সম্পর্কের_মায়াজাল পর্ব ৫

#সম্পর্কের_মায়াজাল_২
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_৫

সন্ধ্যা ও সাধনা কিছুটা পথ যেতেই সমুদ্র আর মুগ্ধকে দেখতে পেলে। সাধনা তো লজ্জায় মুখ তুলতে পারছে না। মুগ্ধ বিষয়টা খেয়াল করে ইগনোর করলো সাধনাকে।

সমুদ্র সন্ধ্যাকে দেখে জিজ্ঞাসা করল……

—” বাবু কই যাচ্ছো তুমি?”

মুগ্ধ সমুদ্রের কথা শোনে মুখ চেপে হাসছে। এত বড় মেয়েকে বাবু ডাকছে কথাটা তার কাছে হাস্যকর মনে হলো।

—” ভাই তুই তো দেখছি হবু বউকে মেয়ে বানিয়ে ফেলেছিস। আমরা তো ছোট বাচ্চাদের বাবু ডাকি কিন্তু বিবাহ উপযুক্ত মেয়েদের বা ছেলেদের বাবু ডাকা কি রকম মনে হয় না?”

সমুদ্র মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল……

—” শালা দুই হাজার একুশ সালে এসেও নব্বই দশকের মতো কথা বার্তা বলতে লজ্জা করে না?”

সন্ধ্যা ও সাধনা মিটমিট করে হাসছে। সমুদ্র মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বলল…

—” আমরা আসছি ফোনে কথা বলবো কেমন জানু, বায়।”

—-” হুম বায়।”

সমুদ্র ও মুগ্ধ চলে যাওয়ার পর সাধনা নিরুপায় সুরে বলল……

—” না রে দোস্ত এই ছেলের দ্বারা প্রেম হবে না। আমার স্পন্দন ভাইয়াই ভালো। জানিস কত্ত রোমান্টিক স্পন্দন ভাইয়া।”

—” আমারও তাই মনে হয়। মুগ্ধ নামটা মুছে স্পন্দন নামটাই মনের ভেতর গেঁথে রাখ ভালো হবে।”

—” হুম। আজ বাসায় গিয়ে স্পন্দন ভাইয়াকে বলব সার্জারি করে নাক মুগ্ধর নাকের মত যেন বানিয়ে ফেলে তাহলেই তো হবে।”

—” মন্দ হবে না ব্যাপারটা। তোর নাক দেখে ক্রাশ জামাইও হলো আবার রোমান্টিক জামাইও হলো।”

সন্ধ্যার কথা শোনে সাধনা একবার পিছন ঘুরে মুগ্ধকে দেখে দুঃখ ভরা মুখ নিয়ে বলল……

—” আমার কিন্তু ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। যতই সার্জারি করি কিন্তু ওর মতো নাক কোনোদিনও হবে না।”

সন্ধ্যা মুখ বাঁকা করে বলল……

—” যত্তসব ঢং মার্কা কথা। এই চলতো ক্লাসে যাই তোর সাথে কথা থাকতে থাকতে একদিন মনে হয় তোর মত হয়ে যাবো। আল্লাহ তায়ালা ভালো জানে তোর মত হলে কত বয়ফ্রেন্ড চেঞ্জ করা লাগে। তোর কপালে যে কয়টা বিয়া আছে কে জানে?”

—-” অভিশাপ দিবি না বলে দিলাম। এখন চল ক্লাসে যাওয়া যাক।”

—” হুম।”

সন্ধ্যা ও সাধনা ক্লাসের উদ্দেশ্য হাঁটা দিলো।

______________________________________

শুভ্রতা খাটে বসে পড়ছে। হটাৎ ফোনের শব্দে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো একটি ম্যাসেজ । ম্যাসেজটা দেখে শুভ্রতার মুখে হাসি ফোটে উঠলো……

