#সিঙ্গেল_মাদার
ফাবিহা ফারিন প্রিয়ন্তী
পর্ব:০৯
পাশের বখাটে ছেলেগুলোর কথা , হাসি, টিজ একটু বেশীই হয়ে যাচ্ছিল আর ইরিন ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিল মনে মনে ভাবছিল “যার জন্য আজ নিজের বাড়ি ছাড়লাম শেষ রক্ষা করতে পারবো তো ! আমার পুচকুর কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে না তো” !
ইরিনের টেনশনে মাথা কাজ করছিল না , বিপি ফল হচ্ছিলো মাথাটা বড্ড ঘুরছিল , মনে হচ্ছে যেন চোখের সামনে পৃথিবীটা ঘুরছে বনবন করে, নিঃশ্বাস টা নিতেও কষ্ট হচ্ছে । নিজেকে সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা চোখ বন্ধ করে বসেছিল এরই মধ্যে বাস চলে এলো ।
কিছুটা যেন স্বস্তি পেল ইরিন, কিন্তু বাসে উঠে সিট ধরে এগোতেই ইরিন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না সেন্সলেস হয়ে পড়লো ।
বাসের সবাই তো হুড়মুড়িয়ে পড়লো কি হয়েছে কি হয়েছে জানতে চেয়ে , এক মহিলা এগিয়ে এলো এসে ইরিন কে তুলে সিটে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিল । বোতল থেকে পানি বের করে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিতে লাগলো ।
বাসের এই গন্ডগোলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো কর্ণারের সি-২ নম্বরের সিটে বসে থাকা আতিকের ।
চোখ খুলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো , যতোটুকু বুঝতে পারলো কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছে, একবার মনে করলো এগিয়ে গিয়ে দেখি পর মুহূর্তে আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমের চেষ্টা করলো ।
হঠাৎ মহিলা টা বলে উঠলো- “জ্ঞান ফিরছে না তো এখন কি হবে” ?
আতিক কর্তব্যের খাতিরে এবার আর সিটে বসে থাকতে পারলো না ভীর ঠেলে এগিয়ে এসে বললো- “আমি ডাক্তার আমাকে দেখতে দিন ” ।
সবাই যে যার যার সিটে বসে পড়লো , ইরিনের মুখটা এদিকে ঘুরোতেই আতিক যেন ২১০ ভোল্টের শক খায় ।
মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে হাত পা ম্যাসাজ করে দিতে বললো মহিলা টা তাই ই করলো , কিছুক্ষণ পর ইরিনের জ্ঞান ফিরল ।
চোখ খুলে দেখতে পেল পাশে সিট ধরে আতিক দাঁড়িয়ে আছে একটু যেন অবাক হলো ভাবলো ভুল দেখছে । ওর ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে আতিক জিজ্ঞেস করল – “এখন কেমন লাগছে অপরিচিতা” ?
– “নিউরোলজিস্ট বাবু আপনি কি সত্যি এখানে , নাকি আমার স্বপ্ন” ?
– আতিক বিড় বিড় করে বলে উঠলো “আপনার স্বপ্ন আর হওয়ার সুযোগ পেলাম কোথায় আপনি এখন অন্য কারোর আমানত” ।
ইরিন ইচ্ছে করে ওর ভ্রম কি না জানার জন্য আতিকের হাত টা কে স্পর্শ করে আতিক ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে ওঠে , নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
– কি ব্যাপার এমন হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে গেলেন কিভাবে ? এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা পিরিয়ড জানেন তো ?
– হ্যা নিউরোলজিস্ট বাবু আসলে একটু টেনশনে ছিলাম তাই এমন হয়েছে ।
– এটাই মিসক্যারেজ হওয়ার মোক্ষম সময় অনেক সাবধানে থাকতে হবে এই সময় টা , আপনার প্রেশার টা চেক করতে হবে ।
– স্টেথোসকোপ আছে নাকি এখানেও ??
– ডাক্তার বলে কথা না থাকলে কি চলবে বলুন , আপনি বসুন আমি নিয়ে আসছি ।
– নিউরোলজিস্ট বাবু !
– বলুন
– আমি আপনার কাছে গিয়ে বসবো !
– আচ্ছা দেখছি ।
আতিক সুপারভাইজারের সাথে কথা বলে ওর পাশের জন কে উঠিয়ে দিয়ে ইরিন কে পাশে বসার ব্যাবস্থা করলো ।
প্রেশার চেক করে দেখলো অনেক লো ।
– প্রেশার এতো লো কেন ?
– একটু টেনসড ছিলাম ।
– এখন কিন্তু টেনশন করাটা আপনার জন্য অনেক ক্ষতিকর অপরিচিতা ।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইরিন বললো
– টেনশন টা আমার পিছু ছাড়ছে না ।
– এখন বলুন তো এতো রাতের বাসে চট্টগ্রাম ফিরছেন যে !
