#সাইকো_বর
Writer : Tabassum_Tajnim
part 3
আমার ননদটা খুব ভালো। জামাইটার মতো হারামি না।
শুধু হারামি না, মহা হারামি,কুত্তা, বিলাই বান্দরের মতো দেখতে।।নাহ্ বান্দরের মতো দেখতে না।। অনেক সুন্দর,, কিন্তু আমার সাথে মানায় নাই।। আমি উঠে আয়ানার সামনে দাড়ালাম। ইসস্,,আমি কত সুন্দর।।আমার পাশে ওরে একদম মানায় না।।তার উপরে কত্ত টর্চার করে।। কি আর করা সব ভাগ্য। গহনাগুলো খুলতে লাগলাম। দরজা খুলার শব্দ শুনতে পেলাম। পিছনে ঘুরে দেখি মেঘ।।।
অথৈ– উফফফ্ সাইকো আইসা পড়ছে।। ( বিড়বিড় করে বললাম)
মেঘ পিছন থেকে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরল।।
মেঘ– বাবু কিছু বললে নাকি??
অথৈ— আ,, আমি!! কই কিছু বলি নাই তো।।
একটু হেসে বললাম।
মেঘ— না কিছু তো বলছো।। আমাকে সাইকো বলছো,, তাই না।।
আল্লাহ গো আমি আজকে শেষ।কেমনে যে শুনে ফেললো।। এখন থেকে মনে মনে বলবো। আমি মেঘের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবার গহনা খুলে চুলগুলো উচু করে বেধে নিলাম।। মেঘ আমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে আমার বাধা চুলগুলো ছেড়ে দিলো।।
মেঘ— কি ঠিক বলছি তো। চলো এখন শাস্তি পাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও।।
আমি আবার চুল বাধতে লাগলাম।
অথৈ— আর কি শাস্তি দিবে। চলো, দাও তোমার শাস্তি।
আমার কথা শুনে মেঘ হেসে দিলো।।তারপর একটা সিগারেট জ্বালিয়ে টানতে লাগলো।।আর ধোয়াটা আমার মুখে ছাড়তে লাগলো। ইচ্ছা করছে একটা চড় মেরে সবগুলা দাত ফেলে দিতে।
অথৈ– উফফ্ সিগারেট বাইরে গিয়ে খাও না।। আমি সিগারেটের গন্ধ টা নিতে পারছি না।।
মেঘ— সেই জন্যেই তো তোমার সামনে খাচ্ছি।।নাহলে তোমাকে শাস্তি দিবো কিভাবে..
আমি আর কথা বাড়ালাম না।। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি মেঘ শুয়ে পড়েছে।। খুব খুশি হলাম ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে।। ঘুমিয়ে পড়ছে নাকি চোখ বন্ধ করে রেখেছে নিশ্চিত হতে আমি ওর দিকে একটু ঝুকে একবার হাত নাড়ালাম। আবার হাত নাড়াতে গেলেই হাত ধরে টান দিয়ে ওর উপরে ফেলে দিলো।।তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।।
মেঘ– আমি ঘুমাই নি।। বাবু আজকে তুমি বিছানায় ঘুমাবে না।।
মেঘের কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।কয় কি এই ছেলে।।
অথৈ– বিছানায় ঘুমাবো না, তাহলে কোথায় ঘুমাবো??
