সাইকো বর পর্ব ২০

#সাইকো_বর

#writer_Tabassum_Tajnim

#part_20

মেঘ আর কিছু বললো না,, শুধু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেলো। খুব বিরক্ত লাগে যখন ঘুম ভেঙে যায়,, উফফ,, কি ঠান্ডা,, এখনও সকাল হয় নি। রাগ হচ্ছে,, হঠাৎ চোখটা মেঘের দিকে পড়লো। ওর মুখটা দেখে মুহূর্তেই রাগটা হারিয়ে গেলো। এখন পুরো বাচ্চাদের মতো দেখা যাচ্ছে মেঘকে। আমি ওর এলোমেলো চুলগুলো আরও এলোমেলো করে দিলাম। আমার ওর চুল এলোমেলো করতে ভালো লাগে। ওর গাল ধরে জোরে টান দিলাম। মেঘ ঘুমের মধ্যেই হাত সরিয়ে দিলো। আবার ওর গালে টান দিলাম। আবার সরিয়ে দিলো হাতটা,, তারপর কম্বল দিয়ে মুখটা ঢেকে দিলো। এটা কি হলো,, আমি বসে আছি,, আর ও ঘুমাবে। না এটা হতে পারে না।

আমি আস্তে আস্তে কম্বলটা সরিয়ে দিলাম ওর মুখ থেকে। ঘুমন্ত মুখটা দেখলে মনে হয় ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারে না,, কিন্তু আসলে তা নয়,, অনেক কষ্ট দেয় আমায়,, কিন্তু তার থেকেও বেশি ভালোবাসে। তার জন্য একটা চুমু তো দিতেই হবে। আমি একটা হাতে ওর বুকের উপর ভর দিয়ে ওর দিকে ঝুকলাম। মেঘ আমার হাতটা সরিয়ে দিলো,, আমি ওর বুকে পড়ে গেলাম। ইসস,, সব সময় বলে ও কাছে চাইলে নাকি আমি সরিয়ে দেই,, আর এখন আমি একটা চুমু দিতে গেলাম এখন ও আমাকে সরিয়ে দিলো। ইচ্ছা করছে ওর গলা টিপে ধরতে। দুই হাত দিয়ে গলাটা টিপতেই যাচ্ছিলাম ওমনি মেঘ আমার হাতে ধরে টান দিলো। আমি ওর উপর পরে গেলাম।

মেঘ— কি শুরু করছো সকাল সকাল,, ঘুমুতে দিবা না নাকি?

অথৈ— না,, আমার ঘুম ভেঙে গেছে,, আর তুমি ঘুমুবে এটা হবে না,,

আমি উঠে বসে ওর হাত টানতে লাগলাম। কম্বল সরিয়ে দিলাম।

অথৈ— উঠো,, উঠো,,

মেঘ— বাচ্চাদের মতো কি করছো,, ঘুমিয়ে পড়ো।।

কথাটা বলে মেঘ কম্বল দিয়ে ওর মুখটা ঢেকে শুয়ে পড়লো৷ আবার,,

কম্বল সরানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না,,কম্বল সরাতে ব্যর্থ হয়ে কম্বলের উপর দিয়ে কিল মারতে শুরু করলাম।

মেঘ কম্বল টা সরালো। খুব বিরক্ত হয়েছে বেচারা,, আমাকে রাগি চোখে দেখছে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম,, উঠে যদি চড় মারে। ইসস্ শুধু শুধু কেনো ওর পিছনে লাগতে গেলাম। মেঘের দিকে তাকালাম। মেঘ আমার দিকে দুটো হাত বাড়িয়ে দিলো।

মেঘ— চুপচাপ এসে শুয়ে পড়ো,, নাহলে মার একটাও মিস হবে না।

অথৈ— কিন্তু আমার তো এখন ঘুম আসবে না,,
মেঘ—আমি কি বলছি???( দাতে দাত চেপে বললো)

আমি আর কিছু বললাম না,, চুপচাপ গিয়ে ওর বুকে শুয়ে পড়লাম। অনেকক্ষণ হলো শুয়ে আছি। ঘুম তো আসছে না। আস্তে আস্তে মাথাটা তুললাম মেঘ ঘুমিয়ে গেছে নাকি দেখার জন্য।