” ডেয়ার কাপকেক কি করছো এখন? পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোভাবে নিচ্ছ তো? দেখো আমি কিন্তু তোমায় একটুও বিরক্ত করি না এখন। ভালোভাবে পড়াশোনা করো আর অতি শীঘ্রই আমরা দেখা করবো অ্যান্ড বিয়ার কথা বলবো। আমার ভালোবাসার কাপকেক।”

ম্যাসেজটি পড়ে কিছুক্ষণ হাসলো শুভ্রতা। এই একটা মানুষের ম্যাসেজ দেখলে তার সব রাগ,কষ্ট দূর হয়ে যায়। এই মানুষটাকে সে এখনও চোখে দেখে নাই এমনকি তার কন্ঠ পর্যন্ত শুনে নাই। চ্যাট করতে করতে এখন সে এমন আকর্ষিত হয়েছে যে, একদম চ্যাট করতে না পারলে দম বন্ধ হয়ে আসে তার। বইটা বিছানার উপর রেখে সেও উত্তর দিলো……

” হ্যায় মাফিন মিস ইউ। রিলেশনের আজ পর্যন্ত তোমার নাম এখনও জানি না। কবে আমরা দেখা করবো আর তোমাকে দেখবো তোমার নাম জানবো সেই আশা নিয়েই তো আছি। আমার কল্পনার মাফিন।”

শুভ্রতা ম্যাসেজ দিয়ে চিন্তা মুক্ত হয়ে আবারো পড়তে বসলো। তার কল্পনার মাফিনকে কে নিয়ে অনেক কিছু ভেবে রেখেছে সে। বাসা থেকে বিয়ের অনেক প্রপোজাল সে পেয়েছে কিন্তু কল্পনার মাফিনের জন্য সব প্রপোজ রিজেক্ট করে দিয়েছে সে।

________________________________

পরেরদিন সকাল বেলা………….

সাধনা চেয়ারে বসে ডিম খাচ্ছে আর শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলছে…….

—” ইয়াম্মি, ইসসসসসস আম্মু আজকে কিভাবে ডিম ভাজি আর ডিম সিদ্ধ করেছো গো খেতে যে কি মজা হয়েছে, কি বলবো।”

শুভ্রতা আড় চোখে সাধনার দিকে তাকাচ্ছে আর আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছে। মুরব্বিদের একটি উক্তি আছে…..

পরীক্ষার সময় ডিম খেয়ে পরীক্ষা দিতে নাই তাহলে নাকি পরীক্ষায় ডিম পায়। আবার পাত্র পক্ষ বা পাত্রী পক্ষ দেখতে আসলেও নাকি প্রথম বার ডিম রান্না হয় না এতে নাকি অমঙ্গল।

শুভ্রতা মা আবার পুরোনো কথায় বিশ্বাসী তাই আজ উনি শুভ্রতা কে ডিম একদমেই দিবেন না। সেই জন্য শুভ্রতা রাগ করে আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছে। শুভ্রতা এইসব বাজে কথা বিশ্বাস করে না কিন্তু মাকে কি করে বুঝাবে? কিছু বললেই বলবে……

—” তোর পেট থেকে আমি হইছি নাকি তুই আমার পেট থেকে হইছিস? বেশি না বকে যা বলছি তাই কর।”

শুভ্রতার খাবার শেষ না হতেই আগমন ঘটে স্পন্দনের। শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলল……

—” সারাদিন কি খাবার টেবিলেই বসে থাকবি নাকি পরীক্ষার জন্য বের হবি?”

ভাত মেখে লোকমা মুখে তুলে বলা শুরু করলো শুভ্রতা……

—” এখনও সময় আছে তাছাড়া আমার হাতের বানানো আলু ভর্তা যে এতটা স্বাদ জীবনে ভাবিনি কোনোদিন। উঠতেই তো মন চাচ্ছে না আমার।”

—” তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে রেডি হয়ে আমার সাথে চল। আমার হাতে সময় খুব কম। অফিসে দরকারি মিটিং আছে।”

শুভ্রতা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল…….

