#সন্ধ্যামালতী (০৭)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
__________________
সন্ধ্যাকে সাথে সাথে হসপিটালে আনায় সেন্স ফিরতে বেশি টাইম লাগেনি৷ দুপুরের দিকে হসপিটাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসে সন্ধ্যাকে। পুরো এলাকা ফরিদের মৃত্যুতে আতঙ্কিত হয়ে আছে৷ সেদিনের সেই মেয়ের মৃত্যু আর আজ ফরিদের! কিন্তু এদের মা’রার কারণ কি? এরপর আবার কে হবে পরের শিকার! এসব নিয়ে সবাই খুবই চিন্তিত। সন্ধ্যাকে নিজেদের বাড়ি এনে গোসল করিয়ে দেয় সাহেদা। আয়াশরা সবাই বড় ঘরের ভেতর বসে আছে। সন্ধ্যাকে গোসল করিয়ে এনে বসায়। আয়াশ গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
‘তুমি বার বার সেন্সলেস হও কিভাবে?’
সন্ধ্যা আয়াশের দিকে তাকায়। কিন্তু উত্তর দেয় না। লিজা বলে, ‘এখন এসব বাদ দে আয়াশ। সন্ধ্যা তুমি রেস্ট নাও। আমরা যায়।’
সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। আয়াশরা সবাই চলে যায়। সাহেদা খাবার নিয়ে এসে সন্ধ্যাকে খাইয়ে দেয়। সন্ধ্যা চুপচাপ খেয়ে নেয়। সাহেদা এঁটো প্লেট নিয়ে ঘর থেকে বের হতে নিলে সন্ধ্যা পিছু ডাকে। সাহেদা ফিরে তাকাতেই সন্ধ্যা বলে,
‘সেদিন বাবার সাথে কি হয়ছিলো আম্মা?’
সাহেদা চমকায়। মেয়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দ্রুত বের হয় ঘর থেকে। সন্ধ্যা জানতো তার মা উত্তর দিবে না তাই কোনো রকম কথা না বাড়িয়ে নিজের মতো বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ফরিদ কাকাকে কে মা’রলো? কার সাথে তার এতো শত্রুতা?
রাস্তায় বের হয়ে আয়াশরা সবাই চুপচাপ হাঁটতে থাকে। সবার মাথাাতেই এক প্রশ্ন! সন্ধ্যা যেদিন ফরিদকে সবার সামনে জু’তা দিয়ে মা’রলো সেদিনই কেনো ফরিদের মৃত্যু হলো? ফরিদ যে বেঁচে থাকলে সন্ধ্যার ক্ষতি করতো তা সবারই জানা কিন্তু তার আগেই ফরিদকে কে মা’রলো? লিজা নিরবতা ভেঙে বলে,
‘এটা গ্রাম না রে৷ রহস্যের বস্তা।’
রানা সায় দিয়ে বলে, ‘এখানে কিছু তো আছে। আয়াশ তোর মনে আছে সন্ধ্যার বাবার মৃত্যুর কথা? আমি শুনেছি সন্ধ্যার বাবা এক্সিডেন্টে মা’রা গেছিলো কিন্তু তারও এরকম কয়েক টুকরা পাওয়া গেছিলো।’
আয়াশ রানার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। আকাশ বলে, ‘দোস্ত আমি খবর নিয়েছি এর আগে এই এলাকায় এই ধরনের মা’র্ডার ৩ টা হয়ছে। আর ৩ জন-ই ছিলো এমন লোফার ক্যারেক্টারের।’
আয়াশ গম্ভীর কন্ঠে শুধায়, ‘কে কে সেই ৩ জন?’
‘এলাকার এক্স মেম্বার, মেম্বারের ছেলে আর চেয়ারম্যানের ছেলে।’
তমাল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘বলিস কি? ফিরোজের ছেলেও খু’ন হয়ছে? কিন্তু কেন?’
