলে, ‘তবুও দুদিনে হয়তো ভালোবাসা পর্যন্ত যায়নি। ভালো লাগা তো হবেই।’
রানা গদগদ স্বরে বলে, ‘দোস্ত এই দুইটার ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা পর্যন্ত আমাদেরই আনতে হবে।’
সবাই একসাথে হাত মিলায়। সাফি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বলে, ‘আমার জন্য কারো কোনো চিন্তাই নাই।’
জেরিন আর সন্ধ্যা ভিতরে আসতেই সাহেদা তাকে দেখে। এগিয়ে আসে দ্রুত। বলে, ‘সন্ধ্যা ভিজ্জোস কেমনে?’
‘পুকুরে পড়ে গেছিলাম আম্মা।’
‘হায় আল্লাহ কতক্ষণ ধইরা এমনে আছোস? ঠাান্ডা লাইগা যাইবো।’
জেরিন বলে, ‘কাম ডাউন আন্টি। আমি ওকে আমার কাপড় দিচ্ছি। ‘ও’ এখন পড়ে নিক।’
সাহেদা কিছু বলতে গেলে থামিয়ে দেয় জেরিন। তারপর সন্ধ্যাকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে কাপড় পাল্টে নিতে বলে। জেরিন তার একটা থ্রি পিস দেয় পড়তে। সন্ধ্যার একটু ঢিলাঢালা হলেও চুপ করে পড়ে নিয়ে মাথায় কাপড় টেনে নেয়। তারপর বাহিরে আসে। সন্ধ্যা সাহেদার জন্য বসে থাকে আর বাকি সবাই কাজে লেগে পড়ে।
বিকেলের দিকে সবাই সাহেদার কাছে আবদার করে আজ তারা সন্ধ্যাকে যেতে দিবে না। সাহেদা প্রথমে না করলেও পরে আর কিছু বলে না। থাকতে দেয়। সবাই তো মহাখুশি। সাহেদা কাজ শেষ করতে করতে ছুটে আসে বকুল। বকুলকে দেখে সন্ধ্যা কিছু বলতে যাবে তার আগেই বকুল গড়গড় করে সাহেদাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘চাচি জলদি চেয়ারম্যানের বাড়ি চলেন। সন্ধ্যা নাকি ফরিদ কাকার মাথা ফা’টায় দিছে এখন চেয়ারম্যান সবাইকে নিয়ে বিচার বসিয়েছে।’
সাহেদা অবাক হয়ে তাকায় মেয়ের দিকে। বাকি সবাইও অবাক হয়। সন্ধ্যা স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। সাহেদা সন্ধ্যার কাছে এসে বলে, ‘এইডা তুই কি করছোস? বকুল যা কইলো তা কি সত্যই?’
সন্ধ্যার মায়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলে, ‘বিচার যখন বসিয়েছে আর আমাদের খোঁজও লাগিয়েছে তখন তো যেতেই হবে। চলো।’
সাহেদা ভাষা হারিয়ে ফেলে। ওরা যা খারাপ তাতে করে মেয়েটাকে ছাড়বে তো? সাহেদাকে নির্বাক দেখে এগিয়ে আসে সন্ধ্যা। কাছে এসে মায়ের মুখ আজলে নিয়ে বলে,
‘তোমার মেয়ের ওপর তোমার ভরসা নাই আম্মা? তোমার সন্ধ্যা কখনো অন্যায় করছে?’
