#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#সিজান_২
#পার্টঃ৬
,
,
,
,
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ টা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে শ্রাবণের। হয়তো কিছু মহূর্তের মাঝেই ধরনীর বুক চিরে বেরিয়ে আসবে অশ্রুধারা। মেঘদের কান্না হয়তো ভিজিয়ে দিবে ধরণীর শক্ত বুক।দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে মাস খানেক সময়।আদ্রি এখন নির এর কোম্পানিতে ইন্টার্নি হিসাবে জয়েন করেছে অবশ্য সেটা বাধ্য হয়েই আবার বলতে গেলে ইচ্ছাকৃত ভাবে কারন নাহিদ খানের জন্য অনেক কোম্পানি তাকে জব দিবেনা বাকি যারা রয়েছে তাদের সবার বিজনেস কার্পাট বেআইনি। তখন আর কিছু না ভেবে জয়েন করতে হয় নির এর কোম্পানি অবশ্য এর পিছনেও কারন আছে সেটা নাহয় ধীরে ধীরে জানা যাবা।
,
এই দেড় মাসে বদলেছে নির আর আদ্রির সম্পর্কও আদৌ কি বদলেছে নাকি সেটা জোড় পূর্বক বদলানো হচ্ছে সেটা বুঝে উঠতে পারছেনা আদ্রি।কিছু একটা খটকা তার রয়েছে হয়তো কোন গভীর সরযন্ত্রে আটকা পরেছে।সে চায়েও হয়তো চায়না এই সরযন্ত্রের মুখোশ খুলতে।
,
,
,
নির অফিসে ঢুকতেই দেখে ধোয়া উঠা কফি তার ডেস্কে রাখা আছে এটা নতুন না বেশ কিছুদিন হলে আদ্রি এই কাজ টা করে আগে কফি পিয়ন বানালেও এখন যত্ন করে কফি বানানোর দ্বায়িত্ব নিজ উদ্দগে নিয়েছে আদ্রিতা। নির হেসে উঠে চেয়ারে শরীর এলিয়ে দেয়। এর ই মধ্যে দরজায় নক করার শব্দে কান খারা করে।
তাকায় দেখে রিয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। নির অনুমিত দিতেই প্রবেশ করে ভিতরে
—ভাই কিছুদিন হলো আমাদের কোম্পানির ডেটা অন্য কোম্পানির কাছে সেল করছে। যার কারনে আমাদের প্রডাক্ট বাজারে আসার আগেয় তারা সেম প্রডাক্ট সেল করছে যার কারণে আমাদের প্রডাক্ট এর মূল্য একদম কমে গেছে
—জানি আমি
—তুই জানেও চুপ করে আছিস এর কারণ কি
—যে কাজ টা করছে তার সামনে আসার সময় আসেনি এখনো সেজন্য। আর যার দ্বারা সে কাজটা করিয়েছে তাকে কালকে রাতেই উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি বিনা টিকিটে।
নির এর মুখ ভঙ্গি দেখে রিয়াজ থতমত খেয়ে যায়। নির ল্যাপটপ অন করে কিছু একটা দেখতে চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে। দ্রুত পায়ে কেবিন থেকে বের হয়ে সোজা চলে যায় স্টাফ রুমে। হঠাৎ নির এর কর্মকাণ্ডে হচকচিয়ে যায় রিয়াজ নিজের কপাল নিজে চাপড় মারে।
আদ্রি ক্যান্টিনে বসে থেকে নাস্তা করছিলো কিছু দিন হলো নাহিদ খানের আনাগোনা বারার কারনে বেশির ভাগ না খেয়েই বের হতে হয় বাড়ি থেকে আদ্রিয়ান ও কিছু বলতে পারেনা কি বলবে একদিকে ভাই একদিনে বাবা।
হঠাৎ কই থেকে ম্যানেজার এসে বসে পড়ে আদ্রির সামনে আদ্রি কপাল সাথে সাথে কুচকে যায়। লোকটা বেশ কিছুদিন হলো বড্ড জ্বালাছে ইচ্ছা তো করে চাকু বসিয়ে দিতে।
—কেমন আছেন মিস আদ্রিতা
(আদ্রিতা খাওয়া গ্লাসের পানি মুখে দিতে নিবে এমন সময় কেউ এসে সেটা ফেলে দেয়)
