সম্পর্কের_মায়াজাল পর্ব ৭

#সম্পর্কের_মায়াজাল_২
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৭

স্পন্দনের কথা শুনে শুভ্রতা এমন একটি কাজ করলো তা দেখার জন্য স্পন্দন মোটেও আশা করিনি।

শুভ্রতা বিছানা থেকে উঠে বসে স্পন্দনের পায়ের নিচে বসে পড়লো। দুই হাত পায়ে ছুঁয়ে সালাম করে হাসি দিয়ে বলল…..

—” আজকের বিশেষ রাতে নাকি স্বামীর পা ধরে সালাম করতে হয়। অবাক হওয়ার কিছু নেই।”

স্পন্দন শুভ্রতার কথা শোনে প্রশ্ন করল…….

—” নিজেকে কি ভাবিস তুই?”

—” আমি নিজেকে যা ভাবি সেইসব মনেই পোষণ করে রেখেছি। আপাতত আপনাকে বলতে ইচ্ছুক না। রাত অনেক হয়েছে আমি ঘুমুতে যাচ্ছি।”

শুভ্রতা পা বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। স্পন্দন রাগের বশে শুভ্রতার হাত ধরে টান দিয়ে বলল…..

—” আমার খাটে ঘুমানোর অধিকার তোর নেই।”

—” বিয়ে করার আগে মনে ছিল না এই কথা? যেহেতু বিয়ে করেছেন তারমানে এই বাড়িতে আমার একটা নিজস্ব অধিকার আছে। আমার অধিকার আমি নিজেই নিতে পারি মিষ্টার স্পন্দন।”

স্পন্দন শুভ্রতার হাত ছেড়ে দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। শুভ্রতার পরিবর্তন গুলো তার মনে বার বার কষ্ট দিচ্ছে। স্পন্দন শুভ্রতার এই পরিবর্তন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না মন থেকে।

—” এইসব কেন করছিস?”

—” আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। আমাকে যেমন ছয় মাস আপনি কষ্ট দিয়েছেন আমিও আপনাকে কষ্ট দিবো তার দ্বিগুণ। আপনাকে অনুভব করাবো ভালোবাসার মানুষের সাথে না থাকার কি কষ্ট। কিন্তু……..”

স্পন্দন জিজ্ঞাসা করল……

—” কিন্তু কি?”

শুভ্রতা হাসি দিয়ে বলল…..

—” কিন্তু আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথে ঠিকই থাকবেন কিন্তু তার ভালোবাসা পাবেন না শুধু পাবেন কষ্ট।”

স্পন্দন কণ্ঠস্বর নিচু করে বলল…..

—” আমার ভালোবাসা কে?”

—” আপনি যে আমায় খুব ভালোবাসেন সেই কথা আমার অজানা নয়। আপনি কি জানেন? কোনো ছেলে যদি একজন মেয়েকে সব সময় নজরে রাখে, নানান ধরনের ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলে, ওই ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে সেই মেয়ে ঠিকই সব বুঝতে পারে। আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন। আপনার এই ভালোবাসার সুযোগটা শুধু নিবো আমি আর কিছু না।”

কথাটা বলে শুভ্রতা বিছানায় শুয়ে পাতলা কম্বল মুড়ে শুয়ে পড়লো। স্পন্দন কিছুক্ষণ শুভ্রতার কার্যকলাপ দেখে আলমারি থেকে সিগারেটের বক্স ও দেশলাই কাঠি নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।

স্পন্দন খুব সহজে কান্না করে না কিন্তু এখন তার চোখে পানি। শুভ্রতা-কে কারেক্টার-লেস সে বলতে চায় নি শুধু মাত্র শুভ্রতার রাগ আর ক্ষোভ প্রকাশ পাওয়ার জন্য সে এই বাজে শব্দটি ইউজ করেছিল কিন্তু এর প্রভাব শুভ্রতার উপরে পরে নি। সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে স্পন্দন দম ছেড়ে ব্যালকনিতেই রাত পার করে দিলো………

___________________________

পরের দিন সকালে……..

ঘুম থেকে উঠে স্পন্দন খেয়াল করলো তার সামনে কালো শাড়ি পরে শুভ্রতা দাঁড়িয়ে আছে আর মুখে সেই ভয়ানক হাসি। আজকের এই ভয়ানক হাসিতে শুভ্রতা-কে এত ভয়ানক সুন্দর লাগছে যা ভাবনা চিন্তার বাইরে। চোখ কচলিয়ে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে স্পন্দন জিজ্ঞাসা করল…..

—” বিয়েতে সবাই লাল, নীল শাড়ি পরে তুই এই কালো শাড়ি কেন পড়লি?”