—” তুমি কি আমার সাথে যাবে?”

—” হুম।”

শুভ্রতার বেশ রাগ হলো। রাগী গলায় বলল……

—” আমি একাই যেতে পারবো তাছাড়া আমি এখন বড় হয়ে গেছি কারোর প্রয়োজন নেই আমার।”

রান্না ঘর থেকে চেঁচাতে চেঁচাতে শুভ্রতার আসছেন আর বকছেন শুভ্রতা-কে।

—” তুমি এতটাও বড় হয়ে যাও নি যে স্পন্দনের মুখের উপরে কথা বলবে। স্পন্দন যা বলেছে মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারো না? আজ যদি স্পন্দনের কথা শোনে চলতে তাহলে ভালো ছাত্রী হতে পারতে। দেখো স্পন্দন কত ব্রিলিয়ান্ট একজন ছেলে তুমি তো তার ধারে কাছেও যেতে পারলে না এখনও।”

স্পন্দন শুভ্রতার মায়ের কথা শুনে ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বসে পড়লো। শুভ্রতার রাগ এখন দ্বিগুণ বেড়ে গেল। সব কিছুতেই কথা শোনাবে এই ছেলে তাকে। বদের হাড্ডি বলে মনে মনে গালি দিয়ে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো শুভ্রতা।

সাধনা বসে বসে বিড়বিড় করে স্পন্দনকে বলছে……

—” এত ভাব নেওয়ার কিছু নেই স্পন্দন ভাইয়া। প্রতি মাই তার সন্তানের ভালো কোনোদিন সন্তানের সামনে প্রকাশ করে না। সব সময় অন্য ছেলে মেয়ের ভালো বলবে কিন্তু দেখা যাবে নিজের সন্তানের আড়ালে আবডালে ছেলে মেয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকেন তারা।”

স্পন্দনও ফিসফিস করে বলল……

—” জানি আমি। তুই এত কথা না বলে মনোযোগ সহকারে খাবার খেয়ে বাঁশ থেকে মানুষ হওয়ার চেষ্টা করতে থাক।”

সাধনা এইবার স্পন্দনের কথা শুনে মনে মনে বলল……

—-” আপু ঠিকই বলে ফাযিল ছেলে একটা। কথা কিভাবে ঘুরাতে হয় আগে থেকে মনে হয় ট্রেনিং করে আসে। নাহ ভাবছি মুগ্ধর পিছনেও লেগে থাকতে হবে।”

__________________________

শুভ্রতা আজ কালো লং জামা পরেছে। চুল ছেড়ে দিয়ে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, চোখে কাজল, কানে পাতলা কিন্তু বড় কানের দুল, হাতে কালো ঘড়ি। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কালো পোশাক যেন তার জন্যই আবিষ্কার করা হয়েছে। হাতে ফাইল নিচে নামতেই স্পন্দন চেঁচিয়ে উঠে বলল…….

—” পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিস নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করতে যাচ্ছিস? দেখে তো মনে হচ্ছে পাত্র পক্ষের সামনে যাচ্ছিস তাই এত সাজতে হচ্ছে তা-নাহলে পাত্র পক্ষ সরাসরি রিজেক্ট করে দিবে।”

শুভ্রতার এইবার চেঁচিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। ও মন থেকে যাই করুক এই স্পন্দন নামক ঝামেলাটা খুঁত খুঁজে বের করবেই। স্পন্দন রাগে বোম হয়ে আছে মনে হচ্ছে যে কোনো সময় ব্লাস্ট হয়ে যাবে।

শুভ্রতা মায়ের দিকে দুঃখী ভাব নিয়ে তাকালো। শুভ্রতার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে শুভ্রতার মা স্পন্দনকে বলল……

—” আরেহ সেজেছে দেখে কি হয়েছে সবাই তো সেজেগুজে যায় পরীক্ষার হলে, কিছু হবে না তুই নিয়ে যা।”

