সুপ্ত ভালোবাসা পর্ব ৩

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_৩

#Tahmina_Akther

-আমার ফুলের চুলের খোপায় শুধু এই লাল গোলাপটি মানায় অন্যফুল নয়।

বলেই আমার চোখের দিকে গাড় দৃষ্টিতে তাকালো অভিক।

খোপা থেকে গোলাপ ফুলটি টেনে খুলে ছিড়ে ফেললাম। অভিককে বললাম,

– আমার জীবনে রঙীন কোনো কিছু নতুন করে জড়াতে চাই না তোকে আমি আগেও বলেছি।তাহলে কেনো এই গোলাপ ফুল আমার চুলে গুজে দিয়েছিস ?

অভিক বুঝতে পারে নি হিয়া এভাবে রেগে যাবে।

-আমি দুঃখিত। বুঝতে পারিনি আমার এই কাজে তুমি কষ্ট পাবে!

বলেই ছাদ থেকে নেমে পরে অভিক।অভিকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হিয়া। অরিনকে নিয়ে ছাদ থেকে নেমে আসে হিয়া।

হিয়া রুমে এলে শুনতে পায় ওর মোবাইলে কল এসেছে। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠে,

– হ্যালো হিয়া কেমন আছিস?

-আমি ভালো আছি তুই কেমন আছিস নোভা?

-আলহামদুলিল্লাহ, তো মামা এখন কেমন আছে? হসপিটাল থেকে কি ডিসচার্জ দিয়েছে?

-না, আগামীকাল সকালে দিবে।শোন না আমি বলি কি আর আমেরিকায় যাবো না। এখানে সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চাই।

-খুব ভালো ডিসিশন নিয়েছিস তাহলে তুই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যাস।

-হু ভাবছি অভিকের ভার্সিটিতে ভর্তি হবো। ফুপি কেমন আছে?

-মা বেশ ভালো আছে।তাহলে রাখছি ঘুমাবো এখন, আল্লাহ হাফেজ।

-ওকে আল্লাহ হাফেজ।

কথা শেষ করে মোবাইল রেখে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম অভিককে খুঁজতে। শুধু শুধু ওর সঙ্গে ব্যবহার খারাপ করা উচিত হয় নি। সারাবাড়ি খুজেও ওকে পেলাম না। তাই চাচিকে জিজ্ঞেস করলাম,

-চাচী, অভিক কোথায়? সারা বাড়িতে খুজেও ওকে পেলাম না?

-তাহলে বাগানে গিয়ে দেখ ওখানেই থাকবে।

আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে এলাম বাগানে দেখি মহাশয় সত্যি বাগানের দোলনায় বসে আছে। আমি ওর পাশ গিয়ে বসে পড়লাম।

হঠাৎ কেউ আমার পাশে বসতেই ধ্যান ভাঙলো পাশ ফিরে দেখলাম ফুল আমার পাশে এসে বসেছে। কিন্তু, আমি ওর সঙ্গে এই মূহুর্তে কথা বলতে চাচ্ছি না।

-অভিক, তুই কি আমার সাথে রাগ করেছিস? দেখ তখন হঠাৎ করেই আমার যে কি হলো?আ’ম সরি।
দুহাত দিয়ে কানে ধরে বললাম।