শুভ্রতার সেই ভয়ানক হাসি দিয়েই বলল……

—” আমার তো সাদা শাড়ি পরতে ইচ্ছা করলো কিন্তু এই বাড়িতে পেলাম না সেই জন্যই কালো শাড়ি পড়েছি। এই শাড়ির কালারের মতই আপনার জীবনটা তৈরি করতেই তো আমি এসেছি। ”

লম্বা কালো চুল গুলো স্পন্দনের গায়ে ছুঁয়ে দিয়ে শুভ্রতার চলে গেল। স্পন্দন কিছুক্ষণ নিরব বসে থেকে ব্যালকনি থেকে বের হয়ে গেলো।

শুভ্রতা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই তার ফুফু মিসেস সাবিনা বেগমকে দেখতে পেল। শুভ্রতা-কে মিসেস সাবিনা বেগম দেখে বিরক্তকর সুরে কাজের মহিলা রায়লাকে বললেন…..

—” রায়লা তুমি কাজ করো আমি আসছি। প্রয়োজন হলে ডাক দিও।”

—” আইচ্ছা আম্মা।”

মিসেস সাবিনা বেগম নিজের রুমে যেতে নিলেই শুভ্রতা জড়িয়ে ধরলো তাকে। আদুরি গলায় বলল…..

—” আগে তো সব সময় বলতে আমাকে দেখলে নাকি তোমার মায়ের কথা মনে পড়ে। আমি নাকি তোমার মা। আমার মুখ দেখলে তোমার কষ্ট দূর হয়ে যায় তাহলে আজ কেন বিরক্ত হচ্ছো?”

মিসেস সাবিনা বেগম রাগী গলায় বললেন……

—” আমার মা কোনোদিন রাত বেড়াতে একা কোথাও যেতেন না। বাড়ি থেকে পালানোর চিন্তা উনি ভুলেও করতেন না।”

শুভ্রতা শান্ত গলায় তার ফুফুকে বলল……

—” অল্প বয়সে তো অনেকজন অনেক কিছু করে এমনকি খুন পর্যন্ত করে আর আমি জাস্ট বাড়ি থেকে দুই মাইল রাস্তায় গিয়েছিলাম এতেই এত রাগ। আমাকে যেহেতু এত ঘৃনা করো তাহলে বাজার থেকে বিষ কিনে নিয়ে আসো আর আমার খাবারে মিশিয়ে দাও। তোমাদের বিরক্তিকর মানুষকে আর দেখতে হবে না।”

মিসেস সাবিনা বেগম এইবার কেঁদে দিলেন। শুভ্রতা-কে উনি খুব ভালোবাসেন। উনার ইচ্ছা ছিল শুভ্রতার সাথে স্পন্দনের বিয়ে দেওয়ার আজ সেই ইচ্ছা পূরণ হলো কিন্তু মনের ভিতর কষ্ট ধারণ করে।

শুভ্রতা তখন মিসেস সাবিনা বেগমকে আবার বলল……

—” এই প্ল্যান পছন্দ হলো না? ওকে আরেকটা প্ল্যান বলছি, বাসায় কেরোসিন তেল আছে তাহলে আমার গায়ে ঢেলে দেও আর আগুন ধরিয়ে দেও। এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।”

মিসেস সাবিনা বেগম এইবার শুভ্রতার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন…..

—” এতটা খারাপ কবে থেকে হলি তুই? জানিস না তোর কিছু হলে আমরা কিভাবে থাকবো।”

শুভ্রতা হেসে দিয়ে ফুফুকে জড়িয়ে ধরে বলল……

—” কি ভেবেছো, তোমার ছেলেকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ না করা অব্দি কি আমি মরে যাবো? সম্পূর্ণ ভুল হিহিহিহি।”

মিসেস সাবিনা বেগম শুভ্রতার কথার হেয়ালী বুঝতে পারলেন না। উনি ভেবেছেন শুভ্রতা মজা করে বলেছে তাই উনিও শুভ্রতার সাথে হেসে দিলেন।

_______________________________

স্পন্দনের একটি অভ্যাস আছে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর পানিতে ভিজানো ইসবগুলের ভুসি তার চাই। ইসবগুলের ভুসি তে রয়েছে নানান ধরনের অসুখের চিকিৎসা। খালি পেটে সকালে এক গ্লাস পানি পান করে সারাদিন নিজের শরীরকে সতেজ রাখার একটি উপায় ইসবগুলের ভুসি সকালে পান করা।

শুভ্রতা এক গ্লাস ভর্তি ইসবগুলের ভুসি নিয়ে স্পন্দনের সামনে দাঁড়ালো। স্পন্দন একবার শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।

শুভ্রতা গ্লাস টেবিলের উপরে রেখে শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে স্পন্দনের হাত ধরে তাকে শান্ত গলায় ও সরল চাহনিতে বসতে বলল। স্পন্দন শুভ্রতার কথায় বসে পড়ল। শুভ্রতা এক গাল হেসে স্পন্দনের চুলে হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো…….

