#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#সিজানঃ২
#পার্টঃ৮
,
,
মানসিক হাসপাতালে প্রবেশ করতেই আদ্রির বুকের মাঝে খেলে গেলো এক বুক প্রশান্তি। চোখের সামনে মায়ের মুখটা পড়তেই চোখ জোড়া জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো।ইচ্ছা করছে ঝাপটে ধরে মায়ের বুকে আছড়ে পড়তে। কিন্তু তা কি সম্ভব উহু সামনে থাকা মহিলাটির চেহারা তার মায়ের হলেও সে যে তার মা নয় তার মাঝে সে মা মা গন্ধ যে নাই। এই গন্ধ টা যে একমাত্র মায়ের শরীর থেকেই পাওয়া যায়। নিজেকে শান্ত করে পা এগিয়ে মা নামক খালার দিকে আসে।
—১ মাস পরে হঠাৎ করে কিভাবে আমাকে স্মরণ করলেন মিসেস চৌধুরী
আদ্রির গলায় স্পষ্ট ঠাট্টার স্বর। সামনে থাকা মহিলাটিও হাসলো মৃদু হাসি হয়তো তাচ্ছিল্যের হাসিও বলা যায়।কিন্তু হাসিটা আদ্রির বুকে গেথে গেলো।ঠিক এই ভাবেই তো হাসতো তার মা যখন আদ্রি দুষ্টুমি করতো।এখনো ছোট আদ্রির সকল সৃতি মনে আছে তার হয়তো সৃতি গুলোতে তার মায়ের আভাস রয়েছে
—এখানে বস তো
আদ্রি বসলো না বরং খালার কোলে আসন পেতে শুয়ে পরলো। কতো বছর পরে এমন শান্তি পেলো তার জানা নেই
—কেনো করেছিলেন এমন ছোট মামনি
আদ্রির গলায় কম্পন স্পষ্ট।বুকে তার যে তীব্র ব্যাথা আর মস্তিষ্কে হাজারো প্রশ্নের ভার যেটাকে না পারছে কমাতে না পারছে সেটার থেকে দূরে পালাতে দিন দিন বোঝা টা তাকে ভিতরে ভিতরে শেষ করে দিচ্ছে
—অন্ধকার জেলে খুব কষ্ট হয়েছিলোনা রে রাজকন্যা টার
সাথে সাথে ভেসে উঠে আর্তনাদের তীব্র আওয়াজ। রক্তে মাখানো চেহারা ইশ কি ভয়ংকর চেহারা।
—১১ বছরের মেয়েকে জেলে আটকালে তার মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে সে ধারণাও তোমার নেই ছোট মামনি। সে অবস্থাকে আরো দুই ধাপ নির্মম করতেই উঠে পরে লেগেছিলো আপনার বোন জামাই আর আপনার ভাসুর। আপনিও পিছপা হন নি। ঠিক চৌধুরীগিন্নিদের মতোই নিমকহারামী করেছিলেন আমার সাথে।
—কোন মা চায় তার সন্তানের প্রাণের ঝুকি আমাকে বলতে পারবি।আমিও চায়নি আমার নারী ছেড়া ধন এর ক্ষতি
বলতে যেয়ে কেদে দিলেন নিলি চৌধুরী।আদ্রি আখিদ্বয়ে পানির ঢেউ থাকলো সেটা চোখ বেয়ে পড়ার অনুমতি যেনো কেউ কেড়ে নিয়েছে তার থেকে
—মনে আছে একবার বলেছিলেন আমার আদ্রি রাজকন্যা আমার প্রান সবচেয়ে বেশি আদুরে সে আমার জন্য আমার যদি সুযোগ থাকতো আমার নেয়েকে নুরির (আদ্রির মা) কাছে দিয়ে আমার আদুরে রাজকন্যাকে নিয়ে নিতাম।
কি করে পারলা সে রাজকন্যা কে অন্ধকারে ফেলে দিতে বুক কাপে নি নিজের বোনের চোখের মণিকে তিলে তিলে মেরে ফেলতে।
ঝট করে উঠে পড়লো আদ্রি। যে চোখে কিছুক্ষন আগে পানিতে টইটম্বুর ছিলো সে আখি এখন রক্তে লাল হয়ে গেছে।যেনো এই মহূর্তে পানি রুপে রক্ত ঝরবে।
—শুরু করুন মিসেস চৌধুরী নিজের অপকর্ম গুলো স্বিকার করুন ঝটপট আমার কাছে সময় কম।
