সম্পর্কের_মায়াজাল পর্ব ৬

#সম্পর্কের_মায়াজাল_২
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৬

শুভ্রতার অস্বস্তি বোধ করছে আজ। স্যার গার্ড না দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হাত চলে না এখন শুভ্রতার। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে যেই লেখতে যাবে স্যার এসে জিজ্ঞাসা করলো……

—” আর এনি প্রবলেম? শুভ্রতা।”

—” নো স্যার।”

—” তাহলে কিছু লিখছো না কেন? হেল্প লাগলে বলতে পারো।”

শুভ্রতার মাথা ধরে যাচ্ছে স্যারের কথা শোনে কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলতে পারছে না। স্যার তখন আবারো জিজ্ঞাসা করলো……

—” যদি চাও তাহলে প্রশ্নের উত্তর গুলো বলে দিতে পারি।”

—” স্যার আপনি কি সব মেয়েকেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাহায্য করেন?”

স্যার এইবার হকচকিয়ে গিয়ে কেশে উঠল। শুভ্রতা মনে মনে বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করল…….

—” কি হলো স্যার কিছু বলছেন না কেন?”

—” এই ফায়াজ সবাইকে হেল্প করে না। শুধু মাত্র বিশেষ একজনকে সাহায্য করতে চায়।”

শুভ্রতা বিশেষ শব্দটি শোনে মাথা নিচু করে রাখল। শুভ্রতা আগে থেকেই এমন কিছু সন্দেহ করেছিল কিন্তু ভাবে নাই স্যার যে তাকে সরাসরি বিশেষ মানুষ বলে ফেলবে। ফায়াজ শুভ্রতার মুখ দেখে কিছু একটা বুঝে হেসে বলল……

—” ভালো করে পরীক্ষা দেও। আর তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। এইভাবেই সেজে আসবে কেমন?”

—” স্যার আমার পরীক্ষার সমস্যা হচ্ছে। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।”

ফায়াজ চলে গেলে শুভ্রতা মন দিয়ে লিখতে শুরু করলো।

_________________________________

শুভ্রতার সব পরীক্ষা শেষ হলো। প্রতিটি পরীক্ষায় ফায়াজ এসে গার্ড দিয়েছে। শেষ পরীক্ষা দিয়ে বাসায় আসার পর ওর কল্পনার মাফিনকে ম্যাসেজ দিলো…….

—” এখন তো পরীক্ষা শেষ। বিয়ের প্রস্তাব কবে পাঠাবে?”

দশ মিনিট পর উত্তর আসলো…….

—” ভাবছি আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো। বিয়ের দুই বছর পর বাবু নিয়ে পরিবারের সামনে যাবো। প্রথম কেউ মানবে না কিন্তু আমাদের বাবুকে দেখে মেনে নিবে। কেমন আইডিয়া?”

ম্যাসেজটি দেখে শুভ্রতা হেসে দিল।

—” সিনেমাটিক আইডিয়া। ভালোই তো হবে তাহলে।”

—” কবে আসবে তাহলে?”

শুভ্রতা মজা করে বলেছিল কিন্তু তার কল্পনার মাফিন যে সত্যি ভেবে নিবে বুঝতে পারে নাই। পরিবেশ ঠিক করার জন্য বলল……

—” আরেহ আমি তো মজা করছি। বড়দের অনুমতি নিয়ে বিয়ে হলে সবাই খুশি হবে সাথে আমরাও। আমরা খুব তাড়াতাড়ি দেখা করি আর পরিবারে বিয়ের কথা বলি।”

ম্যাসেজটি দেখে কিছুক্ষণ রেখে দিল শুভ্রতার মাফিন। শুভ্রতা ভয় পেয়ে জিজ্ঞাসা করলো……

—” কি হলো উত্তর দিচ্ছ না কেন?”

এইবার সে উত্তর দিলো……..

—” আমার ইচ্ছা পূরণ করবে না?”

—” তুমি যা বলছো কিভাবে সম্ভব?”