সাহেদা মাথা নাড়ায়। সন্ধ্যা নিঃশব্দে হেঁসে মায়ের হাত ধরে বাড়ির বাইরে আসে। পেছন পেছন আয়াশরাও আসে। বকুলও আছে সাথে। আয়াশ পেছন থেকে বলে,
‘তোমাদের একা যাওয়া ঠিক হবে না। আমরাও যাবো।’
বাকি সবাইও সম্মতি দেয়। নিঃশব্দে ঠোঁট কামড়ে হাসে সন্ধ্যা। দুদিনেই লোকটাকে তার অনেকটা জানা হয়ে গেছে। তার কিশোরী মন হয়তো জানতো যে আয়াশ তার সাথে যাবে। সবাই মিলে চলে আসে চেয়ারম্যান বাড়িতে। অনেক লোকজন সেখানে জড়ো হয়েছে। সন্ধ্যাদের দেখে সবাই কিছুটা সরে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা আর সাহেদা গিয়ে ফরিদরা যে পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার অপর পাশে দাঁড়ায়। তাদের পেছনে দাঁড়ায় আয়াশরা। চেয়ারম্যান ফিরোজ গম্ভীর গলায় সন্ধ্যাকে বলে,
‘আজকাল তোর সাহস বেড়েছে নাকি সন্ধ্যা? তুই ফরিদের মাথা ফা’টিয়েছিস?’
সন্ধ্যার সহজ স্বীকারোক্তি, ‘হ্যাঁ।’
সন্ধ্যার সহজেই স্বীকার করে নেওয়ায় নড়েচড়ে বসে সবাই। ফিরোজ আরো গম্ভীর আর জোড়ে বলে উঠে, ‘কোন সাহসে তুই আমার ভাইয়ের মাথা ফা’টিয়েছিস? কাল নাকি ওরে বটি পর্যন্ত দেখায়ছিস! রিনিকে থা’প্পড় মে’রেছিস!’
‘হ্যাঁ।’
এবার যেনো ক্ষেপে উঠে ফিরোজ। জোড়ে চিল্লিয়ে বলে, ‘অন্যায় করে আবার জোড় গলায় বলছিস!’
সন্ধ্যা হেঁসে উঠে। বলে, ‘অন্যায়? প্রতিবাদ করলেই তা অন্যায়? আমি আপনার ভাইয়ের মাথা ফা’টিয়েছি বলে বিচার বসিয়েছেন। যখন স্কুলে যাওয়ার সময় ওড়না টেনে ধরতো আপনার এই গুণধর ভাই তখন কোথায় ছিলেন আপনি আর আপনার বিচার? যখন রাস্তা ঘাটে মেয়েদের একা পেয়ে তার ভীষণ গোপন জায়গায় আপনার ভাই হাত ছোঁয়াতো তখন কই ছিলেন আপনি আর আপনার বিচার? যখন বিয়ে বাড়িতে সকলের সামনে আমার শাড়ি ছিঁ’ড়ে অপমান করছিলো আপনার এই ভাই তখন কেথায় ছিলেন আপনি আর আপনার বিচার? কাল যখন রাস্তায় আমার হাত ধরে জোড়াজুড়ি করছিলো তখন কোথায় ছিলেন আপনারা? আজ যখন আপনার এই অনেক গুণওয়ালা ভাই আমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করছিলো তখন কোথায় ছিলেন আপনারা? আর আমি প্রতিবাদ করে অন্যায় করে ফেলেছি! হ্যাঁ তাহলে করেছি আমি অন্যায়। এমন অন্যায় আমি আজীবন করবো। পারলে ঠেকিয়ে দেখান! আর এই গ্রামের হয়তো একটা মেয়েও আওয়াজ তুলবে না! বলবে না তাদের সাথে আপনার গুণধর ভাই কি কি করার চেষ্টা করেছে তবে আমি এই সন্ধ্যা একাই যথেষ্ট।’
পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। ফরিদ চোরের মতো মুখ লুকাচ্ছে। সে ভাবতেই পারেনি সন্ধ্যা এসব বলতে পারে! আয়াশ, রানা, আকাশ, তমাল, সাফি সবাই রাগে রীতিমতো ফুঁসছে। পারলে এখনই ফরিদকে দুই ভাগ করে ফেলে। কয়েকজন মেয়ে ভীড় ঠেলে ভেতরে আসে। ফিরোজ কিছু বলার আগেই একজন একজন করে বলতে থাকে ফরিদের কু’কর্মের কথা। ফরিদ সবার সাহস দেখে অবাক হয়। একজন আওয়াজ তুলেছে বলে সবাই তুলছে? ফিরোজ বিচার করতে এসে নিজেই বিপদে পড়ে গেলে। সবার সামনে ঠাস করে থা’প্পড় বসিয়ে দিলো ভাইয়ের গালে। সন্ধ্যা তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে বলে,
‘লোক দেখানো থা’প্পড় মা’রার কোনো দরকার নাই চাচা। বরং আপনার ভাইকে আমরা সব মেয়েদের হাতে দেন। জীবনের মতো একটা শিক্ষা দিবো সবাই।’
ফিরোজ চেঁচিয়ে উঠতেই পেছন থেকে আয়াশ বলে, ‘চেঁচামেচি কম করেন চেয়ারম্যান সাহেব। যার যার সাথে আপনার ভাই অ’ন্যায় করছে তারাই আপনার ভাইকে শাস্তি দেবে। আর যদি বলেন তাহলে আমি পুলিশ ডাকতে পারি।’
পাশ থেকে রানা বলে, ‘হ্যাঁ। আয়াশ আঙ্কেলই তো পুলিশ অফিসার। উনাকেই বরং কল কর। আর আমি আব্বুকে কল করে বলবো যেনো এমন ভাবে কেইস লড়ে যাতে এই লোক কিছুতেই জেল থেকে বের না হতে পারে!’
পাশ থেকে আকাশ ফিসফিস করে বলে, ‘আয়াশের বাবা পুলিশ অফিসার, রানার বাবা নাকি উকিল ভাই তাইলে কি আমার বাপ গোয়েন্দা!’
চেয়ারম্যান আর কিছু বলতে পারে না। আয়াশ এগিয়ে এসে সন্ধ্যা এবং বাকি মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বলে, ‘নিজেদের ইচ্ছা মিটিয়ে আসো।’
আয়াশ বলতে দেড়ি করলেও সন্ধ্যার এগোতে দেড়ি হয়নি। পা থেকে স্যান্ডেল নিয়ে ধপাধপ মুখের ওপর বসিয়ে দেয়। আজ যেনো সন্ধ্যার সাহসে সবাই সাহস পেলো। সবাই গিয়ে একে একে মে’রে আসে ফরিদকে। দুর থেকে এ দৃশ্যে একজন প্রশান্তির হাসি হাসে…
#সন্ধ্যামালতী (০৬)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
__________________
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে এসেছে। সাহেদা আর সন্ধ্যা এখনো আয়াশদের ওখানেই আছে। বিচার শেষে সবাই একসাথে এখানে এসেছে। সবাই নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে৷ সাহেদা নিরবতা ভেঙে বলে,
‘আমি বাাড়ি যায় গা বাজান। সন্ধ্যা আজকা তোমাগো লগে থাহুক!’
লিজা বলে, ‘আন্টি আপনিও থেকে যান আজ। ফরিদের সাথে আজ যা হয়েছে তাতে সে তো এতো সহজে আপনাদের ছাড়বে না।’
‘আমারে কিছু করতো না। হের তো নজরই মোর মাইয়ার দিকে।’
‘তবুও!’
‘সন্ধ্যার দাদাই বাড়িতে একলা আছে মা। আমি যায়।’
আয়াশ বলে, ‘আন্টি আজকের জন্য থেকে যান। পরিবেশটা একটু শান্ত হোক৷ তাছাড়া ফরিদ এখন জ্বলতে থাকা আগুন। সবকিছু পুড়িয়ে ফেলবে।’
সাহেদা নিজ মনে কিছু ভাবে। তারপর বলে, ‘কয়দিন তোমাগো লগে থাকমু? আইজ না হয় কাইল তো আমাগো বাড়ি যাওনই লাগবো তখন কি করমু? হেরা কি এত্তো সহজে আমাগো ছাইড়া দিবো?’
