সাপলুডুর সমাপ্তিতে পর্ব ৭+৮

#সাপলুডুর_সমাপ্তিতে
তন্বী ইসলাম

০৭

সে আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মৃদু গলায় বললো
“আজকের রাতটাই তো, একটু কষ্ট করে সয়ে নাও। কাল থেকে তো আমরা আমাদের রুমেই থাকবো। ছোট বোনের আবদার, ফেলি কি করে বলো।

আমি মৃদু কন্ঠে বললাম
“সে নাহয় থাকলাম, কিন্তু তুমি একটা কথা বলো তো। মা যখন বলল আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি, তুমি কি সেটা সত্যিই বিশ্বাস করেছো?
সে হাসলো। আমাকে টেনে আলতো করে বুকে জরিয়ে ধরে বললো
“আমি জানি তুমি এমন কিছুই করো নি, মায়ের মাথা এখন বিগড়ে আছে, তাই রাগের বশে এমনটা বলেছে। তুমি কিছু মনে করো না, মা আগের দিনের সহজ সরল মানুষ তো, তাই অনেক সময় না বুঝেই অনেক কিছু বলে বসে।

আমি জুরে নিশ্বাস ছেড়ে বললাম
“তুমি যে আমাকে অবিশ্বাস করো নি, এটাই অনেক।

সেদিনের পর থেকে নতুন এক জীবন যুদ্ধে নেমেছিলাম আমি। বিয়ের পরদিনই শাশুড়ি আমার হাতে হাড়ি তুলে দিয়ে বলেছিলো
“আজ থেকে লেখাপড়া বন্ধ, কোনো লেখাপড়া নাই তোমার।
আমি শান্ত গলায় বললাম
“আমার বাবা মা এতো কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছে আমায়, শেষ মুহূর্তে এসে কি করে সেটা ছেড়ে দিতে পারি?
তিনি তিরিক্ষি হয়ে বললেন
“আগে নাহয় তোর বাপ মা পড়াইছে, এখন তোর কোন বাপ মা পড়াইবে শুনি?

উনার বলা কথাটা বড্ড বিশ্রী শুনালো আমার কাছে। তবে আমি কিছু না বলে ফিরে আসলাম আমাদের শোবার ঘরে। ততক্ষণে আমরা মৃদুলের রুমটাতে গিয়েই শিফট হয়েছি। মৃদুল ঘুমোচ্ছে। আমি গিয়ে তার পাশে বসতেই সে নড়েচড়ে উঠলো। আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চাইলো। আমি বাধ সাধলাম তাতে। মন খারাপ বুঝতে পেরে সে উঠে বসে নরম কন্ঠে বললো
“কি হয়েছে তোমার?
“মা বললো আমাকে নাকি আর লেখাপড়া করতে দিবে না, কিন্তু আমি আরো পড়ালেখা করতে চাই।

সে মুচকি হেসে বললো
“পড়বে, সমস্যা তো নেই। মায়ের কথায় কান দিও না। উনি যা খুশি তা বলুক। আর হ্যাঁ, কখনোই মায়ের মুখে মুখে তর্ক করবে না, মা কিছু বললে আমায় এসে বলবে।
আমি মাথা নাড়ালাম।

যেহেতু সংসারী হয়েছি, তাই মৃদুল আগের চেয়ে এখন অনেক বেশিই কর্মঠ হয়েছে। ইদানিং ব্যবসাতেও বেশ মন দিয়েছে। প্রতিদিন সকালে বেরোয়, আর আসে সেই রাতে।

সারাটা দিন আমি নিঃসঙ্গতায় ভুগী। রান্না বাড়া, ঘড় বড়ি ঝাট দেওয়া, বাসন কোসন ধোয়া, ঘর বাড়ির সমস্ত কাজ আমাকেই করতে হয়। আমার সমান দুইটা ননদ, কিন্তু কেউ এক জগ পানিও এনে সাহায্য করেনা আমায়। আমি বুঝতে পারি সব, কিন্তু কিছু বলি না। তখনও আমি নতুন বউ কিনা।

সেদিন শাশুড়ী হুকুম দিলো আমি যেনো মরিচ বেটে রান্না করি। আমি বললাম
“সেল্ফে বয়াম ভর্তি মরিচের গুড়া আছে তো আম্মা।
তিনি হুংকারে বলে উঠলেন
“যা বলছি তাই কর, ওই বয়ামে হাত দিবি না বলে দিলাম।

