#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়_২
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১৬
,
,
,
,
আদ্রিকে অবাক করে নির চোখে আদ্রি ওর্না বেধে আদ্রির সামনে দাড়াতেই আদ্রি বোকা বনে যায়
—কি কি করছেন আপনি(আদ্রির কন্ঠে কাপন স্পষ্ট)
নির হাসলো অন্যরকম ছিলো সে হাসি মুগ্ধকর মনোরম কিছুতো একটা ছিলো যা মহূর্তে আদ্রির অস্বস্তিকে লজ্জাই পরিনত করে দিলো।নির কিছু না বলে আদ্রিকে তার রঙ এ সজ্জিত করে চলছিলো।আর আদ্রিও তাতে সায় জানিয়ে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে দেখছিলো। সে জানে না ভবিষ্যতে কি হতে চাচ্ছে শুধু এইটুকু জানে নিজের শেষ নিশ্বাস এই লোকটার স্ত্রী হয়েই কাটাবে সে।
কেটে গেলো দুইটা মাস।এই দুই মাসে সম্পূর্ণ গৃহিণী রুপে নিজেকে নির এর সামনে উপস্থিত করেছে আদ্রি।নির আদ্রির প্রতিটা কর্মকান্ডে অবাক হয়েছে সাথে জড়িয়েছে এক রাশ মুগ্ধতায়।
নির অফিসে যাওয়ার জন্য টাই বাধতে বাধতেই আদ্রির নির কে প্রশ্ন করে উঠলো
—নির একটা কথা জিজ্ঞেস করি আপনাকে
—নাহ
নির এর সোজা সরল জবাব। মহূর্তে আদ্রি নির এর টাই এর নাট টা শক্ত করে ধরে। সাথে সাথে নির কেশে উঠে
—বউ মারে ফেলবা নাকি একটা মাত্র জামাই লাগি তোমার ছাড়ো
আদ্রি ছেড়ে দিতেই নির টাই এর নাট লুজ করে ফেলে। জোড়ে জোড়ে কাশতে শুরু করে।
—শুববেন(পানি এগিয়ে দিয়ে রাগী চোখে তাকায়ে)
—বলেন বিবিজান না শুনলে এই বান্দার জান যাবে(এক ঢোগে পানি খেয়ে নিলো)
—সবাইকে দাওয়াত দিবেন কালকে সবাইকে মিস করছি
(নিচু গলায়)
নির আলতো করে আদ্রিকে জরায় ধরে ঘাড়ে নাক ঘষে। আলতো করে চুমু খাই।আদ্রি নির এর কোর্ট এর কলার শক্ত করে চেপে ধরে
—আই লাভ ইউ বার্বি বউ
—জান দেরি হয়ে যাচ্ছে অফিসের জন্য।
—আজ ও ভালোবাসার কথা বলবা না সত্যি কি আমাকে ভালোবাসোনা
(নিরাশ কন্ঠে)
আদ্রি মুচকি হেসে নির এর অধর জোড়ায় আলতো স্পর্শ করে ব্যাগ টা ওর হাতে ধরায় দেয়
—যান এবার অফিসে
নির হেসে আদ্রির কপালে চুমু দেয়।আদ্রিও চোখ বন্ধ করে স্বামির আদরের স্পর্শ উপভোগ করে পর পর আরও দুইটি চুমু খাই আদ্রির চোখ জোড়ায় আদ্রির চোখ তখন ও বন্ধ ভারি তার নিশ্বাস সেটা দেখে মৃদু হেসে চলে যায় নির। দরজা বন্ধ করার আওয়াজ পেতেই চোখ খুলে আদ্রি।সাথে সাথে দু ফোটা অশ্রু তার চোখ বেয়ে গরিয়ে পরে।
—বড্ড আফসোস থেকে যাবে নির আপনাকে বুড়ো বিয়সে লাঠি ভর করে হাটতে না দেখে।আপনার কাধে মাথা রেখে নিজের সন্তানদের শৈশব কাল দেখা না হওয়ার আফসোস। আপনার সন্তান কে নিজের গর্ভে না ধরার আফসোস। এতো আফসোস নিয়ে মরবো কি ভাবে নির। মরেও যে শান্তি পাবোনা আমি।
ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু করলো আদ্রি।এক এক টা অশ্রু যেনো হাহাকার বুকের বামপাশ টার রক্তক্ষরণ যা অশ্রু হয়ে ঝরছে।
