সাইকো বর পর্ব ২২(শেষ)

#সাইকো_বর

#writer_Tabassum_Tajnim

#part_22

জোহান— এখন উঠো না,, শুয়ে থাকো,, আর বলো ফার্স্ট এইড বক্স টা কোথায়,, কপালটা কেটে গেছে তো। আমি কপালে হাত দিয়ে দেখতে চাইলাম,,

জোহান— না,, ধরো না,, ফার্স্ট এইড বক্স কোথায়,,

আমি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম। জোহান বক্স নিয়ে আমার কপালে ঔষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে। আমার দিকে ঝুকে ঔষুধ লাগাচ্ছে,, আবার বাতাস দিচ্ছে,, যাতে না জ্বালা করে,,
বৃষ্টি কেনো আসছে না,,

অথৈ— হয়েছে,,,হয়েছে,,আমি ঠিক আছি

জোহানকে থামিয়ে দিলাম। কারন আমি চাই না অকারণে জোহানকে ঝামেলা করুক,, যে কোনো টাইমে মেঘ চলে আসতে পারে।

জোহান— কি ঠিক আছো,, ঠিক আছো ঠিক আছো বলেই তো এই অবস্থা করছো, এখন চুপ থাকো আমাকে আমার কাজ করতে দাও।

জোহান আবার আমার কপালে হাত দিলো,,একটা ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো।

জোহান— এই যে হয়ে গেছে,, কপাল কাটা অথৈ,,,
নামটা কেমন হলো,,

কপাল কাটা অথৈ,, হেসে দিলাম। জোহান ও হাসলো উঠে দাড়ালো। দরজার দিকে তাকিয়ে আমার হাসিটা হারিয়ে গেলো। মেঘ দাড়িয়ে আছে তো। পুরো রেগে আছে,, আমি চোখ বন্ধ করলাম।

টেনশন নিস না,, সব ঠিক হয়ে যাবে,, মেঘ বুঝবে যে আমি অসুস্থ, তাই। মেঘ সব বুঝবে, আমার সাথে আর জোহানের সাথে কোনো খারাপ আচারণ করবে না
বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম। চোখ খুললাম,, মেঘকে দেখলাম,, মেঘ আমাকে এখনো দেখছে,, রাগে চোখগুলো লাল হয়ে গেছে।

জোহান গিয়ে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো,,

জোহান— কেমন আছেন??

মেঘ— মনে হয় ভালোই আছি। (দাঁতে দাঁত চেপে বললো)। তো আপনি এখানে??

জোহান— ঐ,, আপনার কাছে এসেছিলাম।

মেঘ— ওহ,,, তো আমার সাথে দেখা করতে এসে, আমার বেডরুমে কি করছেন??

আমি মেঘেকে দেখছি।

জোহান— মানে,,
মেঘ কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু বৃষ্টি এসে পড়াতে আর কিছু বললো না,,

বৃষ্টি— ভাবি,, পানি আনতে একটু দেরি হয়ে গেলো,, আসলে আম্মু কল দিয়েছিলো তো,,তাই।

পানির গ্লাসটা আমার হাতে দিলো। আমার তো এখন পানি খেতে ইচ্ছা করছে না,, আমার তো ভয় হচ্ছে মেঘ কি করে বসে??

মেঘ— কি হলো বলো জোহান??

বৃষ্টি— কি বলতে বলছো ভাইয়া??

মেঘ— বৃষ্টি সব কিছুতে তোমার কথা না বললে কি চলে না। তুমি এখন যাও।

বৃষ্টি আমাকে দেখলো। আমি ওকে যাওয়ার জন্য ইশারা দিলাম। বৃষ্টি অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আমার তো হাত পা কাঁপছে,, উঠে দাড়াবার ও শক্তি নেই।

মেঘ— এবার বলো জোহান,,, কি করছিলে তুমি?? আমার বেড রুমে,, আমার স্ত্রীর সঙ্গে।

জোহান— মানে,, কি বলতে চায়ছেন আপনি??

মেঘ— বুঝতে পারছেন না,, আমি কি বলতে চায়ছি,,

জোহান— অথৈ,,, কি বলছে এইগুলো??
অথৈ,, ওনাকে কিছু তো বলো??