—-” ভালোবাসলে সব সম্ভব। যদি ভালোবাসো তাহলে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে আগামীকাল রাত এগারোটায়, বিশ আট তেরো পট্টির মোড়ে এসে দাঁড়াবে। আমি এসে নিয়ে যাবো। তুমি হলুদ থ্রি পিস বা শাড়ি পরে আসবে। বায়।”

ম্যাসেজটি পাঠিয়ে শুভ্রতার সে অফলাইন হয়ে গেল। শুভ্রতা এইবার মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো কি করা উচিৎ তার। একদিকে পরিবার অন্যদিকে ভালোবাসা। কল্পনার মাফিনকে ম্যাসেজ দিচ্ছে কিন্তু সীন হচ্ছে না।

সারা রাত ভেবে একটি সিদ্ধান্ত এসে পৌঁছালো শুভ্রতা………….

___________________________

লাল বেনারসি শাড়ি পরে বধূ সেজে বসে আছে শুভ্রতা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ অতীতের কথা গুলো ভাবছিল সে। ছয় মাস আগে ঘটনা গুলো এখনও মনে পোষণ করে রেখেছে। আয়নায় তাকে খুব ভালো দেখাচ্ছে কিন্তু চোখের নিচের কালি গুলো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। মেকআপ আর্টিস এসে কিছুক্ষণের মধ্যে চেহারার এই ক্লান্ত ভাব, চোখের নিচের কালি মেকআপের জাদু দিয়ে মিলিয়ে দিবে। মুখে শুকনো হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলল……..

—” মাফিন দেখো আজ তোমার কাপকেক বধূ সেজে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তোমার জন্য না। সে দাঁড়িয়ে আছে স্পন্দনের জন্য। সেদিন যদি স্পন্দন ভাইয়া আমাকে তুলে না আনতো তাহলে আজ আমি তোমার পাশে থাকতাম। জানো এই ছয় মাস কতটা ছটপট করেছি আমি? শুধু মাত্র তোমার জন্য। আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার কাপকেক তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে পারে নাই।”

চোখের পানি গাল থেকে মুছে বিছানার মাঝে বসে পড়লো শুভ্রতা। ছয় মাস আগে শুভ্রতা তার কল্পনার মাফিনের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য পরের দিন রাত সাড়ে দশটায় বাসা থেকে পালিয়ে যায়। এগারোটা নাগাদ বিশ আট তেরো পট্টির মোড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল কল্পনার মাফিনের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রাস্তায় স্পন্দনের সাথে দেখা হয়ে যায় তার। শুভ্রতার গায়ে হলুদ শাড়ি দেখে ভীষণ অবাক হয় স্পন্দন। হাতে ব্যাগ, পরনে শাড়ি তাও আবার এত রাতে রাস্তায় দেখে স্পন্দন তাকে জোর করে ধরে নিয়ে আসে।

ছয়মাস শুভ্রতা-কে কোনো ফোন দেওয়া হয় নি। রুম বন্ধী করে রাখা হয়েছে। অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসে কিন্তু শুভ্রতার ব্যাবহার দেখে সবাই রিজেক্ট করে দেয়। তাই পরিবারের লোকেরা কোনো উপায় না পেয়ে স্পন্দনের সাথে শুভ্রতার বিয়ে ঠিক করে।

পারিবারিকভাবে বিয়ে হওয়ায় কাওকেই তেমন নিমন্ত্রন দেওয়া হয় নাই। সাধনা ও পার্লারের লোক এসে শুভ্রতার পাশে বসে শুভ্রতা-কে সাজানো হয়। চুপচাপ বসে থেকে ভদ্র মেয়ের মত শুভ্রতা সাঁজতে থাকে। শুভ্রতা-কে দেখে কেউ বুঝতে পারবে না এই বিয়ে যে শুভ্রতার অনিচ্ছা সত্ত্বে হচ্ছে। পার্লারের লোক চলে যাওয়ার পর সাধনা তার বোনকে জড়িয়ে ধরে বলল……

