সম্পর্কের_মায়াজাল পর্ব ৩

#সম্পর্কের_মায়াজাল_২
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৩

ফোনের ওপাশ থেকে নাদিয়া যা বলল তা শুনে শুভ্রতার মাথা ভনভন করতে লাগলো। মনে হচ্ছে এক্ষুনি সে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। শুভ্রতার চোখ বেয়ে দু এক ফোঁটা অশ্রু বিন্দু গড়িয়ে গালের কাছে এসে জমতে লাগলো। নাদিয়ার কথাটি হলো…………

—” বিয়েতে স্পন্দন ভাইয়া তোকে চড় মেরেছিল ওইটা কে যেন ভিডিও করে রাখছিল। আজ সকাল থেকে কেউ যেন ইউ টিউব, ফেসবুক সব জায়গায় ভাইরাল করে দিয়েছে আর ক্যাপশনে লিখেছে

‘ বয়ফ্রেন্ডকে না জানিয়ে বিয়ে বাড়িতে দ্বিতীয় বয়ফ্রেন্ডকে সাথে করে নিয়ে আসায় প্রথম বয়ফ্রেন্ড রেগে তার গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে থাপ্পড় মারে আর জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যায়’

—–“এখন এই ভিডিও ও ক্যাপশন সব জায়গায় ভাইরাল হয়ে গেছে । সবাই হাসাহাসি করছে তোকে নিয়ে। তোর নামের আগে এখন বাজে উপাধি দেওয়া হচ্ছে। আমি কয়জনকে বলেছি কাহিনী যে মিথ্যা কিন্তু কেউ বিশ্বাস করে না। তুই আজ বাসা থেকে বের হবি না। যেহেতু ভিডিও ভাইরাল প্রায় অনেক মানুষ দেখেছে রাস্তায় তোকে দেখলে বাজে কথা বলবে।”

নাদিয়ার কথাগুলো নীরবে শুনতে লাগলো শুভ্রতা। সামান্য বিষয়টাকে পাবলিক এত কিছু বানাবে এইসব ভাবতেই তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। এখন রাস্তায় কিভাবে যাবে সেই কথা ভাবলেও তার কানে অনেক গুলো বাজে কথা ভেসে আসা শুরু করল………

—-” শুভ্রু এই শুভ্রু কি বলছি আমি শুনতে পাচ্ছিস? শুন পরীক্ষার দিন আন্টির বোরকা পড়ে আছিস তাহলে কেউ চিনবে না আর যদি চিনেও ফেলে তাহলে কিছু বলবি না চুপ করে থাকবি কেমন?”

—” হুম। এখন ফোন রাখছি পরে কথা বলবো।”

শুভ্রতা ফোন কেটে দিয়ে ফেসবুকে ঢুকে দেখল সবাই তাকে মেনশন দিচ্ছে যারা চিনে। অনেকে ইনবক্সে ম্যাসেজ দিয়ে বাজে বাজে কথা বলছে। শুভ্রতা কোনো কূল কিনারা না পেয়ে ফেসবুক আইডি ডিলেট করে দিলো। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার কিন্তু চিৎকার করে কান্না করার সাহস পাচ্ছে না। খাটের মাথায় শরীর হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে শুভ্রতা আর বিড়বিড় করে বলছে…….

—” তুমি এইটাই চেয়েছিল স্পন্দন ভাইয়া? আমি যেন লোক সমাজে মুখ না দেখাতে পারি এইটাই তো তোমার মূল উদ্দেশ্য ছিল দেখো তোমার ইচ্ছা পূরণ হয়ে গেছে। আমাকে দুশ্চরিত্র মেয়ে বানিয়ে খুব হ্যাপি হয়েছ তো তুমি? এখন রাস্তায় কেউ দেখলে বলবে আমার এখন একটা বয়ফ্রেন্ড হয় না এই জন্য ছেলেদের হাতে মার খাই রাস্তা ঘাটে। এতদিন যারা আমায় ভালো মেয়ে জানতো আজ তারাই আমার দিকে আঙুল ঘুরাবে। আর আমাদের সমাজ তো চুন থেকে পান খসলেই কত কিছু বানিয়ে ফেলে। মনে মনে লক্ষ কোটি কাহিনী নিয়ে বসে থাকে সমাজ।”

শুভ্রতা একা বসে বসে বিড়বিড় করতে লাগলো।

__________________________

সারাদিন কাজের চাপে স্পন্দন শুভ্রতা-কে ফোন দিতে পারলো না। আজ স্পন্দন হসপিটালে গিয়ে রক্ত দিচ্ছিল তখন একজন ডক্টর স্পন্দনকে বলল……

—” আরেহ আপনি তো সেই ভাইরাল সাহসী বয়ফ্রেন্ড । আপনাকে সামনে থেকে দেখতে পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত। আসুন একটা সেলফি নেই আর আমিও ফেমাস হয়ে যাই।”

—” কিসব বলছেন এইসব? কিসের ভাইরাল কিসের বয়ফ্রেন্ড?”

