সাইকো বর পর্ব ১৪

#সাইকো_বর
,
,
#writer_Tabassum_Tajnim
,,
#part_14

দুটো মাস আমি সাইকোর সাথে আছি। কখনো সাইকোর মতো বিহেভ করে,, আবার কখনো ভালো। বলতে গেলে এখন তো আমি ভালোই আছি,, জোহান কে নিয়ে ঐ রাতের পর আর বড় কোনো ঝামেলা হয় নি,, তবে একটু আধটু হতো।

অনেকক্ষণ বসে বৃষ্টির সাথে গল্প করলাম, শরীরটা খুব খারাপ লাগছিলো ,, তাই উঠে দাড়ালাম, উঠে দাড়াতেই চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে গেলো, আমি সোফায় বসে পড়লাম।

বৃষ্টি— ভাবি,, কি হয়েছে,, তুমি ঠিক আছো তো?? এভাবে বসে পড়লে কেনো?

অথৈ— হুম, ঠিক আছি। বৃষ্টি আমি একটু রুমে যাচ্ছি।

বৃষ্টি কাছ থেকে চলে আসলাম। রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। কয়েকদিন ধরে শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। শুয়ে পড়তেই চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো। এতো ঘুম কোথা থেকে আসলো বুঝতে পারছি না।

হঠাৎ অনুভব করলাম আমার মাথায় কেউ হাত বুলাচ্ছে। আমি চোখ মেলে দেখি আমার শাশুড়ি আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে। আর বৃষ্টি পাশে বসে আছে।

ওরা হঠাৎ আমার রুমে??? আমি তারাতারি উঠে বসে পড়লাম। কখন থেকে ডাকছে আল্লাহই জানে। ঘড়ির দিকে চোখ গেলো ৫.০৫ বাজে। তার মানে আমি অনেক্ষন ঘুমিয়েছি, দুপুরের খাবার ও খাই নি।
আমার শাশুড়ি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তায় আছে মনে হলো।

তোমার কি শরীর খারাপ হয়েছে,এই সময় শুয়ে আছো?? দুপুরেও তো খাও নি? জ্বর তো আসে নি,, তাহলে

কথাগুলো বলে আমার শাশুড়ি আমার দিকে তাকালো।

আমার যে কি হয়েছে তা তো আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। মা আর বৃষ্টি দু’জনেই আমাকে দেখছে।

অথৈ— না,, কিছু হয় নি। ঐ দুপুরের দিকে একটু খারাপ লেগেছিলো,, কিন্তু এখন ঠিক আছি।

সত্যিই ঘুমানোর পর এখন ঠিক আছি। আর খারাপ লাগছে না। তবে আমার ঘুম এখনো যায় নি। এখনো ঘুম পাচ্ছে,, এতো ঘুম আসলো কোথা থেকে??

আচ্ছা, আমি কি ঘুমের ঔষুধ খেয়েছিলাম,,

না,, খাই নি তো,, তাহলে এতো ঘুম পাচ্ছে কেনো,, অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি।

‘ভালো থাকলেই ভালো,, দুপুরে তো কিছু খাও নি,, যাও এখন কিছু খেয়ে নাও”
মা কথাটা বলেই উঠে দাড়ালেন। একটুখানি চুপ করে দাড়িয়ে থাকলেন তারপর রুম থেকে চলে গেলেন।

বৃষ্টি এসে আমার পাশে বসলো
বৃষ্টি— ভাবি,, দুপুরে তোমাকে কত ডাকলাম খাওয়ার জন্য?? তুমি তো মনে হয় শুনতেও পাও নি,,,,এত গভীর তোমার ঘুম??

বৃষ্টির চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময়, আবার ঠোঁটের কোনে হাসি। আমি ও হাসলাম। সত্যিই আমি এতক্ষণ ঘুমিয়েছি কিভাবে বুঝতে পারছি না।

বৃষ্টি— ভাবি,, তুমি এখন কিছু খাবে?? আমি কিছু বানিয়ে এনে দিবো??