আমার কপালে ভাজ পরলো, ইচ্ছে করলো দুটো কথা আমিও শুনিয়ে দেই। কিন্তু পারলাম না, বরের নিষেধ আছে যে মায়ের সাথে তর্ক করার। জীবনে কখনো মরিচ মেখে ভর্তাও করিনি, হাত জ্বালাপোড়া করে। আর এখন প্রতি ওয়াক্তে মরিচ বেটে রাধতে হয়।।ছোট ননদটাকে জিজ্ঞাসা করলাম
“তোমরা কি সবসময় এভাবে মরিচ বেটেই রান্না করতে?
সে বললো
“আগে তো করতো না। আপনি আসার পর থেকেই এভাবে রান্না হয়।
আমি আর কিছু বললাম না।

রাতে সে ফিরে এসে দেখলো আমি ঠান্ডা পানিতে হাত চুবিয়ে বসে আছি। সে প্রশ্ন করলো
“কি হয়েছে তোমার হাতে?
“ইদানিং মরিচ বাটতে হচ্ছে, প্রচন্ড জ্বালা করছে হাতে। অন্যদিনও করে, তবে আজ একটু বেশিই বেটেছিলাম কিনা, জ্বালাটা কমছেই না।

সে অবাক হয়। প্রশ্ন করে
“ঘরে মরিচের গুড়া নেই?
আমি নত গলায় বললাম
“আছে, তবে সেগুলো দিয়ে রান্না করতে মানা করেছেন আম্মা।

মৃদুল তৎক্ষনাৎ তার মায়ের কাছে চলে গেলো। সামান্য ক্ষোভ নিয়ে বললো
“আগে তো কখনো তোমরা মরিচ বেটে রান্না করো নি মা, তবে এখন কেন প্রতিদিনই মরিচ বাটতে হয়?
তিনি হঠাৎ ফুসে উঠলেন। রুক্ষ গলায় বলে উঠলেন
“তুই বাড়ি আসতে না আসতেই তোর কানে আমার নামে আগুন ঢাইলা দিছে তাইনা? কি মন্ত্রণা দিছিস তুই আমার নামে? তোর সাহস কেমনে হয় আমার নামে আমার ছেলের কাছে নালিশ দেওয়ার?
আমি চুপ করে বসে রইলাম নিজের ঘরেই। মুখ দিয়ে উত্তর বেরিয়ে আসতে চাইছে, তাও মৃদুলের দিকে তাকিয়ে চুপ রইলাম। মৃদুল নিরীহ গলায় বললো
“ও আমারে নালিশ করে নাই মা। মরিচ বাটার কারণে ওর হাত গুলা জ্বলতেছে অনেক। আমি নিজে থেকেই আসছি তোমারে জিজ্ঞাসা করতে।

উনি তখন নরম গলায় ছেলেকে বলতে লাগলেন
“শোন বাপ, তুই হঠাৎ কইরা বিয়া করার কারণে আমার মাথা ঠিক ছিলো না, তাই ওর সাথে আর তোর সাথে খুব রাগারাগি করছিলাম। কিন্তু এখন বিশ্বাস কর, তোর বউ রে এখন আমি অনেক আদর করি। ওরে কোনো কাজ করার জন্য দেই না, সব কাজ আমি আর দুই মাইয়া মিইলা করি, তাও ওই কত্ত বড় মিথ্যা কথা কইলো তোরে আমার নামে। আমি নাকি ওরে মরিচ বাটাইয়া রান্দাইছি। তুই কো বাপ, ঘরে বয়াম ভর্তি মরিচ থুইয়া কেউ মরিচ বাইটা রান্দে? এইটা বিশ্বাসের কথা?

মৃদুল তখন কিছুটা চিন্তার স্বরে বলল
“তাহলে ওর হাত জ্বলতেছে কেন মা?
উনি মরাকান্না জুড়ে দিয়ে বললেন
“তুই বুঝোস না কেন এমন করছে? আমারে খারাপ বানানোর লাইগা। তোর চোখে যেনো আমি খারাপ হই সেই কারণেই সে এমন কথা কইছে তোরে। আমি বুঝি বুঝি, সবই বুঝি।

এবার আমার আর সহ্য হলো, বার বার উনি আমার নামে যা নয় তাই বলে যাচ্ছে। আমি এবার নিজ যায়গায় বসে থেকেই উত্তর দিলাম
“এতো বড় মিথ্যা কথা মানুষ কিভাবে বলতে পারে আম্মা?
ওপাশ থেকে উনি গলা ফাটিয়ে বলে উঠলেন
“আমি মিছা কথা কই? এই কথা তুমি কইতে পারলা বউমা? শোন মৃদুল, তোর বউ এর কথা শোন, আমি বলে মিথ্যাবাদী। এই দিনটাও আমার দেখা লাগলো জীবনে। উনি আবারও মরা কান্না জুড়ে দিলেন।

মৃদুল এবার কিছুটা রেগে গেলো আমার উপর। সে সামান্য ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠলো
“তোমারে না মানা করছি মায়ের মুখে মুখে কথা বলার জন্য? তাও কেন তুমি কথা বললা তনু?
“তোমার মা বার বার আমাকে নিয়া যা নয় তাই বলে যাচ্ছে, উনি কি করে বলতে পারেন আমারে দিয়ে কোনো কাজ করায় না? আমি আসার পর থেকে উনাদের কাউকেই দেখি নাই একটা জগ ভরে পানি আনতে। তাও আমি তোমারে কিছু বলি নাই, তার পরও এতো অভিনয় কি করে পারেন উনি?