মেঘ— আবার,,,

আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। এখনো ঘুমায় নি।।

মেঘ— এখনো ঘুমাও নি,,,

অথৈ— ঘুম না আসলে ঘুমাবো কি করে?? উঠে পড়ি,,

মেঘ— একদম না,, ঘুম না আসলেও শুয়ে থাকতে হবে। তুমি উঠে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিবে।

কি আর করা শুয়ে আছি। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ মনে হলো মেঘ সরে যাচ্ছে। আমি চোখ খুলে দেখি মেঘ আমাকে বালিশে শুইয়ে দিচ্ছে। মেঘ আমাকে দেখলো,,তারপর একটা হাসি দিলো, আমিও হাসি দিয়ে কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়লাম।

চোখ মেলে দেখি মেঘ অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেছে। এই রে,, ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি তারাতারি উঠে বসলাম।

মেঘ— কি হলো??

অথৈ—না,, কিছু না,,

মেঘ— ওহ,, শুনো খাবার টেবিলে রাখা আছে,, তুমি আর বৃষ্টি খেয়ে নিয়ো।

খাবার!!! চোখ বড় বড় করে মেঘকে দেখলাম। ও রান্না করছে নাকি!! অসম্ভব।

মেঘ— এই যে,, আমি রান্না করি নাই,, বাইরে থেকে নিয়ে আসছি।। খেয়ে নিয়ো কিন্তু।

মেঘ চলে গেলো। আমি বসে আছি,, ঘুমটা এখনো ছাড়ছে না। আরও ঘুমুতে ইচ্ছা করছে। আমি শুয়ে পড়েছি। বাসায় তো কেউ নেই,,ঘুমুলেও সমস্যা নেই। শুয়ে আছি,,,হঠাৎ মনে পড়লো আজ তো রিপোর্ট দিবে। আমি তো ভূলেই গেছি। মেঘের মনে আছে তো। একটা ফোন করে মনে করিয়ে দেই। ফোনটা হাতে নিলাম,,

না,, আমি কেনো মনে করিয়ে দিবো,, দেখি ও আমার কথা কতোটা ভাবে। ফোনটা বালিশের উপর রেখে দিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে আসলাম,, অনেক ক্ষুধা লাগছে,, যায় গিয়ে দেখি বৃষ্টি ঘুম থেকে উঠছে নাকি।

বৃষ্টি রুমে গিয়ে দরজায় নক করতে গিয়ে দেখি দরজা খুলা,, মানে বৃষ্টি উঠে গেছে। রুমে ঢুকলাম না,, বাইরে থেকেই ওকে ঢাকলাম।

অথৈ— বৃষ্টি,, বৃষ্টি,,

বৃষ্টি বেরিয়ে আসলো। কথা বলছে কারো সাথে, আমি ইশারা দিতেই বললো জোহান। আমি খাওয়ার জন্য আসতে বলে আমি নিচে চলে আসলাম। খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছি বৃষ্টির জন্য,, কোনো মানে হয়,, আমি আর ক্ষুধা সহ্য করতে পারছি না,,। খাওয়া শুরু করে দিলাম,, এই মেয়ে আসবে না। আমার খাওয়া যখন শেষ,,তখন বৃষ্টি খেতে এলো।

বৃষ্টি— বাহ্,, তুমি আমাকে রেখেই খেয়ে নিলে,,এখন এইখানে বসে থাকো,, আমি খেলে তারপর যাবে।

ইসসস,, এখন আবার বসে থাকতে হবে। বিরক্তিকর,, কই ভাবলাম একটু শুয়ে থাকবো। নাহ্ এখন সেটা হবে না। আমি পানির গ্লাসটা হাতে নিলাম,, গলাটা শুকনো লাগছে। পানি খাচ্ছি,, এর মধ্যে বৃষ্টি ডাকলো,

বৃষ্টি—ভাবি,, আজকে জোহান আসবে আমাদের বাড়িতে,,,

কথাটা শুনে আমার গলায় পানি আটকে গেলো। বিষম খেলাম,,কাশতে লাগলাম।
বৃষ্টি দৌড়ে আমার কাছে আসলো,,

বৃষ্টি— ভাবি তুমি ঠিক আছো তো??

আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম। কিন্তু জোহান এখন আসবে কেনো?? বুঝতে পারলাম না। আমি বৃষ্টির দিকে তাকালাম। বৃষ্টি খাচ্ছে।

বৃষ্টি— ভাবি,, তুমি হয়তো ভাবছো এখন জোহান কেনো আসবে,,তাইতো

আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো বৃষ্টি।

বৃষ্টি— তাহলে শুনো,, আব্বু আম্মু তো রাজি হয়ে গেছে,, কিন্তু ভাইয়া তো এখনো জানেই না,, তাই জোহান এসে নিজেই ভাইয়াকে বলবে। কেমন হবে বলো,, তুমিও ভাইয়ার রোষ থেকে বেঁচে যাবে।

বাহ্,,, ভালো কথা বলছে তো মেয়েটা,, আমার থেকে বেশি বুদ্ধি ওর।

বৃষ্টি— কি ভাবি,, কিছু তো বলো,,,

অথৈ— ঠিক আছে,, তাই হোক।

কিন্তু,,, নাহ্ খারাপ চিন্তা মনে আনবো না। যা হবে ভালোই হবে।

বৃষ্টি— ভাবি,, কি ভাবছো??

অথৈ— হুম, কিছু ভাবছি না তো,,

বৃষ্টি— তাহলে গালে হাত কেনো??

আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি!! একি!! আমি তো গালে হাত দিয়েই বসে আছি।। আমি হাতটা নামিয়ে বসলাম। বৃষ্টির খাওয়া হয়ে গেলে আমি রুমে চলে আসলাম। এই একা একা থাকাটা অনেক বোরিং,,।

এখন সারা টা দিন কিভাবে কাটাবো,, দেয়াল ঘড়িটার দিকে চোখ গেলো,, মাত্র ১০.৩০ টা বাজে।।

গান শুনে,, টিভি দেখে দিন কাটাতে হবে। না,, গান শুনে টিভি দেখে সারাদিন কাটানো যাবে না,, তার চেয়ে ভালো রান্না করি।। দুপুরে খাবার টা হয়ে যাবে। বৃষ্টির রুমে গিয়ে দেখি ও শুয়ে আছে,, আমাকে দেখে উঠে বসলো।

অথৈ— বৃষ্টি চলো,,,

বৃষ্টি— কোথায় ভাবি

অথৈ— রান্নাঘরে,,,

বৃষ্টি— কি!!

অথৈ— হুম চলো,, দু দিন বিয়ে হয়ে যাবে,, আর শশুড়বাড়ি গিয়ে রান্না করতে হবে না। চলো চলো,, এখন থেকেই রান্না শিখতে থাকো।

অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টি আমার সাথে এলো। দুজনে মিলে,, রান্না করলাম। রান্না করে দুজনেই হাঁপিয়ে গেছি। বৃষ্টির অবস্থা দেখার মতো। রান্না শেষ করে রুমে চলে আসলাম। সকালে যদি উঠতে পারতাম তাহলে মেঘকে বাইরের খাবার খেয়ে যেতে হতো না,, খাবার খেয়েছে নাকি তাও তো জানি না । ১.০০ টা বেজে গেছে,, রান্নাঘরে অনেকক্ষণ কাজ করেছি। যায় এখন গোসল করে আসি। গোসল করে এসেই শুয়ে পড়লাম। অনেক খারাপ লাগছে, চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি, ঘুম আসছে না,, মোবাইল টা নিয়ে একটা গান প্লে করলাম। গানটা শুনতে ভালোই লাগছিলো,,

বৃষ্টি— ভাবি,,

অথৈ— বলো,,

বৃষ্টি—খুব ক্ষুধা লাগছে,, চলো,,

আমার এখন খেতে একটুও ইচ্ছা করছে না,, কিন্তু কি আর করা খেতেই হবে। প্রায় দরজার কাছে চলে গিয়েছি,, তখন ফোনটা বেজে উঠলো।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here