গম্ভীর হয়ে স্পন্দন বলল……

—” যারা পরীক্ষা হলে সাজগোজ করে আসে তারা মোটেও পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আসে না তারা আসে স্বামী খুঁজার জন্য, প্রেম করার জন্য এমন খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করার জন্য। তুমিই বলো মামুনি, পরীক্ষার সময় পড়ালেখা করতেই তো সময় পাওয়া যায় না তাহলে এত সাজগোজ করার সময় কিভাবে থাকে? যে সময় নিয়ে সাজগোজ করবে সেই সময়ে পড়লেও তো লাভ, তাই না?”

স্পন্দনের কথায় যুক্তি থাকায় শুভ্রতার মা কি বলবে বুঝতে পারছে না। শুভ্রতা তখন ইনোসেন্ট মুখ নিয়ে স্পন্দনকে বলল……

—” আজ আমার সব ফ্রেন্ড কালো জামা ও সেজে আসবে আমাকেও বলেছে এইভাবে যাওয়ার জন্য। সবার দেখাদেখি আমারও খুব ইচ্ছা করলো সাঁজতে তাই সেজেছিলাম। তুমিই বলো একটা মানুষের কি সাঁজতে ইচ্ছা করে না? আমি কি খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি?”

স্পন্দন তাকালো শুভ্রতার চোখের দিকে। পানি টলমল করছে চোখে, বড্ড খারাপ লাগছে স্পন্দনের। সে ভাবছে সে এখন খুব কষ্ট দিয়ে ফেলছে শুভ্রতা-কে যা তার দেওয়া একদম ঠিক না। যার জীবন সে যেভাবে ইচ্ছা এনজয় করবে অন্য কারো রাইট নেই বাঁধা দেওয়ার।

টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি পান করে রাগকে নিয়ন্ত্রন করে হাসি দিয়ে বলল……

—” চল দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর শোন চুলগুলো বেঁধে রাখ। খুলা চুল বার বার সামনে আসলে পরীক্ষার উপর মন উঠে যাবে। এইটা ভালোর জন্যই বলছি।”

শুভ্রতা মুখে হাসি ফুটিয়ে সাধনার খোঁপা থেকে জাদু কাটি টান মেরে খুলে হাত খোঁপা করে বেঁধে ফেলল।

স্পন্দনের বাইকে বসে পড়লো শুভ্রতা। সাবধানে বাইক চালিয়ে ভার্সিটির দিকে চলে গেল তারা………

_____________________________

পরীক্ষার হলে শুভ্রতা বসে আছে। শুভ্রতার ফাইনাল ইয়ারের মডেল টেস্ট হচ্ছে। শুভ্রতার কাছে মডেল টেস্ট মানে পানি ভাত কিন্তু স্পন্দন বলেছে পরীক্ষা সব সময় পরীক্ষাই হয়। পানি ভাত বলতে পরীক্ষার কোনো শব্দ হয় না।

ভার্সিটির আশি পার্সেন্ট মেয়ের ক্রাশ আজ শুভ্রতার পরীক্ষার হলে গার্ড পড়েছে। শুভ্রতার কাছে এই স্যার কে মোটেও ভালো লাগে না। সব সময় কেমন ভাবে তার দিকে তাকিয়ে তাকে।

শুভ্রতার অস্বস্তি বোধ করছে আজ। স্যার গার্ড না দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হাত চলে না এখন শুভ্রতার। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে যেই লেখতে যাবে……..

চলবে……..

বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরীক্ষা শেষ আজ একটু মনোযোগ দিয়ে লেখলাম। ইনশাআল্লাহ এখন লেখার প্রতি মনোযোগ দিতে পারবো। আর অনার্স প্রথম বর্ষে যারা আছে তাদের বলছি আমরা কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পড়ি না আমাদের কোনো অটো পাশ নেই। কিছুদিনের ভিতর আমাদের পরীক্ষা হবে 🙃

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here