—-” ওয়াও কি কিউট লাগছে তোকে আপু। আমি তো তোকে দেখে ফিদা। কিন্তু আমি মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছি আপু।”

সাধনা মন খারাপ করে বলল। শুভ্রতা সাধনার দিকে তাকিয়ে রইলো। সাধনা শুভ্রতার চাহনি দেখে হেসে দিয়ে বলল……

—” আরেহ মজা করছি। তুই তো জানিস স্পন্দন ভাইয়াকে আমি লাইক করতাম কিন্তু এখন তো আর লাইক করা যাবে না। হাজার হোক আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বোনের জামাই আই মীন দুলাভাই। এখন তো তার দিকে ভালো নজরে তাকাতে হবে তাই না?”

শুভ্রতা কিছু না বলে বিছানা থেকে নেমে পড়লো। আবারো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিজেকে দেখতে লাগলো। সাধনা মুখে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল……

—” দেখ কেমন নির্লজ্জ মেয়ে। শরমের মাথা খেয়ে নিজের সাজ নিজে দেখছে আজ যদি মানুষজন থাকতো কি বলতো?”

ভাবনাহীন ভাবে শুভ্রতা উত্তর দিলো…….

—” নির্লজ্জ মেয়ে না হলে কি আর বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম? আজ লাজ লজ্জা নাই বলেই তো বাইরের ছেলের হাতে মাইর খেয়ে বাসায় এসেছিলাম তাই না?”

সাধনা মুখ নিচু করে বড় বোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। সাধনা মনে মনে ভাবছে, তার বড় বোন তো এমন ছিল না। খুব শান্ত শিষ্ট মেয়ে ছিল। পরিবারের বাধ্য মেয়ে ছিল সে তাহলে হটাৎ এই পরিবর্তন কেন হলো এখনও বুঝতে পারলো না সাধনা।

____________________________

বিয়ের কাজ শেষ করে শুভ্রতা যখন শশুর বাড়িতে যাচ্ছে তখনও তার দু চোখে পানির কোনো ছিটে ফোঁটা ছিলো না। বাড়ির সবাই অদ্ভুদ এক শুভ্রতা-কে বিদায় হতে দেখেছে। যে মেয়ের কান্না করে বাড়ি ভাসিয়ে দেওয়ার কথা ছিল সেই মেয়ে কিনা চুপ একদম পাথর।

গাড়িতে শুভ্রতা জানালায় হেলান দিয়ে বসে ছিল। স্পন্দন একবার শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে কঠোর গলায় বলল…….

—” আবারো পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছিস নাকি?”

—” পালিয়ে যাওয়ার কথা হলে আপনাকে কোনোদিন বিয়ে করতাম না।”

ছয় মাস আগের ঘটনার জন্য শুভ্রতা স্পন্দনকে আপনি বলে ডাকে।

শুভ্রতার কথা শুনে মুচকি হেসে স্পন্দন বলল…….

—” সেদিন তোকে না ফিরিয়ে আনার দরকার ছিল তাহলে আজ তোর মতো ক্যারেক্টারলেস মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হতো না।”

শুভ্রতা কিছু না বলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। স্পন্দন আর কথা না বলে ফোন ঘাটতে লাগলো।

___________________

বাসর রাতে বসে আছে শুভ্রতা। স্পন্দন রুমে এসে শুভ্রতা-কে দেখতে পেয়ে রাগী গলায় বলল…….

—” তোর মত ক্যারেক্টারলেস মেয়ে আমার রুমে কেন এসেছে? এক্ষুনি বের হয়ে যা আমার রুম থেকে।”

স্পন্দনের কথা শুনে শুভ্রতা এমন একটি কাজ করলো তা দেখার জন্য স্পন্দন মোটেও আশা করিনি।

চলবে…….

বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এতদিন কি লেখতে কি লিখছি জানি না। এখন থেকে শুরু গল্প। সামনে কি থেকে কি হয় আমি নিজেও এখন জানি না 😌 শুধু জানি ধামাকা হ্ববে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here