সাইকো বর পর্ব ৮

#সাইকো_বর
#Writer_Tabassum_Tajnim
#Part_8

আল্লাহ জানে আমার কপালে কি আছে।।

দুপুরের দিকে মা আর বৃষ্টি চলে গেলো। বাবা অফিস থেকে চলে যাবে। আমি বাসায় একা হয়ে গেলাম,,একা না কাজের বুয়া আছে সাথে। ওনি অবশ্য সন্ধায় চলে যাবে।। বাসায় একা থাকতে ভালোই লাগছে। সন্ধার পরে বসে বসে টিভি দেখছিলাম। টিভি দেখছিলাম না,, টিভি চালু করে মোবাইল টিপছিলাম।
গাড়ির হর্ণ শুনতে পেলাম। হয়তো সাইকো সাহেব এসেছে মনে হয়।একটু পর দেখলাম ওনি রুমে ডুকলেন। রুমে ঢুকে আমাকে কতক্ষণ দেখলো।। আমি তো মনের সুখে মোবাইল টিপছি, সাইকোর দিকে তাকানোর সময় নাই আমার। সাইকো ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে, তখনও আমি মোবাইল টিপছি। আমার পাশে এসে বসলো।। মোবাইলটা আমার হাত থেকে নিয়ে নিলো। আমি ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে থাকালাম। জোহানের সাথে চ্যাটিং করছিলাম, আর সাইকো মোবাইলটা নিয়ে নিলো। ইচ্ছে হচ্ছে ওর মাথা ফাটিয়ে দিতে।
অথৈ— এই এটা কি হলো??আমার মোবাইলটা দাও।
মেঘ— দিবো,, আগে আমার জন্য একটু চা বানিয়ে আনো।।

হুহ,, আমি নাকি ওনার জন্য চা বানিয়ে আনবো।। এমন চা বানিয়ে আনবো যাতে আর জীবনেও আমাকে চা বানানোর জন্য বলবে না।। চা বানানোর জন্য রান্না ঘরে গেলাম। আগে নিজের জন্য এক কাপ ভালো চা বানিয়ে খেয়ে নিলাম। তারপর সাইকোর জন্য চা বানালাম। ওর চা টা একটু খেয়ে দেখলাম কেমন হয়েছে।। উফফফফ,, কি তেতো রে বাবা।। চা পাতা বেশি দিয়ে সাইকো বাবুর জন্য স্পেশাল চা বানালাম। একটা মুচকি হাসি দিয়ে চা টা নিয়ে রুমে আসলাম। এসে দেখি ওনি বসে বসে মোবাইল টিপছে।।
অথৈ— তোমার চা।।।
মেঘ আমার দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখলো।

মেঘ— এক কাপ চা বানাতে এতক্ষণ সময় লাগে। আমি তো ভাবলাম আমার জন্য তুমি স্পেশাল কিছু রান্না করছিলে।।

অথৈ— হুহহহ,, আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নাই, তোমার জন্য রান্না করবো।। এই নাও তোমার চা।।

কথাগুলো বলেই আমি চায়ের কাপটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে,, চলে যেতে চাইলাম। কারন এখন ওর কাছে থাকা আমার জন্য বিপদজনক। তাই এখান থেকে কেটে পড়ায় ভালো। এক পা বাড়াতেই পিছন থেকে সাইকো ডাক দিলো।।

মেঘ— অথৈ,,,,,,,
আমি ভয়ে ভয়ে পিছনে ঘুরে দাড়ালাম। মেঘ আমাকে ইশারায় বলছে ওর পাশে বসার জন্য। আমি কি পাগল নাকি যে আমি এখন ওর কাছে যাবো। আমি আগের জায়গাতেই দাড়িয়ে রইলাম।

মেঘ— তুমি কি এসে বসবে? না আমি উঠে আসবো????