‘এরা সবাই মেয়েদের সাথে অ’সভ্যতা করতো। মেম্বার আর চেয়ারম্যানের ছেলে মিলে ২ টা মেয়েকে রেপও করছে কিন্তু কোনে প্রকার বিচার হয়নি, পুলিশ কেসও হয়নি৷ মেয়েগুলো লজ্জায় সুইসাইড করার দুইদিন পরই ওই জা’নো’য়া’র গুলোরও খু’ন হয়।’
আয়াশ অদ্ভুত রকম এক হাসি দিয়ে বলে, ‘আর যে মেয়েগুলো ভিক্টিম ছিলো তাদের সাথে অদ্ভুত ভাবে সন্ধ্যার আত্মীয়তা আছে।’
উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে তাকায়। আয়াশ বাঁকা হেঁসে বলে, ‘একটা মেয়ে যার নাম সোনিয়া সে ছিলো সন্ধ্যার বান্ধবী আর অন্য মেয়ে যার নাম নয়না সে ছিলো সন্ধ্যার প্রাণপ্রিয় ফুফাতো বোন।’
সবাই বুঝে যায় আয়াশ কি বলতে চাচ্ছে। রানা বলে, ‘তুই এতো কিছু কিভাবে জানলি? আর তাছাড়া সন্ধ্যা অনেক ছোট। ‘ও’ এতো মারপ্যাচ বোঝে না।’
‘প্রথমত তোরা হয়তো ভুলে গেছিস আমরা কারা আর কেনো এখানে এসেছি! আর দ্বিতীয়ত সময় আসলে নিজেই বের হয়ে আসবে কে কি করেছে! বাই দ্যা ওয়ে আজকেও পেশেন্ট দেখতে হবে। দ্রুত চল।’
লিজা হাঁটতে হাঁটতে বলে, ‘দোস্ত আমার মনে হয় আমাদের চলে যাওয়া উচিত গ্রাম ছেড়ে।’
সবাই তাকায় লিজার দিকে। লিজা ফের বলে, ‘দেখ যারা খু’ন হয়েছে আমি মনে করি তারা একটাও মানুষের মধ্যে পড়ে না। আর আমরা কোনো অ’মানুষের খু’নীদের শাস্তি দিতে চাই না।’
রানা বলে, ‘তুই ঠিক। তবুও এদের কেনো মা’রা হলো! এগুলো তো জানা দরকার।’
আয়াশ বলে, ‘মানলাম যারা মা’রা গেছে তারা মানুষের মধ্যে পড়ে না কিন্তু ২ দিন আগে যে মেয়েটা মা’রা গেছে তাকে কেন মা’রা হলো? সেদিন সাহেদা আন্টি ১ ঘন্টা ২৫ মিনিট কোথায় ছিলো? এগুলো তো জানা দরকার। আর আমার সন্দেহ যদি ভুল না হয় তাহলে সন্ধ্যার বাবার মা’রা যাওয়াটাও কোনো এক্সিডেন্ট না ওটাও কোনো না কোনো ভাবে খু’ন।’
আকাশ কিছুক্ষণ ভেবে বলে, ‘যে মেয়েটা মা’রা গেছে তার বিষয়ে আগে খোঁজ নিতে হবে৷ আর এখন সবাই চুপ। রাস্তায় এগুলো নিয়ে কোনোরকম ডিসকাশন না।’
কেউ আর কোনো কথা বললো না। সবার মাথায় ঘুরছে একটাই কথা! এতো সৌন্দর্যের, নিষ্পাপ মুখের মেয়ে কি আদৌও কোনো খু’ন করতে পারে?
_______________
টুকরো টুকরো লা’শের খুব কাছে বসে আছে সন্ধ্যা। পাথরের মতো তাকিয়ে আছে রক্ত মাখা মুখের দিকে৷ কয়েকটা টুকরো পড়ে আছে বলে ভয়ে কেউ কাছে আসছে না৷ পাশেই সন্ধ্যার মা বিলাপ করে কাঁদছে। সন্ধ্যা একবার সেদিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়। হঠাৎ করেই চিৎকার করে কান্না করে ওঠে।
‘সন্ধ্যা কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে? চোখ খোল।’
সন্ধ্যা ধীরে ধীরে চোখ খুলে৷ নিজেকে বিছানায় দেখে খানিকটা চমকায়। মস্তিষ্ক সজাগ হতেই সে বুঝতে পারে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো। সামনে বাদলকে বসে থাকতে দেখে চোখ মুছে নেয়। নিজের কাপড় ঠিক করে বসে। বাদল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সন্ধ্যা নরম গলায় বলে,
‘খারাপ স্বপ্ন দেখেছি বাদল ভাই।’
বাদল আর কিছু বলে না। কাল সে শহরে গেছিলো বলে কিছুই জানে না। আজ এসে সব শুনতেই ছুটে এসেছে সন্ধ্যার কাছে। সন্ধ্যা বাহিরে তাকিয়ে দেখে বিকেলের রোদ কমে গেছে। তার মানে সে অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছে। বাদল নিরবতা ভেঙে বলে,
‘ফরিদ কাকার বিষয়ে কিছু জানিস? আর তাছাড়া তুই নাকি কাল বিচার সভায়…
সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। তারপর আস্তে করে বলে, ‘এসব ছাড়েন। আপনি কাল শহরে গেছিলেন?’