—কেনো আল্লাহ কেনো এই খেলা শুরু করেছিলেন কেনো এই দীর্ঘশ্বাস এর জীবন কেনো বাচা হলোনা তার হাতে হাত রেখে কেনো মৃত্যুর এই খেলাই আমাদের হাত লাল হলো কেনো আল্লাহ।
একসময় সেন্সলেস হয়ে ফ্লোরেই লুটিয়ে পড়লো।আদ্রির জ্ঞান ফিরলো সন্ধ্যার কিছুক্ষন আগে সকল সার্ভেন্ট কে ছুটি দেওয়ার কারনে কেউ জানলোনা আদ্রির জ্ঞান হারানোর কথা।টলমল পায়ে সাওয়ার নিয়ে ছাদে যেয়ে কাউকে কল দিলো আদ্রি। কিছুক্ষন কথা বলে কল রেখে শূন্য দৃষ্টিতে তাকালো।
,
,
,
,
ভালোবাসার নীড় নামক রাজমহলে আজ রমরমা পরিবেশ। সবার মাঝে বসে রয়েছে নবদম্পতি রেয়ান মাইশা।তাদের ঘিরেই যতো আড্ডা। কিছুদিন হলো তাদের ঘড়ওয়া ভাবে বিয়ে হয়েছে।
ডাইনিং টেবিলে সবার আড্ডার আসর ভালোই চলছে। সবার মাঝে আনন্দ উল্লাসের সীমানা নেই।শুধু উদাসীন রয়েছে মেহের এর চোখে।হারানোর বেদনা নাকি না পাওয়ার বেদনা কোনটা বুঝা দায়।
খারায়ার পড়ে আদ্রিয়ান আর নওমি চলে গেলেও রেয়ান আর মাইশা আদ্রির অনুরোধে রয়ে গেলো।সাথে মেহের ও রিয়াজ এর কিছু কাজ থাকায় সেও বেরিয়ে পড়লো
নির রুমে এসে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। সারা রুম মোমবাতি ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। মোনরোম এক সুন্দর পরিবেশ।রোমাঞ্চকর মহূর্ত কে আরও সুন্দর করে তুলেছে আদ্রির সৌন্দর্য ভরপুর চেহারা। শরীরে জড়ানো কালো জরজেটের শাড়ি চোখে গাঢ় কাজল ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপ্সটিক।দেখো যেনো মনে হচ্ছে অপরুপ সৌন্দর্যর অধিকারীনি এই মেয়ে তার বউ ভাবতেই বুকের বামপাশটাই কামড়ে ধরলো।
তাকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ আদ্রি হাটু মুরে নির এর সামনে বসে পরল।চোখ জোড়া পানিতে টলমল করছে।
ভালোবাসা নামক অনূভুতি কোন দিন আ আমার জীবনে আসবে ভাবিনি কোন দিন কিন্তু আপনি এলেন ভালোবাসা নামক অনূভুতি কে আমার জন্য সজিয়ে। আপনার নীড়ে বন্দিনী করতে। জানিনা খোলা আকাশে উড়ন্ত পাখি কিভাবে আপনাতে পোষ মেনে গেলো।ধীরে ধীরে বুঝলাম আমাকে আটকানো হয়েছে সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়ে।ভালোবাসি এই নীড়ের মালিক কে ভীষন রকম ভালোবাসি শেষ নিশ্বাস অব্দি ভালোবাসি।
নির আদ্রির সামনে হাটু গেড়ে বসে তাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
—আমিও ভালোবাসি এই অবাধ্য এই বাধন হারা রাগিনীকে আমার পাখিকে আমার বউ কে। খুব ভালোবাসি।
নির বসা অবস্থায় আদ্রির অধর দখল করে নিলো।আদ্রি সরে আসলো সেটা দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো
—আজকে এইটুকু নই মাফিয়া সাহেব আজকে সম্পূর্ণ ভাবে চায় আপনাকে স্ত্রীর অধিকার চায়।একান্ত ভাবে গভীর ভাবে আমার শরীরে আপনার ছোয়া চায়।
নির অবাক হলেও কিছু বলেনা পাজাকোলে তুলে নেয় আদ্রিকে।ডুব দেয় ভালোবাসার অতল সাগরে।
