সম্পর্কের__দেয়াল পর্ব ১১

#সম্পর্কের__দেয়াল
#একাদশ__পর্ব
|#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
রিধি চমকালো অনেক টাই। নাদিম রিধির ছোট খাটো ধাক্কা লাগার মতো চিৎকার টা শুনতে পেয়ে নিজেও হকচকিয়ে গেছে। দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় তার এই ব্যাপার টা ডিরেক্টলি রিধি কে বলা ঠিক হলো কিনা তা নিয়ে! তাছাড়া আর বলবেই বা কাকে? রিধির বাবা মা আর পাভেলের মা ও চলে আসে সেখানে। উনারা ভয় পেয়ে গেছেন রিধির কিছু হলো নাকি ভেবে। রিধি নিজেকে স্বাভাবিক করার বৃথা চেষ্টা করল তবে হাত অনর্গল কাঁপছে। সে আধো আধো গলায় নাদিম কে বললো,
‘পাভেল কে আপনি কোথায় দেখেন? এখন কোথায় সে? আর পিক ই বা কিসের?’

‘ভাবী ইউ আর অলরাইট? আমার মনে হচ্ছে আপনার কোনো সমস্যা হয়েছে প্লিজ আমাকে বলবেন যে কি হয়েছে? আপনি এতো অস্থির ই বা হচ্ছেন কেন?’

‘আপনি আগে বলুন পাবেল কোথায়?’

‘কুল ডাউন ভাবী। আমি পিক সেন্ট করে দিয়েছি দেখে নিন আর পাভেল এখন কক্সবাজার!’

‘কিহহহ…’

‘আমি আপনাকে একটু পর কল ব্যাক করছি ভাইয়া!’

এই বলে রিধি কল কেটে দেয়। রিধির বাবা মা আর পাভেলের মা ও এতোটা সময় নিরব দর্শক হয়ে সব টা শুনেছে সত্য বাট কিছু বুঝে উঠতে পারে নি। রিধি নাদিমের পাঠানো পিক গুলা দেখে বিছানায় ধপাস করে বসে পড়ে। রিধির মা দৌড়ে এসে রিধি কে ধরে বলেন,
‘ক্ কি হয়েছে রিধি? তুই এমন করছিস কেন?’

‘মা… পাভেল…

পাভেলের মা ভ্রুঁ কুঁচকে বললো,
‘পাভেল? ওর কি হয়েছে? কোনো বিপদ হলো না তো?’

রিধির মা রিধির ফোনে ছবি গুলো দেখছিলো রিধির বাবা ফোন টা ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে সেগুলো দেখে নিজেকে কঠোর করে ভাবলেন আজ ই উপযুক্ত সময় পাভেলের মা কে নিজেকে ছেলে কু কাজ গুলো খুলে বলার প্রমাণ ও আছে। রিধির মা বললো,

‘রিধি তুই একটু শান্ত হ! আমরা তো আগেই সন্দেহ করেছিলাম এখন সেটাই ঠিক হলো!আজকেই দুই শুয়োর কে জন্মের মতো শিক্ষা দিবো!’

পাভেলের মা রিধির মায়ের মুখে এমন কথা শুনে তাজ্জব বনে গেলো। একটু আগে রিধি পাভেলের নাম বললো আর রিধির মা কাকে এখন শুয়োর বলছে?

‘বেয়ান আপনি কাকে কি বলছেন? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না!’

‘আপনি তো….

রিধি তার মায়ের হাত ধরে বসিয়ে দেয়। রিধি নিজেই বললো,

‘মা আপনাকে আজ কিছু সত্যি কথা বলার আছে!’

‘কি সত্যি কথা বল?’

‘মা আমরা এই কথাটা জানতাম তবে আমরা এটাও জানতাম আমাদের সামান্য মুখের কথায় আপনি বিশ্বাস করতেন না তবে আজ প্রমাণ ও আছে আজ সব বলার সময় এসেছে!’

‘কি এমন কথা?’