বাদল হেঁসে মাথা নাড়ায়। সন্ধ্যা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বলে, ‘হাসলেন কেন?’
‘এমনিতেই। অনেকক্ষণ এসেছি। এবার আমি বাড়ি যায়। আর চাঁচি রান্না করতে গেছে৷ তুই উঠলে তোকে বলতে বলছিলো৷ আর তোর ইচ্ছে হলে ওখান থেকে ঘুরে আয়। কিছুদিন এখন এলাকা শান্ত থাকবে।’
সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। বাদল চলে যেতেই সেও ঘর থেকে বের হয়। কলপাড়ে গিয়ে নিজের চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে নিজেও বের হয়। ধীরে ধীরে হেঁটে আসে আয়াশরা যেখানে থাকে সেখানে। মায়ের সাথে দেখা করে পুকুর ঘাটে আসে। পুকুর ঘাটে আয়াশরা বসে ছিলো। লিজা সন্ধ্যাকে দেখে এগিয়ে আসে। বলে,
‘এখন কেমন আছো সন্ধ্যা?’
সন্ধ্যা মাথা নাড়িয়ে গলার স্বর ধীর করে বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপু। আজ তোমরা রোগী দেখতেছো না?’
‘দেখছি তো। যে কয়েকটা পেশেন্ট তাতে বেশিক্ষণ লাগে না। আর তাছাড়া অনেক কয়দিন থাকবো বলে সবাই আস্তে ধীরে আসতেছে। শেষের ৩ দিন দেখিয়ো কেমন ভীড় হয়!’
সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। লিজা সন্ধ্যার হাত ধরে আস্তে করে বলে, ‘তোমাকে একটা প্রশ্ন করলে উত্তর দিবা?’
‘হুম বলো।’
সন্ধ্যা জানে লিজা কি প্রশ্ন করবে তবুও চুপ করে সায় দেয়। লিজা আমতা আমতা করে বলে, ‘তুমি বার বার সেন্সলেস হও কেমনে?’
সন্ধ্যা হেঁসে বলে, ‘আসলে আমার বাবার মৃত্যুর পর থেকে যখনই তার রক্তাক্ত মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে তখনই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’
লিজা কিছু বলতে যাবে তার আগেই জেরিন ডাকে। বলে, ‘দুজনে একা একা কি ফিসফিস করতেছো? এদিকে আসো।’
সন্ধ্যা আর লিজা এগিয়ে আসে। সাফি বলে, ‘আমার কি মনে হয় জানো সন্ধ্যা! তোমা…
আর কিছু বলার আগেই রানা সাফির মাথায় গাট্টা মেরে বলে, ‘তোর কি মনে হয় ‘ও’ কেমনে জানবে? ব’ল’দ!’
সাফি দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘পুরো কথা না শুনে লাফাস কেন শালা?’
তমাল বলে, ‘ওকে কুল কুল। সাফি বল কি বলতে চাচ্ছিলি!’
‘আরেহ আমার মনে হয় সন্ধ্যাদের এই গ্রামে ভুত আছে নয়তো ২ দিনে ২ মানুষ খু’ন! আল্লাহ।’
আকাশ, তমাল, রানা এক সাথে বলে উঠে, ‘ভুত কি বাচ্চে তোরে আজ পানিতে চুবামু।’
সাফি ভয়ে দৌড় দিয়ে সন্ধ্যার পেছনে লুকায়। সন্ধ্যা হালকা হেঁসে বলে, ‘ শুধু ভুত না ভাইয়া এটা হলো মানুষ ভুত। শুধু ভুত হলে একেবারে ঘাড় মটকে খেয়ে ফেলতো কিন্তু এখানে তো কে’টে পিস পিস করে রাখছে।’
গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় লিজার। সন্ধ্যা আর কিছু না বলে চলে যায়। লিজা এগিয়ে আসে আয়াশের কাছে। বলে, ‘আমার কিন্তু মনে হয় না সন্ধ্যা কোনো ধরনের খু’ন করতে পারে!’