সেদিন বেশ কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি হলো আমার আর উনার মাঝে। উনি বেশ বিশ্রী ভাবে আমাকে কথা শোনালেন। কিন্তু মৃদুলের চোখে সেই আমিই দোষী হলাম। আমার দোষ, আমি কেন উনার কথায় উত্তর দিলাম। তার কথা হলো, উনি আমাকে যাই করুক, আমার উত্তর দেওয়া বারণ। সবকিছু মাথা পেতে মেনে নিতে হবে আমাকে।

মৃদুলের সাথেও এ নিয়ে আমার মনোমালিন্য হলো। দিন যাচ্ছিলো এভাবেই। আমার শাশুড়ি নামক অভদ্র মহিলা সারাদিন আমাকে দিয়ে খাটিয়ে মারতো, আর দিনশেষে ছেলের কাছে সেই আমার নামেই মন্দচারি করতো। আমি নাকি কিছু করি না, সারাদিন শুয়ে বসে থাকি৷ কোনো কাজই ধরে দেখি না। প্রতি বেলার ভাতগুলোও নাকি ওরা আমাকে বেড়ে বেড়ে খাওয়ায়। মৃদুল তো তার মায়ের উপর বেজায় খুশি, মা তার বউকে এতো আদর করে, কিন্তু আমার উপর সব রাগ। আমি কেন কিছু করিনা, তার মা বোনেদের কেন এভাবে খাটাই এ নিয়ে তার রাগারাগির শেষ নেই। আমি যতই বুঝায়, আমি সব কাজ করি, বরং উনারা কিছুই করে না, এইসব কথা মৃদুলের কান দিয়েও ঢোকে না। ইদানিং মায়ের দোষ তার চোখে পরেই না

এর মাঝে একদিন বুঝতে পারি আমি অন্তঃসত্ত্বা। খবরটা পেয়ে মৃদুল বেশ খুশি হয়।
কিন্তু আমার শাশুড়ি তেমন খুশি হলো না। দাদী হবে এই খরব পেয়েও কোনো দাদী কি করে খুশি না হয়ে থাকতে পারে আমার জানা নেই। ইদানিং মৃদুল আবারও আমার প্রতি খুবই কেয়ারিং হয়ে উঠেছে৷ যতক্ষণ বাড়িতে থাকে, ততক্ষণ আমার অনেক সেবাযত্ন করে, ফলমূল এনে খাওয়ায়। ব্যাপারটা হজম করতে পারেনা আমার শাশুড়ি। ননদদেরও দেখি এই নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সেদিন এক ননদ তার ভাইকে বলেই বসলো
“বউ এর জন্য দেখি তোমার এতো দরদ, কই আমাদের জন্য তো কোনো দিন এতো আদর দেখি নাই। নাকি ভাবিরে পাইয়া এখন আমরা বোনেরা পর হয়ে গেছি

মৃদুল হেসে হেসে বোনদের সাথে বললো
“আমি কিন্তু তোদেরও অনেক আদর করি, তোদেরকেও অনেক কিছু এনে খাওয়াই।
ননদী আমার মুখ বাকিয়ে উত্তর দিলো
“হো খাওয়াইতা, সে তোমার বিয়ার আগে। বিয়ের পর থেইকা তো ভাবিরে ছাড়া কিছু দেখোই না।
মৃদুল আবারও হাসে, সে কি হাসি। তবে আমার রাগ লাগে। ছোট বোনেরা পর্যন্ত তাকে অপমান করে এতো কথা বলে আর সে চুড়ি পরে বসে থাকে। প্রেগ্ন্যাসিরর কয়েক সপ্তাহ বাদে মৃদুলকে বলি আমাকে একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার জন্য। সে রাজি হয়। সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলে যায় কিছুক্ষণ পর সে আবার আসবে, আমি যেনো রেডি হয়ে থাকি।