আয়াশ কাঠকাঠ গলায় বলে, ‘আমার ওপর ভরসা রাখেন। কেউ কিছু করতে পারবে না আপনাদের।’
সন্ধ্যা চোখ তুলে তাকায় আয়াশের দিকে। আয়াশের কথায় আরো একবার যেন সাহস পায়। মানুষটার ব্যাক্তিত্ব ভীষণ প্রখর। এই ব্যাক্তিত্বের ওপর যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। সাহেদা সবাইকে বুঝিয়ে বাড়ি চলে যেতে চায়। আকাশ, তমাল আর সাফি এগিয়ে দিতে যায়। লিজা, জেরিন, আয়াশ আর রানা থেকে যায় সন্ধ্যার সাথে। লিজা বলে,
‘আজ তুমি যা করলে তাতে তো আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে গো। তোমার সাহসের জন্য তোমাকে অস্কার দেওয়া উচিত।’
রানা বলে, ‘অলরেডি আমি মনে মনে কয়েকবার দিয়েও ফেলছি।’
আয়াশ বিড়বিড় করে বলে, ‘অস্কার তো তোর গার্লফ্রেন্ডের হাতের মোয়া যে কয়েকবার দিয়েও দিবি। ডাফার কোথাকার!’
জেরিন বলে, ‘দোস্ত তখন যে বললি তোর বাবাকে বলবি কেইস লড়তে! তা আঙ্কেল কবে থেকে লইয়ার হলো?’
রানা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বলে, ‘আরে ভাই ওইরকম একটু আকটু চাপা না দিলে এমন অ’জাতের চেয়ারম্যান আর চেয়ায়ম্যানের ভাইরে টাইট দেওয়া যায় না বুঝছোস!’
লিজা হেঁসে উঠে। সন্ধ্যাও মাথা নিচু করে হেঁসে দেয়। আয়াশের দৃষ্টি তখনো সন্ধ্যার দিকে নিবদ্ধ। জেরিন রানার মাথায় গাট্টা মেরে সন্ধ্যাকে বলে,
‘সন্ধ্যা বিয়ে টিয়ের প্ল্যান কি? লাভ নাকি অ্যারেঞ্জ? কাউকে পছন্দ করো নাকি?’
সন্ধ্যার মুখটা মলিন হয়ে যায়। মনে পড়ে যায় তার আর বাদলের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। লিজা, জেরিন, আয়াশ আর রানা মনোযোগী শ্রোতার মতো করে সন্ধ্যার উত্তরের অপেক্ষায় আছে। সন্ধ্যা মাাথা নিচু করেই বলে,
‘আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আপু।’
উপস্থিত সবাই অবাক হয়। লিজা, জেরিন আর রানা মুখটা কাঁদো কাঁদো করে এক সাথে বলে উঠে, ‘দিল টুট গায়া বা*ল।’
সন্ধ্যা চমকে তাকায়। আয়াশ একটা কুশন ছুঁড়ে মারে তিনজনের দিকে। বলে, ‘ল্যাঙ্গুয়েজ চেঞ্জ কর।’
লিজা আর জেরিন ভেংচি কাটে। রানা বলে, ‘এটা তুমি কি শুনায়লা? আমার এখন কান্নাা আসতেছে।’
আয়াশ ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘বুঝলাম না। তোর কেন কান্না আসতেছে?’