রানা সায় দিয়ে বলে, ‘এতো ভালো, সাদাসিধা, ভীতু একটা মেয়ে খু’ন করতে পারে না দোস্ত।’
আয়াশ বিরক্তির দৃষ্টি নিয়ে তাকায় সবার দিকে। বলে, ‘বুঝলাম না তোরা কি আগে থেকেই গাধা নাকি সন্ধ্যাকে দেখে গাধা হয়ে গেছিস!’
‘মানে কি?’
‘মানে কিছু না। আজকের মধ্যে খোঁজ লাগা যে মেয়েটা দুইদিন আগে খু’ন হয়েছে তার সাথে সন্ধ্যা, সোনিয়া, নয়না বা সাহেদা আন্টির কোনো সম্পর্ক আছে কি না!’
জেরিন বলে, ‘তুই বার বার সন্ধ্যাকে কেন এসবে টানছিস? কাল যখন ফরিদ সাহেব মা’রা গেছে তখন কিন্তু সন্ধ্যা আমাদের সাথে ঘুমিয়ে ছিলো৷ আর যেদিন ওই মেয়েটা,মা’রা যায় সেদিনও সন্ধ্যা হসপিটালে ছিলো।’
আয়াশ কপালে কয়েকটা ভাজ ফেলে। বলে, ‘তোদের মনে হয় সন্ধ্যার মতো পিচ্চি একটা মেয়ে একা ফরিদকে মে’রে কে’টে রেখে দিতে পারবে!’
তমাল বলে, ‘তার মানে তুই বলতে চাচ্ছিস যে সন্ধ্যার সাথে অন্য কেউ আছে এগুলোতে!’
‘এক্সাক্টলি!’
রানা বলে, ‘ভাই তুই সন্ধ্যাকে ভালোবাসিস না?’
আয়াশ অবাক হয়ে বলে, ‘হোয়াট! সন্ধ্যার সাথে আমার পরিচয় আজ মাত্র ৩ দিন এর মধ্যে ওরে ভালোবাসবো মানে কি? আর তাছাড়া তোদের মাথার কি তার ছিড়ে গেছে? ভুলে গেছিস আমার ফিয়ন্সে আছে।’
আকাশ ভেংচি কেটে বলে, ‘তোর ওই মাতাল ফিয়ন্সে! সর তো শা’লা।’
বলেই আকাশ উঠে যায়। সাথে সবাই যায়। আয়াশ পেছন থেকে আহম্মকের মতো তাকিয়ে বলে, ‘হোয়াট দ্যা ফাজ ইয়ার?’
সন্ধ্যা পেড়িয়ে কেবলই অন্ধকার নেমে এসেছে তখনই ছুটে আসে আকাশ, তমাল আর রানা। আয়াশ, লিজা, জেরিন আর সাফি মাথা তুলে তাকায় তাদের দিকে৷ রানা ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে,
‘দোস্ত সন্ধ্যার সাথে ওই খু’ন হওয়া মেয়েটার সম্পর্ক আছে৷ সোনিয়া, নয়না, সন্ধ্যা আর ওই মেয়ে মানে মুন্নি এরা সবাই একটা ফ্রেন্ড সার্কেল।’
চলবে…#সন্ধ্যামালতী (০৮)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_________________
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বাহিরে আসে সন্ধ্যা। মুক্ত বাতাসের টেনে নেয় গন্ধ। সকালটা অন্যরকম মনে হলো তার। অন্যরকমই তো! কোনো পশুর থেকে লুকিয়ে বাঁচার আর প্রয়োজন নেই। সাহেদা সকাল সকাল কাজে চলে গেছে। সন্ধ্যা নিজেই বাড়ির সবার জন্য রান্না বসায়। রান্না শেষ করে দাদাকে খাওয়ায়। তারপর সব ঠিকঠাক করে হাঁটা লাগায় বকুলদের বাড়ির দিকে। বকুল তখন উঠোনে বসে আচার চিবুচ্ছে। সন্ধ্যাকে দেখে আচারের বয়াম রেখে এগিয়ে আসে সন্ধ্যার কাছে। সন্ধ্যা মুচকি হেঁসে বলে,
‘সকাল সকাল আচার খাচ্ছিস! এসব রাখ। চল বাগানে যাবো।’
বকুল কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ‘বাদল ভাই কিন্তু বাড়িতে।’
সন্ধ্যা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, ‘তো আমি কি করবো! তোর ওই ভাইকে ভয় পায় নাকি? চল তো৷’
বকুলের হাত টেনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে। বকুল কথায় কথায় বলে, ‘আচ্ছা সন্ধ্যা তোরও বিয়ে হয়ে গেলে তো আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে তাই না!’