নিলি বেগম ভারী নিশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনিও চান মুক্তি এই ভার থেকে আর মুক্তি যদি হয় নিজের প্রান প্রিয় মেয়ের হাতে তাহলে কি খারাপি আছে তাতে উহু কোন খারাপি নেই বরং প্রশান্তি রয়েছে তাতে এক আকাশ সমান। মরে শান্তি পাবেন তিনি।কাপা কাপা গলায় বলতে শুরু করলেন
—তোর মা আমি আর নিলিমা(নির এর মা)তিনজন ছিলাম বোন। নিলিমা আপা ছিলো আমাদের ২ বছরের বড়। আর আমরা ছিলাম জমজ। নিলিমা আপা সব দিক দিয়ে ছিলেন এগিয়ে তোর মাও কম যায়নি রুপে আমরা এক হলেও বৈশিষ্ট্য ছিলো আমাদের আলাদা নুরি(নওরিন) ছিলো নিলিমার ছায়া। সকল গুনে গুনবতী ছিলো আমার দুই বোন। আমি ছিলাম তাদের আদুরে সেজন্য একরোক্ষা হয়ে গেছিলাম এরই মাঝে আমাদের জীবনে প্রবেশ করেন তোর বাবা নাহিদ খান। প্রথম দেখাই অদ্ভুদ এক অনুভূতি খেলে যায় আমার মনে। তাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি কিন্তু সে পরেছিলো নুরির প্রেমে। প্রথমে ভাবতাম আমরা দুইজন দেখতে তো একই তাহলে কেনো নাহিদ আমাকে না ওলে পছন্দ করে হিংসা হয় এরই মাঝে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা হয় তার জন্য বাবা মা রাজি হয়না বলে বড় মেয়েকে থুয়ে মেঝো মেয়েকে কি করে বিয়ে দিবেন। দিন গড়ায়ে লাগলো অনূভুতি জেদে পরিনত হলো। নিলিমা আপাকে বিয়ে করে নিলেন নিহাল চৌধুরী নাহিদ খানের প্রানের বন্ধু আর এদিকে ওদের প্রনয় বিয়েতে পরিনত হলো।
আদ্রিয়ান এর জন্ম হলো। কিন্তু আমি তখন ও মানতে নারাজ। আমার সে তাকেই চাই। এর পরে এলি তুই অদ্ভুদ এক প্রশান্তি জুড়ে ছিলো আমার মনে যখন আমার হাতে শুভ্র তাওয়ালে পেচিয়ে তোকে দিয়েছিলো শুভ্রপরিকে দিয়েছিলো। মন বদলে গেলো আমার। এরই মাঝে আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব এলো নিশান চৌধুরীর জন্য কিছু না ভেবেই হ্যা বলে দি। সেটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কারন চৌধুরী আর খান এরা ছিলো নারীর শরীরের আর টাকার পূজারী কিন্তু নিহাল আর নাহিদের চেহারা আমাদের সামনে আসতে করেছিলো বড্ড দেরি সবার আগে নিশান এর চেহেরা সামনে এসেছিলো। দিন কাটেছিলো এভাবেই নিশানের অত্যাচারে তোর সাথে সময় কাটিয়ে। কিন্তু হুট করে একদিন তোর মায়ের রক্তাক্ত শরীর নিয়ে বাসায় আসে আৎকে উঠি আমি। হঠাৎ নিহাল চৌধুরী ছোট নওমির গলায় চাকু ধরে আমার সামনে আসে। কিছু বুঝার আগেই আমার বুকে লুটিয়ে পরে তোর মায়ের নিথর দেহ সাথে সাথে পিছিয়ে যায় আমি। কিন্তু লাভ হয়নি তোর মায়ের রক্তে লেপ্টে যায় আমার শুভ্র শাড়ি খানা। চোখ যায় তোর নিথর শরীর। ঠিক সে সময় প্রবেশ করে পুলিশ আড়ালে নিহাল চৌধুরী নওমির গলায় চাকু ধরে আমাকে বলে তোকে দেখিয়ে দিতে যে তুই ওর খুন করেছিস। আমি ভয়ে সে কাজ ই করি। মাথা আমার কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো।