আমি কিছুই বলতে পারবো না,, মেঘ এতোটা,,, ভাবতেই পারছি না।

জোহান— ওকে তুমি কিছু বলবে না,, তোমার এইসব কথা শুনতে ভালো লাগলেও আমার ভালো লাগছে না। তোমার জায়গায় আমি হলে ওকে দুয়েকটা চড় মেরে দিতাম। কতোটা নিচু মনের মানুষ হলে এধরনের চিন্তা ভাবনা আসতে পারে,,, ছিঃ,,,

মেঘ— আপনি কি বললেন??

জোহান— যা সত্যি তাই বললাম।

জোহান চলে গেলো। আমি বসে বসে কাঁদছি। মেঘ এই ধরনের কথা মাথায় আনলো কিভাবে??
এই ও আমাকে ভালোবাসে। মেঘ আমার কাছে এসে বসলো। আমার চোখের পানি মুছে দিলো।

মেঘ— আরে, তুমি কাঁদছো কেন?? এই সময় এতো কান্নাকাটি করা ভালো না,, আজ তো রিপোর্ট দিয়েছে,, জানো তুমি রিপোর্টে কি লেখা আছে???

আমি মেঘের দিকে তাকালাম,,

মেঘ— তুমি প্রেগন্যান্ট। আচ্ছা অথৈ,,, তোমার এই সন্তানের বাবা কে?? আমি??? না জোহান???

আমি দাড়িয়ে গেলাম। মেঘ কি বললে এটা তুমি?? কি করে এই কথাটা তুমি বলতে পারলে।

মেঘ— অথৈ,,, ব,,

আর বলতে পারলো না মেঘ,, তার আগেই ঠাসস করে ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছি।

অথৈ— কি করে বলতে পারলে, তুমি?? এই তুমি আমাকে ভালোবাসো?? এই বুঝি ভালোবাসা নমুনা,,, ছিঃ,,

মেঘ— তুমি আমাকে,,,,, তোমার সাহস তো কম নয়,,, কেনো বলতে পারবো না,, আমি যা দেখেছি তা বলতে দ্বিধা কিসের,, বলতে পারবে না যে এটা মিথ্যে,,, কারন আমি যা দেখার নিজের চোখে দেখেছি,,,

মেঘ একটা ফাইল আমার মুখের উপর ছুড়ে মারলো,,, তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

কি দেখেছে মেঘ,,, যা দেখেছে সেটাতো ভূল দেখেছে, আরে জোহান তো আমার কপাল….

তবে এখন সবচেয়ে বড় সত্যি হলো ,, যে মেঘ আমাকে কোনোদিন ভালোইবাসে নি। যদি ভালোবাসতো তাহলে এই ধরনের কথা মুখেই আনতে পারতে না। এই এত বছরের ভালোবাসা,, মেঘ কি আমাকে চিনে না,, এই কাজটা কোনোদিন ও করতে পারি না আমি,, এই বিশ্বাস টুকু ওর মধ্যে নেই।

আমি ফ্লোরে বসে পড়লাম। ফ্লোরে পড়ে থাকা ফাইলটা হাতে নিলাম,, তারপর ফাইল থেকে রিপোর্ট টা বের করলাম। পড়তে পারছি না,, চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে,, দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো কাগজটা তে। কাগজটা পড়লাম। অন্য কোনো সময় হলে হয়তো,, আমার থেকে খুশি কেউ হতো না। কিন্তু আজ আনন্দ হচ্ছে না,,কষ্ট হচ্ছে,,
মেঘের একটা কথায় শুধু আমার কানে বাজছে,,
আমি না জোহান
কি করে বললো মেঘ,, একবারও আটকালো না,,
এতো অবিশ্বাস করে আমায়,এতো অবিশ্বাস নিয়ে ওর সাথে থাকার চেয়ে তো
ভালো,, আমি ওর থেকে দূরে চলে যাবো। কোনোদিন ভাবিও নি আমাকে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আসলে আমি অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। হয়তো সেও ভালোবাসে,, ভালোবাসলে এতো সন্দেহ কেনো করে,,,
আজ শেষবারের মতো সন্দেহ করে নিলো। আর কোনোদিন সন্দেহ করতে পারবে না,, কারন আমি চলে যাবো,, আমি আর থাকবো না মেঘের সাথে। ও আমাকে অপমান করেছে,, সাথে আমার সন্তান কেও। ওর সাথে থাকা যায় না,,,

বসে আছি,, চলে যাবো,,হয়তো মেঘ একদিন বুঝতে পারবে যে ও যা দেখেছিলো,, যা ভেবেছিলো,, সব ভূল। সেদিন হয়তো বা অনেক দেরি হয়ে যাবে। কিন্তু আমি কোথায় যাবো??

নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করে অবশেষে ঠিক করলাম আমি আর ওর সাথে থাকবো না। ফ্লোর থেকে উঠে দাড়ালাম। দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম,, ১০.৩০ টা বাজে,,

মেঘ এরপর আর একবারও রুমে আসেনি। হয়তো আসবেও না। আমি মোবাইল টা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরুলাম।
নিচে নেমে দেখি মেঘ আর বৃষ্টি বসে আছে। আমি তো ভেবেছিলাম মেঘ বাসায় নেই। বৃষ্টি আমাকে প্রথম দেখলো।

বৃষ্টি— ঐ তো ভাবি আসছে,,
বৃষ্টি আমার কাছে এসে দাড়ালো। মেঘ ও ঘুরে আমাকে দেখলো।

বৃষ্টি— ভাবি,,

অথৈ— বৃষ্টি,, আমি চলে যাচ্ছি,,, ডিভোর্স লেটার টা পাঠিয়ে দিবো।

বৃষ্টি— মানে,,

আমি আর একমুহূর্তও মেঘের সামনে থাকতে চায় না। মেঘ আমার সামনে এসে দাড়ালো।

মেঘ— অথৈ,,, আমার ভূল হয়ে গেছে,, আমাকে মাফ করে দাও,,

অথৈ— তোমার কোনো ভূল হয় নি,,, ভূল তো আমার হয়েছে,,, আমি,,,,

কথাটা শেষ না করেই আমি চলে আসতে চায়লাম।

মেঘ— অথৈ প্লিজ,, আমার কথাটা তো শুনো,,

আমি দাড়ালাম না,, গেইটের কাছা কাছি যেতেই মেঘ আমার হাতটা ধরে ফেললো,,

মেঘ— অথৈ,, ভূল হয়ে গেছে,, মাফ করে দাও না,,, আমি আর কখনো এমন করবো না,,

অথৈ— আমাকে ছাড়ো,,,
হাতটা ছাড়িয়ে রাস্তার প্রায় মাঝামাঝি চলে এলাম। হঠাৎ একটা ট্রাক এসে জোরে ধাক্কা মারলো,,,, হাত থেকে মোবাইল টা ছিটকে পড়ে গেলো।
,,,,
,,,,
,,,,

আজ মেঘ আর অথৈয়ের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। মাঝে অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। জোহান আর বৃষ্টির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কিছুদিন পর ওদের বিয়ে।

মেঘ— তুমি আমাকে কোনোদিনও ভালোবাসো নি,,,,, একবারও বলোনি তুমি আমাকে ভালোবাসো,,
খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে আবার মেঘ বলা শুরু করলো,,

মেঘ— না,, আমি জানি তো তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো।। ঐ দিনের ঘটনার জন্য তুমি আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।
তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে কেনো,,, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি অথৈ,,,,

অথৈয়ের কবরের পাশে দাড়িয়ে মেঘ কথাগুলো বলছে,,ওর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। অথৈ মারা গেছে ঐদিনের রোড এক্সিডেন্টে।।

মেঘ চলে আসছিলো,,

না আমি এখানেই থাকবো। তোমার বুকে মাথা না রাখলে আমার ঘুম আসে না
অথৈয়ের এই কথাটা মনে পড়লো। মেঘ শুয়ে পড়লো অথৈয়ের কবরের পাশে,,,

হঠাৎ মনে হলো,, কেউ ওর বুকে মাথা রেখেছে। এক শীতল স্পর্শে ওর সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো।

~~~~~~~~~ ~~~~~ সমাপ্ত ~~~~~~~~~~~

সব গল্পের হ্যাপি এন্ডিং হয় না।কিছু গল্প রেখে যায় কষ্টের স্মৃতি।।

নিয়মিত গল্প পেতে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here