মেঘ আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো।।যা ব্যাথা পেয়েছি না।।
অথৈ— মা গো,, কোমর টা ভেঙ্গে গেলো।।
মেঘে আমাকে দেখ হাসতে লাগলো।।আর আমি রাগে দাতে দাত চেপে বসে আছি।
মেঘ— বাবু তুমি আজকে ফ্লোরে ঘুমাবে।।
অথৈ— মানে কি, আমি ফ্লোরে থাকতে পারবো না। তোমার যদি ইচ্ছা হয় তাহলে তুমি ফ্লোরে ঘুমাও।।
মেঘ— ভালোই ভালোই বলছি ভালো লাগছে না।। মাইর খেতে চাও নাকি।।
আমি মাইরের কথা শুনে ফ্লোরেই লক্ষি মেয়ের মতো শুয়ে পড়লাম।আর মনে মনে সাইকোর বাচ্চার ১৪গোষ্টি রে বকতে লাগলাম। মেঘ ল্যাপটপে কাজ করছিলো।। টাইপিং এর শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। কি ঠান্ডারে বাবা।। একটা কম্বলও নিতে দিলো না।।কাপতে কাপতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানি না।। হঠাৎ আমার মনে হলে ঠান্ডাটা কমে গেলো।। আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। আমি খুলে দেখি মেঘ আমার দিকে ঝুকে বসে আছে। আমি ওকে দেখে একটু ভয়েই পেলাম।। তারাতারি উঠে বসে পড়লাম। একি আমি তো বিছানায় শুয়ে আছি। মেঘ আমাকে আবার বিছানায় শুইয়ে দিলো।। আমি আবার উঠতে গেলেই আমার হাত দুটো বালিশের মধ্যে চেপে ধরলো। তারপর ঠোটে ঠোট বসিয়ে দিলো।। আমি কিন্তু নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত।। মেঘ এবার আমার ঠোট ছেড়ে দিলো।।
মেঘ— শুধু কেনো শক্তি টা নষ্ট করছো। আমার সাথে তুমি শক্তিতে পারবে না। কাল রাত্রে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো, শুধু কেনো আমাকে কষ্ট দিচ্ছো। তার চেয়ে যা হচ্ছে মেনে নাও।
আমিও বুঝতে পারলাম যে ওর কাছ থেকে আমার মুক্তি হবে না। তাই আর তাকে বাধা দিলাম না।। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি মেঘের বুকে শুয়ে আছি।। ঘুমন্ত মেঘকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছিলো।। কে বলবে এই ছেলেটাই আমাকে কষ্ট দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।।আমি উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।। গোসল করে নিচে চলে গেলাম। দেখি আমার শাশুড়ি রান্না করছে আমিও ওনাকে হেল্প করতে গেলাম। ওনি না না করছিলেন, আমি একটু জেদ ধরে ওনার কাজে হেল্প করলাম।। হঠাৎ মেঘ গলা শুনতে পেলাম।।
মেঘ— মা,, আমার কফিটা দিয়ে যাও।
মা আমাকে কফিটা দিয়ে আসতে বলেন। আমিও কফি নিয়ে উপরে আসলাম। রুমে ঢুকে দেখি, মেঘ টাওয়াল পড়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছছে।। আমি কফিটা ওর সামনে রেখে আবার নিচে আসতে গেলাম।। মেঘ আমার সামনে এসে পথ আটকে দিলো।। তারপর অনেক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।। আমি ওর চোখের দিকে তাকাতেই ঠাস করে একটা চড় মারলো।। আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে বিছনায় পড়ে গেলাম।।ভাগ্যিস ডান গালে মেরেছিলো বলেই বিছানায় পড়লাম।। বাম গালে মারলে ফ্লোরে পড়ে কোমর টাই ভেঙ্গে যেত।।
আমি বিছানায় বসেই কাদতে লাগলাম।। আমাকে এত্ত জোরে আগে কেউ মারে নি।। মেঘ আমার সামনে এসে বসলো।।
মেঘ— কাঁদছো,, কাঁদো।। কিন্তু কান্নার শব্দ হবে না।। শব্দ হলে বাম গালে আরেকটা দিবো।।
কথাগুলো বলেই মেঘ উঠে গেলো।। তারপর গান গাইতে গাইতে কফি খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে বসে গেলো।। আমি বোকার মতো বসে বসে কাঁদতে লাগলাম। মাঝে মাঝে খুব আদর,, আবার মাঝে মাঝে … আমি কাঁদতে লাগলাম।। কেনো আমাকে মারলো ভাবতে লাগলাম।। হঠাৎ মোবাইল টা বেজে উঠলো।।আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম আব্বু কল দিছে।। আমি চোখ মুছে কলটা রিসিভ করে আব্বুর সাথে কথা বললাম। আমি মোবাইলটা বালিশের উপরে রেখে আবার বিছানায় বসে পড়লাম। মেঘ ল্যাপটপ রেখে আমার পাশে এসে বসলো।।
মেঘ— কি হলো বাবাকে বললে না যে আমি তোমাকে মেরেছি,, বলতে পারতে।।
আমি মেঘের দিকে তাকালাম। আর দু চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো।। দরজায় টোকা পড়লো, আমি চোখ মুছে নিলাম। বৃষ্টি ভিতরে আসলো।।
বৃষ্টি— Good morning ভাবি।।
আমার জন্য আবার good ,, হেসে দিলাম।।উত্তর তো দিতেই হবে।।
অথৈ– Good morning..