রানা উত্তেজনা বশত বলেই বসে, ‘আরেহ কান্না আসবে না? আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডের প্রথম…
এটুকু বলতেই দুপাশ থেকে লিজা আর জেরিন দুজনেই রানার মুখ চেপে ধরে৷ আয়াশ কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে থাকে ৩ জনের দিকে। সন্ধ্যা এদের কিছু না বুঝে আহম্মকের মতো তাকিয়ে আছে সবার দিকে। আয়াশ সবাইকে ইগনোর করে আস্তে করে বলে,
‘কংগ্রেস সন্ধ্যা। নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভ কামনা রইলো।’
সন্ধ্যা আশাহত হলো। আয়াশের থেকে সে এমন কিছু আশা করেনি। আয়াশ রুমে যেতেই টপাটপ কি’ল পড়ে রানার পিঠে। রানা আর্তনাদ করে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
‘তোরা খাস কি বইন? এতো শক্ত হাত কেমনে হইলো? আহারে আমার মেরুদন্ড টা মনে হয় ভেঙেই গেলো। ইশশ বেচারা আমি।’
লিজা আরো একটা কি’ল বসিয়ে দেয়। বলে, ‘তুই এখন মাঝখান দিয়ে ভাঙিসনি এটা কম কোথায়? তোর তো সাহস কম না তুই এখনই আয়াশের সামনে সব উগলে দিচ্ছিলি!’
‘আরে মা’রিস কেন? আমি কি ইচ্ছে করে কিছু করছি?’
সন্ধ্যা ধীর কন্ঠে বলে, ‘আপু ভাইয়াকে আর মে’রো নাা। বেচারা ব্যাথা পাচ্ছে।’
রানা কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। জেরিন বলে, ‘তুমি যদি বুঝতে বইন তাইলে এর থেকেও বেশি মাইর দিতা ওরে। বে’দ্দপ পোলা।’
এর মধ্যেই হাজির হয় আকাশ, সাফি আর তমাল। আকাশ এসে ঠা’স করে থা’প্পড় বসিয়ে দেয় রানার গালে। রানা হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকে৷ বলে,
‘আজ কি মাইর দিবস? সবাই আমারে মা’রতাছে কেন?’
আকাশ বলে, ‘তোর ভাগ্য ভালো একটা থা’প্পড় দিছি। তুই এই ভুত পাগলারে কেন পাঠায়ছোস আমাদের সাথে? জানিস কি করছে রাস্তায়?’
রানা মাথা নাড়ায়। লিজা, জেরিন, সন্ধ্যা, রানা সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায়। সাফি মুখ কাঁচুমাচু করে আছে। আকাশ বলতে শুরু করে, ‘আরেহ ভাই যাওয়ার সময় আন্টি ছিলো কিছু করে নাই ‘ও’। মেয়েদের মতো তমাল আর আমার শার্টের কোণা ধরে হাঁটছে আমরা দুজন কিছু বলি নাই। আসার সময় ২ মিনিট করো হাঁটে আর বলে, ‘দোস্ত সামনে ভুত’। ওর এই ভুতের চক্করে আজকে আমরা একটা মহিলার দৌড়ানি খায়ছি।’
সবাই চুপ করে তাকিয়ে থাকে সাফির দিকে। এরপর হু হা করে হাসতে থাকে। আকাশ আর তমাল বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রানা হাসতে হাসতে সোফা থেকে পড়ে যায় ফ্লোরে। হাসির রেশ দ্বিগুণ হয়ে যায়। রানা ফ্লোরে পড়ে শুয়ে থেকেই হু হা করে হাসতে থাকে। আয়াশ নিজের রুম থেকে বাইরে এসে কঠিন এক ধমক লাগায়। সবাই কয়েক সেকেন্ডের জন্য হাসি থামালেও বেশিক্ষণ টিকতে পারে না। লিজা তো হাসতে হাসতে কান্নায় করে ফেলছে৷ সন্ধ্যাও হাসতেছে। আয়াশ এদের কান্ড দেখে কিছু না বলেই রুমে চলে যায়। এই হাসাহাসি চলে প্রায় আধাঘন্টার মতো। তারপর সবাই খেতে বসে যায়। সবাই মিলে খেয়ে নিজেদের মতো রুমে চলে যায়। সন্ধ্যা শুধু ঘরের বাইরে মেইন দরজার কাছে ব্যালকনিতে গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই পেছনে কারো আসার শব্দ পায়। পেছন ঘুরে দেখে আয়াশ। সন্ধ্যা মুচকি হাসে৷ আয়াশ সন্ধ্যার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বলে,
‘এখানে দাঁড়িয়ে কি করো?’