রিধি তার বাবার থেকে ফোন টা নিয়ে পাভেলের মায়ের হাতে তা দিয়ে বললো,
‘দেখুন তো মা এদের চিনতে পারেন কিনা?’

পাভেলের মা মনোযোগ সহকারে ছবি গুলো দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। কয়েক টা ছবি পাভেল এর মুখ দেখা যাচ্ছে মেয়ে টা পাভেলের বিপরীত দিকে মুখ করে আছে। পাভেল কে জড়িয়ে ধরা অবস্থায়। আর লাস্ট দুইটাই মেয়েটার চেহারা স্পষ্ট। স্থির চিত্রে থাকা দুজন মানুষ হলো পাভেল আর রিমি। পাভেলের মা অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পোঁছে যান। রিধির বাবা কি মনে করে যেনো বেরিয়ে চলে যায়। পাভেলের মা কিছু বলছে না দেখে রিধি ফের বললো,

‘চিনতে পারছেন মা?’

‘হ্যাঁ একটা পাভেল আর অন্যটা রিমি কিন্তু ওরা এভাবে..???’

শখানেক প্রশ্ন পাভেলের মায়ের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর প্রশ্নবোধক দৃষ্টি টা নিক্ষেপ করা রিধির দিকে। উত্তর টা অবশ্য রিধি ই দিলো,

‘মা আপনি ঠিক চিনেছেন এরা দুজন পাভেল আর রিমি। ওদের এই অবস্থা কেন জানেন?….অতঃপর সেই প্রথম দিন থেকে সব ঘটনা রিধি পাভেলের মা কে খুলে বললো। পাভেলের মা বোকা বনে গেল যেনো। উনি খুব বেশি চমকেছেন পাভেল নিজের বাচ্চা টা কে মেরে ফেলেছে শুনে। কিভাবে পারলো এতো নিষ্ঠুর একটা কাজ করতে? তিনি কান্না করে দিলেন।

‘কোন পাপে এমন একটা কুলাঙ্গার কে পেটে ধরেছিলাম জানিনা। তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস রিধি!’

‘মা আপনি এভাবে কাঁদবেন না। আমার উপর অভিশাপ লাগবে!’

‘আমাকে ওদের কাছে নিয়ে চল নিজের হাতে ওদের কে ওদের কৃতকর্মের শাস্তি দিবো!’

রিধির বাবা মা আর পাভেলের মা ড্রয়িংরুমে সোফার উপর বসা। পাভেলের মা ছেলের কুকীর্তি শুনার পর রিধির বাবা মায়ের কাছে খুব লজ্জিত আর অনুতপ্ত বোধ করতে থাকেন। এমন জানোয়ারের মতো কাজ পাভেলের কাছে থেকে আশা করেন নি তিনি। পাভেলের একার দোষ ও নয় রিমির ও দোষ আছে বুঝার পর পাভেলের মা বললেন,

‘বেয়ান আমি তো পাভেল কে একা দোষ দিতে পারিনা সমান দোষে দোষী দুজন ই! রিমি তো আপনাদের মেয়ে তাই না? রিধির সম্পর্কে বোন হয়! রক্তের সম্পর্কের বোন হয়ে কিভাবে সে রিধির এতো বড় ক্ষতি করতে পারলো? আমি জানতে চাই বোন হয়ে বোনের কিভাবে এতো বড় সর্বনাশ করতে পারলো রিমি! রিধি কে বিষ খাইয়ে মারতে চাওয়ায় ওর বুক কাঁপে নি একটু ও?’

রিধির বাবা মা মাথা নিচু করে ফেললো। কিছু টা সময় নিশ্চুপ থেকে রিধির মা বললো,

‘রিমি আমাদের মেয়ে নয়! (রিমি কে নিয়ে সব কথা বললো)’

পাভেলের মা শুধু একের পর এক কথা শুনে অবাক হচ্ছেন।

‘কিহ ও আপনাদের কেউ ই না! কই কখনো তো কেউ বলে নি বা আপনাদের মুখে ও তো শুনিনি!’

