সীমাহীন
#Meherika_Ayat (আরাধ্যা)
পর্ব ১৩
আরিয়ান কল টা রিসিভ করতেই,
ওপাশ থেকে বলে উঠলো কেমন আছো?
নিশ্চয়ই আমাকে চিনতে পারছো না?
আমি মাহিন। পাশের বিল্ডিংয়ে থাকি। প্রায় তোমাকে কলেজ থেকে আসা যাওয়া করতে দেখি।
সেদিন তোমাকে খোলা চুলে দেখে পাগল হয়ে গেছিলাম।
তারপর তোমার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে সব জানতে পারলাম।
আর আজ তোমাকে বৃষ্টি ভেজা শাড়িতে যেন অপ্সরীর চেয়ে সুন্দরী লাগছিল।
আমি আর থাকতে পারিনি৷
তাই বিকেলে মিথিলাকে পাঠিয়ে কোনো ভাবে তোমার ফোন নাম্বার জোগাড় করেছি।
মিথিলা আমার ছোট বোন।
শুন আরু,
আমি অন্যান্য ছেলেদের মতো তোমার সাথে ফেবু চ্যাটিং এসব করতে পারবো না।
আমার ক্লিয়ার কথা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আর তুমি বললে কালই
আরিয়ান চৌধুরির বাসায় আমি আমার মাকে পাঠাবো।
তুমি কি চাও বলো?
.
এতোক্ষণ আরিয়ান চুপ করে সব শুনলো ফোনের এপাশ থেকে।
আরিয়ানের মাথায় তো রক্ত চড়ে আছে। যেন সব দোষ আরাধ্যার। ফোন টা কেটে সোজা আরাধ্যার রুমে চলে গেল আরিয়ান।
দরজা টা লক করে দিল।
.
আরাধ্যা অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে আরিয়ানের। এসির ভেতরে ও অনবরত ঘামছে আরিয়ান।
আরাধ্যা বেশ বুঝতে পেরেছে আরিয়ান খুব রেগে আছে। এবার আরাধ্যা ভয় পাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ আরিয়ান আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে ছিল।
তারপর আরাধ্যার কাছে গিয়ে এক চড় দিল আরাধ্যা কে। এতো জোরে চড় দিল যে আরাধ্যা ছিটকে গিয়ে ফ্লোরে পড়লো।
আরিয়ানঃ তোর খুব ভালো লাগে না ছেলেদেরকে শরীর দেখাতে? আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল তোর চরিত্র এমনই।
যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে থাকিস,
কিছু বলি না বলে ভাবছিস তুই স্বাধীন? আমার বাড়িতে থেকে আমার কথা অমান্য করিস তুই?
যাকে তাকে তুই ফোন নাম্বার দিস?
এগুলো করার হলে আমার ঘরে থাকিস কেন?
যা না পতিতালয়ে।
আজ থেকে তুই এক পাও ঘরের বাইরে রাখবি না।
পড়ালেখা সব অফ।
তোর ফোন আমার কাছে থাকবে বিয়ে পর্যন্ত।
এসব বলেই দরজা টা খুলে বের হলে গেল আরিয়ান।
.
.
.
ফাতেমা বেগম ভাবছেন,
মেয়ে টা কতো ভালো। ছয় বছর এবাড়িতে আছে৷ মা বাবা মরা যাওয়ার পর আরাধ্যার দাদার বাড়ি নানার বাড়ির কেউ তার খবরও নেয়নি।
অলক্ষী বলে অপমান করেছিল আরাধ্যাকে।
কে বলেছে মেয়ে টা অলক্ষী? কতো টা লক্ষী মেয়ে তা আর কেউ না বুঝতে পারলে এই বাসার মানুষ গুলো ঠিক বুঝে।
কিন্তু কতো জনের কতো কথা আরাধ্যাকে নিয়ে।
যতো তারাতাড়ি ছেলের বউ করে আনা যায় ততই ভালো।
.
.
.
