সাইকো বর পর্ব ১০

#সাইকো_বর

#writer_Tabassum_Tajnim

#Part_10

আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। চারপাশ ঝাপসা হয়ে আসছে, আমি পড়ে গেলাম।

যখন জ্ঞান ফিরলো, তখন আমি নিজেকে বিছানায় পেলাম। হাতে ব্যান্ডেজ করা। বিছানা থেকে উঠে দাড়ালাম। খুব পানি পিপাসা পেয়েছে। রুমটাও খুব অন্ধকার। আমি রুমের লাইট টা জ্বলালাম।
তারপর পানি খেলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম। ১২.২৫ বাজে।। মেঘ কে দেখতে পেলাম না রুমে। বেলকুনিতে আছে মনে হয়।। বেলকুনিতে গিয়ে দেখি বেলকুনিতেও নেয়। সারা বাড়ির কোথাও নেই মেঘ।

আমার খুব টেনশন হচ্ছে।। কোথায় চলে গেছে ও??
সোফায় বসে আছি। কল দিচ্ছি কিন্তু ধরছে না। হঠাৎ বাইরে গাড়ির হর্ণ শুনতে পেলাম।
এত রাতে কে এলো?? মেঘ এসেছে মনে হয়।
আমার মাথায় একটায় প্রশ্ন ঘুরছে।। মেঘ এত রাতে কোথায় গিয়েছিলো।।
একটু পর মেঘ রুমে ঢুকলো। সবার আগে আমার নজর গেলো ওর হাতের দিকে,, ওর হাতেও ব্যান্ডেজ করা।

একি!! মেঘ তো এক জায়গায় দাড়াতে পারছে না। ও তো,,,
মেঘ পড়ে যাচ্ছিলো। আমি ওকে তারাতারি ধরলাম। ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলাম।

মেঘ— অথৈ,,,, আমি তোমাকে কষ্ট দেই বলে, তুমি জোহান কে ভালোবেসেছো???

উহহহহ্ কি বাজে গন্ধ। তার মানে মেঘ ড্রিঙ্ক করে বাসায় আসছে।

অথৈ— মেঘ,, তুমি ম….
মেঘ— হুম,,, মদ খেয়ে এসেছি। তুমিই তো খাওয়া শিখিয়েছো। তোমার জন্যই তো খেতাম। আর আজও তোমার জন্যই খেয়েছি। বলো,, জোহান কি তোমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে??

মেঘ দাড়িয়ে পড়লো, আমাকে ওর কাছে টেনে নিয়ে বললো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি, আর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
মেঘ— এই অথৈ,, বলো না,, আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে??
আমি তো কিছুই বলতে পারছি না,, কথায় বেরুচ্ছে না গলা দিয়ে। আমি ওর কাছ থেকে চলে আসছিলাম।

মেঘ— আমি তোমাকে ভালোবাসি, অথৈ। খুব ভালোবাসি।। কেউ তোমাকে টাচ করলে, কারো সাথে তুমি হেসে কথা বললে আমার মাথা ঠিক থাকে না। আমার মনে হয় তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে কষ্ট দিলে তোমার থেকেও বেশি কষ্ট আমার হয়।

আমি শুধু মেঘের দিকে তাকিয়ে আছি। মেঘ কাঁদছে।
মেঘ— আমি তোমাকে খুব বেশি কষ্ট দেই।। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। কিন্তু দিয়ে ফেলি, না চওয়া সত্ত্বেও। তোমাকে প্রতিটা আঘাত দেওয়ার পর আমার অনেক কষ্ট হয়, ইচ্ছা করে নিজেকে শেষ করে দেই।

অথৈ, অথৈ, বলতে বলতে মেঘ আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার কপালের উপর পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিলো।

মেঘ— তোমার কপালটা আমার জন্যই কেটে গিয়েছিল না।।
মেঘ আমার কপালে চুমু খেলো। আমার হাতে অনেক গুলো চুমু দিলো।
মেঘ— এইখানে আমি পুড়িয়ে দিয়েছিলাম না।

মেঘ আমার শাড়ির আচল সরিয়ে বললো। তারপর চুমু দিতে যাচ্ছিলো। আমি সরে গেলাম।
মেঘ— সরি,, অথৈ,, সরি, সব কিছুর জন্য সরি।

কথা গুলো বলতে আবার নিজের কাছে টেনে নিলো। মেঘ এখন যা বলছে, তার কিছুই সকালে মনে থাকবে না। তবে একটা কথা জানতে পারলাম, যে ও আমাকে ভালোবাসে, অনেক ভালোবাসে।

অথৈ— তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো।

আমি মেঘকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম। তারপর পিছন ঘুরে দু পা এগোতেই মেঘ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