‘কিছু না। এমনিতেই দাঁড়িয়ে আছি।’
এরপর কিছুক্ষণ নিরবতা। সন্ধ্যা ডাকে, ‘শহুরে ডাক্তার!’
আয়াশ চমকে তাকায়। সন্ধ্যা সামনে তাকিয়েই হেঁসে বলে, ‘,আপনারা কতদিন থাকবেন এখানে?’
‘আর ১০ দিন।’
‘শহরে গেলে কি আমার কথা মনে পড়বে?’
আয়াশ ভীষণ চমকায়। জিজ্ঞেস করে, ‘মানে?’
সন্ধ্যা কি বলে ফেলেছে বুঝতে পারে। চোখের দৃষ্টি এদিক ওদিক করে বলে, ‘না না কিছু না।’
আয়াশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, ‘তোমার বিয়ে কবে?’
‘১০-১২ দিন পরেই।’
‘তুমি আর পড়ালেখা করবে না?’
সন্ধ্যা অদ্ভুত ভাবে হেঁসে বলে, ‘গ্রামের মেয়েদের পড়ালেখা! হয় বুঝি শহুরে ডাক্তার?’
আয়াশ জবাব দেয় না। সন্ধ্যা ফের বলে, ‘আম্মা চায় আমি বিয়েতে হ্যাঁ করে দেয় আমিও হ্যাঁ করে দিয়েছি।’
‘তোমার লাইফ তোমার ডিসিশন। কারো চাপে পড়ে বিয়ে করে নিও না। আর বিয়ে করলেও যার সাথে বিয়ে হবে তাকে বলবে তুমি পড়ালেখা করতে চাও।’
সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। আয়াশ বলে, ‘ঘুমাতে যাও।’
‘হুম।’
মুখে ‘হুম’ বললেও অদ্ভুত ভাবে দুজনের একজনও নিজেদের রুমে গেলো না৷ কিছুক্ষণ সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। সন্ধ্যা হঠাৎ করেই অদ্ভুত এক প্রশ্ন করে বসে।
‘ভালোবাসা কি শহুরে ডাক্তার?’
আয়াশ আর সন্ধ্যাকে বাহিরে দেখে লিজা, জেরিন, রানা, তমাল, আকাশ, সাফি একজোট হয়েছে। রানা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে, ‘দোস্ত সন্ধ্যার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে! আর আয়াশ এটাতে কি কমেন্ট করলো? ‘কংগ্রেস সন্ধ্যা। নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভ কামনা রইলো।’ হোয়াট ইজ দিস ব্রো?’
আকাশ কনফিউজড গলায় বলে, ‘ভাই আয়াশ যদি সন্ধ্যাকে পছন্দই করতো তাহলে রিয়েক্ট কেন করলো না? আমরা ভুল না তো? আদৌও আয়াশ সন্ধ্যাকে পছন্দ করে তো?’
লিজা ঠাস করে একটা কি’ল বসায় আকাশের পিঠে। বলে, ‘তোর অশুভ মুখে অশুভ কথা বলবি না হা’রামি। সন্ধ্যার বিয়ে ঠিক হয়লে ওর বিয়ে আমরা ভাঙমু তাও আয়াশ-সন্ধ্যা রে এক করমুই করমু।’
‘হ তা ঠিক আছে। কিন্তু ওরা গেলো কই?’