অথৈ— না,, এখন কিছু খাবো না,, ক্ষিধে নেই।

ওরা আমার কতো খেয়াল রাখে,,কতো ভালোবাসে আমায়। এই দু মাসে ওরা আমার খুব আপন হয়ে গেছে। ওদের ছাড়া তো আমি এক মুহুর্তও থাকতে পারবো না।

বৃষ্টি— ভাবি চা খাবে,, আমার খুব চা খেতে ইচ্ছা করছে??
চায়ের কথা শুনে আমারও চা খেতে ইচ্ছা করছে।। তাই মাথা নেড়ে বললাম।

অথৈ— আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি,, তুমি বসো।

আমি উঠে যেতে চাইলাম কিন্তু বৃষ্টি আমাকে জোর করে বসিয়ে দিলো।

বৃষ্টি— আমি নিয়ে আসছি, তুমি এখানে বসো।

বৃষ্টি চলে গেলো। একটুপর দু কাপ চা নিয়ে আসলো। আমি চা টা হাতে নিয়ে বৃষ্টির দিকে দেখলাম। বৃষ্টি আজকে চা বানিয়ে এনেছে,,, কিন্তু কেনো?? হয়তো আমার শরীর খারাপ লাগছে,, তাই।। না আমার তা মনে হচ্ছে না কেনো।।

আমি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ওর দিকে তাকালাম। বৃষ্টি আমাকে কিছু বলতে চায় মনে হয়।।

অথৈ— বৃষ্টি,,,,,,তুমি কি আমাকে কিছু বলবে??

বৃষ্টি প্রথমে চমকে গেলেও পরে হেসে দিলো।

বৃষ্টি— এই জন্যেই তোমাকে আমার এত ভালো লাগে। আমি কিছু বলার আগেই তুমি বুঝে যাও।
বলছিলাম কি ভাবি,,,

কি ব্যাপার,, এই মেয়ের আবার কি চাই,, বুঝতে পারছি না,, এতো গলা টানছে কেনো??

অথৈ— হুম বলো,,

বৃষ্টি— ভাবি এই শেষবারের জন্য,, তুমি আমার উপকার টা করে দাও,, প্লিজ ভাবি,,,

হুহ কতোবার যে বললো এইটাই লাস্ট আল্লাহই জানে। না জানি কি বলবে??
বৃষ্টি আমার হাত ধরলো।।

বৃষ্টি— ভাবি,,, প্লিজ, প্লিজ,,প্লিজ, এটাই লাস্ট।। বলো উপকারটা করবে কি??

অথৈ— ঠিক আছে,,, কিন্তু কি উপকার??

বৃষ্টি— ভাবি এখন আমরা দুজন বেরুবো। ভাবি প্লিজ,,

উফফফ,,এমন ভাবে বলবে,,আর না করতে পারি না,, কিন্তু এখন কিভবে বেরুবো?? বুঝতে পারছি না।।

অথৈ— ঠিক আছে,,কিন্তু মাকে কি বলবো?? ওনি এখন বেরুতে দিবে তো??

বৃষ্টি— আমি এতো কিছু জানি না,,, তুমি মাকে রাজি করাবে,, ভাবি প্লিজ,,

বুঝলাম না,, বাইরে যাওয়ার জন্য এতো পাগল হচ্ছে কেনো এই মেয়ে নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে।

অথৈ—আমরা এখন কেনো যাবো,, কালকে যায়,,

আমার কথা শুনে বৃষ্টি আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকালো,

বৃষ্টি— ভাবি,,, আজকে যেতে হবে,, প্লিজ ভাবি। প্লিজ,,,

কোনো উপায় না দেখে অবশেষে আমার শাশুড়ির কাছে গেলাম। ওনাকে তো কিছুতেই রাজি করাতে পারছিলাম না,, একা একা দু জন মেয়ে যাবে শুনেই ওনি না করে দিলেন। অবশেষে আমার বান্ধবী আর ওর হাজবেন্ড আমাদের সাথে যাবে বলাতে ওনি রাজি হলেন। তবুও ওনি মেঘকে সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতেই বৃষ্টি না করলো। আমি আমার বান্ধবী তনুকে কল দিলাম। তনুকে ঘটনা খুলে বললাম।
ও যেতে রাজি হয়ে গেলো আমাদের সাথে।