গভীর রাতে নির এর বুক থেকে নিজের মাথা সরিয়ে চোখ মুছে নেয় পড়ে থাকা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ওয়াসরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে পড়নে তার লেডি হুডি আর জিন্স। হুডিটা মাথায় তুলে গান গুলো লোড করে পকেটে ভরে নেয়।শেষ বার ভালোবাসার মানুষ টিকে শেষ বার দেখে তার কপালে চুম্বন একে চলে যায়। ফিরবে না সে পিছনে এই নীড়ে আর হবেনা ফিরা আর না কোন দিন এই বন্ধনে আবদ্ধ হবার সুযোগ পাবে।
আদ্রি দাঁড়িয়ে আছে পোড়া বাড়ির সামনে দুইজন গার্ড তাকে দেখে এগিয়ে আসে।
—স্যার ভিতরে যেতে বলেছে আপনাকে
আদ্রি কিছুনা বলে হাটা ধরলো।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিহাল মুখে তার শয়তানি হাসি।যা দেখে আদ্রির রাগ টা বেড়ে গেলো
— কেন মেরেছিলেন আমার মা কে কেন মেরেছিলেন আমার মামনীকে কেনো
—আজকে তোর প্রশ্নের উত্তর দিবো আমি মৃত্যুর আগে তোর সব অজানা যানাবো
তোর মা কে আমি মারিনি নাহিদ আমাকে বললো সে নাকি আমাদের কালো ব্যাবসা সম্পর্কে জেনে গেছে তাই তাকে মেরেছে নাহিদ কিন্তু তোর মা দমে যাওয়ার পাত্রীনা আর এদিকে নিলির মনেও তোর মায়ের জন্য খোভ ছিলো ব্যাস আর তুইও দেখে নিয়েছিলি তাই এক ঢিলে সব করলাম নওমিকে মারার হুমকি দিয়ে নিলিকে দিয়ে মেরে ফেললাম তোর মাকে। আর নিলিমা সত্যি বলতে খুব ভালোবাসতাম তোর মামনিকে। কিন্তু তোর মামনি আমার কালো ব্যাবসার দাড়ে আসছিলো আর এদিকে প্রাণের ভাইয়ের খারাপ দৃষ্টি পড়েছিলো তাই ভেবেছিলাম শাস্তি দি একটু কিন্তু আমার অবর্তমানে দুইজন এইসব করবে জানতাম না পেয়েছিস উত্তর
ঘৃণাই আদ্রির সারা শরীর রিরি করে উঠলো।এক দোলা থুথু ফেললো নিহাল এর দিকে
—লজ্জা করেনা যে ভাই আপনার বউ কে ছি সে ভাইকে আগলে রেখেছেন।
—হাহা এক নারিতে আসক্ত থাকা পুরুষ এই দুনিয়ায় খুব কম রয়েছে বুঝলি বলতে গেলে বিরল।
আদ্রি চাকু নিয়ে নিহাল এর গলায় ছুড়ি বসাতেই কেউ একজন পিছন থেকে তার মাথায় বাড়ি দেয়। হাত আপনাআপনি মাথার পিছনে চলে যায়।
পিছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতেই চোখ জোড়া থেকে অশ্রু বেরিয়ে পড়ে। অজান্তেই বেরিয়ে আসে
“আপু”(ক
এরই মাঝে নিহাল আদ্রির পিঠে চাকু ঢুকায় দেয়। আদ্রি হাসে।
—ইউ আর গোয়িং টু ডাই মিস্টার নিহাল
উচ্চশব্দে হেসে উঠে নিহাল আর অগুন্তিক সে মেয়ে আদ্রিকে সেখানে ফেলেই বেরিয়ে যায় তারা সাথে সাথে ধামাকার আওয়াজ হয় মহূর্তে পুরো বাড়ি টাই পুনরায় আগুনে ঝলসে যায়।
নির এর গাড়ি থামতেই সে তাড়াহূড়া করে গাড়ি থেকে নামতেই তার চোখ যায় পুরে যাওয়া বাড়িটির দিকে নিস্তব্ধ হয়ে সেখানেই বসে পড়ে। এম্বুলেন্স এ উঠানো হয় ঝলসে যাওয়া বডি।
সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠে নির। প্রিয় মানুষ টিকে হারানোর আর্ত্নাদ।বুকের বাম পাশটা খালি হওয়ার আর্তনাদ।পরিবেশ ভারি হয়ে যায়।পাখিরা উড়াল দেয় তাদের নীড় থেকে।আদ্রির মতো।
অসমাপ্ত!