ডক্টর তখন স্পন্দনের কাঁধে হাত রেখে বলল……

—” এইখানে তো দেখছি যার বিয়ে তার হুস নেই পাড়া পড়শীর ঘুম নেই এমন হয়ে গেছে। জানেন সকালে আপনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে আপনার সাহসিকতার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। আপনার মত বয়ফ্রেন্ড থাকলে এখন আর মেয়েরা হাজার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরাঘুরি করতে পারতো না। সাবাস ভাই সাবাস।”

স্পন্দনের ইচ্ছা করছে এই ডক্টর-কে খুব মারতে কিন্তু পারছে না যত হোক ডক্টর উনি। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে বলল…….

—” ভিডিওটা আছে আপনার কাছে? আসলে আমিও দেখতে চাচ্ছি আমার সাহসিকতার পরিচয় তুলে ধরা ভিডিওটি।”

লোকটি ফোন বের করে ভিডিওটি দেখাল স্পন্দনকে। স্পন্দনের চোখ চড়ক গাছ হয়ে গেলো। কোথা থেকে কি বানিয়ে ফেলেছে । ফোনটা ডক্টরের হাতে দিয়ে পা বাড়াতেই মাথা ঝিম করতে শুরু করলো স্পন্দনের। যেহেতু রক্ত দিয়েছে সেই জন্য এখনও শরীর ঠিক হয় নি। কিছুক্ষণ বসে পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন দিলো শুভ্রতার কাছে কিন্তু ফোন বন্ধ দেখে আরো মাথা খারাপ হয়ে যায় স্পন্দনের। সাধনার নাম্বারে ফোন দিলো কিন্তু ফোন ধরছে না সাধনা। বসা থেকে উঠে ডক্টর-কে বলল……

—” এইসব বানানো কাহিনী। দয়া করে বানানো কাহিনী নিয়ে বাজে কথা বলবেন না। আপনি শিক্ষিত মানুষ হয়ে মজা করা শুরু করেছেন। বাসায় আপনারও বোন থাকতে পারে তাকে নিয়ে যদি এমন মিথ্যা ভিডিও ভাইরাল হয় তখনও কি আপনি সেই ভিডিও নিয়ে হাসি তামাসা করবেন? ওই ছেলের সাথে পিক তুলে ফেসবুক জগতে ফেমাস হতে চাইবেন? আশা করি এমন করবেন না।”

ডক্টর তখন চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। স্পন্দন হসপিটাল থেকে বের হয়ে গাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো। স্পন্দনের গন্তব্যস্থল শুভ্রতার বাসার দিকে।

শুভ্রতার বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতে লাগলো। শুভ্রতার মা এসে দরজা খুলে স্পন্দনকে দেখে বলল……

—” তুই এখন এইখানে কোনো সমস্যা হয়েছে?”

—” মামুনি শুভ্রতা কোথায়?”

—” ও তো ওর রুমে আছে। সাধনা বলেছে ওর নাকি মাথা ব্যাথা করছে সেই জন্য দরজা, লাইট অফ করে শুয়ে আছে।”

মামীর কথা শোনার পর স্পন্দন দৌঁড়ে শুভ্রতার রুমের দিকে চলে গেলো। শুভ্রতার মা অবাক হয়ে স্পন্দনের পিছন পিছন যেতে লাগলো।

দরজার কাছে এসে স্পন্দন শুভ্রতা-কে ডাকতে লাগলো……

—” দরজা খুল শুভ্রতা। আমি জানি তুই জেগে আছিস। শোন যা হয়েছে সব কিছুই মানুষের ভুল ধারণা থেকে হয়েছে। আমি সব ঠিক করার চেষ্টা করবো প্লিজ দরজা খুল। ”

শুভ্রতার মা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল…..

—” কি হয়েছে?”

—” তোমাকে পরে সব বলব আগে শুভ্রতা-কে দরজা খুলতে বলো।”

বেশ কয়েকবার ডাকাডাকি করার পরেও যখন দরজা খুলছে না শুভ্রতা স্পন্দন ভীষণ ভয় পাওয়া শুরু করলো। শুভ্রতা খুবই ইমোশনাল মেয়ে যদি কিছু করে ফেলে। স্পন্দনের দম বন্ধ হবার উপক্রম এখন।

—” মামুনি এই রুমের এক্সট্রা চাবি আছে? যদি থাকে দেও তা-নাহলে দরজা ভাঙতে হবে।”

শুভ্রতার মা তাদের রুম থেকে শুভ্রতার রুমের চাবি আনে। মায়ের পিছন পিছন সাধনা আসে। স্পন্দনকে দেখে অন্যপাশে দাঁড়িয়ে যায়। আজ তারও স্পন্দনকে দেখে রাগ হচ্ছে। স্পন্দন খেয়াল করলেও পাত্তা না দিয়ে দরজা খুলে দেখলো রুম অন্ধকার। শুভ্রতার মা লাইট জ্বালাতেই বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় শুভ্রতা-কে দেখতে পেলো। স্পন্দন শুভ্রতার মুখ তুলে ডাকতে লাগলো…..