বৃষ্টি– ভাবি নিচে চলো।। খেতে ডাকছে আমাদের।।ভাইয়া আয়।।
তারপর সবাই মিলে নিচে গেলাম।। সবাই একসাথে খেতে বসলাম।। মা মানে আমার শাশুড়ি খাওয়া দাওয়া শেষে আমাকে আর মেঘকে রেডি হতে বলে, আমাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য। বাড়ির যাওয়ার কথা শুনতেই আমার মনটা ভালো হয়ে গেলো।
কিন্তু বৃষ্টি কে ছেড়ে যাবো ভাবতেই কেমন যেনো খারাপ লাগছিলো।।
তাই আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য মাকে বললাম।
অথৈ– মা, আমি কি বৃষ্টি কে সাথে নিতে পারি??
আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে তাকালো।।
অথৈ— মা প্লিজ,,
বৃষ্টি তো খুশিতে নেচে উঠলো।। আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
বৃষ্টি— ভাবি,, তোমাকে এতগুলা উম্মাহ।।
বৃষ্টির কান্ড দেখে সবাই হেসে দিলো।। মা ও রাজি হয়ে গেলো।।
আমি আর বৃষ্টি রেডি হয়ে সেই কখন থেকে দাড়িয়ে আছি।। কিন্তু মেঘ আর আসছে না।। অবশেষে ওনি নেমে আসলেন। মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। আমি আর বৃষ্টি পিছনে বসলাম।। আর মেঘ গাড়ি ড্রাইভ করবে। ও সামনে বসে আমাকে দেখলো একবার, সামনে না বসার কারনে হয়তো রেগে গেছে। রাগলে রাগুক, আমাকে এখন কিছু করতে পারবে না।
সারা রাস্তা জুড়ে আমি আর বৃষ্টি বকবক করে আসলাম।। বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই আমি গাড়ির দরজা খুলেই একটা দৌড় দিলাম।। মেঘ পিছন থেকে আমাকে ডেকেছে কিন্তু আমি থামি নি। কারন আমি মাকে দেখার জন্য ছটফট করছি।আমি এক দৌড়ে মার রুমে চলে গেলাম। মাকে দেখে আমার চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। ভাইয়া আর বাবা মেঘ কে রুমে নিয়ে আসলো। মেঘ অনেক্ষন এখানে বসেছিলো।। পরে আমার কাজিনরা এসে ওকে আমার রুমে নিয়ে যায়। আমিও মার কাছে অনেক্ষন বসে তারপর রুমের দিকে যাচ্ছিলাম।
বৃষ্টি আমার কাজিনদের সাথে কথা বলছে। আমি রুমে ডুকতে যাবো ওমনি কেউ আমার হাত ধরলো, আমি পিছন ঘুরেই চমকে গেলাম।। পিয়াস ভাইয়া, আমার মামাতো ভাই।
পিয়াস— কেমন আছো, অথৈ?
অথৈ— ভালো আছি।। আমার হাত টা ছাড়ো।।
পিয়াস আমার হাতটা ছেড়ে দিলো।।
চলবে,,,,
(বি.দ্র: ভূল হলে মাফ করে দিবেন)