বাইরে তখন তার মা বোনেরা বসে ছিলো। মৃদুলকে এই কথা বলতে শুনে তার মা প্রশ্ন করে
“কই যাইবি বাপ?
“তনু রে নিয়া একটু ডাক্তারের কাছে যাবো মা।।
উনি আবারও মুখ বাকালেন।
“আমরাও পুলাপাইন পয়দা করছি, একটা দুইটা না, কয়েকটা করছি। কই আমরা তো কোনো দিন ডাক্তরের ধারেকাছেও যাই নাই। আমার স্বামীর কি টাকা পয়সার অভাব ছিলো নাকি, তাও যাই নাই। তোর দুইটা টাকা হইছে, টাকাগুলান রে শেষ করোন লাগবো তো নাকি।

আমি তখন উত্তর দিলাম
“আপনাদের সময় আর এখনকার সময় এক না আম্মা। বার বার আমার সাথে আপনার তুলনা দেওয়া বন্ধ করেন এইবার।

উনি রেগে গিয়ে মৃদুলের দিকে তাকালেন। বললেন
“দেখছোস মৃদুল, তোর বউ এর কান্ডখানা দেখছোস? আমি কথা কইতাছি তোর লগে, আর তোর বউ কিনা আমারে এতগুলা কথা শুনাইতাছে। তুই কিছু কইবিনা?

মৃদুল সামান্য বিরক্ত হয়ে আমাকে বললো
“আহ তনু, তোমার কি মায়ের সাথে এভাবে কথা না বললে হয় না? কেন তুমি এমন করো?
আমি ক্ষোভ নিয়ে বললাম
“তোমার কানে শুধু আমার কথাগুলোই যায়? তোমার মা যে সবসময় আমাকে ছোট করে কথা বলে সেগুলো তুমি শুনতে পাও না?
মৃদুল এবারেও আমার কথা শুনে রেগে যায়। ওর মা ওকে বার বার উউস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে। এরপর ওর মাকে আমি শক্ত করে দুটো কথা বলি।

ঘরের দেওয়ালের সাথে একটা ছোটখাটো বাশ দাঁড় করানো ছিলো। উনি চট করে বাশটা হাতে নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসে, আমাকে মারবে বলে। আমি দুপা পিছিয়ে যাই। এই অবস্থায় এ বাশের একটা বাড়ি আমার গায়ে লাগলে আমার কিচ্ছু হবেনা, কিন্তু আমার পেটের মানিকের ক্ষতি হবে নিশ্চিত। পিছিয়ে যাবার কারণে উনি আমাকে মারতে পারেনা। তবে আমাকে অশ্লীল গালাগাল করতে থাকে। আমি বিস্মিত চোখে মৃদুলের দিকে তাকাই। ক্ষোভ ভরা গলায় বলি
“তোমারই সামনে তোমার মা আমাকে মারতে আসলো, তাও এই অবস্থায়…তুমি তো কিছু বললে না মৃদুল।

সে আমার উপরই ক্ষেপে গেলো। হুংকারে বলে উঠল
“তোর চরিত্রের কারণে মা তোকে মারতে গেছিলো, তুই উত্তর দিতে আসলি কেন? তোকে কেউ দাওয়াত দিতে আসছিলো কথা বলার জন্য? বার বার মানা করছি মায়ের কথায় কোনো উত্তর দিবি না! সামান্য বাঁশই তো হাতে নিছিলো কারার জন্য, মারে তো আর নাই। এতো লাফাইতেছিস কেন তুই?

মৃদুলের এমন ব্যবহারে আমি যেনো হতভম্ব হয়ে গেলাম। এ কোন রুপ দেখছি এ মানুষটার?

সেদিন আমি বেশ করে বুঝতে পেরেছিলাম, মৃদুলের মনে যেটা আছে সেটা মায়ের প্রতি ভালোবাসা নয়, সেটা হলো অন্ধভক্তি। ভালোবাসা আর অন্ধভক্তি দুটো দুই জিনিস। যে ঘরে মায়ের প্রতি ভালোবাসা থাকবে সে ঘর থাকবে জান্নাতের মতো সুন্দর, আর যে ঘরে মায়ের প্রতি অন্ধভক্তি থাকবে, সে ঘরে কখনোই শান্তি আসবে না। আমি বুঝে গেছিলাম, কপালে বোধহয় শান্তি আর আমার হবে না।

আমি সেদিন থেকেই প্রতিবাদ করা ছেড়ে দিয়েছি। শাশুড়ি তার ছেলের আড়ালে আমাকে বলেছিলো, এ বাড়িতে আমাকে টিকতে দিবেন না উনি। আমি হজম করেছিলাম সবটা। তার ছেলেকেও আর বলি নি কিছু। বললেও লাভ কিছু হত বলে মনে হয় না।

এভাবেই চলছিলো আমার দিন। পেটে বাচ্চা নিয়েও সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করি, আর দিনশেষে নাম হয়, কিছু করি না আমি। বসে বসে খাই শুধু। এ নিয়ে মৃদুলেরও আমার প্রতি অভিযোগের শেষ নেই।