এই প্রশ্নে ইরিনের গলায় কান্নাগুলো মনে হলো যেন দলা পাকিয়ে এলো , আটকে আসা কন্ঠে থেমে থেমে বললো ইরিন পুরো ঘটনাটা ।
আতিকের ও মন খারাপ হয়ে গেল সবটা শোনার পর , তবুও একটা আশ্বাস দিল ইরিন কে সৌমিক কে খুঁজে পেতে সম্পূর্ণ সাহায্য করবে সে ।
ইরিন কে ঘুমিয়ে যেতে বললো নিজেও চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো ।
আতিকের ঘুম ভাঙলো সকালের হালকা রোদের ছটায় , খেয়াল করলো ইরিন ওর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে । বড্ড স্নিগ্ধ লাগছে ইরিন কে কিন্তু চোখের নিচটাই কালি জমেছে , প্রথমদিনের মতো আজ চোখে কাজল নেই প্রথম দেখাতেই মনে গেঁথে গিয়েছিল এই অপরিচিতা ।
খুব ইচ্ছে হলো কপাল টা কে একটু ছুঁয়ে দিয়ে চুল গুলোকে সরিয়ে দিতে কিন্তু পেরে উঠলো না ।
মনে মনেই বললো – “কিছু স্নিগ্ধ চাওয়া না হয় অপূর্ণের খাতাই রয়ে যাক অপরিচিতা, নয়তো যেটুকু পেয়েছি সেটুকু ও হারাতে হবে” ।
রোদের আলো আর বাসের ঝাঁকুনিতে ইরিনের ও এবার ঘুম ভেঙ্গে এলো একটু নড়েচড়ে উঠলো, আতিক সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিল নয়তো ইরিন লজ্জা পাবে ।
ইরিন ঘুম ভেঙ্গে দেখলো আতিকের কাঁধে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে, তাড়াতাড়ি সরে গিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো আতিক টের পেয়েছে নাকি দেখলো আতিক ঘুমচ্ছে ।
ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে পানি খাচ্ছিল তখন দেখলো আতিকের ও ঘুম ভাঙলো ।
– ঘুম ভাঙলো নিউরোলজিস্ট বাবু ?
– হুম , আপনি কখন উঠলেন ?
– একটু আগে ।
– কতোদূর এলাম ?
– এইতো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নেমে পড়বো আমরা ।
– অপরিচিতা আপনাকে কি পৌঁছে দিয়ে আসবো আমি ?
– না না লাগবে না আমি ঠিক পারবো চলে যেতে ।
– আচ্ছা তবে আমার একটা অনুরোধ রাখবেন ?
– এভাবে কেন ফরমালিটি করছেন বলুন তো !
– বাস থেকে নেমে আমরা কোনো একটা রেস্তোরাঁয় যাবো তারপর ফ্রেশ হয়ে আপনি যাবেন ।
– আপনি অযাথায় ব্যাস্ত হচ্ছেন !
– ব্যাস্ত হওয়ার কারণ আছে বলেই হচ্ছি আর কোনো কথা বলবেন না ।
বাস থেকে নেমে আতিক জোর করে ইরিন কে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে অন্য কিছু অর্ডার না দিয়ে ভাত খাওয়ালো , নিজেও হালকা নাশতা করে নিল ।
ইরিন সৌমিকের সব ডিটেলস্ আর ফোন নাম্বার সব দিয়ে বেরিয়ে এলো ।
আজ অনেক দিন বাদে ভার্সিটি ফিরলো সে , অনেক আশা নিয়েই ফিরেছে সৌমিককে ফিরে পাওয়ার আশা ।
হলে গিয়ে দেখলো আলো আর মিথি আড্ডায় মেতে আছে ।
– কেমন আছিস তোরা ?
ওরা আড্ডার জন্য খেয়ালই করে নি ইরিন এসে কখন দাঁড়িয়েছে ইরিনের কথায় খুব অবাক হলো দুজনে ।
আলো দৌড়ে এসে ইরিন কে জড়িয়ে ধরে বললো -“কেমন আছিস ইরিন” ??
ইরিন কান্না করে দিল , মিথি ও ছুটে এলো ততক্ষণে ।
মিথি ইরিন কে এবার একটু শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলো
– “ইরিন প্লিজ এভাবে কান্না করিস না , ঠিক একটা ব্যাবস্থা হয়ে যাবে” ।
আলো এক গ্লাস পানি এনে ইরিনকে দিল ।
ইরিন কান্না থামিয়ে বললো
– “আমার হাতে বেশী সময় নেই রে , যে করেই হোক সৌমিক কে খুঁজে বের করতেই হবে , নয়তো আমি আর কোনো দিন বাড়ি ফিরে যেতে পারবো না”।
আলো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো- “কেন এমন বলছিস” ??
ইরিন সব ঘটনা খুলে বললো ওদেরকে ।
মিথি বলে উঠলো- “এখন তুই কি করতে চাইছিস” ??
– থানায় একটা মিসিং ডায়েরীর এফ আই আর করবো আর কালকে ওর ডিপার্টমেন্ট থেকে ঠিকানা জোগাড় করে বরিশাল যাবো , ক্যাম্পাসের কেউ তো খোঁজ দিতে পারছে না হয়তো বাড়িতে গেলে কোনো একটা খোঁজ পাওয়া যাবে ওর , তোরা আমার সাথে যেতে পারবি না ?
দুজনেই বলে উঠলো “কেন পারবো না অবশ্যই পারবো” ।
চলবে….