‘কাউকে জানাই নি আর কারো থেকে জানার উপায় টাও রাখি নি। তাই বলেই আজ এই দশা! নিজের মেয়ের মতো খাইয়ে পড়িয়ে বড় করেছি আর আজ সেই ই আমার মেয়েটার জীবন টা তছনছ করে দিলো!’

রিধি কিছু টা স্বাভাবিক হওয়ার পর নাদিমের কাছে ফোন দেয়। নাদিম সাথে সাথে ফোন টা উঠায়।

‘ভাইয়া আমাকে আপনি ওরা থাকে কোথায়? এটা বলতে পারবেন? অনেক উপকার হবে!’

‘হুম বলতে পারবো। আপনার অস্থিরতা দেখে বুঝে ছিলাম কোথায় গন্ডগোল আছে তাই আমি পাভেল আর ওর সঙ্গে থাকা মেয়ে টাকে ফলো করি। ওরা …… এই হোটেলে উঠেছে। রুম নাম্বার ১৫..

‘আপনাকে ধন্যবাদ দিলেও কম হয়ে যাবে অনেক বড় উপকার করলেন। আমার সারা জীবন মনে থাকবে!’

‘থাক থাক বাট ভাবী আমাকে বলবেন যে কাহিনী টা কি?’

‘অন্য কোনোদিন….

‘আচ্ছা ঠিক আছে…

নাদিম রিধির অবস্থা বুঝে আর তাকে জোড় করলো না কি হয়েছে বলতে। তবে এই টুকু বুঝতে পেরেছে ঝামেলা টা বড় রকমের।

রিধি সবাই কে জানালো তারা আজকেই কক্সবাজার যাবে! সবাই রেডি হয়ে রওয়ানা দেয় উদ্দেশ্য কক্সবাজার। রিধি নিজেও জানে না কি হতে চলেছে। তবে এটা সে ঠিক করেই নিয়েছে এমন একটা লো ম্যান্টালিটির মানুষের সাথে সে আর সংসার করবে না। তবে তাদের অন্যায়ের কাজের কোনো ক্ষমা নেই! এর ফলাফল তাদের ভোগ করতেই হবে!

——————————-

সমুদ্রের পাড় থেকে ঘুরে এসে পাভেল আর রিমি দুজন ই খুব ক্লান্ত ছিলো। রুমে এসে দুজন একসাথে ফ্রেশ হয়ে নেয়।
‘মন টা ফ্রেশ হয়ে গেলো তাই না?’

‘হুম একদম!’

‘অনেক টায়ার্ড ও লাগছে। একটু ঘুমোতে পারলে ভালো হয়! তুমি তো রাতে আমাকে একটু ও ঘুমাতে দাও নি!’

পাভেল ডেভিল মার্কা হাসি দিলো। পাভেলের হাসি দেখে রিমি লজ্জা পেয়ে যায়। ওদের কাছে অবৈধ সুখের তৃপ্তি আকাশচুম্বী।

‘ডিশিসন ফাইনাল আমি এখন ঘুমাবো এন্ড এটাই আমার শেষ কথা!’

‘কিন্তু আমি যদি ঘুমাতে না দেই?’

‘দিবা না?’

পাভেলের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বললো রিমি। পাভেল সেই চাহনি বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। রিমির রাগ হয়।

‘যাও ঘুমাবো না খুশি?’

‘আরে না না ঘুমাও!’

দুজনন খুনসুটির পর্যায় শেষে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। এই এক ঘুমে ৫ ঘন্টা কখন পার হয়ে যায় নিজেরাও বুঝতে পারে নি। হঠাৎ দরজায় কেউ নক করে। পাভেলের ঘুম আচমকাই ভেঙ্গে যায়। সে ভাবলো হোটেলের কেউ এসেছে তাই খালি গায়ে এসে দরজা খুলে দিতেই ছোট খাটো একটা ভূমিকম্প বয়ে গেলো পাভেলের মাথার উপর দিয়ে….

চলবে__________________

রিধির জন্য পাভেল কে চান আপনারা নাকি ওর উপযুক্ত একজন লাইফ পার্টনার কে চান অবশ্যই জানাবেন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here