আগে লোকে বলতো, প্রেমের বিয়েতে নাকি সুখ নেই। মনে মনে ভাবতাম, প্রেম করে, ভালোবেসে বিয়ে করে মানুষ কি করে অসুখী হতে পারে? এইসব লোকেদের শুধুমাত্র মন গড়া কথা। প্রেমের বিয়েতেই সবচেয়ে বেশি সুখ।

কিন্তু এখন আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি, প্রেমের বিয়েতে সত্যিই কোনো সুখ নেই। বাবা মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রেম করে বিয়ে করা মানে, নিজের পায়ে নিজে কুড়োল মারা।

চলবে……#সাপলুডুর_সমাপ্তিতে
তন্বী ইসলাম

০৮

কিন্তু এখন আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি, প্রেমের বিয়েতে সত্যিই কোনো সুখ নেই। বাবা মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রেম করে বিয়ে করা মানে, নিজের পায়ে নিজে কুড়োল মারা।

সেদিনের পর আমি আর কোনো প্রতিবাদ করিনি। ধীরে ধীরে গর্ভে থাকা বাচ্চাটার প্রসবের দিন ঘনিয়ে এসেছে। মৃদুল আমাকে যত্ন করে, আবার মাঝেমধ্যে ওর মায়ের বলা কথার ঘোরে পরে আমার সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে। আমি হাপিয়ে উঠেছি একমত।

যেদিন বাচ্চাটা হলো সেদি প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি ছিলো, সেই সাথে ঝড়ো বাতাস। বৃষ্টির দিনে জন্ম নেওয়ার আমি আমার মেয়ের নাম রেখেছিলাম বৃষ্টি। মৃদুলও আদর করে তাকেই বৃষ্টিই ডাকতো। কিন্তু ওর মায়ের মুখে একটা কথা, যে মেয়ে জন্মের সাথে সাথে দুনিয়াতে ঝর তুলে সে মেয়ে কখনোই ভালো হতে পারে না।

নিজের ছেলের মেয়েকেও সে দুচোখে সহ্য করতে পারতো না, তবে এটা শুধু ছেলের আড়ালেই। ছেলের সামনে তিনি এমন ভাব করতেন, নাতিন বুঝি তার কলিজার টুকরা।

মৃদুলও বেশ আনন্দ পেতো মেয়ের প্রতি তার মায়ের এত আদর দেখে।
ধীরে ধীরে মেয়ে বড় হতে থাকলো, আমাদের সম্পর্কটাও পানসে হতে থাকলো। সারাদিন বাইরে থেকে ফিরে এসে আমার সাথে সে রাগারাগি করতো, আমি নাকি মেয়ের যত্ন আত্বি নেই না। মেয়েকে না খাইয়ে রাখি, সময়মত গোসল করাই না।

আর এই সবকিছু তাকে তার মা বলে। সেও বিশ্বাস করে। মায়ের কথা অবিশ্বাস করলে পাপ হবে যে।

ইদানিং তার নতুন রোগ হয়েছে, যৌতুক পাবার লোভ। অমুকের বাড়ির ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে, তারা নগদ টাকা ছাড়াও আরো অনেক কিছুই সাথে দিয়ে দিয়েছে। সেগুলো দেখে আমার শাশুড়ির জিহবা লিকলিক করে, ছেলের কানে কাছে সারাক্ষণ গুটুর গুটুর করে, আমরা নাকি ওকে ঠকিয়েছি, মাগনা মাগনা এ বাড়ি পরে আছি খাওয়া পরার জন্য। আমার বাপ মায়ের সামর্থ্য ছিলোনা আমাকে রাখার মত। তাই ছল করে এভাবে তার ছেলের কাছে আমায় গছিয়ে দিয়েছে।

ইদানিং মৃদুলও সেসব বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। মাঝে কিছুদিন প্রতিবাদ না করলেও এখন করি। মৃদুল আমার প্রতি বিরক্ত, আমাকে আর সহ্য হয় না তার। আমার করা প্রতিটা কাজ, প্রতিটা কথাই তার কাছে ভুল মনে হয়। এ নিয়ে আমাদের ঝগড়ার শেষ নেই।

কিছু দিন ধরে তার মনে হচ্ছে আমাকে দিয়ে তার দিন চলবে না, সারাটা জীবন আমার সাথে থাকা মানে নরকে জীবন উৎসর্গ করা। আমার শাশুড়ি যেনো হাতে চাঁদ পেলো, তিনি এই দিনটারই অপেক্ষায় ছিলেন। সেদিনই তার পরিচিত এক উকিলকে জানিয়ে দেন যত তারাতাড়ি সম্ভব ডিভোর্সের পেপার রেডি করতে। ব্যাপারটা সবটাই আমার অগোচরে করা হয়, মৃদুলও জানতো না সেটা।