সন্ধ্যা দুষ্টুমির হাসি হেঁসে বলে, ‘মনে হচ্ছে সইয়ের আমার খুব বিয়ে করার শখ হয়ছে। না সমস্যা নাই শখ হলে বল আমি কাকিকে বলে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করতেছি।’
বকুল সন্ধ্যার মাথায় গাট্টা মেরে বলে, ‘যাহ! ভেবেছিলাম তোর আর বাদল ভাইয়ের বিয়ের পর দুজনে একসাথে অনেক মজা করবো। কিন্তু…
‘কিন্তু কি?’
‘কিছু না। শোন না সই! ভাই সেদিন শহরে গেছিলো না? ওইদিন তোর জন্য শাড়ি আর গহনা আনছে।’
সন্ধ্যার মুখটা মলিন হয়ে যায়। এই বিয়েটা করে আদৌও কি সে সুখী হবে? বাদল কত কি এখনি করে ফেলেছে কিন্তু তার তো বিয়ের প্রতি কোনো আগ্রহই নেই। তাহলে? সন্ধ্যাকে কিছু ভাবতে দেখে বকুল ধাক্কা দেয় সন্ধ্যাকে। সন্ধ্যা চমকে তাকায়। বকুল বলে,
‘কি ভাবছিস বল তো?’
‘কিছু না। শোন বাগান দিয়ে ঘুরে শহুরে ডাক্তারদের ওখানে যাবো।’
বকুল দাঁড়িয়ে পড়ে। ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘কেন?’
‘কেন আবার? এমনিই।’
বকুল সন্ধ্যাকে সামনে দাঁড় করিয়ে বলে, ‘আচ্ছা একটা সত্যি কথা বল। তোর কিসের টান এতো শহুরের ডাক্তারের ওপর?’
সন্ধ্যা আনমনে আস্তে করে বলে, ‘জানি না।’
বকুল স্পষ্ট শুনতে পায় না। ফের জিজ্ঞেস করে, ‘বলছিস না কেন?’
সন্ধ্যা বকুলকে সরিয়ে বকুলের হাত ধরে সামনে হাঁটতে থাকে। তারপর জোড় করে হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘আরে কিসের টান হবে? কোনো টান ফান নাই। তুই তো জানিস চেয়ারম্যানের ওই বাড়ির পুকুর ঘাট আমার কত প্রিয়! তাই যায় ওখানে। চেয়ারম্যান তো এখন আর কিছু বলে না আর আগে গেলেই সাপের মতো ফোঁসফোঁস করছে।’
বকুল শব্দ করে হেঁসে ওঠে। এর মধ্যেই পেছন থেকে আওয়াজ আসে এ্যাম্বুলেন্সের শব্দের। বকুল আর সন্ধ্যা দুজনেই পেছনে তাকায়। তাদের সামনে দিয়ে সাই করে চলে যায় এ্যাম্বুলেন্স। পেছন পেছন সন্ধ্যা আর বকুলও যায়। এ্যাম্বুলেন্স থামে চেয়ারম্যানের বাড়িতে। চেয়ারম্যানের বাড়িতে তখন কান্নার সুর। সন্ধ্যা আর বকুল এসে এক পাশে দাঁড়ায়। এ্যাম্বুলেন্স থেকে সাদাা কাপড়ে মুড়িয়ে লাশ নামানো হয়। সবাই লাশকে ধরে কান্না কাটি করতে থাকে। সন্ধ্যা তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে আস্তে করে আওড়ায়,
‘জা’নো’য়া’রে’র জন্য চোখের পানি নষ্ট করার চেয়ে নিজেকে স্বার্থপর, খারাপ প্রমাণ করে হাসতে থাকা ভালো।’
কিছু কিছু লোক শুধু শান্ত্বনা দিতে হয় তাই দিচ্ছে। নয়তো সবার মনেই বিষ এই ক্ষত বিক্ষত লাশের জন্য। মুখের ওপর থেকে সাদা কাপড় সরাতেই লোকজন ভয়ে দুকদম পিছিয়ে যায়। সন্ধ্যা হাসে। ফরিদের পুরো মুখে, গলায়, শরীরে সেলাই করা। লাশের কয়েকটা টুকরো হয়েছিলো বলে সব একসাথে করে সেলাই করা হয়েছে। সাথে সাথে আবার ঢেকে দেওয়া হয় ফরিদের মুখ। বাড়ির বারান্দায় মুখ ভার করে বসে আছে ফিরোজ চেয়ারম্যান। তার আশে পাশে আরো মানুষ। সন্ধ্যা সবাইকে একবার দেখে নেয়। চোখ বন্ধ করে বড় শ্বাস নেয়। সমাজ থেকে আরো একটা কীট মুক্ত হলো। সেই প্রশান্তিতে আরো একজনের ঠোঁট প্রসারিত হয়। সেই প্রশান্তির হাসি সন্ধ্যার চোখ ফাঁকি দেয়নি। নিঃশব্দে হাসে সন্ধ্যাও।
সন্ধ্যা আর বকুল চলে যেতে নিলেই হাজির হয় আয়াশ, রানা, আকাশ, তমাল, সাফি, লিজা আর জেরিন। সবাই সন্ধ্যা আর বকুলকে দেখে এগিয়ে আসে তাদের দিকে। লিজা বলে,
‘তোমরা এখানে?’