হঠাৎ এমন হওয়াই ম্যানেজার আদ্রিতা দুইজনে দাঁড়িয়ে যায়। আদ্রি সামনে তাকাতেই দেখে নির অগ্নিরুপে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। বিনা বাক্য বেয় করে আদ্রির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে নিজের সাথে।
—সমস্যা কী
—প্রশ্ন টা আমার করা উচিৎ এই ভাবে টেনে আনার মানে কি
—ওই তোমার মুখ লাগানো পানি খেতে যাচ্ছিলো আর এটাতে সমস্যা নাই তোমার
—আমি কিছু বলার আগেই তো দিলেন গ্লাস টা ভেংগে
—আফসোস হচ্ছে বুঝি সে তোমার ঠোঁট লাগানো গ্লাসে পানি খেতে পারেনি বলে
—আমার আফসোস না হলেও কারো হিংসা নিশ্চয় হচ্ছে
—ওহ সাট আপ।
—আপনি অভিনয়ে বড্ড কাচা ডাক্তার সাহেব
নির এর হাত আলগা হয়ে যায়। আদ্রি হাসে যাকে তাচ্ছিল্যের নাম দেওয়া যায়। নির এর অজান্তেই হাসিটা তার বড্ড খারাপ লাগে।বুকের ভিতরে ব্যাথা করে।
আদ্রি কিছুনা বলে সেখান থেকে চলে যায় মনটা আজ বিষাদে ভরে গেছে।সে করে হোক এই পাহাড় সমান কষ্ট কমাতে হবে নয়তো কি ঘটে যাবে আদ্রি নিজেও জানেনা
গাড়ি তার মায়ের কবরের কাছে বন্ধ হতেই তার চোখ যায় তার মায়ের কবর খনন করার প্রস্তুতি করা হচ্ছে।
আদ্রি ছুটে যায় সেখানে। সেখানে নিজের বাবা নামক মানুষ টাকে দেখে চমকায় চোখে পানি থাকলেও ঠোঁটের কোণে রয়েছে তাচ্ছিল্যের হাসি। স
—আমার মায়ের কবরে একটা আচড় পড়লে ঠিক কি ঘটবে সেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না মিস্টার খান
—তোর মতো পুটি মাছ আমাকে থামানোর শক্তি আদৌ রাখে।
—একটা কথা জানেন কি মিস্টার খান যতোবার ভাবি আপনি এর থেকে আর নিচে নামতে পারেন না ততোবার আপনি আমাকে ভুল প্রমান করে দেন আপনার মতো নিকৃষ্ট মানুষ আমি দ্বিতীয় দেখিনি।
—কারন আমি ওয়ান পিস। এখন সর সামনে থেকে কাজ করতে দে।
—কেন করছেন এমন টা
—তুই আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যা তাহলে এমন কিছুই করবোনা
—আমাকে বিক্রি করে দিলে খুব বেশি খুশি হবেন
—আমার কাছে টাকা সবার উপরে টাকার সামনে তোরা কিছুই না
—মিথি আপুকে পারতেন এই ভাবে বিক্রি করতে
—ভুলেও আমার মেয়ের নাম নিজের মুখে তুলবিনা আমার মেয়ে তোর মতো নয়। তুই কি মনে করেছি ওই নির চৌধুরী তোকে ভালোবাসে তাই তোর খেয়াল রাখে
হঠাৎ করে নাহিদ খানের মুখে নির নামটা শুনে চমকায় তার চেয়ে বেশি অবাক হয় ওদের ভালোবাসার কথা শুনে
—মিস্টার খান মুখ সামলে ডাক্তার সাহেবের বিরুদ্ধে একটা শব্দ ও শুনতে চায়না।
—আরে রাখ তোর ওয়ার্নিং। নির চৌধুরী কে জানিস নিহাল এর বড় ছেলে। মাফিয়া দের হেড নিকৃষ্ট মানুষ যে কিনা ১৫ বছর বয়সে নিজের হাত খুন দিয়ে মাখিয়েছে।তুই যে নির কে চিনিস সেটা মুখোশ এর আড়ালে লুকিয়ে থাকা নির আসল নির এর চেহারা তোর ভাবনার থেকে বহুগুন ভয়ংকর।সে তোকে ভালোবাসেনা শুধুমাত্র আমার নাম এর বদনাম করতে সে তোকে ইউজ করতে চাই। ভালোবাসা তার কাছে কিছুই না একটা বার তার লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেলে মাছির মতো পিষে মেরে ফেলবে।