সাফি দাঁত বের করে বলে, ‘দুজনে ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে গল্প করছে।’
তমাল বলে, ‘ভুত ছাড়া যে অন্য কিছু দেখছিস এটাই আমাদের জন্য অনেক।’
__________________
সকাল সকাল সাহেদা কাজে চলে আসছে। সন্ধ্যা সকাল থেকেই আড়চোখে আয়াশের দিকে তাকাচ্ছে। রাতে যখন আয়াশকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ভালোবাসা কি?’ তখন কোনো উত্তর দেয়নি আয়াশ। চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেছে। সন্ধ্যা ভাবছে আয়াশ কি রাগ করলো? তাই বোকার মতো লিজার কাছে প্রশ্ন করে বসে,
‘আপু ভালোবাসা কি?’
লিজার সাথে জেরিনও ছিলো। দুজনে এমন ভাবে সন্ধ্যার দিকে তাকালো মনে হলো যেন চোখ কোটর ভেদ করে বাহিরে চলে আসছে। থতমত খায় সন্ধ্যা। এরাও কি রাগ করবে নাকি? লিজা অবাক কন্ঠে বলে,
‘ভালোবাসা কি জানো না?’
সন্ধ্যা দুদিকে মাথা নাড়ায়। জেরিন কপাল চাপড়ায় আর বলে, ‘এ তো ভালোবাসা কি তাই জানে না। আর এই দুই নিরামিষ রে আমরা কেমনে এক করবো? আল্লাহ বাঁচাও।’
জেরিন বিড়বিড় করে বলেছে বলে সন্ধ্যার কান অবদি পৌঁছায় না। সন্ধ্যা ফের বলে,
‘রাগ করো না আপু।’
‘আরেহ রাগ করবো কেন? এটা কি রাগের মতো কোনো বিষয়?’
সন্ধ্যা কনফিউজড গলায় বলে, ‘যদি রাগ করার মতো বিষয় না হয় তাহলে শহুরে ডাক্তার কেন রাগ করছে?’
জেরিন আর লিজা আয়াশের কথা শুনেই লাফিয়ে সন্ধ্যার কাছে এসে তাকে চেপে ধরে। বলে, ‘শহুরে ডাক্তার মানে আয়াশ রাগ করছে তোমার ওপর? কি বলছো তুমি?’
সন্ধ্যা সরল মনে বলে, ‘শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম ভালোবাসা কি!’
জেরিন আর লিজা একে অপরের দিকে তাকায়। তারপর হতাশ স্বরে ‘ধ্যাত’ বলেই উঠে পড়ে। সেসময় দৌড়ে আসে বকুল। সরাসরি সন্ধ্যার কাছে এসে বলে, ‘সন্ধ্যা ফরিদ কাকারে কে জানি মে’রে ফেলছে। চল তাড়াতাড়ি। ‘
কথাটা যেন বিস্ফোরণ ঘটালো পুরো রুমে। লিজা দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বলে, ‘মানে? মে’রে ফেলছে মানে?’
‘জানি না। আমি এখনো দেখি নাই। সকাল সকাল সবার মুখে এসব শুনে দৌড়ে আসলাম। দেড়ি করার সময় নাই। সন্ধ্যা দ্রুত চল।’
বলেই সন্ধ্যার হাত ধরে দৌড় লাগালো। লিজা আর জেরিন বাইরে এসে সবাইকে বলে তারাও পেছন পেছন দৌড় লাাগায়। সাহেদাও আছে সাথে। একটা বিশাল জমিতে সবার ভীড় দেখে সেখানে ছুটে আসে সবাই। ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই সবাই ভয় পেয়ে যায়। সামনে পড়ে আছে ফরিদের টুকরো টুকরো ক্ষত বিক্ষত দেহ। সন্ধ্যার চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফের এক ক্ষত বিক্ষত লা’শ। লুটিয়ে পড়তে নিলে আয়াশ সন্ধ্যাকে আগলে নেয় নিজের প্রশস্ত বুকে…
চলবে..
(