সন্ধ্যা উত্তর দেয়, ‘তোমাদের ওখানেই যাচ্ছিলাম। আসার পথে এ্যাম্বুলেন্স দেখে পেছন পেছন এলাম। এক্ষুনি আমরাও বের হচ্ছিলাম। তোমরা এখানে কেন?’
রানা বলে, ‘আজকে তো কয়েকজন লোক শুধু আসছিলো আমাদের কাছে। তাদের মুখে শুনলাম সবাই চেয়ারম্যান বাড়ি। তাই আসলাম দেখতে।’
সন্ধ্যা হেঁসে বলে, ‘যান দেখে আসেন। ওই যে ফরিদ কাকার লা’শ আনছে। একবার সবাই দেখে ভয় পাইছে তার পর আর মুখ থেকে কাপড় তোলেনি। আপনারা তো ডাক্তার দেখলে দেখেন।’
সাফি তাড়াতাড়ি লিজার কাছে এসে বলে, ‘পাগল নাকি! ওই কয়েক টুকরো লা’শকে আমি দেখবো না৷ রাতে ভুত হয়ে আমার গলা টিপে দিতে পারে।’
লিজা সাফির চুল টেনে ধরে বলে, ‘ব’ল’দ। কবে মানুষ হবি তুই? এই জেনারেশনে এসেও তোর ভুতে ভয়!’
সাফি ভেংচি কাটে। রানা আয়াশকে মন দিয়ে কিছু দেখতে দেখে কনুই দিয়ে গুতো মারে৷ আয়াশের ততক্ষণে পুরো পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা শেষ। রানা ফিসফিস করে বলে,
‘কি দেখছিস এভাবে?’
‘পরিবেশ।’
‘এ্যাহহহ?’
‘হ্যাঁ।’
বলেই এগিয়ে আসে লা’শের কাছে। রানা মাথা চুলকাতে চুলকাতে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘একটাও উল্টা পাল্টা কথা বললে তোর খবর আছে।’
রানাও ভেংচি কাটে। তারপর সবাই মিলে এগিয়ে যায় আয়াশের কাছে। আয়াশ পাশে বসে থাকা একজন লোককে বললো,
‘লা’শের মুখ দেখা যাবে?’
লোকটির থমথমে গলায় উত্তর, ‘মুখ দেইখা আবার ডরাইবা নে।’
‘হোয়াট ইজ ডর?’
লোকটি তাকিয়ে থাকে। পাশ থেকে সন্ধ্যা বলে, ‘ভয়।’
‘ওহ’ বলেই আয়াশ আবার লোকটির দিকে তাকায়। মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বলে, ‘ভয় পাবো না। আমাদের অভ্যাস আছে। দেখান!’
লোকটি আর কথায় বাড়ায় না। মুখের কাপড় তুলে দেয়। লিজা আর জেরিন ভয় পায়। দুকদম পিছিয়ে দাঁড়ায়। সাফি তাকায়ই না লাশের দিকে। আয়াশ নিজের মতো দেখে বলে,
‘হুম ঠিক আছে।’
তারপর উঠে আসে। বাড়ি থেকে বের হয়। রানা,তমাল, আকাশ আর আয়াশ সামনে। লিজা, জেরিন, সন্ধ্যা, বকুল, সাফি এক সাথে। রানা একবার পেছনে তাকিয়ে বলে, ‘কি বুঝলি?’