কিন্তু ওর হাজবেন্ডের কাজ আছে,, তাই আমাদের সাথে বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না।
আমরা চারজন বাসা থেকে বেরুলাম। তনুর হাজবেন্ড আমাদের সাথে একটুক্ষণ ছিলো তারপর চলে গেছে,,আর বৃষ্টি ও একজনের সাথে গেলো। যার সাথে দেখা করার জন্য ও আমায় নিয়ে এসেছিলো।
ভাগ্যিস,, আমি তনুকে নিয়ে এসেছিলাম। নাহলে এই মেয়ে আমাকে একা রেখেই চলে যেতো ঐ ছেলের সাথে। আমি আর তনু মার্কেটে গিয়ে দু একটা জিনিস কিনলাম। কারন বাসায় গিয়ে তো দেখাতে হবে যে আমরা সত্যি মার্কেটে গিয়েছিলাম। মার্কেটে একটু ঘোরাঘুরির পর একটা শাড়ি কিনলাম,,বৃষ্টি একটু পরেই চলে এলো,, ওর হাতে একটা ব্যাগ। আমি ওকে জিজ্ঞাস করতেই বললো,, এই গিফটটা দেওয়ার জন্যই বৃষ্টিকে এখানে এনেছিলো। তারপর আরো একটু কেনাকাটা করলো ওরা দুজনে,,

আমার আবার শরীর খারাপ লাগছিলো,, তাই ওদের কে বললাম, ওরা আরো কেনাকাটা করতে চায়ছিলো মনে হয়,, কিন্তু আমার জন্য পারলো না। অবশেষে আমরা বাসায় আসলাম। তনুকে ওর হাজবেন্ড এসে নিয়ে গেলো।

আমাদের দেখে মা টেনশন মুক্ত হলো। ওনি নাকি অনেকবার আমাকে কল দিয়েছে,,কিন্তু আমি তো শুনতেই পায়নি। ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে দেখি সত্যিই ওনি কল দিয়েছিলেন। মোবাইল সাইলেন্ট করা ছিলো তাই বুঝতক পারি নি।

আমি রুমে ডুকেই দেখি মেঘ বসে আছে রুমে,, ল্যাপটপে কাজ করছে। কি ব্যাপার মা বলে নি তো মেঘ চলে এসে অফিস থেকে।

মেঘ— কোথায় গিয়েছিলে???

মেঘ আমার কাছে এসে দাড়ালো। একটু রাগি গলায় বললো,, আমি ভয় পেয়ে গেলাম।

অথৈ— মার্কেটে গিয়েছিলাম।

ভয়ে ভয়ে বললাম। আমাকে পিছন থেকে মেঘ জরিয়ে ধরলো। আমার পিঠে পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিলো। তারপর পিঠে চুমু খেতে লাগলো।।

মেঘ— আমাকে বললে তো আমি নিয়ে যেতাম। একা একা গিয়েছো,, বিপদ হতে পরতো তো। পরের বার থেকে আমি নিয়ে যাবো।

আমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে নিলো। আমার কপালে গালে চুমু খেতে লাগলো। উফফ,, মাঝে মাঝে যে মেঘ কি করে ও নিজেও জানে না।

অথৈ— মেঘ,, কি করছো,,, ছাড়ো??

মেঘ আমাকে নিয়ে বিছানায় পড়ে গেলো। আমার উপর সমস্ত ভার ছেড়ে দিলো।

মেঘ— এই তুমি সব সময় ছাড়ো ছাড়ো করো কেন?? ভালো লাগে না,,,
তারপর আবার মেঘ আমার কপালে গলায় চুমু খেলো, ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো। আমাকে কিছুই বলতে দিলো না।
হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ।
“ভাবি”

আমি মেঘকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। উঠে একটানে শাড়ির আঁচল টা গায়ে জড়িয়ে নিলাম।
বৃষ্টি দাড়িয়ে আমাদের দু জনকে একবার দেখলো তারপর দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।
আমি মেঘের দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছি,, আর মেঘ আমার দিকে অসহায়ের মতো।।

অথৈ— এই জন্যেই সব সময় ছাড়ো ছাড়ো বলি।।

কথাটা বলেই আমি ওয়াশরুমে চলে গেলাম।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here