—আর কিছু বলতে হবেনা মিসেস চৌধুরী বাকী কাহিনী শুনার ইচ্ছা নাই আমার
আদ্রি চলে যেতে নিলে তাকে আটকায় নিলি চৌধুরী
—আমাকে এই ভাবে ফেলে যাস না আমাকে আমার ভুলের শাস্তি দে।
—আপনাকে ছেড়ে দিবো সেটা আপনাকে কে বললো এই আদ্রি নিজের শত্রুদের ছাড়েনা আপনার জন্য আমার শৈশব হারিয়েছি আমি আমার এখনো।স্পষ্ট মনে আছে আমার মাম্মাম এর নিশ্বাস চলছিলো আপনি আমার মাম্মাম এর সে জায়গায় আঘাত করেছিলেন যেখানে ১০টা মাস আমার অবস্থান ছিলো পর পর চাকু মেরেছিলেন আমার প্রথম।আবাসস্থলে। চিৎকার করে কেদেছিলাম আদো আদো বুলিতে বলেছিলাম রক্ত রক্ত মেরোনা আমার মাম্মা কে জ্ঞান হারিয়েছিলাম এতো প্রেশার না নিতে পেরে কিন্তু আপনার নিষ্ঠুর হৃদয় ছুতে পারেনি সে আর্তনাদ। আপনি নিজের বদলা নিতে ব্যস্ত ছিলেন। ভেবেছিলাম।এবার হয়তো সত্যিটা বলবেন কিন্তু এবার ও লুকিয়ে গেলেন।
আৎকে উঠলেন নিলি চৌধুরী উনি ভাবেন নি আদ্রির এতো কিছু মনে থাকবে। হ্যা সুযোগ পেয়ে সে ও নিজের ক্ষোভ মিটিয়েছিলো কিন্তু আদ্রির নাম সে নিতে চেয়েছিলোনা কিন্তু নিজের মেয়ের গলায় চাকু সে সহ্য করতে পেরেছিলোনা।
—আপনি এখনো বেচে আছেন কেনো যানেন কারন আপনার এই মায়াবী চেহারা আমার মায়ের সাথে মিলে।কিন্তু মায়াবী চেহারা আমার মায়ের মতো হলেও হৃদয় টা আর তার মতো পরিষ্কার রাখতে পারলেন না। কিন্তু মৃতু আপনার জন্য অনিবার্য মিসেস নিলি চৌধুরী
আদ্রি বেরিয়ে যেতেই ৩ জন মহিলা এলেন রুমের ভিতরে হাতে কারেন্টের তার হাসলেন নিলি নিজের হাতে তৈরি পাথর হৃদয়ের অধিকারীনির নিসৃংস্রতা না দেখলে হয়।
আদ্রি বাহিরে এসে দাড়াতেই নিলি বেগমের চিৎকার ভেসে আসতে লাগলো সকল ডাক্তার রুগি।ভয়ে আৎকে উঠলো কিছুক্ষন পরেই তিন জন মহিলা নিলি বেগমের মৃত দেহ নিয়ে বেরিয়ে এলেন আদ্রি দুই হাত দিয়ে আগলে নিলো নিল হয়ে যাওয়া মুখটা সারা মুখে অজস্র ভুমিতে ভরিয়ে দিতে শুরু করলো।
তুমুল বর্ষণের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রি চোখ দিয়ে বিনা বাধায় বেরিয়ে চলেছে অশ্রু ধারা যা মিলে মিশে এক হচ্ছে বৃষ্টির পানিতে।
—আজ আবারো এই প্রকৃতি আমার কাছে থেকে আরও এক জন কেরে নিলো। কিসের শত্রুতা আমার সাথে তোদের কেন আমি এতো বড় পৃথিবীতে আমি একা কেনো।
হঠাৎ নিজের মাথার উপরে বর্ষণের স্পর্শ না পেয়ে মাথা তুলে তাকায় কালো ছাতা তার উপরে আশা পানিকে আটকাছে তার সাথে মিলিত হতে। পিছনে ঘুরতেই কেউ একজন আদ্রির নরম অধর জোড়া নিজের অধরে চেপে ধরে।অশান্ত আদ্রি অধর জোড়ার মালিকের চোখের দিকে তাকাতেই শান্ত হয়ে যায়। ধূসর রাঙ্গা চোখ জোড়া তাকে নিজের সাথে আরও গভির হতে বাধ্য করলো এই নেশালো চোখের নেশা থেকে মুক্তি পাওয়া যে বড্ড কঠিন।কি করে এই কঠিন কাজ করবে সে। দিন শেষ এ এই নীড়েই কেন তাকে বাধা পড়তে হয় জানেনা সে।
চলবে!!!