নির্দিষ্ট সময় পর উকিল ডিভোর্স পেপার রেডি করে বাড়ি নিয়ে আসে। আমি আকাশ থেকে পরি। মৃদুলও অবাক হয়, তবে মায়ের সিন্ধান্তকে সে সায় দেয়।
সেদিন অনেক কান্নাকাটি করি আমি, মেয়ের দোহাই দেই.. হাতে পায়ে ধরি। মৃদুল আমার প্রতি সদয় হয়, তবে শর্ত দেয়.. যদি কখনো আমার করা কোনো বড় ভুল তার চোখে পরে, তবে সেদিনই আমাদের সম্পর্কের ইতি হবে।

এর পর থেকে এভাবেই মুখ বুঝে আছি, খুবই সাবধানে যেনো কোনো বড় ভুল না হয়ে যায় আমার দ্বারা।

তবে কথায় আছে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। আমারও হলো ঠিক এই অবস্থা। কলিজার টুকরা মেয়েটাকে এতো চোখে চোখে রাখছি, তাও আজ এতো বড় একটা দুর্ঘটনা, মুহূর্তেই আমার বুকের মানিককে কেড়ে নিয়ে গেলো। রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলাম আমি, আমার পাশেই মেয়েটা বসে পুতুল খেলছিলো।

আমার শাশুড়ি মা কখনোই মেয়েটাকে ডেকে আদর করে না, কোলে নেয় না। আজ কি জানি কি মনে করে মেয়েটাকে ডাকলো। মেয়েটা আমার গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো আমার চোখের সামনে দিয়েই। কিছুটা অবাক হলেও পরে ভেবেছিলাম, এই বুঝি মেয়েটার প্রতি তার দাদীর মনে কিছুটা দরদ আসলো।

কিন্তু আমার সমস্ত ভাবনা ভুল করে দিলেন তিনি৷ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও যখন মেয়ের কোনো হুদিশ পাচ্ছিলাম না তখন বাধ্য হয়েই শাশুড়ির রুমের দিকে গেলাম। উনি বিছানায় পা লম্বা করে বসে পান চিবোচ্ছেন। আমি সামান্য কেশে বৃষ্টির কথা জিজ্ঞাসা করতেই কপাল কুচকালেন। মুখের অবয়বখানা এমন করলেন যেনো উনি কিছুই জানে না। আমি আবারও প্রশ্ন করলাম
“বৃষ্টি কোথায় আম্মা?
“সে আমারে কেন জিগাও, আমি কি ওরে কোলে নিয়া বইসা রইছি নাকি।
“কিন্তু ও তো আপনার সাথেই এসেছিলো।
“আইছিলো, আবার গেছে গা। অহন আবার জিগাইও না কই গেছে। আমি বাপু ওতো খবর জানি না।

আমার কপালে বিরক্তির ভাজ দেখা গেলো, কিন্তু উনার সাথে আর দ্বিতীয় বার কথা বলার মন রইলো না। মেয়েটাকে যখন সারা বাড়ি খুজেও পাচ্ছিলাম না তখন বুকে অজানা আতংক এসে বাসা বাধলো। মনের মধ্যে কু ডাকতে লাগলো বার বার। পুকুর পাড়ের দিকে এগিয়ে গেলাম আতংকে। তবে ওখানে গিয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি। আমার চিৎকারে আশেপাশের কয়েকজন ছুটে এলো। বুকের মানিকটাকে পানি থেকে তুললো ঠিকই, তবে আর জীবিত নয়। আমি জ্ঞান হারাচ্ছি বার বার। ততোক্ষণে মৃদুলও চলে এসেছে। মেয়ের এরুপ অবস্থা দেখে কিছুটা সময়ের জন্য থমকে গিয়েছিলো সে, এক পর্যায়ে চোখ বেয়ে পানি পরছিলো অনবরত। তবে সে নির্বাক। শাশুড়িকে দেখলাম মৃদুলের কাছে গিয়ে কিছু বলতে, কিন্তু কি বলেছে আমার অজানা। আমি আমার মেয়ের শোকে তখন পাগল।

ততক্ষণে বাকিরা যার যার কাজে চলে গেছে। চলে গেছে বললে ভুল হবে, আমার শাশুড়ি একমতন হুমকি ধামকি দিয়ে সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে তখনও শোকে মাতোয়ারা। সামনেই মৃদুল রক্তচক্ষু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক সেই সময় শাশুড়ি মা গিয়ে আগে থেকে রেখে দেওয়া ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে আসলো গিয়ে। উনার বোধহয় মনে হয়েছে, এটাই সেই সময় যার জন্য তিনি এতদিন অপেক্ষায় ছিলেন।