মেঘ— প্লিজ অথৈ, আমাকে ছেড়ে যেও না।

নাহ্ আমি তোমাকে কোনোদিন ও ছেড়ে যাবো না, মনে মনে বলতে লাগলাম। কারন আমিও তো তোমাকে খুব ভালোবাসি।
মেঘ আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। আমার ঠোঁট ওর ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরলো। আমার গলায় পাগলের মতো চুমু খাচ্ছে। আমার শাড়ির আচল সরিয়ে, আমার পেটে চুমু খাচ্ছে। আমি ওর প্রত্যেক স্পর্শে শিহরিত হচ্ছি। ওর স্পর্শে আজ ভালোবাসা আছে। আমি নিজেকে আজ ওর হাতে দিয়ে দিয়েছি, কারন আমি এখন জানি মেঘ আমাকে কতোটা ভালোবাসে। কিন্তু এই ভালোবাসা টা কি সকালে থাকবে?. হয়তো থাকবে না। ওর হয়তো এটাই মনে থাকবে না যে ও কি কি বলেছে, নেশার ঘোরে।। আমি কোনোদিন ও তোমাকে ছেড়ে যাবো না। যতই কষ্ট দাও। আমি মেঘকে আরো কাছে টেনে নিলাম।

সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গলো, তখন অনেক বেলা হয়ে গেছে। মেঘের দিকে চোখ গেলো। এই আমাকে কষ্ট দিচ্ছে, নিজেও কষ্ট পাচ্ছে। আবার আমার যত্ন করছে। সত্যি সত্যি একটা সাইকো। ওর এলোমেলো চুলগুলো, আমি আরো একটু এলোমেলো করে দিলাম। তারপর উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ওয়াশরুম থেকে যখন বেরিয়ে এলাম। তখন ও মেঘ ঘুমিয়ে আছে। গোসল করতে গিয়ে হাতের ব্যান্ডেজটা ভিজে গেছে। ব্যান্ডেজ টা খুলে ফেললাম।আর ব্যান্ডেজ বাধতে ইচ্ছা করছিলো না। কিন্তু ব্যান্ডেজ করলে ভালো হবে। তাই নিজে বাধার চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি না। হঠাৎ মেঘ উঠে আমার হাতটা ধরলো। একটু জোরেই ধরেছে। আমি ব্যাথা পেলাম।

অথৈ— আহ্,, ব্যাথা পাচ্ছি।

মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো। মেঘ এবার একটু আস্তে হাতে ধরলো। তারপর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো। আমি শুধু ওকে দেখছি। হঠাৎ মেঘ আমার দিকে তাকালো। আমার চোখের দিকে তাকালো। আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। মেঘ ওয়াশরুমে চলে গেলো।

আমি নিচে নামলাম। কিছু তো একটা করতে হবে,, সকালে খাবার জন্য। নিচে নেমে দেখি বুয়া কাজ করছে। যাই হোক ওনি এসে আমার জন্য ভালোই হয়েছে।
মেঘের জন্য খাবার তৈরী করে রুমে আসলাম, দেখি মেঘ রেডি হয়ে গেছে অফিস যাওয়ার জন্য।
ওর সাথে কথা বলার সাহস পাচ্ছি না। রাতে তো সব নেশার ঘোরে বলেছে, কিন্তু এখন তো সেই আগের মেঘ।
অথৈ— তো, তো তোমার খাবারটা কি এখানে নিয়ে আসবো???
সাহস করে বলেই ফেললাম। মেঘ আমাকে একবার দেখলো। তারপর আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
মেঘ— দুপুরে এসে খাবার খাবো।

যখন বেরুবে তখন বললো।

আমি পিছু ডাকতে গিয়েও থেমে গেলাম।
বিছানায় শুয়ে পড়লাম, খুব ঘুম পাচ্ছিলো। কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারলাম না। যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন প্রায় ১.০০ টা বাজে।

আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই দেখি মা- বৃষ্টি ওরা চলে এসেছে। আমার হাতে ব্যান্ডেজ দেখে দুজনেই জিজ্ঞাস করছে কি হয়েছে। আমি কিছু একটা বলে ওদের বুঝালাম।

বিকালে রুমে বসে আছি। মেঘ বলেছিলো দুপুরে এসে খাবে। কিন্তু আসে নি। ওর রাগ কি এখনো কমে নি।। বুঝতে পারি না আমি ওকে। হঠাৎ রুমের দরজায় নক করলো,,,
বৃষ্টি— ভাবি,,
রুমে ঢুকলো বৃষ্টি।
বৃষ্টি — ভাবি তোমার এক ফ্রেন্ড এসেছে, তোমার সাথে দেখা করতে।

আমার ফ্রেন্ড!!! তামান্না, তনু ওরা আসলে তো আমাকে আগে জানাতো। তাহলে,,

অথৈ— ওহ্, নাম কি??
বৃষ্টি— জোহান বলেছিলো মনে হয়।।

জোহান!!!! জোহান এখানে আসবে কিভাবে,, ওহ, মনে পড়েছে, আমিই তো কালকে ঠিকানা দিয়ছিলাম। অনেক বড় ভূল করে ফেলেছি।মেঘ যদি জানতে পারে জোহান এসেছে,, তাহলে আরও বড়ো ঝামেলা করবে। এই জোহান কি আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না।

চলবে,,,,

( ভূল হলে মাফ করে দিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here