আয়াশ গভীর কিছু ভেবে বলে, ‘কিছু বুঝতেছি না। আমরা যেই জিরো পয়েন্টে ছিলাম এখনো সেখানেই আছি।’
‘আচ্ছা তোর কি কালকের ঘটনার পরও মনে হয় সন্ধ্যা এসবের পেছনে আছে?’
আকাশের কথায় তার দিকে তাকায় আয়াশ। পাশ থেকে তমাল বলে, ‘আমার কিন্তু মনে হয় না সন্ধ্যা এসবের পেছনে আছে! আমার তো মনে হয় ‘ও’ নিজেই পরের টার্গেট।’
আয়াশ বলে, ‘কালকের ক্লুর পর আমি কনফিউজড সন্ধ্যা আসলে কি? টার্গেট নাকি মাস্টারমাইন্ড! ‘
রানা বলে, ‘দোস্ত ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে একমাত্র বেঁচে আছে সন্ধ্যা। বকুলের সাথে সন্ধ্যার ফ্রেন্ডের কোনো হাত নেই। মানে বকুল আলাদা ব্যাচ।’
‘দেখ রেপড হয়ছে নয়না আর সোনিয়া। ওরা নিজেরাই সুইসাইড করছে। মুন্নি কে কেন মা’রা হলো? কে মা’রলো? ‘ও’ কি কিছু জানতো!’
‘সম্ভাবনা আছে কিন্তু জানতে হবে। আর সন্ধ্যার থেকেই জানতে হবে।’
সবাই সায় দেয়। তারপর টপিক চেঞ্জ করে। সবাই একসাথে চলে আসে পুকুর ঘাটে। শান বাঁধানো পাথরে, সিড়িতে বসে সবাই। কথায় কথায় রানা সন্ধ্যাকে বলে,
‘তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি সন্ধ্যা!’
সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। রানা কিছুটা ইতস্তত করলেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে, ‘যাওয়ার সময় কিছু লোকের মুখে শুনেছিলাম এই গ্রামে নাকি আগেও এরকম মা’র্ডার হয়ছে। কথাটা কি সত্যি?’
লিজা আর জেরিন চমকায়। রানা এসব কি জিজ্ঞেস করছে! সন্ধ্যা উল্টো বুঝলেই তো তারা কেইস খাবে! সন্ধ্যা আর বকুলের মুখ মলিন হয়ে যায়। রানা হাসার চেষ্টা করে বলে,
‘ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ আসলে যাওয়ার পথে শুনলাম তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম। এমন হলে তো গ্রামে সমস্যা। লোকজন তো ভয়ে গুটিয়ে নিবে নিজেকে। মনের মধ্যে ভয় থাকবে এর পর না জানি কে মা’রা যায়! তোমাদের গ্রামের পুলিশরা কিছু করছে না?’
সন্ধ্যা চোখ মুখ শক্ত করে বলে, ‘যতগুলো লোক অস্বাভাবিক মাা’রা গেছে সবগুলো একেকটা জা’নো’য়া’র ছিলো। পশুর থেকেও ঘৃণ্য।’
সন্ধ্যার চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ আর ঘৃণা ভেসে ওঠে। আয়াশ গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করে, ‘কি করেছিলো ওরা?’
সন্ধ্যা তাকায় আয়াশের দিকে। চোখ ছলছল করে ওঠে। কন্ঠ নরম হয়ে আসে। কথা গুলো আটকে আসে গলায়। কোনোরকম বলে, ‘আমার ভীষণ প্রিয় সই আর ভীষণ প্রিয় বোনকে কেড়ে নিছে ওরা।’
রানা কিছু বলতে গেলে আয়াশ ইশারায় থামিয়ে দেয়। লিজা আর জেরিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে, ‘আরে কি মার্ডার টার্ডার লাগায় রাখছে সব! এসব বাদ এখন সন্ধ্যা বলো তুমি না বলছিলে তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তা কার সাথে গো?’
সন্ধ্যা নিজেকে সামলে আয়াশের দিকে তাকিয়েই উত্তর দেয়, ‘বাদল ভাই।’
‘সেইটা আবার কে?’