ফিরে এলাম বাস্তবে..
আমি বসে আছি রেল স্টেশনের একটা বেঞ্চে। দুচোখ ভরা পানি। স্বামী সংসার হারিয়ে এখন আমি রাস্তায়। মেয়েটার জন্য বুকফাটা আর্তনাদ বেরিয়ে আসতে চাইছে বার বার। তবে আমি এবারে কাঁদতেও অক্ষম। রাস্তাঘাটে তো জোরে জোরে কাঁদা যাবে না। গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছি আমি। কি করবো, কোথায় যাবো? বাবার বাড়িতে যাবার মতো মুখ আমার নেই, আসার সময় বড় মুখ বলে এসেছিলাম, ও বাড়িমুখো হবার প্রয়োজন আমার কোনোদিনই হবে না৷

ও বাড়ি থেকে আসার সময় ফোনটাও ফেলে এসেছি। ওটা মৃদুলের দেওয়া ফোন, যেখানে সম্পর্ক টাই ভেঙ্গে গেছে তার টাকায় কেনা জিনিস কেন সাথে করে আনতে যাবো?.

ঘন্টার ঘন্টা বসেছিলাম বেঞ্চে। চোখ দিয়ে এখন আর পানি বেরোচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর বোধহয় রক্ত বেরোবে এমন একটা অবস্থা। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, আমি এখনো বসে সেখানটায়। যখন দিনের আলো অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো তখন আমার হুশ এলো। আমি উঠে দাড়ালাম সেখানটায়। ঢাকাগামী একটা ট্রেন এসে দাড়িয়েছে আমার সামনে, আমি দুই এক না ভেবে উঠে পরলাম সেখানটায়। টিকিট কেনার টাকাও ছিলো না আমার কাছে, আমার পাশে এক সিটে বসে থাকা ভদ্রলোক নিজে উঠে আমাকে বসার যায়গা দিলেন। আমি বসতে চাইলাম না, তাও উনি অনুরোধ করতে লাগলেন।

আমি বসে পরলাম সিটে। জানলা দিয়ে এক নাগারে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে. কখন যে ট্রেন টঙ্গি স্টেশনে চলে এলো বুঝতেই পারলাম না। ট্রেন থেকে যখন নামলাম তখন আনুমানিক রাত প্রায় দশটা। আমাকে সিট দিয়ে সাহায্য করা সেই লোকটাও এসে নেমেছে স্টেশনটায়। আমি উনার কাছে আরেকটু সাহায্য চাইলাম, উনার ফোনে এক মিনিট কথা বলার আগ্রহ জানালাম। উনি নির্দ্বিধায় আমাকে ফোনটা দিলেন।

কাঙ্খিত নাম্বারটায় কল ঢুকতেই সে রিসিভ করলো। ছোট ভাইয়ের গলার আওয়াজ পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম আমি। সে কিছু বুঝতে পারলো না, বার বার প্রশ্ন করতে লাগলো আমার কি হয়েছে। আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে শুধু একটা কথায় বললাম
“টঙ্গী স্টেশনে একবার আয়।

ছোট ভাইটা এবার এইচএসসি দিয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি একটা কোম্পানিতে কর্মরত আছে। আমার পরিবারের অন্য কারো সাথে যোগাযোগ না থাকলেও এই ছোট ভাই টা আমাকে প্রায়ই ফোন দিতো, খোঁজ খবর নিত।
প্রায় মিনিট বিশেক পরে সে স্টেশনে এসে পৌছুলো। আমাকে এখানে দেখে পুরোই হতবাক সে। বিস্ফোরিত গলায় সে প্রশ্ন করলো
“তুই হঠাৎ এখানে? কি হয়েছে তোর? চোখমুখের এই অবস্থা কেন?
আমার তখন মাথা ঘুরছে। কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা একদমই।।আমি বললাম
“আমায় তোর বাসায় নিয়ে যা ভাই।।

শিহাবের বাসায় আসার পরপরই সে হোটেল থেকে খাবার এনে দিলো, আমি খেতে অসম্মতি জানালাম। কিন্তু ওর জোরাজুরিতে খেতেই হলো। শিহাব এখানে একটা রুম ভাড়া করে থাকে, ওর সাথে ওর এক বন্ধুও থাকে। এতো রাতে আমাকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে সেও বেশ অবাক।