মেঘের কথা শুনে আস্তে আস্তে আমি ওর পাশে বসলাম। মেঘ আমাকে একবার দেখলো ।

মেঘ— আমি তোমাকে ঐ দিন জিজ্ঞাস করেছিলাম জোহান কে?? তুমি কিন্তু আমাকে বলো নি।।
কি জানি কি হয়ছে,,জোহান কে এটা জেনে ওর লাভ কি বুঝলাম না।
মেঘ চায়ের কাপটা নিয়ে এক চুমুক চা খেলো। তারপর আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো,,ওর তাকানো দেখে আমার খুব ভয় করছে।।
মেঘ— বাহ্,,, খুব ভালো কাজ জানো তো তুমি।।
চা কফি দুইটাই একসাথে বানাতে পারো।।

দাঁতে দাঁত চেপে বললো মেঘ। মেঘ আমার একটু কাছে এসে,,
মেঘ— এই জন্যেই বুঝি এতো দেরি হচ্ছিলো তোমার?? এক কাপ চা ও বানাতে পারো না।। হুহ, ভাগ্য করে তোমার মতো বউ পেয়েছি।
তারপর আবার মোবাইলে মনোযোগ দিলো। তেতো চা খেয়ে হয়তো মেঘের মাথা থেকে জোহানের কথা চলে গেছে।।
আমি ও বসে বসে টিভি দেখছি। একটু পর মেঘ উঠে চলে গেলো।। কোথায় যাচ্ছে কে জানে।
একটু পর নিচে গিয়ে দেখি মেঘ খাবার গরম করছে। আহারে,, আমাকে বললে আমিই গরম করে দিতাম।। আমার হাতের তেতো চা খেয়ে হয়তো আর বলার সাহস পেলো না। যাক ভালোই হয়ছে, কষ্ট করুক।

মেঘ— কি,, দেখছো??
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাস করলো।

অথৈ— আমাকে বললেই আমি খাবার গরম করে দিতাম।।

মেঘ— থাক,, আমিই আমার কাজ করতে পারি।।

ও নিজেই খাবার গরম করলো। দুজনেই একসাথে খেলাম।।মেঘ রুমে চলে আসলো, আমি খাবার গুলো ঢেকে তারপর রুমে আসলাম।।
রুমে এসে দেখি মেঘ স্মোকিং করছে।।

অথৈ— ইসসস্,, তুমি বেলকুনিতে গিয়ে স্মোকিং করতে পারো না।

মেঘ— তুমার প্রবলেম হলে তুমি বেলকুনিতে গিয়ে বসতে পারো।

আমি আর কথা বাড়ালাম না। বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছি। ভালোই লাগছে এই খানে দাড়িয়ে থাকতে।
পিছন থেকে আমাকে মেঘ জড়িয়ে ধরলো। ওর ঠান্ডা হাতগুলো দিয়ে আমার পেট স্পর্শ করলো। আমি কেঁপে উঠলাম। আমি মেঘের দিকে ঘুরলাম। মেঘ আস্তে আস্তে আমার ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরলো।অনেকক্ষণ পর ছেড়ে দিলো। তারপর আমাকে ওর কোলে তুলে নিলো।। বিছানায় নিয়ে ও মেতে উঠলো।। ওর প্রতিটা স্পর্শ আজ অন্যরকম লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো প্রত্যেকটা স্পর্শে ভালোবাসা আছে।

মেঘ ঘুমিয়ে আছে। আমি ওকে দেখছি। আমার কেনো জানি ঘুমন্ত মেঘকে দেখলে বেশি ভালো লাগে। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম। কখন ঘুমিয়ে পড়লাম জানি না।।।

সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন দেখি মেঘ চুল নাড়তে নাড়তে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসছে। আমাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিলো। আমি উঠে পড়লাম।। ওয়াশরুমে চলে গেলাম।।। গোসল করে বেরিয়ে দেখি মেঘ বসে বসে কফি খাচ্ছে। নিজেই বানিয়েছে বোধ হয়।
তাতে আমার কি।
আমি রান্না ঘরে আসলাম।। সাইকো সাহেব তো চলে যাবেন।।
তার জন্য তো কিছু রান্না করতে হবে।। আমি অবশ্য রান্না তেমন পারি না। কিন্তু খাওয়া যাবে।।
তাই অনেক কষ্ট করে রান্না করলাম শুধু সাইকোর জন্য।
আমি রান্না করে, একটা প্লেটে ওর জন্য খাবার নিয়ে উপরে এলাম।
তারপর টেবিলের উপর খাবার টা রাখলাম। মেঘ আমাকে এক নজর দেখলো।
অথৈ— তোমার খাবার।
মেঘ— তা আমি খেতে পারবো তো, নাকি কালকের চায়ের মতো??