না আর নয়। কালই বিয়ে করবো আরাধ্যাকে। তারপর সে আমার। কেউ আর কিচ্ছু করতে পারবে না।
এক্ষুনি সবার সাথে কথা বলতে হবে। বলেই ড্রইংরুমের দিকে নামলো আরিয়ান।
.
.
.
সবাইকে ডাকলো আরিয়ান।
তোমাদের সবাইকে একটা কথা বলার ছিল।
কী বলবি বল। আমারও সবাইকে একটা কথা বলার আছে। আরিয়ানের উদ্দেশ্যে কথা টা বলেন ফাতেমা বেগম।
আরিয়ানঃ আমি আরাধ্যাকে পছন্দ করি,
তা তোমরা নিশ্চই বুঝতে পারেছো এতো দিনে?
আমি ওকে বিয়ে করতে চাই কালই।
রিধিঃ তোর বোন তো জানতো তুই ওকে ভালোবাসিস। কিন্তু কালকেই বিয়ে? কতো স্বপ্ন আছে তোর বিয়ে নিয়ে জানিস ভাইয়া?
আরিয়ানঃতো,
ধরে রাখছে কে? যা ইচ্ছে করবি।
রিধিঃকিন্ত এতো তারাতাড়ি সব হবে কেমনে?
বিয়ের শপিং করতেই তো এক সাপ্তাহ লাগবে।
রেশমিঃ এতো তাড়ার কি আছে ভাইয়া? একমাস পর বিয়ে করলেই তো হয়।
তা ছাড়া আরু তো কিছুই জানে না।
আরিয়ানঃএক মাস ওয়েট করতে পারবো না।
১৫ দিনের মধ্যে যা করার কর তোরা। ১৫ দিন পর বিয়ে হবে এটাই ফাইনাল।
.
ফাতেমা বেগমঃ আমিও তোদের বিয়ের কথাই বলতে চাইছিলাম৷ যাক ভালোই হলো।
কিন্তু আরুকে একবার জিজ্ঞেস করলে ভালো হবে। ও বিয়েতে রাজি কি না।
আরিয়ানঃ বিয়েতে রাজি থাক আর না থাক,
বিয়ে তো আমি আরাধ্যাকেই করবো।
এমনেই ওকে বলতে পারো তোমরা।
আমি যাচ্ছি আমার রুমে।
যা করার তাড়াতাড়ি করিস,
রেসমী, রিধি।
রেশমীঃ ওকে ভাইয়া।
আমিও যাই রান্না ঘরে কি হচ্ছে দেখে আসি। তোরা আরুকে বলিস।
বলে ফাতেমা বেগম চলে গেলেন ।
.
ভাইয়া কেমন রেগে আছে মনে হয় না রে আপু? রেশমীর উদ্দেশ্যে বলল রিধি।
রেশমীঃ হুম।
আচ্ছা শুন তুই যা আরুর কাছে। ও কি করছে কে জানে?
রিধিঃ ওক্কে৷ বাট আগে রাজকে তো নিউজ টা দিতে হবে।
.
.
.
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে আরাধ্যা,
গালে পাঁচ আংগুলের দাগ বসে গেছে। কেমন বাজে ব্যবহার করলো স্যার আজ। কি দোষ করেছি আমি? মিথিলাকে ফোন নাম্বার দিয়েছি তাতে কি এমন ভুল হয়েছে? এ বাসায় থাকার খোটাও দিল? ছি ছি 😭😭😭😭
আর এই লোককে আমি ভালোবেসেছি? না আজ থেকে শুধু ঘৃনা করি আমি এই লোককে। এই লোকটা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নয়৷
আর এই বাসায় তো আমি এক মুহূর্তও থাকবো না।
শুধু রাতটা পোহালেই আমার রাস্তাই আমি।
কিন্তু কিসের বিয়ের কথা বলল স্যার? আমাকে তাড়াতে বিয়েও ঠিক করে ফেলল আমার? এসব ভাবছে আর কাঁদছে আরাধ্যা।
চলবে……