খাওয়া দাওয়ার পর শিহাব আর ওর বন্ধু মাহিন দুজনেই আমার সামনে বসলো। বর্তমানে আমি ওর সামনাসামনি বসা। শিহাব কিছুটা সময় এক নাগারে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে।
এক সময় শিহাব প্রশ্ন করলো
“কি হয়েছে তোর?
“ডিভোর্স। ছোট্র করে উত্তর দিলাম।
শিহাব আঁতকে উঠল। সামান্য ক্ষেপে গিয়ে বললো
“ডিভোর্স মানে?
আমি আবারও মলিন গলায় উত্তর দিলাম
“ডিভোর্স মানে ডিভোর্স।

সে এবার কিছুটা চিন্তিত গলায় বললো
“বৃষ্টি কোথায়?
আমি স্তব্ধ হয়ে তাকালাম শিহাবের দিকে। সে পুনরায় প্রশ্ন করলো
“দুলাভাই কি বৃষ্টিকে জোর করে রেখে দিয়েছে?
আমি এবার ঢুকরে কেঁদে উঠলাম। কান্না বিজড়িত গলায় বললাম
“বৃষ্টি নেই, সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে ওপারে। চিরদিনের জন্য।
শিহাবের মনে কথাটা ক্রোধের জন্ম দিলো, সে শক্ত গলায় বললো
“মানেটা কি? কি আবোলতাবোল বকছিস?
খেয়াল করলাম, শিহাব আর ওর বন্ধু দুজনেই আমার দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।

আমি জানলা দিয়ে বাইরের অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশের দিকে তাকালাম। বলতে শুরু করলাম ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনাটা।

সকালের আকাশটা প্রতিদিনই প্রচন্ড সুন্দর থাকে, তবে আজ কেমন যেনো ধোয়াসা। বাইরের কোলাহল, মানুষজনের চিৎকার চেচামেচি আর দূষিত বাতাস আমার দম আটকে দিচ্ছে। আমি নিরীহ চোখে বাইরে তাকালাম।।শিহাব আর ওর বন্ধু চলে গেছে অফিসে। যাবার আগে আমার জন্য খাবার বেড়ে সামনে রেখে গেছে। দুপুরের খাবারও রেখে গেছে। আমি একবার খাবারের দিকে তাকালাম, জল গড়িয়ে পরলো চোখ দিয়ে। গতকাল এমন সময়টাতেও আমি সুখী ছিলাম, আমার স্বামী, সংসার আর কলিজার টুকরাটা তখনও পর্যন্ত আমার ছিলো, আজ মেয়েটা নেই, স্বামী সংসার থেকেও বিচ্ছিন্ন। এটাই বুঝি মেয়েদের জীবন।

রাতে শিহাব ফেরার পর আমি ওর কাছে চাকরির একটা আবদার করি। সে আমাকে আশ্বস্ত করে, আমার জন্য কিছু একটার ব্যবস্থা সে করবে। যেহেতু সংসার করার পাশাপাশি অনার্স কমপ্লিট করেছিলাম, তাই চাকরি পাওয়াটা তেমন কষ্টের হবে না।।

কয়েক দিন বাদে শিহাব জানায় ওদের অফিসেই রিসিপশনের জন্য লোক লাগবে, তবে তাদের স্মার্ট মেয়ে দরকার, শুধু দেখতে ভালো হলেই হবে না, কথাবার্তায়ও স্মার্ট হওয়া চাই। সে জানতে চাইলো, আমি পারবো কিনা।
আমি মৃদু গলায় বললাম
“এটা আর এমন কি। নিশ্চয়ই পারবো।

পরের দিন শিহাবের সাথে চলে গেলাম ওদের অফিসে। আমাকে জিএম স্যারের রুমের সামনের একটা চেয়ারে বসিয়ে সে চলে গেলো কার সাথে কথা বলতে। দেখলাম একটা মাঝবয়সী লোক নিয়ে ফিরলো সে। জানতে পারলাম লোকটা তার ফ্লোরের ইনসার্চ। আমার যেনো চাকরিটা হয়ে যায় তার জন্য উনার হেল্প চায় শিহাব।

উনি শিহাবকে আশ্বস্ত করলেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা উনি করবেন। বাকিটা আল্লাহর হাতে।।

শিহাব তার কাজে চলে গেলে আমি অপেক্ষা করতে থাকি। এর মধ্যে আমার সকল কাগজ পত্র ভেতরে নিয়ে জমা দেওয়া হয়। বলে রাখা ভালো, আসার সময় আমি বুদ্ধি করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো নিয়ে এসেছিলাম।
এগুলোই এখন আমার সামনের দিকে এগিয়ে যাবার ভরসা।

কিছুটা সময় পর ভেতর থেকে ডাক আসে আমার। আমার বুকে কাপন শুরু হয়, বুক ধুরুধুরু করতে থাকে বার বার। আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সে রুমটার দিকে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here