—” কত-ক্ষন ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না? কি হলো শুভ্রতা, এই শুভ্রতা।”

শুভ্রতা যে অজ্ঞান হয়ে গেছে খুব ভালোই বুঝতে পারল স্পন্দন। সাধনার দিকে তাকিয়ে বলল…..

—-” পানি নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি।”

স্পন্দন ডক্টর-কে ফোন দিয়ে বলে দিলো যত দ্রুত সম্ভব উনি যেন স্পন্দনের দেওয়া ঠিকানায় চলে আসেন। সাধনা শুভ্রতার মুখে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে কিন্তু শুভ্রতার হুস এখনও ফিরছে না।

স্পন্দন তখন সাধনাকে বলল…..

—” ডক্টর আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে আর পানি দিতে হবে না এখন বল আমি যখন ফোন দিয়েছি কোথায় ছিলি তুই?”

—” ফোন সাইলেন্ট ছিলো তাই দেখি নাই।”

—” মানলাম দেখিস নি পরে কি ফোন আর ঘাটাঘাটি করিস নাই?”

সাধনা চুপ করে রইলো। স্পন্দন শান্ত গলায় বলল…..

—” প্রশ্নের উত্তর দে?”

—” দেখিছি কিন্তু রাগে ধরিনি। তুমি আপুর সাথে যা করেছ তোমার ফোন কেন ধরবো তাছাড়া তখন আপু বলেছিল তোমার ফোন যেন না ধরি।”

—” শুভ্রতা কখন থেকে একা ছিলো?”

—” সকালে থেকে আপুর ফোনে কল আসছে রিসিভ করলেই বাজে কথা বলছে সেই জন্য আপু ফোন অফ করে রেখেছে। আর আমাকে বলেছে তুমি ফোন দিলে যেন না ধরি।”

—” মামা মামুনি কি জানে এই ঘটনা গুলো?”

সাধনা মাথা ডানে বামে হেলিয়ে না অর্থ বুঝা-লো। স্পন্দন কিছুক্ষণ নিরব থেকে শুভ্রতার মাকে সব বলল। শুভ্রতার মা এইসব শুনে তো অবাক। সাধনাকে বকাবকি করতে শুরু করে দিলেন কেন তাদের এই ঘটনা জানানো হয় নাই।

ডক্টর আসার আগে স্পন্দন বিভিন্ন গ্রুপে তার আইডিতে পোষ্ট দিলো সব কিছু যে বানোয়াট। সে বলেছে, এইটা একটা বিয়ের জন্য অভিনয় করা হয়েছে। যেখানে হিরোইন নাচবে আর হটাৎ করেই হিরো এসে মিউজিক অফ করে দিবে , সবার সামনে চড় মেরে হিরোইন-কে নিয়ে যাবে। গুজবে কান না দেওয়ার কথা বলেছে। পোষ্ট করার সাথে সাথে আবারো ভাইরাল হয়ে গেলো সব। স্পন্দন এইদিকে যে এই ভিডিও ভাইরাল করেছে সর্ব প্রথম তার খুঁজ নেওয়া শুরু করে দিলো।

প্রায় ত্রিশ মিনিট পর ডক্টর আসলেন। মেডিসিন ও ইনজেকশন দিলেন। প্রচণ্ড চিন্তায় মাথা ব্যাথা হওয়ার কারণে শুভ্রতা অচেতন হয়ে পড়ে।

এক ঘন্টা পর শুভ্রতার জ্ঞান ফিরলো…….

চলবে……..

বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। প্রথম সিজনে আপনাদের রেসপন্স দেখে খুব ভালো লেগেছিল কিন্তু সিজন টু এ আপনাদের আগের মত রেসপন্স পাচ্ছি না। অনেকেই জানেন আমার পরীক্ষা চলছে তবুও আমি গল্প দিচ্ছি শুধু মাত্র আপনাদের জন্য। কিন্তু আপনাদের রেসপন্স দেখে কেন যেন বার বার গল্প লিখার উৎসাহ হারিয়ে ফেলছি।
একজন প্রশ্ন করেছিল আজকাল সব গল্পেই হিরো হিরোইন কে মারে আমি তার উদ্দেশ্য বলছি কেন মেরেছি কারণটা আজকের পর্ব পড়ে বুঝতে পেরেছেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here