বকুল হেঁসে বলে, ‘আমার ভাই।’
জেরিন বলে, ‘আরেহ বাহ। দুই সই তাহলে ভাবি ননদিনী হয়ে যাচ্ছো।’
বকুল হাসে। সন্ধ্যা মলিন দৃষ্টিতে তাকায় আয়াশের দিকে। তার ভেতরের সত্তা কিছু তো চায় সে বোঝে কিন্তু কি চায়? এই মানুষটার প্রতি তার এতো কিসের টান? সাফি হাসতে হাসতে বলে, ‘আরেহ সামনে মান্থে তো আমাদের আয়াশেরও বিয়ে। বাহ সন্ধ্যারও বিয়ে আয়াশেরও বিয়ে।’
সন্ধ্যা চমকে তাকায় সাফির দিকে। শহুরে ডাক্তারের বিয়ে? হঠাৎ ঠিক হলো নাকি আগে থেকেই ঠিক? বুকের বাম পাশে যেনো চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হলো। আয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়াশ স্বাভাবিক। মনের যেটুকু আশা ছিলো তাও ভেঙে গেলো। এবার সে কার জন্য নিজের বিয়ে আটকাবে? আদৌও কি প্রয়োজন আছে? সন্ধ্যাকে যেনো কেউ অলৌকিক ভাবেই উত্তর দিলো, ‘প্রয়োজন নেই। তুই কি আদৌও বুঝিস ভালোবাসা কি?’
সন্ধ্যা চোখ বন্ধ করে। আকাশে মেঘ ডাকে। সকাল থেকেই আবহাওয়ার অবস্থা তেমন ভালো না। বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব। সবাই উঠে পড়ে সন্ধ্যা ছাড়া। বকুলও বাড়ির দিকে দৌড় দেয়। বৃষ্টিতে আটকে গেলে সমস্যা। সব ছেলেরা চলে গেলে লিজা আর জেরিন সন্ধ্যার কাছে আসে। দ্রুত কন্ঠে বলে,
‘সন্ধ্যা উঠো। বৃষ্টি আসতেছে।’
সন্ধ্যা আনমনে উত্তর দেয়, ‘ভিজবো আমি। তোমরা যাও।’
লিজা আর জেরিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই বৃষ্টির ফোটারা পড়তে শুরু করে। দৌড় লাগায় লিজা আর জেরিন। সন্ধ্যা ওভাবেই বসে থাকে। বৃষ্টির কণা তাকে ভিজিয়ে দেয়। সন্ধ্যা বসা থেকে উঠে দুপা এগোয় পুকুরের দিকে। দু হাত মেলে বৃষ্টির ফোঁটাদের যেন আমন্ত্রণ জানায় সে। এ বৃষ্টিতে মুছে যাক সব বেদনা, সব পাপ, সব পাপী। এ বৃষ্টির পর নতুন এক সকাল হবে। নতুন করে কারো জীবন শুরু হবে। বৃষ্টির পানিতে ভিজতে ভিজতে চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখ বন্ধ করে আস্তে করে আওড়ায়,
‘এ কিসের টান শহুরে ডাক্তার? এ কেমন মরণ ব্যাধি আমার? সন্ধ্যামালতীর যে দম আটকে আসে এ অনুভূতিতে। এ অনুভূতি যে শূণ্যের কোঠায় পৌছোবে আর ক’টা দিন পর। না আপনি জানবেন এ অনুভূতিকে আর না অন্য কেউ। এ অনুভূতি একান্ত সন্ধ্যামালতীর। এ অনুভূতি শুধু জানবে সন্ধ্যাবেলার সন্ধ্যামালতীরা আর এই ঝুম বৃষ্টির ফোঁটারা।’
কিছুক্ষন চুপ থাকে। সেসময় পেছন থেকে কেউ তাকে টেনে ধরে। সন্ধ্যা পেছনে তাকাতেই চোখাচোখি হয় আয়াশের সাথে। বৃষ্টির প্রকোপে সন্ধ্যা কোনোরকম তাকায় আয়াশের দিকে। ঠোঁটের কোণে ভেসে উঠে এক চিলতে হাসি। একদম আস্তে করে ঠোঁট নাড়িয়ে বলে, ‘শহুরে ডাক্তার!’
আয়াশ যেনো সন্ধ্যামালতীর আরো এক রুপ দেখলো। বৃষ্টিতে ভিজা সন্ধ্যামালতী যেমন স্নিগ্ধ, সুন্দর হয় এ সন্ধ্যামালতীও ঠিক তেমন। যেন সদ্য ফুটে উঠেছে। দুজনের কারোর খেয়াল নেই তারা এতোটাই কাছে যে বৃষ্টির ফোঁটা আয়াশের মুখ বেয়ে সন্ধ্যার মুখের ওপরেও পড়ছে…..
চলবে..
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❤️)
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️)