আদ্রি হাটু ভেংগে বসে পরে তার সামনে পরে রয়েছে নির আর কিছু মেয়ের অন্তরঙ মহূর্তের ছবি। আদ্রি সেগুলো থেকে এক নজর বুলিয়ে চোখ ফিরায় নেয়
—মাফ করে দিও আম্মু তোমার মেয়ে কিছুক্ষণের জন্য নিজের আসল পরিচয় ভুলে গেছিলো কিন্তু এবার নয় অনেক হয়েছে লুকোচুরি খেলা ইটস সো টাইম (মনে মনে)
কথা গুলো বলেই আদ্রি উঠে দাড়ালো কোমড়ে গুজে রাখা বন্দুক বের করে সেটাতে সাইলেন্সার লাগিয়ে বিনা থেমে নাহিদ খান বাদে সবাইকে গুলি দিয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিলো মহূর্তে। নাহিদ খান অবাক হয়ে দেখছে নিজের অস্বীকার করা মেয়ের অগ্নিরুপ।
—আপনার নামের গুলি টা তুলা রইলো মিস্টার খান খুব শীঘ্রই গুলিটা তার মালিকের বুকে যেয়ে লাগবে। ওয়েট ফোর দ্যাট ডে মিস্টার খান। এন্ড এই মহূর্রে আমার সামনে থেকে চলে যান
নাহিদ খান বিনা বাক্যে সেখান থেকে চলে গেলো। সে আদ্রির এই রুপ আগে দেখেনি তাই ব্যাপার টা হজম করতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার।
আদ্রি মায়ের কবরে মাথা ঠেকিয়ে কান্না করে চলছে অনবরত।
—কেন মাম্মা কেন বার বার তোমার মেয়ে বোকা হয়ে যায় কেন নিজেকে পাথরের ন্যায় তৈরি করতে অক্ষম আমি। কেন পারিনি মিথ্যা অভিনয় ধরতে কিন্তু চিন্তা করোনা মাম্মা আজকের চোখের পানি তোমার মেয়ের শেষ। আর কোন পিছুটান তাকে নড়াতে পারবে না আই প্রমিজ ইউ মাম্মা
,
,
,
অন্ধকার রুম থেকে বের হয়ে আসছে চাপা আর্তনাদ আর কারো উচ্চ শব্দে হাসার আওয়াজ।কারো ক্ষতবিক্ষত হওয়ার কষ্ট তো কারো সে ক্ষত করে পাওয়া আনন্দ যেনো পরিবেশ কে ভয়ংকর করতে বাধ্য করছে।
কালো হুডি পরিহিত এক নারী একের পর এক চাকুর আঘাত করছে তার সামনে লোহার শিকল দিয়ে বাধা লোকটার শরীরে।চোখ মুখে আলাদা এক হিংস্রতা ফুটে উঠেছে তার।
কিছুক্ষনের মাঝেই লোকটা আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায়।সেটা দেখে ভয়ংকর সে নারী যেনো আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যায় আর গর্জন দিয়ে বলে উঠে
ঃএকে কালকে সকালের মধ্যে ঠিক চায়।ব্যন্ডেজ মেডিসিন সব দে।এর শাস্তি পাওয়া এখনো বাকি আছে।এতো সহজে এই মরবে না একে প্রতি নিয়ত নিজের মৃত্যুর জন্য কামনা করতে হবে নিজের মরণের জন্য একে আমার সামনে ভিক্ষা করতে হবে। এর এই ব্যাথায় পাওয়া চিৎকার আমাকে তৃপ্তি দেয়।(পাগলের মতো হেসে কথা গুলো বলে সেখান থেকে চলে গেলো Ak)(কালকে Ak র সম্পূর্ণ পরিচয় পেয়ে যাবেন)
মেয়েটা যেতেই বর্ডিগার্ড গুলো যেনো জান ফিরে পেলো। তারা তাদের জীবনে এতোটা নির্দয় কোন মেয়েকে দেখেনি। একে দেখার আগে তারা মনে করতো মেয়েরা হয় করুণাময়ী স্নেহশীল আর ভালোবাসায় ভরপুর একটু আহ্লাদী আর জেদী।কিন্তু একে দেখার পরে সবার ধারণা বদলে গেছে।
হয়তো প্রকৃতির ভয়ংকর খেলা আরম্ভ হয়ে গেছে। কোথায় যেয়ে থামবে এই প্রলয় সবার অজানা।
চলবে!!
আসল কাহিনী শুরু