—” তোমার এই চুল গুলো আমার বড্ড পছন্দ। আমি তো এই চুলের নাম রেখেছি রেশমী চুল। আচ্ছা স্পন্দন ভাইয়া তোমারও কি এই রেশমী চুল খুব পছন্দ?”

স্পন্দন অবাক হলেও মনে মনে খুশি হয় এই ভেবে যে শুভ্রতার তাকে তুমি করে বলছে। মুখে কিউট মার্কা হাসি দিয়ে বলল…..

—” ছোট থেকেই আমার নিজের চুলের প্রতি আমার যে ভীষণ রকমের দুর্বলতা আছে এই কথা কি তোর অজানা? শুভ্রতা?”

স্পন্দনের কথা শোনে শুভ্রতা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল……

—” আজ আপনার এই দুর্বলতা আমাকে সবলতা বানিয়েছে মিস্টার স্পন্দন।”

কথাটা বলেই শুভ্রতা গ্লাস ভর্তি ইসবগুলের ভুসির সরবত স্পন্দনের মাথায় ঢেলে দিল। স্পন্দন বসা থেকে দাঁড়িয়ে রাগকে নিয়ন্ত্রন করে মিষ্টি করে হাসলো।

—” মাত্র এক গ্লাস কেন এক বালতি মাথায় ঢেলে দিতি আমি কিন্তু মাইন্ড করব না।”

স্পন্দন আলমারি থেকে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল। শুভ্রতা বোকার মত দাঁড়িয়ে রইল। সে যে স্পন্দনকে রাগাতে চেয়েছে কিন্তু স্পন্দন তো একদম রাগ করল না। রাগে কষ্টে রুম থেকে বের হয়ে গেল শুভ্রতা।

স্পন্দন ওয়াশ রুমে ঢুকে পানি ছেড়ে দিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো……

—” নিজেকে খুব চালাক ভাবিস তাই না? আজ যদি আমি রাগ দেখতাম তাহলে তুই এই কাজটা প্রতিদিন করে আমাকে রাগানোর চেষ্টা করতি বারবার। আমি তো তোকে ছোট বেলা থেকেই চিনি শুভ্রতা। এই যেমন আজ আমি রাগ করিনি কিন্তু তোকে খুব ভালোই রাগাতে পেরেছি হাহাহা। আর এই কথাটাও জানি আজকের পর এই কাজটা তুই করবি না। মাথা যত শান্ত রাখা যায় নিজেকে ততই সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়।”

স্পন্দন মাথা ঠাণ্ডা রেখে কিছুক্ষণ শাওয়ার নিলো। একদিনে দুইবার শাওয়ার নিচ্ছে বলে মনে মনে খুব হাসি পাচ্ছে তার। কিন্তু শুভ্রতার পরিবর্তন তাকে খুব ভাবাচ্ছে। সে চায় শুভ্রতা খুব তাড়াতাড়ি আগের মত চঞ্চল, হাসি খুশি, জেদ-হীন মেয়ে হয়ে যাক।

___________________________

একটা দিন খুব ভালোভাবে চলে গেল। কিন্তু বিকালে শুভ্রতা কোনো দরকারে যেন বাসা থেকে বের হয়ে যায়। স্পন্দন শুভ্রতার এই অত্যাচার সহ্য করতে পারবে না বলে অফিসে চলে গিয়েছিল। সন্ধ্যা সাতটায় বাসায় এসে শুভ্রতা-কে বাসায় দেখতে না পেয়ে তার মাকে জিজ্ঞাসা করল……

—” আম্মু, শুভ্রতা কোথায়?”

—” ওর এক ফ্রেন্ড নাকি ফোন দিয়েছে ওইখানে তাই চলে গিয়েছে।”

—” নাম বলেছে কোন ফ্রেন্ড?”

—” নাহ, বলেছে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।”

স্পন্দন সাধনার নাম্বারে ফোন দিতে যাবে তার আগেই শুভ্রতা এসে হাজির। আনন্দ সহিত মিসেস সাবিনা বেগমকে বলতে লাগলো…….

—” ফুফুজান আজ আমি খুব খুব খুব খুশি। বলতো কেন আমি এত খুশি?”

মিসেস সাবিনা বেগম ঠিক বুঝতে পারলেন না তাই উনি জিজ্ঞাসাসুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা তখন মিসেস সাবিনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলল……..

চলবে…….

পার্সোনাল কিছু প্রবলেম ছিল তাই গল্প দিতে পারি নাই তার জন্য খুবই দুঃখিত আমি। ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here