অথৈ— খেয়েই দেখো না।।

মেঘ প্লেটটা হাতে নিলো। এক লোকমা মুখে দিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি তো ভয়ে শেষ। আল্লাহ খাবার যাতে খারাপ না হয় মনে মনে দোয়া করতে লাগলাম।

মেঘ— বাহ্,, ভালোই তো রান্না করতে পারো। কিন্তু কাল চা টা???

অথৈ— হুহহ্,,কাল চা তো আমি ইচ্ছা করেই
কথা বলেই জ্বিভে কামড় দিলাম। হায় হায়,, মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে আসল কথাটা।।

মেঘ — ইচ্ছা করে কি??? বলো

অথৈ— না না,,৷ কিছু না। বলছিলাম কি,, আমি কি একটু মার্কেটে যেতে পারি।

মেঘ আমার দিকে একটু ভ্রু কুচকে তাকালো।

অথৈ— মার্কেটে যাবো কী??

মেঘ— আমি বিকালে এসে নিয়ে যাবো।।

দূর বাবা,, ওর সাথে যাবো না, কই ভাবলাম একা একা যাবো।। হুশ,, ভালো লাগে না।

মেঘ— রেডি হয়ে থেকো,, আমি অফিস থেকে এসে নিয়ে যাবো।
কথাটা বলেই,, মেঘ চলে গেলো।। আহারে আমাকে এখন এই সাইকোর সাথে যেতে হবে। ভাবতেই কষ্ট লাগে।
যাই হোক সাইকো অফিস থেকে তারাতারি চলে এলো।। আমি তারাতারি রেডি হয়ে নিলাম। মেঘের একটা কল আসাতে ও আগেই বেরিয়ে গিয়ে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলো। আমি গিয়ে গাড়ির পিছনের সিটে বসলাম।
মেঘ— ঐ, আমাকে কি তোমার ড্রাইভার মনে হয়??
হুহ্ ড্রাইভারেই মনে হয় আমি বিড়বিড় করে বললাম।
মেঘ– কি বললে??
অথৈ— কিছু না।।
মেঘ— সামনে এসে বসো।

হুহ্ বসবো না সামনে। আমি পিছনেই বসবো।।

অথৈ– আমার তো পিছনে বসতে কোনো প্রবলেম হচ্ছে না। তোমার যদি কোনো প্রবলেম হয়, তাহলে পিছনে এসে বসতে পারো।

মেঘ কিছুক্ষণ আমাকে দেখলো।। তারপর এসে পিছনে বসে পড়লো। সত্যি সত্যি পিছনে এসে বসে পড়লো। এখন গাড়ি কে চালাবে,,

অথৈ — ওমা,,, তুমি পিছনে এসে বসলে কেনো?? গাড়ি কে চালাবে??
মেঘ— জানি না।।

বুঝতে পারলাম আমাকে সামনেই বসতে হবে। তাই এসে সামনের সিটে বসলাম। মেঘ ও এসে বসলো।। হারামি,, শয়তান, কুত্তা,, নিজে যা বলবে তাই করতে হবে, না করলে জোর করে করাবে।

মেঘ– আচ্ছা, তুমি কি কিনবে??
আমি মেঘের দিকে তাকালাম। ইচ্ছা করছে ওরে ধইরা কয়েকটা বসিয়ে দেই।

অথৈ— জিন্স কিনবো, টি শার্ট কিনবো, শার্ট কিনবো।।😒😒

মেঘ— না,, আমাকেও একটু মার্কেট করতে হবে। তাই তুমি একা একা নিজের জামাকাপড় কিনে নিও।
কথা টা শুনে আমি মনে মনে খুব খুশিই হলাম।
আমরা দুজন দু দিকে চলে গেলাম।
অনেক ঘুরে ফিরে দুইটা শাড়ি কিনলাম। তারপর যেই চলে আসবো ওমনি পিছন থেকে কেউ ডাকলো,,
এই যে মিস,,, দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছেন।।
এইটা তো মেঘের কন্ঠস্বর না। তাহলে কে?? হয়তো বা পরিচিত কেউ,, কিন্তু আমি তো আর মিস নাই। এই কথাটা যেনেও মিস ডাকলো। দাড়া দেখাচ্ছি মজা।। আমি পিছনে ঘুরলাম। পিছনে ঘুরে আমার চোখ তিন চার গুন বড়ো বড়ো হয়ে গেলো

জোহান!!!!

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here