অভিক আমার হাত কান থেকে নামিয়ে বললো,

-ফুল, আমি তোমার সাথে রাগ করি নি তবে বেশ কষ্ট পেয়েছি। ফুল, আহান ছাড়াও তোমার জীবনে অনেক গুরত্বপূর্ণ মানুষ আছে। যেমনঃচাচ্চু,চাচি সাদাফ আমরা সকলেই। কিন্তু, চাচ্চু আর চাচী দেখছেন তাদের একমাত্র মেয়ে এখনো একজনের মায়ায় বা ভালোবাসায় জীবন স্থবির করে রেখেছে।তাদের মনের অবস্থা ঠিক কেমন হয়ে আছে তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না। এই যে চাচ্চু অসুস্থ হয়েছে কার জন্য হয়েছে জানো শুধুমাত্র তোমার কথা চিন্তা করে। আহান মারা যাওয়ার পর তুমি ওর স্মৃতি ভুলতে চলে গেলে আমেরিকায় ফুপির কাছে। তুমি ওখানে কি ভাবে দিনের পর দিন না খেয়ে না ঘুমিয়ে শুধু কাঁদতে; ফুপি আমাদের সব বলেছে।তখন থেকেই চাচ্চু চাচী সবাই চিন্তা করতো।আর ফলাফল হিসেবে চাচ্চু এখন হসপিটালে।ভেবে দেখো ফুল যদি কোনো কারনে তোমার আব্বু আম্মু মারা যায় তাদের মনে আফসোস থেকে যাবে তোমার জন্য। তুমি খুবই বুঝদার মেয়ে। আশা করি তুমি সেই কাজটি করবে যেখানে সবার জন্য ভালো কিছু থাকবে। আমি আসছি।

বলেই উঠে চলে গেল অভিক আর হিয়া বসে অভিকের বলা প্রত্যেকটি কথা ভেবে দেখছে।

——–

হিয়ার বাবা ইসমাঈল জামানকে আজ হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। হিয়া তার আব্বুর পাশেই আজ সারাদিন বসে আছে,বিভিন্ন রকমের গল্প গুজব করছে। কেননা, কাল থেকে ভার্সিটিতে যাবে তখন কি আর এভাবে বসে থাকা যাবে।

কিছুক্ষণ আগে অরিন এসে জানালো,আজ নাকি অভিকের জন্মদিন। কিন্তু, আমার একেবারেই মনে ছিল না অরিন বলতেই মনে পড়লো।
তাই আমি আর অরিন মিলে একটি সারপ্রাইজ প্লান তৈরি করলাম।

কেক সহ আরো কিছু কেনা লাগবে তাই হিয়া একা বেরিয়ে পরলো।সব কিছু কেনা শেষ হলে বাড়িতে এসে প্লান মোতাবেক সব কিছু তৈরি করে রাখে হিয়া।
এখন অপেক্ষা অভিক ফিরে আসার।

——–

অভিক ওর বন্ধুদের সঙ্গে বসে নিকোটিনের ধোয়া উড়িয়ে দিচ্ছিলো। এর মাঝে ওর মোবাইলে একটি মেসেজ এলো। মেসেজ ওপেন করে পড়তেই ওর সারা শরীর ভয়ে কেপে উঠলো। ও দৌড়ে চলে গেলো ওর বাইকের কাছে। জলদি বাইক স্টার্ট করে রওনা হলো।
বাড়ির গেটের ভিতরে কোনোভাবে বাইকটি রেখে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। সামনে ওর মা’কে
পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-মা, ফুল কোথায়? কি হয়েছে ওর?

-হিয়ার আবার কি হবে? হিয়া তার নিজের রুমেই আছে গিয়ে দেখ?

এবার যেন অভিকের মাথায় রক্ত চড়ে গেলো।পা চালিয়ে সিড়ি অতিক্রম করে হিয়ার রুমের দিকে যাচ্ছে। দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই, সবাই একসাথে বলে উঠলো,

-শুভ জন্মদিন অভিক।

অভিক তখন অবাক চূড়ান্ত পর্যায়ে। অরিন এসে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল কেক কাটার জন্য। হাতে নাইফ নিয়ে যখন অভিকের হাতে দিলো তখন এক অভাবনীয় কান্ড করে ফেললো অভিক।

এক নিমিষেই কেক ছুড়ে ফেলে দিলো ফ্লোরে। এরপর হিয়ার কাছে গিয়ে ওর দু’বাহু চেপে ধরে বললো,

-এই তুমি হাতে ব্যাথা পেয়েছো তাই না !কই তুমি তো দেখছি কেক নিয়ে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছো।

-আমি ব্যাথা পাচ্ছি অভিক ছাড় আমাকে।

-ব্যাথা এবং ভয় আমিও পেয়েছি ফুল, কিন্তু

কথাটি আর পূর্ণভাবে বলতে পারেনি এরইমাঝে
কে যেন অভিককে হিয়ার কাছ থেকে ঘুড়িয়ে ওর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here